বিরহডোরে বাঁধিয়াছি তারে পর্ব-০১

0
243

#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০১

-“এই মেয়েকে আমি কখনোই বিয়ে করবো না আম্মু।”

কিছুটা উচ্চস্বরে উপরোক্ত বাক্যটি বলে ছবিটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে দিল আহাদ।সে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

-“আমি যেন এই মেয়েকে নিয়ে এই বাড়িতে আর কোনো কথা না শুনি।সেখানে ছবি আনা তো দূরে থাক!”

আহাদ সিঁড়ি দিয়ে উঠে তার রুমের দিকে চলে গেল।আয়েশা বেগম অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।রুহি এসে আয়েশা বেগমের কাঁধে হাত রেখে বললো,

-“আম্মু’ কি হলো ব্যাপারটা?তৃধা আপুর ছবি দেখে এতোটা রিয়েক্ট করলো কেনো ভাইয়া?”

-“আমি নিজেই তো বুঝতে পারছি না।প্রথমে তো ছবিটা দেখতে চায়নি।তারপরে জোরাজুরি করার পরে দেখলো।কিন্তু তৃধার ছবি দেখার সাথে সাথেই এমন রিয়েক্ট করলো!”

-“হুম….ডাল ম্যা কুচ তো কালা হ্যায়!”

আয়েশা বেগম’ রুহির মাথায় একটা চাটি মেরে উনার রুমের দিকে চলে গেলেন।রুহি নিজের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

-“আমার কথাই ঠিক।দেখে নিও!”

আহাদ রুমে এসে ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়লো।রাগে চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে।

-“যাকে ভুলে থাকতে ওতোদূরে চলে গিয়েছিলাম,বাড়িতে আসতে না আসতেই আবার তারই মুখ দেখা লাগলো।আমারই দোষ!ছবিটা কেনো যে দেখতে রাজি হলাম!”

মুথো হাত জোড়া কপালের সাথে ঠেকিয়ে বসে রইলো আহাদ।

_____________________
-“আম্মু তুমি কাকে আমার ছবি দিয়েছো?”

তৃধার এমন কথায় কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন রাহেলা বেগম।তারপরে নিজেকে সামলে বললেন,

-“কই আমি তো কারো কাছেই তোর কোনো ছবি দেইনি!”

তৃধা হাতে থাকা এপ্রোনটা ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে রেখে নিশ্বাস ফেলে বললো,

-“আম্মু আমি কোনো কিছু না জেনে কিন্তু তোমাকে প্রশ্ন করিনি!”

রাহেলা বেগম এবার বেশ জোর গলায় বললেন,

-“যাকে ছবি দিয়েছি বেশ করেছি।এবার আমি আর তোর কোনো কথা শুনবো না।এতোদিন পড়াশোনার কথা বলে বিয়ে করিসনি।এখন তো তুই একটা নামকরা হসপিটালের ডাক্তার!এখন তো আর বিয়ে করতে কোনো বাঁধা নেই।”

তৃধা ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“আমার বিয়ে নিয়ে এতো উঠে পড়ে লেগেছো কেনো তুমি আম্মু?”

রাহেলা বেগম তৃধার কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রেখে বললো,

-“সমাজ বলেও একটা বিষয় আছে মা।”

তৃধা’ রাহেলা বেগমের হাত জোড়া ধরে বললো,

-“আম্মু প্লিজ আমাকে আরেকটু সময় দেও।তুমি তো জানো আমি একজনের অপেক্ষায় আছি।সে একদিন না একদিন ঠিকই ফিরে আসবে।তাকে আসতেই হবে!”

-“কে সে?আমাকে তো বল!”

তৃধা মৃদু হেসে বললো,

-“তোমার মেয়ের হবু জামাই।”

কথাটা বলে এপ্রোনটা নিয়ে তার রুমের দিকে চলে গেল তৃধা।রাহেলা বেগম চিন্তিত হয়ে বললেন,

-“ছেলেটা কে আজ পর্যন্ত আমি জানতে পারলাম না।”



একটা ছবির ফ্রেম হাতে নিয়ে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে আছে আহাদ।চোখ জোড়া লালচে হয়ে গেছে।হয়তো এতোক্ষণে জল গড়িয়ে পড়তো।তবে তা গড়িয়ে না পড়ার জন্য জোরপূর্বক বাঁধা পেয়ে চোখেই মিশে গেছে।

-“তোমার শোকে আমার মৃত্যু হোক,তবুও আমার জীবনে দ্বিতীয় বার তোমার আর ফেরা না হোক!”

দরজায় কড়া নাড়ানোর শব্দে ধ্যান ভাঙলো আহাদের।দরজার ওপাশ থেকে রুহি বললো,

-“ভাইয়া দরজাটা খোল!দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে খেতে আয়।”

আহাদ নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,

-“তুই যা আমি আসতেছি।”

আহাদ ছবির ফ্রেমটা আলমারিতে ঢুকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেল।নিচে গিয়ে দেখলো সবাই খাবার টেবিলে তার জন্য অপেক্ষা করছে।সে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।রফিকুল সাহেব চোয়াল শক্ত করে বললেন,

-“এমন হুটহাট রেগে গিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা বন্ধ করো!”

আহাদ প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে বললো,

-“আমি কাউকে বিভ্রান্ত করিনি।”

রফিকুল সাহেব চোখ রাঙিয়ে বললেন,

-“তোমার জন্য আমাদের এতোক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে।”

-“আমি তো তোমাদের অপেক্ষা করতে বলিনি।তোমরা নিজেদের ইচ্ছাতে অপেক্ষা করেছো।”

রফিকুল সাহেব কিছু বলতে যাবেন তার আগে আয়েশা বেগম ইশারা করে উনাকে চুপ থাকতে বললেন।উনিও আর কথা না বাড়িয়ে খাবার খাওয়ায় মন দিলেন!

_________________________
-“আপু চল না কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি।”

তোহার কথায় বই পড়া বন্ধ করে তার দিকে তাকালো তৃধা।ভ্রু উঁচিয়ে বললো,

-“কই যাবি তুই এখন?”

-“এমনি একটু শপিং করতে যেতাম।তোর সাথে কতদিন শপিং করতে যাই না!”

মৃদু হেসে তৃধা বললো,

-“আচ্ছা যা রেডি হয়ে আয়।”

তোহা দৌড়ে রেডি হতে গেল।যা দেখে তৃধা হেসে দিল।হঠাৎ কি যেন মনে হতে তার হাসি মিলিয়ে গেল।

-“তোমার দেখা কি আমি আর কখনোই পাবো না!এতো বছরের অপেক্ষা বৃথা যাবে না তো!”

কথাগুলো বলে সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

__________________
“ভাইয়া কতক্ষণ ধরে বলছি চল না রে!”

রুহির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে আহাদ বললো,

-“তুই আম্মুকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে পারতেছিস না?”

-“না পারতেছি নাহ্।আমি আজকে তোর সাথেই যাবো।”

রুহির জোরাজুরিতে আহাদ তার সাথে শপিংয়ে যেতে রাজি হলো।

___________
রুহি শপিংমলে ঘুরছে আর আহাদ তার পিছনে পিছনে ঘুরছে।

-“রুহি তোর আর কতক্ষণ লাগবে বলতে পারিস?”

-“ভাইয়া তুই এমন করছিস কেনো?এতোদিন পরে দেশে এসেছিস।কোথায় বোনকে নিয়ে কতো জায়গায় ঘুরে বেড়াবি তা না তুই এমন তাড়া দিচ্ছিস!”

-“আমরা দেড় ঘন্টা ধরে ঘুরতেছি রুহি!”

হঠাৎ রুহি তোহাকে দেখতে পেয়ে তার কাছে দৌড়ে গেল।আহাদ অবাক হয়ে সেদিকে তাকালো।দেখলো রুহি গিয়ে তার বয়সী একটি মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছে।তবে মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখে আহাদ চমকে গেল।সেই চিরচেনা মুখ!

-“তৃধা এখানে?”

-“কি রে রুহি তুই কার সাথে শপিং করতে এসেছিস?”

রুহি আহাদকে দেখিয়ে বললো,

-“আমার ভাইয়ার সাথে।”

রুহি যে দিকে তাকিয়ে আছে তৃধা সেদিকে তাকিয়ে দেখলো তাদের থেকে কয়েক কদম দূরে আহাদ দাঁড়িয়ে আছে।আহাদকে দেখে তৃধা বেশ অবাক হলো।তবে আহাদকে দেখে সে অনেক খুশি হয়েছে।মুখে হাসি ফুটলো,কিন্তু তার চোখ ছলছল করছে।

আহাদ আর তৃধা দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ কিছু মনে হতে আহাদ তৃধার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফেললো।যেই কারণে তৃধা কিছুটা কষ্ট পেল।তার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল।

রুহি আর তোহা বিষয়টা খেয়াল করলো।তোহা ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“আপু তুমি কি আহাদ ভাইয়াকে চিনো?”

তৃধা মৃদু হেসে বললো,

-“অনেক ভালো করেই চিনি।”

রুহি আহাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-“ভাইয়া তুমি কি তৃধা আপুকে চিনো?”

তৃধা আর তোহা তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।আহাদ চোয়াল শক্ত করে তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো,

-“নাহ্!আমি এই নামে কাউকে চিনি না।রুহি অনেকক্ষণ হয়েছে আমরা এসেছি।এখন বাড়িতে চল।”

তৃধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলো।রুহি ফের আহাদকে প্রশ্ন করলো,

-“ভাইয়া,তৃধা আপু বললো তোমাকে চিনে!আর তুমি বলতেছো চিনো না?”

-“রুহি তোকে আমি বাড়িতে যাওয়ার কথা বলেছি।”

-“ভাইয়া,তোহা আমার বেস্টফ্রেন্ড।”

আহাদ তোহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

-“রুহির সাথে আমাদের বাড়িতে এসো!”

আহাদ রুহিকে নিয়ে চলে যেতে গেলে তৃধা বললো,

-“আমি যাবো না?”

আহাদ থেমে গেল।তৃধার দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বললো,

-“যাকে দেখতেই চাই না,তাকে বাড়িতে যেতে বলার কোনো মানেই হয় না।”

আহাদ কথাগুলো বলে রুহিকে নিয়ে চলে গেল।তোহা অবাক হয়ে বললো,

-“আহাদ ভাইয়া তোর সাথে এভাবে কথা বললো কেনো আপু?”

তৃধা কিছুক্ষণ তোহার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

-“বাদ দে এইসব।অনেক তো শপিং করলাম।এবার বাড়িতে চল।আমার ভালো লাগছে না।”

-“আচ্ছা চল।”

আহাদ ড্রাইভ করছে।রুহি পাশে থেকে বললো,

-“ভাইয়া তুই তৃধা আপুর সাথে এভাবে কথা বললি কেনো?”

-“তাতে তোর কি কিছু হয়েছে?”

-“হয়নি।তবে যাকে চিনিসই না তার সাথে এমন করার তো কোনো মানে নেই।”

-“চিনি না!”

এটুকু বলে তাচ্ছিল্যের হাসি দিল আহাদ।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“অনেক ভালো করে চিনি আমি তোর তৃধা আপুকে।”

রুহি অবাক হয়ে বললো,

-“কিভাবে?”

-“তা তোর জানতে হবে না।”

রুহি আর কথা বাড়ালো না।সে ভালো করেই জানে আহাদের পেট থেকে কথা বের করা খুবই কষ্টকর!

_________________
বেলকনির দোলনায় বসে আকাশের চাঁদ দেখছে তৃধা।চোখ থেকে দু-এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ছে তার।

-“এতোটা ঘৃণা করো আমায় তুমি আহাদ?তবে এই ঘৃণা করা ব্যক্তিটাকেই একসময় তুমি কত’ই না ভালোবাসতে!আমার অপরাধ ছিল সেদিন আমি বিচ্ছেদ চেয়েছিলাম।কতটা কষ্ট বুকে চেপে রেখে সেদিন বিচ্ছেদ চেয়েছিলাম সেটা শুধু আমি জানি!”

কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো তৃধা।মোবাইলটা অন করে দেখলো রাত দেড়টা বাজে।সে উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

#চলবে…………..

___________________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে