#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-২৩ (শেষ পর্ব)
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
তখন শীতের প্রকোপে কাঁথার নিচ থেকে বের হওয়ার অবস্থা নেই। ডিসেম্বর মাস। আচমকা কি থেকে কি হলো ফারিন জানে না। নিজের কাঙ্ক্ষিত মানুষের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো তার। মনে তখন জমেছিল তীব্র অভিমান। প্রত্যাখ্যান করা পুরুষ তাকে বিয়ে করলো কেন সেটা সে জিজ্ঞেস করেছিল বাসর রাতে। নিরব নিতান্তই সহজ কন্ঠে বলেছিলো,
‘ আমি কখনো প্রেম করিনি, বা ইন্টারেস্ট পাইনি বলতে পারো। বিয়ে যদি করি তো করবো। এর আগে অনেক প্রপোজাল রিজেক্ট করেছি। আর সবার মতো তোমাকেও আমি রিজেক্ট করেছি। কজ আমার এসব করার টাইম নেই। আমি ব্যস্ত মানুষ, চাকরির বাহিরে পুরোটা সময় ফ্যামিলির জন্য বরাদ্দ রাখি৷ প্রেম করিনি মানে এই না যে আমি প্রেম করবো না৷ আমি সবসময়ই চেয়েছি যে আমার বউ হবে তার সাথেই প্রেম করবো। ধরো, আমি তোমার সাথে প্রেম করলাম। কিন্তু তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে না বলে আমাদের বিয়ে হলো না। তখন শুধু শুধু দুজনের চরিত্রে একটা দাগ লেগে যাবে না? তাছাড়া মানসিক কষ্ট তো আছেই। সেজন্য আমি সবমসময়ই সহজ পথ অবলম্বন করি। বিয়ের আগে তোমাকে আমি কোনো চোখেই দেখিনি। তবে বিয়ের পর তোমাকে আমি অবশ্যই প্রেম ও এক বুক ভালোবাসা নিয়ে দেখছি। আমার বুকে সবটুকু ভালোবাসা আমার স্ত্রীর জন্যই। ‘
ব্যস, ফারিনের অভিমান কোথায় যে পালিয়ে গেলো সে জানে না। শুধু জানে সে সেদিন নিরবের বুকে মাথা রেখে অনেক কেঁদেছিলো। শুদ্ধ পুরুষকে পেয়ে যাওয়ার আনন্দে তার শরীর কাঁপছিল।
তারপর চলে গেছে দুটো বছর। আজ বিয়ে বাড়ি জমজমাট। নায়ক আব্রাহাম খান নিজের সেই প্রেমিকাকে বিয়ে করবে৷
কমিউনিটি সেন্টারে বিশাল আয়োজন। মিডিয়া থেকে শুরু করে বহু মানুষের পা পড়েছে সেখানে। ফারিন আত্নীয় স্বজনদের সাথে কথা বলার ফাঁকে বার-বার গেইটের দিকে তাকাচ্ছে। নিরব এগিয়ে এসে বলল,
‘ কিছু খুঁজছো? ‘
‘ ভাইয়া এখনো আসছে না কেন? ‘
নিরব লম্বা শ্বাস ছাড়লো। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো ফারিনের উঁচু পেট। চেয়ারে বসিয়ে বলল,
‘ এসে পড়বে, তুমি বসে থাকো। আমি তোমার জন্য ঠান্ডা পানীয় নিয়ে আসছি কেমন? ‘
ফারিন মাথা নাড়ালো। নিরব চলে যেতেই কমিউনিটি সেন্টারের গেইট দিয়ে ঢুকলো একটি জীপগাড়ি। নেমে এলো নিনীকা ও ধ্রুব। ধ্রুবর কোলে মোমের মতো একটি রাজপুত্র। ফারিন মূলত সেই রাজপুত্রের জন্যই অপেক্ষা করছিলো।
অবিকল বাবার মতো চেহারা ও মায়ের মতো গায়ের রঙ পেয়েছে রাজপুত্রটা। নিনীকা ফারিনকে জড়িয়ে ধরলো। ধ্রুবর কোলে বসা রাজপুত্র তখন পিটপিট করে তাকিয়ে নিজের ফুপিকে দেখছে। ধ্রুব ছেলেকে বলল,
‘ দিব্য ফুপুকে হাই বলো বাবা। ‘
দিব্য তার আধো আধো স্বরে বলল,
‘ হাই ফু ফু..’
ফারিনের চোখ ছলছল করে উঠলো। হাত বাড়িয়ে নিতে চাইলো কোলে। নিনীকা আঁতকে উঠল,
‘ একদম না, তোমার পেটে আঘাত লাগবে। ও অনেক দুষ্ট। ‘
দিব্য নিজের নামে বদনাম শুনে রাগ করলো কি না বুঝা গেলো না। ধ্রুব ছেলে ও বউকে নিয়ে বাকিদের সাথে কথা বলতে গেলো। সিনেমাজগতের অনেকেই আজ উপস্থিত। সবাই নিনীকাকে পেয়ে আপ্লুত। ধ্রুব ফিসফিস করে বলল,
‘ দিব্য আমার কাছে থাকুক, তুমি আড্ডা দাও। ‘
নিনীকা হেসে মাথা নাড়ালো। ধ্রুব ছেলেকে নিয়ে এদিক সেদিক হাঁটছে। স্টেজে দেখা বউকে দেখে দিব্য জিজ্ঞেস করলো,
‘ বুউ পাপা? বুউ? ‘
ধ্রুব হেসে বলল,
‘ বউ বাবা তোমার আব্রাহাম আঙ্কেলের বউ। ‘
দিব্য হাত তালি দিলো। বর সাজা আব্রাহাম দিব্যকে টেনে নিলো কোলে। নিজেদের মাঝখানে বসিয়ে দিতেই দিব্য বাবার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আব্রাহাম মুখ গোমড়া করে বলল,
‘ একটু বসো দিব্য বাবু, কয়েকটা ফটো তুলে নেই কেমন? ‘
দিব্য বসতে নারাজ। সে হাত বাড়িয়ে আছে তখনো। ধ্রুব হেসে এক পাশে সরে দাড়িয়েছে। দিব্য রেগে গেলো। ছোট্ট গলার স্বরে চিৎকার করলো মা.. বলে। নিনীকা তৎক্ষনাৎ ছুটে এলো। দিব্যর চেহারা কাঁদোকাঁদো প্রায়। মাকে দেখে হামলে পড়লে বুকে। ঠোঁট ফুলিয়ে বাবাকে দেখিয়ে বলল সে বাবার উপর রাগ করেছে। নিনীকা মিথ্যা চোখ রাঙালো। ধ্রুবকে বলল,
‘ তোমাকে মা*রবো।
ধ্রুব হাত বাড়ালো। দিব্য মুখ ঘুরিয়ে নিলো। অর্থাৎ সে যাবে না। নিনীকা হেঁসে ফেললো।
‘ কেন একা বসিয়ে ছিলে? তুমি কোল থেকে নামালেই ও রাগ করবে জানো না? ‘
ধ্রুব টেনেটুনে ছেলেকে কোলে নিলো। দিব্য গাল ফুলিয়ে তখনো মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। ধ্রুব মুখে আদর দিলো। আহ্লাদ নিয়ে কথা বললো। দিব্য একসময় হেঁসে ফেলেছে। ধ্রুব নিনীকাকে নিচু স্বরে বলল,
‘ তোমার ছেলে তোমার মতোই অভিমান করে মিসেস। ‘
নিনীকা নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ আর তোমার মতো যে রাগ করে সেটা? ‘
ধ্রুব ঠোঁট চেপে হেসে ফেললো।
‘ তোমার মতো জেদি ও। ‘
‘ তোমার মতো গোমড়ামুখো। ‘
ধ্রুব শব্দ করে হাসলো। দিব্য মা বাবাকে দেখছে। নিনীকা ছেলেকে দেখিয়ে বলল,
‘ দেখো কিভাবে মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে। ‘
দিব্য তখনই হাত বাড়ালো। নিনীকা কোলে নিলো না। চেয়ারে বসে বলল,
‘ বাবার কোলে থাকো। মা শাড়ি পড়েছি তোমার শরীরে ঘষা লাগলে সমস্যা হবে সোনা। ‘
দিব্য মানতে নারাজ। সে মায়ের কোলে যাবেই। নিনীকা নিজের শাড়ি দেখালো। ধ্রুবকে বলল,
‘ ওকে নিয়ে আশেপাশে হাটাহাটি করো তো, দেখো শাড়িতে ওর সমস্যা হবে না? ‘
ধ্রুব পড়লো মহা বিপদে। দিব্য নাছোড়বান্দার মতো তাকিয়ে আছে। ধ্রুব এক পা বাড়ালেই সে চিৎকার করে কেঁদে উঠবে। সে মায়ের কোলে যাবেই যাবে। ধ্রুব অগত্যা নিনীকার পাশে বসলো। নিজের কোলে রেখেই বলল,
‘ নাও তোমার মায়ের পাশে বসেছি। ‘
দিব্য নরম আদুরে দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে আছে। নিনীকা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,
‘ আমি কিন্তু কেঁদে ফেললো ধ্রুব। ও এভাবে তাকালে আমি ফিরাবো কিভাবে? ‘
ধ্রুব দিব্যকে তুলে নিনীকার কোলে দাঁড় করিয়ে দিলো। ধরে রেখেই বলল,
‘ হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরো। তবে চেপে নয় তাহলে ঘষা লাগবে না। আমি ধরে রেখেছি ওকে? ‘
দিব্য নিজের মুখের লালা লাগিয়ে দিলো গালে। নিনীকার মেক-আপ ওয়াটারপ্রুফ হওয়ায় সমস্যা হলো না। ছেলেকে আদর দিয়ে ফিরিয়ে দিলো। দিব্য আবারও মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে।
খাবার টেবিল থেকে বর কনে বসা স্টেজ সোজাসুজি। দিব্যকে টেবিলের উপরে বসিয়ে দিলো ধ্রুব। নিনীকার ছেলের কোমড়ে হাত জড়িয়ে রেখেছে। বর কনে কে দেখিয়ে বলল,
‘ দেখো বাবা সুন্দর না? ‘
দিব্য মাথা নাড়ালো,
‘ বুউ? ‘
ধ্রুব হেসে বলল,
‘ বউ, তোমার আব্রাহাম আঙ্কেলের বউ। ‘
দিব্য জোরে বলল,
‘ বুউ…’
নিনীকা ধ্রুবকে চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘ হ্যাঁ সোনা বুউ। পাশেরটা বর। ‘
‘ বুর? ‘
ধ্রুব শুধরে দিলো,
‘বর ‘
দিব্য এবার চিৎকার করে কেঁদে ফেললো। ধ্রুবকে দেখিয়ে মারতে বললো। নিনীকা ঠা*স করে কাঁধে থাপ্পড় দিলো।
‘ দেখো তোমার বাবাকে শাস্তি দিয়েছি। ‘
দিব্যর ঠোঁটে হাসি। ধ্রুব নাক ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা দিব্যর ভালো লাগলো না। ডাকলো,
‘ বাবা…’
ধ্রুব তাকাতেই সে ছোট ছোট দাঁত দেখিয়ে হাসলো। ধ্রুব জাপ্টে ধরলো। নাক ঘষে বলল,
‘ দিব্য কি বর বউ দেখবে? ‘
দিব্য মাথা কাত করে সায় জানালো। ধ্রুব আলগোছে এক হাত দিয়ে চেপে ধরলো নিনীকার কোমড়। ছেলের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ তোমার মা বউ, আমি বর৷ ‘
দিব্য হাত তালি দিলো,
‘ মা বুউ, বাবা বুর ‘
নিনীকা কিশোরীদের মতো খিলখিল করে হাসলো। ধ্রুব কানের কাছে মুখ নিয়ে নিচু কন্ঠে বলল,
‘ তুমি বউ, আমি তোমার বর মাই লাভলি মিসেস।’
(সমাপ্ত )
বিয়ে থা সিজন-০১ পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন