বিয়ে থা_২ পর্ব-২১

0
119

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-২১
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

নিনীকা খেয়াল করে দেখলো তাদের বিয়ের দিন সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টির শুরু হয়েছে। একটু বন্ধ থাকে তো একটু ঝরে। সকালে না হলেও বিকালে হবেই। সারাক্ষণই আকাশে কালো মেঘ থাকে৷ ধ্রুবর সাথে তার সাময়িক বিচ্ছেদ টাও বৃষ্টির কারণেই হলো মনে হয়। নিনীকা ধ্রুবর অপেক্ষায় না বারান্দায় বৃষ্টিতে ভিজতো আর না মনে অভিমান জন্ম নিতো। ক্লান্তিতে সে যদি ঘুমিয়ে পড়তো তবে হয়তো এরকমটা হতো না।

নিনীকা চুল বেঁধে শাড়ির আঁচল ঠিক করে উঠে দাড়ালো। চোখ ফেললো বিছানায়। তার স্বামী মহাশয় কপালে হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে কি না বুঝা যাচ্ছে না। হতে পারে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।

তখন সবাই খাবার টেবিলে নাস্তা করে ধ্রুবকে নিয়ে কথা বলছিলো। নিনীকা আফসোসে ভেসে যাচ্ছিল। ঠিক সে সময়ই ধ্রুব ব্যাগ হাতে বাড়িতে ঢুকে। হুট করে ধ্রুবকে দেখে নিনীকার কি হয়েছিল জানে না, সে সামনে গিয়ে দাড়িয়ে অবাক নাকি খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো,

‘ আপনি সত্যিই এসেছেন? ‘

ধারা পেছন থেকে জিজ্ঞেস করেছেন,

‘ তুই না চলে গেছিলি? ‘

‘ ক্যান্সেল হয়ে গেছে। ‘

বলেই রুমে চলে গেছিলো। নিনীকা সেই থেকে রুমে বসে আছে। মানুষটা ইউনিফর্ম ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। একটা বার নিনীকাকে কিছু জিজ্ঞেস ও করলো না।

নিনীকা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ধ্রুবর কোমড়ের কাছে বসলো। মাথা রাখলো পেটে৷ হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রইলো। ধ্রুবর কোনো হেলদোল নেই। যেনো এটা স্বাভাবিক বিষয় বা নিত্যদিনের ঘটনা।

নিনীকা মুখ তুলে অসহায় চোখে তাকালো। মানুষ টা না তাকিয়েছে আর না হাত টা কপাল থেকে সরিয়েছে। তবে কি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছে?

নিনীকা যে মুখে এতোকিছু বলতে পারে না। এই যে তার ইচ্ছে করছে পাগলের মতো মানুষটার বুকে আছড়ে পড়তে। নিজের অনুভূতি জানিয়ে আবেগে কেঁদে ফেললে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে? ধ্রুব কি নিনীকার অনুভূতিকে দাম দিবো?

নিনীকা নিজেকে শাসালো৷ অবশ্যই দাম দিবে। মানুষটা তো সেটাই চায়। নিনীকা কিছু বলুক। স্বীকার করুক। কিন্তু নিনীকা পারে না কেন? অনুভূতি প্রকাশ মরে যাওয়ার মতো কঠিন লাগে কেন? কল্পনা করলেই তার শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যায়। নিজেকে হাঁপানির রোগী মনে হয়।

নিনীকা নিজেকে লাল রঙের একটি শাড়িতে জড়িয়েছে। উদ্দেশ্য যেহেতু স্বামীর মান ভাঙানো তবে চেষ্টা তো করতেই হবে। আর সংকোচ নয়। নিনীকা সাহস সঞ্চয় করে বিছানার আরেক পাশে উঠে পড়লো। গলা পরিষ্কার করে ও ধ্রুবর সাড়া পেলো না। কপালের হাত সরিয়ে দিলো সে। ধ্রুব ফট চোখ মেলে তাকিয়েছে। নিনীকা ঝড়ের গতিতে জড়িয়ে ধরলো। মুখ লুকিয়ে ফেললো কাঁধে। নিজের অস্তিত্বের ভার ধ্রুবর শরীরে দিয়ে আষ্ঠেপৃষ্ঠে ধরে রাখলো। যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে৷ অপেক্ষা করলো ধ্রুবর সাড়া পাওয়ার। অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও ধ্রুবর গলা শুনতে পাওয়া গেলো না। নিনীকা মুখ তুলে দেখলো ধ্রুব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নির্বিকার মুখভঙ্গি তার। নিনীকা মনে মনে আহত হলো। কিন্তু তা পাত্তা দিলো না। মানুষটার অভিমান ভাঙিয়েই ছাড়বে সে।

‘ আমার সাথে কথা বলবেন না মেজর? ‘

কোনো উত্তর নেই। নিনীকার হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। জীবনে কখনো সে কারো কাছে এতো আকুলতা প্রকাশ করেনি। তার মন কখনো এতো ব্যাকুল হয়নি কারো জন্য।

‘ কিছু তো একটা বলুন। আমি আপনার কথা শুনতে চাইছি ধ্রুব৷ ‘

নিনীকা বরাবরই নিজেকে ভীষণ ধৈর্যশীল মেয়ে হিসেবে জেনে এসেছে। আজ এই মুহুর্তে নিজের ধৈর্য নিয়ে তার সন্দেহ হলো। দু’হাতে আগলে ধরলো ধ্রুবর মুখ। চোখে চোখ রেখেছে অথচ কোনো কথা না বলে পাথরের মতো চেয়ে আছে। এ কেমন শাস্তি?

‘ আজ বউ নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার কথা আপনার৷ যাবেন না? ‘

ব্যস নিনীকার আর ধৈর্য নেই। কপাল, গালে ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো। সে দেখবে মানুষটা কতক্ষণ নিজেকে ঠিক রাখতে পারে।

ধ্রুবর জেদ আছে বলতে হবে। নিনীকাকে কাঁদিয়ে ছাড়লো। বেচারি পাশ ফিরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। এ কেমন স্বামী তার? বউয়ের চুমুতেও বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করলো না। যেনো এটা স্বাভাবিক বিষয়। নিনীকা একশোটা চুমু খেয়ে ফেললেও তাকিয়ে থাকা নিয়ম।

ধ্রুব চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আচমকা নিনীকা আক্রমণ করলো ধ্রুবর উপর। ধ্রুবর পড়োনের শার্ট ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে দিলো মেঝেতে। বুকের উপর পা ছড়িয়ে বসে রইলো নির্বিকার ভাবে। ধ্রুবর বুকে তোলপাড় চলছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ঠিক থাকতে। নরম হওয়া যাবে না।

শাড়ির আঁচল টা গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে। নিনীকা মুখ এগিয়ে আনলো। চোখে চোখ রেখে স্বগতোক্তি করলো,

‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি ধ্রুব। ‘

কিছু টা লজ্জা, কিছু টা অস্বস্তি নিয়ে নিনীকা মুখ লোকালো বুকে। অনুভব করলো এক জোড়া হাত তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। কানে ভেসে এলো ধ্রুবর বলা সম্মোধন-

‘ আমার আদুরে মিসেস। ‘

দুপুর বেলা গোসল করে তৈরি হতে লাগলো নিনীকা। কানে ইয়ার রিং পড়তে পড়তে দেখলো মানুষটা মেঝেতে পুশআপ দিচ্ছে। উন্মুক্ত শরীর ঘামে ভিজে একাকার। শরীরে নিনীকার দেওয়া বিশেষ মুহূর্তের চিহ্ন৷ নিনীকার শরীর গরম হয়ে গেলো লজ্জায়৷ ঠোঁট চেপে আস্তে করে বলল,

‘ জলদি গোসল করে আসুন তো। ‘

কথাটা কানে যেতেই ধ্রুব উঠে দাড়ালো৷ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি ঠেকালো। নিনীকা তখন হাতে চুড়ি পড়ছে। ধ্রুব কেঁড়ে নিলো সেগুলো। নিজ হাতে পড়িয়ে দিয়ে আয়নায় চোখে চোখ রাখলো। নিনীকা ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ যান তো তাড়াতাড়ি, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। ‘

ধ্রুব গেলো না। ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,

‘ আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। চলো আবার শুরু করি? ‘

নিনীকার সাদা মুখটায় লাল আভার ছড়াছড়ি। ঠুকা দিলেই রক্ত বের হয়ে যাবে যেনো। ধ্রুব আলতো করে ঠুকা দিলো রক্তজবার মতো ঠোঁটে। নিনীকা আর্তনাদ করে উঠলো।

‘ এমনি জ্বলছে, আপনি আরও ব্যথা বাড়াচ্ছেন। ‘

ধ্রুব যেনো আজ প্রতিজ্ঞা করেছে কোথাও যাবে না। নাছোড়বান্দার মতো নিনীকাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে টেনে নিয়ে গেলো বিছানায়৷ ফিসফিস করে বলল,

‘ আজ আমাদের কোথাও যাওয়া হচ্ছে না মিসেস। ‘

সেদিন বিকেলে খুব জোরে বৃষ্টি নামলো। হালকা ঠান্ডা অনুভব হতেই নিনীকা আরও ঢুকে যেতে চাইলো বুকে। ধ্রুব কাঁথায় মুড়িয়ে ফেললো দুজনকে। ঘুমিয়ে পড়লো এক সমুদ্র প্রেম ও প্রেয়সীকে বুকে নিয়ে।

*

সন্ধ্যাবেলায় ফারিন অদ্ভুত একটি কাজ করলো। ধ্রুবর কাছ থেকে নেওয়া নিরবের নাম্বারে ডায়াল করে ফেললো। কিন্তু তাকে আশাহত করে নাম্বার বন্ধ দেখালো। ফারিন নিজেকে সান্তনা দিলো, হয়তো কাজে থাকার কারণে মোবাইল অফ করে রেখেছে।

রাতে খাওয়ার টেবিলে বসে ফারিনের গলা দিয়ে খাবার ঢুকছিল না। প্যাকেট হয়ে যাওয়া নিনীকা সেটা খেয়াল করে বলল,

‘ তোমার কি মন খারাপ? ‘

ফারিনের মন জোড়ে বিষন্নতা। তার সত্যিই যে সর্বনাশ হয়ে গেছে সে বুঝতে পেরেছে। বাবাকে বলতে হবে কিছু একটা করতে। ভাবনা চিন্তা সাইডে রেখে সে জিজ্ঞেস করলো,

‘ তোমার কি বেশি-ই ঠান্ডা লাগছে ভাবী? একেবারে তো প্যাকেট হয়ে গেছো! কয়টা হুডি জড়িয়েছো বলো তো? ‘

নিনীকা অপ্রস্তুত হলো। তখনই ধ্রুব টেবিল কাঁপিয়ে হাঁচি দিলো। ব্যস লজ্জায় নিনীকার মুখ নিচু হয়ে গেলো। ধ্রুব দাঁত বের করে ফারিনের ওড়নায় নাক মুছে বলল,

‘ তোর ভাবী সন্ধ্যায় বৃষ্টিতে ভিজেছে, ওকে থামাতে গিয়ে আমাকেও ভিজতে হয়েছে৷ ‘

ডাহা মিথ্যা কথা। নিজেই জোর করে বারান্দায় নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজিয়েছে। বলেছে,

‘ রোমান্টিক ওয়েদারে রোমান্টিক বৃষ্টিতে না ভিজলে নিজেদের রোমান্টিক কাপল বলতে পারবো না। ‘

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে