#বিয়ে_থা_২
#পর্ব- ১৯
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
রাতের বৃষ্টির কারণে সকালের পরিবেশ সতেজ। বউ কথা কও বাড়িটির বাগানে সবুজ ঘাসের উপর নিজের নরম পা ফেললো নিনীকা। ঘাস কিঞ্চিৎ ভেজা-ভেজা। মাটির গন্ধে নিনীকার ভালো লাগছে। মাটির ঘ্রাণ নিতে নিতে সে গোলাপ গাছটার কাছে এসে দাঁড়ালো। টকটকে লাল গোলাপ ছিঁড়ে কানে গুঁজে দিলো।
বাগানে ব্যস্ত পায়ে প্রবেশ করলো ফারিন। নিনীকাকে তাড়া দিয়ে বলল,
‘ ভাবী জলদি আসো, তোমাকে রেডি হতে হবে তো। মাম্মা যেতে বলেছে। ‘
নিনীকা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
‘ কেন? ‘
ফারিন হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। বলল,
‘ আজ তোমার বৌভাত। ভুলে গেছো? ‘
নিনীকা নিজের বৌভাতের কথা সত্যিই ভুলে গেছিল। সদর দরজা দিয়ে ঢুকে বলল,
‘ আমি তোমার ভাইয়াকে ডেকে তুলে দিয়ে তারপর তোমার রুমে যাচ্ছি তবে? ‘
ফারিন মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। নিনীকা হাঁটার গতি বাড়িয়ে রুমে ঢুকলো। শুকিয়ে যাওয়া পাপড়ি ছড়িয়ে আছে বিছানা ও মেঝেতে। ধ্রুব বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। পড়োনের প্যান্ট কোমড়ের অনেক নিচে নেমে গেছে। ভেতরে অন্তর্বাস ছিল বলে রক্ষা। নিনীকা চোখ সরিয়ে নিয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে এগিয়ে এলো। নিচু কন্ঠে ধ্রুবকে ডাকলো। পিটপিট করে চোখ মেলে ধ্রুব ঘুম জড়ানো গলায় প্রশ্ন করলো,
‘ ডাকছো কেন মিসেস? ‘
‘ আপনাকে এবার বিছানা ছাড়তে হবে, কিছুসময় পর বৌভাতের অনুষ্ঠান। ‘
ধ্রুব তড়িৎ গতিতে উঠে বসলো।
‘ বেশিই কি দেরি হয়ে গেছে? ‘
নিনীকা ঠোঁট চেপে হাসলো।
‘ তেমন দেরি হয়নি, তবে আপনি যদি এখন ওয়াশরুমে না ঢুকেন তবে দেরি হয়ে যাবে নিশ্চিত। আপনি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হোন। আমিও তৈরি হতে ফারিনের রুমে যাচ্ছি। কেমন? ‘
ধ্রুব নিনীকার হাসি লক্ষ করে নিজের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো। প্যান্ট টা কোনোরকমে জড়িয়ে আছে যেনো। ধ্রুব দাড়ালেই খুলে পড়ে যাবে নিশ্চিত। ধ্রুবর কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগলো। বিয়ের পরদিনই বউয়ের সামনে এভাবে নিজের মান সম্মান শেষ হয়ে গেলো। যতোই হোক তাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা পুরোপুরি গভীর হয়নি। ততোদিন তো নিজের মান সম্মান বাচিয়ে রাখা উচিত! একবার নিনীকাকে সম্পূর্ণ নিজের করে ফেললে এমন সম্মান বাচিয়ে চলতে হতো না আর। ধ্রুব গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মনে পড়লো তার বউ বাসররাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।
নিনীকা উত্তরের অপেক্ষা করছিলো। ধ্রুবকে অন্যমনস্ক হতে দেখে কাঁধে ধাক্কা দিলো।
‘ আমি তবে যাই? ‘
ধ্রুব ভাবনা থেকে বের হয়ে মাথা কাত করে সায় দিলো৷ নিনীকা দ্রুত গতিতে রুম ত্যাগ করলো।
ফ্রেশ হয়ে বৌভাতের জন্য কেনা স্যুট পড়ে ধ্রুব পরিপাটি হয়ে নিচে নামলো। বৌভাতে বাহিরের কেউ নেই। তাদের আত্মীয় স্বজনরাই শুধু। শেখ বাড়ি থেকে এখনো কেউ আসেনি হয়তো। তবে এসে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। ধারা ধ্রুবকে টেনে টেবিলে বসিয়ে দিলেন।
‘ তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ করো। ‘
ধারা ব্যস্ত ভঙ্গিতে হেঁটে চলে গেলেন। ধ্রুব আশেপাশে তাকিয়ে ফারিনকে খুঁজলো। না পেয়ে মোবাইল বের করে কল দিলো। রিসিভ করতেই বলল,
‘ তোর ভাবী খেয়েছে বনু? ‘
ফারিন ফটাফট উত্তর দিলো,
‘ খেয়েছে, আমি রাখছি তৈরি হতে হবে ব্রো। ‘
বাড়িতেই বিউটিশিয়ান এসেছে। মেয়েরা সবাই আগেই তৈরি হয়ে বসে আছে৷ নিনীকা ও ফারিনই বাকি ছিল শুধু।
ধ্রুব খেয়ে সাজানো সোফাতে বসলো। সমুদ্র পাশে বসে কৌতুক স্বরে বলল,
‘ অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে গুরু, রাতে কি বেশিই পরিশ্রম করতে হয়েছে? ‘
‘ না চোখে ঘুম রয়ে গেছে সেজন্য এমন দেখাচ্ছে, হাটাহাটি করলে ঠিক হয়ে যাবে৷ ‘
উত্তর দিয়েই ধ্রুব চোখ গরম করে তাকালো। সমুদ্র দাঁত বের করে হাসছে। ধ্রুব চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘ আমার আগে বিয়ে করেছিস বলে নিজেকে খুব সবজান্তা ভাবছিস নাকি? ‘
সমুদ্র মাথা নাড়ালো,
‘ অফকোর্স, আমি এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেছি গুরু। তোমার থেকে জানাশোনা বেশি থাকবেই। ‘
‘ কি কি জানিস বল শিখে নেই। ‘
সমুদ্র ভড়কে গেলো।
‘ সত্যিই শিখবে? কিন্তু ওগুলো তো লাইভ না দেখলে শেখানো মুশকিল। ‘
ধ্রুব ঠা*স করে একটা মা*রলো। সমুদ্র কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
‘ তুমিই তো বললে শিখবে। ‘
‘ বয়সে ছোট ছোটর মতো থাক। ‘
সমুদ্র গালে হাত ঘষে বলল,
‘ মাত্র এক বছরের ছোট আমি। বাট অভিজ্ঞতার..’
ধ্রুবর চোখে চোখ পড়তেই সমুদ্র থেমে গেলো। ব্যস্ততা দেখিয়ে পালালো। ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরাম করে বসলো। ফারিন নিনীকাকে নিয়ে নিচে নামলো৷ দাঁড় করালো ধ্রুবর পাশে। ধ্রুব নিনীকাকে দেখে অনেক আগেই দাড়িয়ে গেছিল৷ পাশাপাশি হতেই সন্তপর্ণে হাত চেপে ধরলো।
নিনীকার বৌভাতের শাড়ি সোনালি ও সাদা রঙের। মাথায় সাদা দোপাট্টা জড়ানো। ধ্রুব নাকে জ্বলজ্বল করা ডায়মন্ডের ছোট নাকফুলটা দেখলো। সিঁথির ছোট্ট টিকলিটা ও তার কাছে সুন্দর মনে হলো। নাকি সুন্দরী বউয়ের অঙ্গে জড়িয়ে অলংকার শোভা ছড়াচ্ছে?
শেখ বাড়ির সবাই উপস্থিত হলেন। মিথিলা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলেন দীর্ঘক্ষণ। রমজান শেখ মেয়েকে আগলে বললেন,
‘ বাবার পছন্দের প্রতি আর কোনো সন্দেহ আছে মা? ‘
নিনীকা আড়চোখে ধ্রুবকে দেখলো। যে মিথিলার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে৷ উত্তর দিলো,
‘ মনে হচ্ছে পারফেক্ট কেউ। ‘
রমজান শেখ সন্তুষ্ট হলেন। মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের সাথে ফটোশুট করে তারা সরে গেলেন। দীর্ঘক্ষণ ফটোশুট করার পর নিনীকা সোফায় শরীর এলিয়ে দিয়ে বসলো। ধ্রুব হাত বাড়িয়ে মাথাটা নিজের বাহুতে রেখে বলল,
‘ বেশি খারাপ লাগছে? ‘
‘ একটু ‘
তনু আপার দেখা পাওয়া গেলো তখন। হাইহিলের শব্দ তুলে এগিয়ে এসে বললেন,
‘ নিনীকা আব্রাহামের জমজ ভাই কি অনুষ্ঠানে আসেনি? ‘
‘ আমি তো জানি না আপা। ‘
তিনি ধ্রুবর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।
‘ আপনার ক্যাপ্টেন আসেনি কেন? ‘
‘ তার ছুটি শেষ, সেজন্য আসতে পারেনি। ‘
তনু আপা মন খারাপ করে চলে গেলেন। ধ্রুব প্রশ্ন করলো,
‘ মিডিয়া জগতের এই আপুটা ছাড়া আর কাউকে কি দাওয়াত করোনি? ‘
‘ করেছি, সবাই মু়ভির কাজে ব্যস্ত। ‘
ধ্রুব হঠাৎ কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে নিনীকার সামনে ধরলো।
‘ তোমার মোবাইল মিসেস, নাম্বার টা এবার ব্লক লিস্ট থেকে বের করবে না? ‘
নিনীকা ঠোঁট টিপে হাসলো।
‘ আপনিই করুন না ধ্রুব। ‘
ধ্রুব নিজেই নিজের নাম্বার টা ব্লক লিস্ট থেকে বের করলো। অধিকারের সহিত নিনীকার ফেসবুক একাউন্টে নিজের আইডি এড করে বিয়ের স্ট্যাটাস দিলো। মোবাইল পকেটে ভরে আশেপাশে তাকিয়ে হুট করে চেপে ধরলো নিনীকার হাত। গালে পুরুষালি ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিলো।
বর কনের খাওয়ার সময় এলো। ধ্রুব প্রথম ভাত তুলে নিনীকার মুখেই দিলো।
দিনটা হাসিখুশিতে কেটে গেলেও সন্ধ্যার পর নিনীকার চেহারায় আঁধার নামলো। রমজান শেখ ও মিথিলা চলে যাচ্ছেন। নিনীকা স্থায়ী ভাবে এ বাড়ির একজন হয়ে গেলো। চাইলে শেখ বাড়িতে থাকতে পারবে সে, কিন্তু বিবেক? স্বামীর বাড়িই যে বিয়ের পর স্থায়ী ঠিকানা, সেটা তো নিনীকাকে মেনে নিতে হবে।
মেহমান চলে যাওয়ার পর ফাহিম মাহবুব নিজের শ্বশুর বাড়ির সবাইকে নিয়ে এয়ারপোর্টে রওনা হলেন। বাড়ির হৈচৈ ভাব কমে গেলো। সমুদ্র অবশ্য যাওয়ার আগে ধ্রুবর কানে ফিসফিস করে বলে গেছে,
‘ পরামর্শ তো নিলে না গুরু, বছরের শেষে চাচা বানিয়ে দিও। ‘
(চলবে)