বিয়ে থা_২ পর্ব-১৮

0
58

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১৮
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

বাহিরে তুমুলভাবে বৃষ্টি ঝরছে। ফ্রেশ হয়ে শাড়ির পরিবর্তে নিনীকা শার্ট ও স্কার্ট পড়েছে। বাগানের সাথে লাগোয়া ধ্রুবর রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে সে বৃষ্টি দেখছে। রুমে খাবার দিয়ে গেছে ফারিন দুজনের জন্য। ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে রুমে আসেনি এখনো। নিনীকার ঝিমুনির ভাব এসে গেছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীর বিছানায় পড়ে যেতে চাইছে। কপালে ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়ছে। মাথা ব্যথা সারানের একমাত্র উপায় হলো এই মুহুর্তে ঘুম। খেতে একদমই ইচ্ছে করছে না নিনীকার। সে কি ঘুমিয়ে পড়বে? না সেটা করা যাবে না। আজ তাদের বাসররাত। এই রাত চলে গেলে ফিরে আসবে না। ধ্রুব নিশ্চয়ই অনেক কিছু ভেবে রেখেছে নিজের বিশেষ রাতে নিজের বিশেষ মানুষকে নিয়ে৷ নিনীকা কিছুতেই ঘুমিয়ে ধ্রুবকে দুঃখ দিতে চায় না। এই মুহুর্তে তার একমাত্র পরিচয় সে মেজর ধ্রুব মাহবুবের বউ৷ সুতরাং স্বামীর ভালো কিসে মন্দ কিসে সেটা এখন থেকেই ভাবতে হবে। জানতে হবে, বুঝতে হবে কিসে তার স্বামী খুশি হবে! নিনীকা তার জীবনে এর আগে কোনো মানুষকে এতো ইমপোর্টেন্ট দেয়নি। সদ্য জড়িয়ে পড়া মানুষটা তার স্বামী! এই একটা সম্মোধনটাই যেনো মানুষটাকে তার মনে গেঁথে দিতে যথেষ্ট ছিল। মিশ্র এক অনুভূতি তে নিনীকার দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বুক কেমন কেমন করছে। বিছানায় এখন থেকে স্বামী নামক মানুষটার সাথে ঘুমাতে হবে তাকে! মিডিয়ার সামনে বলা সেই কথাগুলো! নিনীকা হেসে ফেললো। ঘামের গন্ধ ভালোবাসায় রুপ নিয়ে নিবে মনে হয়। মানুষটাকে তার বিরক্ত লাগবে না হয়তো। সময় সবকিছু ঠিক করে দিবে। নিনীকার ভাবনা চুত্য হলো। দরজা লাগিয়ে ভেতরে ঢুকেছে ধ্রুব৷ নিনীকা বারান্দা থেকে রুমে এলো। ধ্রুব বউকে দেখতে পেয়ে নিজের চমৎকার হাসি দিলো। কেমন একটা গলায় ডাকলো,

‘ কাছে আসো মিসেস। ‘

নিনীকা সম্মোহন হয়ে গেলো যেনো। ধীরপায়ে হেটে ধ্রুবর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ধ্রুব পকেট থেকে সদ্য কিনে আনা কিছু একটা বের করলো। বলল,

‘ পড়াবো কিভাবে? ‘

নিনীকা ঠোঁট কামড়ে ভাবলো। চোখ নামিয়ে নিজের পড়োনের শার্টকে দেখলো। বলল,

‘ এখনই পড়াতে হবে? ‘

ধ্রুব নিনীকার মোমের মতো মুখে চোখ বুলিয়ে নিলো। রক্তাভ ঠোঁট দাঁতের চাপে আরও লাল হয়ে উঠছে। যেকোনো সময় রক্ত বেরিয়ে পড়বে যেনো। ধ্রুব ঢুক গিললো। এগিয়ে এসে হাত রাখলো নিনীকার কোমড়ে। দুহাতের সাহায্যে পড়িয়ে দিলো বেলি চেইন শার্টের উপরেই। ধ্রুব সরে যেতেই নিনীকা ওয়াশরুমে চলে গেলো। শার্ট থেকে চেইন নিচে কোমড়ে নামিয়ে বের হয়ে এলো৷ ধ্রুব পরোখ করে বলল,

‘ শাড়ি পড়লে ভালো হতো। ‘

নিনীকা মাথা নাড়িয়ে ব্যাগের দিকে গেলো। ধ্রুব বালিশের নিচ থেকে শাড়ি বের করে দিয়ে বলল,

‘ এটা পড়তে অসুবিধা হবে? ‘

নিনীকা শাড়িটা হাতে তুলে নিলো। সাদা রঙের ঝলমলে শাড়ি। ধ্রুব অকপটে বলল,

‘ প্রথম তোমাকে সাদা শাড়িতেই দেখে আটকে গেছিলাম। ‘

ধ্রুব বারান্দায় চলে গেলো। নিনীকা শাড়ি পড়ে নিজেকে নববধূর মতো করে রাঙিয়ে ফেললো। সর্বোচ্চ চেষ্টা করলো স্বামীর মনের মতো করে নিজেকে তৈরি করার। নিনীকা নিজের কাজকর্মে বার-বার থেমে যাচ্ছে। এর আগে কখনো সে নিজের পরে অন্য কাউকে ভেবে ভালোবেসে কিছু করেনি হয়তো। নিনীকা ধ্রুবকে না ডেকে নিজেই বারান্দায় গেলো। ধ্রুবর চওড়া পিঠ চোখের সামনে তার। নিনীকার ইচ্ছে করলো প্রচন্ড আবেগ নিয়ে মানুষটাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে। নিনীকা নিজেকে শাসালো। হঠাৎ করে স্বামী নামক কাউকে পেয়ে সে আবেগে ভেসে যাচ্ছে! পাছে যদি লোকটা তাকে হেয় করে? আগ বাড়িয়ে অনুভূতি দেখানোর দরকার নেই।

ধ্রুব কারো উপস্থিতি পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো নিনীকাতে। চোখের ইশারায় পাশে এসে দাড়াতে বললো। নিনীকা দাড়াতেই ধ্রুব পকেট থেকে নুপুর বের করলো। হাঁটু গেঁড়ে বসতেই নিনীকার মুখ হা হয়ে গেলো। সিনেমা করা মেয়েটার সিনেমার রোমান্টিক দৃশ্যতে ব্যাপক বিরক্তি ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ধ্রুবর করা কান্ডটিতে তার বিরক্ত লাগছে না। বরং মনে রঙ বেরঙের কিছু একটা উড়তে শুরু করেছে। নিঃশ্বাস অস্বাভাবিক হচ্ছে। কোথাও একটা পুড়ছে। দূরত্ব মিটিয়ে দিতে চাইছে মন।

‘ পা দাও। ‘

নিনীকার পায়ে নুপুর জোড়া পড়িয়ে দিয়ে ধ্রুব উঠে না দাড়িয়ে নিজের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ রাখা নিনীকার চোখে চোখ রেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। নিনীকার মন পুলকিত হলো। এবং চোখের পলকেই ধ্রুব নিনীকার পায়ে ঠোঁট বসিয়ে দিলো।

নিনীকা শক্ত হয়ে গেলো। ধ্রুব উঠে একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। নিনীকার মুখে শ্বাস ফেলে বলল,

‘ বেলি চেইন কোথায়? ‘

নিনীকা ঢুক গিলে শাড়ির কোণা সরিয়ে দেখালো। ধ্রুব নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে হাত বাড়িয়ে সেটা ছুঁয়ে দিলো।

‘ এখানে একটা চুমু খাই? ‘

নিনীকার মনে হচ্ছে তার পায়ের তলায় কিছু নেই। নিজেকে স্বাভাবিক করে উত্তর দিলো,

‘ খেতে পারেন। ‘

ধ্রুব চুমু দিলো না। বরং ছেড়ে দূরত্বে দাড়িয়ে বলল,

‘ আমি তোমার বিয়ে করা বর বলেই কি কোনোকিছুতে আপত্তি করছো না? ‘

নিনীকা নির্দ্বিধায় মাথা নাড়ালো। ধ্রুব লম্বা শ্বাস ছাড়লো,

‘ আমি এটা চাই না। যেদিন আমার জন্যে মনে অনুভুতি জন্মাবে সেদিন জানিয়ে দিও। ‘

‘ অনুভূতি নেই সেটা কি একবারও বলেছি? ‘

‘ আছে তবে? ‘

নিনীকার সহজ স্বীকারোক্তি,

‘ তখন বারান্দায় এসে আপনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিলো। সেটা যদি অনুভুতিহীন হওয়ার কারণে হয়ে থাকে তবে আপনার প্রতি আমার কোনো অনুভূতি নেই।’

ধ্রুব মুহুর্তের মধ্যে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরেছে।

‘ প্রকাশ করো না কেন তবে? ‘

নিনীকা পিঠে হাতের বাঁধন শক্ত করলো।

‘ আমার অনুভূতিকে কেউ একটুও হেয় করলে আমি অপমানে শেষ হয়ে যাবো। ‘

‘ আজ থেকে তোমার আত্নসম্মান, সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। তোমার সবকিছু আজ থেকে আমার। তুমি সবকিছু আমার উপর ছেড়ে দিয়ে অনুভূতি ইচ্ছে মত প্রকাশ করতে পারো। আমি কথা দিচ্ছি রক্ষা করার জন্য আমি থেকে যাবো। ‘

নিনীকার মনে ভরসা টুকু দিয়ে ধ্রুব সবকিছুর সমাধান করে ফেললো যেনো। নিনীকা ধ্রুবকে অবাক করে দিয়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো। ধ্রুব মাথায় হাত রাখতেই ক্লান্ত স্বরে বলল,

‘ অনেক ক্লান্ত লাগছে, ঘুম পাচ্ছে। ‘

ধ্রুব ধীরে ধীরে হেঁটে নিনীকাকে নিয়ে এলো ঘরে। ততোক্ষণে তার গলায় গরম নিঃশ্বাস পড়ছে থেমে থেমে। ধ্রুব বুঝলো তার বউ ঘুমিয়ে পড়েছে। ধ্রুব শব্দ করে হাসতে গিয়ে নিজেকে আটকে ফেললো। নিনীকাকে শুইয়ে দিলো ফুলে সজ্জিত বিছানায়। টেবিলের উপরে ঢাকা খাবার ওভাবেই পড়ে রইলো। ধ্রুব ছুঁয়ে ও দেখলো না।

সকালে যখন ঘুম ভাঙলো তখন নিনীকা কারো শক্ত বাহুতে আটকা পড়ে আছে। নিজের উপর বলিষ্ঠ শরীরের পুরুষকে আবিষ্কার করে তার চোখ কপালে। ধ্রুবর গরম নিঃশ্বাস বুক থেকে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। নিনীকা লজ্জায় মুখ লুকাবে কিভাবে ভেবে পেলো না। অনেক সময় পর ধ্রুবকে ডাকতে লাগলো। ধ্রুব এক বার চোখ মেলে তাকিয়ে সরে গিয়ে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছে আবারও। নিনীকা উঠে বসে বিস্মিত হলো। তার স্পষ্ট মনে আছে শাড়ি পড়েই সে বারান্দায় ধ্রুবর কাঁধে ঘুমিয়ে পড়েছে। তবে তার শাড়ি কোথায় গেলো!

নিনীকা আশেপাশে চোখ ফেলে দেখলো তার শাড়ি অযত্নে নিচে পড়ে আছে। নিনীকার পড়োনে জিন্স। পেটিকোটের বদলে গতকাল জিন্স ব্যবহার করেছে সে। সম্পূর্ণ পেট উন্মুক্ত। সাদা চামড়ায় সোনার সেই বেলি চেইনটা জ্বলজ্বল করছে। নিনীকা হাত বাড়িয়ে সেখানে ছুয়ে দিয়ে বুঝলো জায়গাটায় লাল দাগ পড়ে গেছে। মানুষ টা কি তার ঘুমের সুযোগ নিয়েছে? স্বামীর অধিকার সে নিজ ইচ্ছেতেই তো দিয়ে দিতো। তবে ঘুমের সুযোগ নিলো কেন? তবে যে গতকাল বললো নিনীকার আত্নসম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব তার! নিনীকার কন্ঠো চেপে ধরেছে যেন কেউ। ধ্রুবকে ধাক্কা দিতে লাগলো। ধ্রুব চোখ মেলে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে নিনীকাকে টেনে বুকের উপর নিতে চাইলো। নিনীকা ধ্রুবর উন্মুক্ত বুকে হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে বলল,

‘ কি করেছেন আমার সাথে! ‘

ধ্রুব ঠোঁট উল্টে ঘুম জড়ানো গলায় বলল,

‘ বেশি না চেইনের পাশে কয়েকটা চুমু খেয়েছি শুধু। ‘

নিনীকা রাগ করার বদলে হেসে ফেললো। ধ্রুবর কপালের অগোছালো চুলে হাত চালালো।

‘ পাগল একটা। ‘

ধ্রুব নিনীকার আহ্লাদের সুযোগ নিলো।

‘ তোমারই তো। ‘

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে