#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১৬
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে ধ্রুব। বাড়ির পরিবেশ থমথমে। অনেক আত্মীয় স্বজনরা কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। ধারা ও ফাহিম মাহবুব ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন।
এখন সকাল আটটা। ধ্রুব সোজা হয়ে বসলো। ধারা বলতে লাগলেন,
‘ এসব ফেইক ধ্রুব..’
ধ্রুব তাকে থামিয়ে দিলো। উঠে দাড়িয়ে বলল,
‘ আমি ও বাড়ি থেকে ঘুরে আসছি মা। ‘
ধ্রুব জীপগাড়ি নিয়ে বের হলো। বাহিরে মৃদুমন্দ বাতাস। কপালে উষ্কখুষ্ক চুল পড়ে আছে। পড়োনে টাওজার ও টি-শার্ট।
সাড়ে আটটার দিকে ধ্রুব শেখ বাড়িতে ঢুকলো। সোফায় বসে থাকা মিথিলা ও রমজান শেখের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
‘ নিনীকা কোথায়? ‘
আজ যদি বিয়ে হয় তবে ধ্রুব এ বাড়ির জামাই হয়ে যাবে। বাড়ির হবু জামাই কে বিয়ের দিন সকালে আসতে দেখে চমকালেন না তারা। মিথিলা নিঃশব্দে হাত দিয়ে নিনীকার রুম দেখিয়ে দিলেন।
ধ্রুব গটগট পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠলো। রুমের দরজা বন্ধ। ধ্রুব দরজায় হাত দিয়ে শব্দ করে ডাকলো,
‘ নিনীকা দরজা খুলুন। ‘
পাঁচ সেকেন্ডের মাথায় দরজা খুলে গেলো। ধ্রুব রুমে ঢুকে দরজা লক করে নিনীকার মুখোমুখি হলো। হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে নিনীকা৷ ধ্রুব খুঁটিয়ে দেখলো। চোখ ফুলে আছে। গাল, নাক লাল। হয়তো কেঁদেছে।
‘ আপনি? ‘
ধ্রুব খাটে বসলো। নিনীকাকে পাশে বসতে ইশারা করলো। নিনীকা একটু দূরত্ব রেখে বসে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি ব্যাপার? ‘
‘ আপনি জানেন না? ‘
নিনীকা এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে ধ্রুবর দিকে তাকালো। ধ্রুব তাকিয়েই ছিল। বলল,
‘ আপনার কি কিছু বলার নেই? ‘
‘ আপনি ভিডিও টা দেখেছেন? ‘
‘ না, দেখতে ইচ্ছে করেনি। ‘
নিনীকা নিজের মোবাইল গেঁটে বের করে ধ্রুবর সামনে ধরলো।
‘ দেখুন তবে। ‘
ধ্রুব হাতে নিলো না। চোখ রাখলো স্কিনে। একটি ছেলে ও মেয়ে ফিজিক্যাল করছে। শরীর সাদা চাদরে ঢাকা। ছেলেটির মুখের একপাশ দেখা যাচ্ছে। মেয়েটির মুখ ও অস্পষ্ট। দেখতে কিছু টা নিনীকার মতো লাগছে হয়তো। ধ্রুব চোখ বন্ধ করে ফেললো। নিনীকা মোবাইল টা সরিয়ে নিয়ে বলল,
‘ এবার বলুন। ‘
ধ্রুব চোখ মেলে স্বাভাবিক হয়ে বলল,
‘ ভিডিও টা যে এডিটিং করা হয়েছে তা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে। ‘
‘ তবে আপনি এলেন কেন? কি ভেবেছেন সত্যি হবে? ‘
ধ্রুব এবার এক পা তুলে বসলো। আলগোছে নিনীকার একটি হাত টেনে ধরলো।
‘ আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম নিনীকা। ‘
‘ কিসের ভয়? ‘
ধ্রুব কথা পাল্টালো,
‘ আপনার ক্যারিয়ারে কখনো বাজে কোনোকিছু হয়নি। এবার কে বা কারা আপনার ক্যারিয়ারে দাগ লাগাতে চেষ্টা করেছে আমি জানি না। তবে আমি আপনাকে বিশ্বাস করি নিনীকা। ‘
নিনীকা শব্দ করে হাসলো।
‘ এটা ঠিক আমার ক্যারিয়ারে কোনো বাজে দাগ পড়েনি। তবে এবার পড়ে যেতো। কিন্তু যে এডিট করেছে সে হয়তো ততোটা কাজে পারদর্শী নয়! সেজন্য যে-ই ভিডিও টা দেখবে সেই বুঝতে পারবে যে এটা এডিট করে বানানো হয়েছে৷ এবং ইতিমধ্যে সোশ্যাল ওয়ালে এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা ও হচ্ছে। বেশিরভাগটাই আমাকে নিয়ে পজিটিভ আলোচনা। ‘
ধ্রুব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
‘ কে এমন করতে পারে বলে আপনার সন্দেহ হয়? ‘
‘ দেখুন আজ আমার বিয়ে। যে এসব করেছে তার উদ্দেশ্য ছিল আমার ক্যারিয়ারে মারাত্মক একটি দাগ লাগানোর। সে চাইছিল আমার বিয়ে ভেঙে যাক। ‘
বলেই নিনীকা হাসলো। ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ আমি এটা ক্লিয়ার করতে চাই। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আমি খুঁজে বের করবো, কে এরকম করেছে! ‘
নিনীকা মাথা নাড়ালো। ধ্রুবর বুক এখনো কাঁপছে। ঢুক গিলে বলল,
‘ আমি সত্যিই অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম। ‘
‘ কি ভেবেছিলেন? ‘
ধ্রুব করুণ স্বরে বলল,
‘ মনে হচ্ছিল আপনাকে হারিয়ে ফেলবো। ‘
নিনীকা হু হা করে হাসলো।
‘ দুপুরে বরযাত্রী নিয়ে আসার কথা, আপনি তো সকাল হতে না হতেই চলে এসেছেন! ‘
‘ নিনীকা! ‘
‘ বলুন? ‘
‘ গতকাল আপনি একটি মিটিং করেছেন। সেটা কি উদ্দেশ্যে আমাকে কি জানানো যাবে? ‘
‘ বিয়ের পর জেনে যাবেন। ‘
‘ ঠিক আছে, আমি তবে আসছি। ‘
ধ্রুব নিনীকার হাত ধরেই উঠে দাড়ালো। দরজা খুলে বের হয়ে যাবার আগে আচমকা আলতো করে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো। সেকেন্ডের গতিতে ছেড়ে বের হয়ে গেলো। ব্যাপার টা এতো দ্রুত হলো যে নিনীকা কিছু সেকেন্ড হা করে তাকিয়ে থেকে শরীর দুলিয়ে হেসে নিচে পড়ে গেলো৷
নিচে রমজান শেখ ও মিথিলার মুখোমুখি হলো ধ্রুব। বলল,
‘ আমাকে প্লিজ আটকাবেন না আন্টি, কিছু ঘন্টা পর এমনই আসছি। তখন যতো খুশি খাওয়াবেন আমি না করবো না। ‘
মিথিলা হেসে ফেললেন। ধ্রুব বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলো। রমজান শেখ স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন,
‘ বার-বার প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে আমি নিনীকার জন্যে সঠিক কাউকেই চ্যুজ করেছি মিথি। ‘
*
শেখ বাড়িতে ঢুকতেই সবাই ধ্রুবকে ঘিরে ধরলো। ধারা কাঁদোকাঁদো গলায় বললেন,
‘ ওগুলো ফেইক বাবা, তুই প্লিজ বিয়ে ভাঙিস না। ‘
ফারিন শব্দ করে কাঁদছে।
‘ ভাবী এরকম হতেই পারে না ব্রো। তুমি ভুল বুঝছো। কেউ নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে এমন করেছে যাতে বিয়ে ভেঙে যায়! ‘
ফাহিম মাহবুব ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন।
‘ কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা তা বুঝতে শিখার মতো বয়স তোমার অনেক আগেই হয়েছে। সেজন্য আমি তোমাকে নতুন করে কিছু বলবো না। যা-ই করবে ভেবেচিন্তে করবে। যাতে পরে আফসোস না করতে হয়।’
সমুদ্র কাচুমাচু ভঙ্গিতে এসে দাঁড়ালো। ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ কি ভয়াবহ ব্যাপার গুরু! আমি তো প্রথমে বুঝতেই পারিনি ওটা যে ফেইক। আসলে তখন এতোকিছু মাথায় আসেনি। সেজন্য কি থেকে কি বলে ফেলেছি। তুই প্লিজ ওগুলো মাথায় নিস না। ইতিহাস বলে স্টার নিনীকা শেখ ইজ এ গুড উইমেন্স ইন দ্যা ফিল্ম ওয়াল্ড!’
ধ্রুবর পুরো গোষ্ঠী ধ্রুবর সামনে নিনীকাকে নিয়ে পজিটিভ কথা বলছে। ধ্রুব হাত ভাজ করে দাড়িয়ে সেগুলো শুনছে। সবার বলা শেষ হওয়ার পর বললো,
‘ আমি কি একবারও বলেছি যে বিয়ে করবো না? ‘
ধারা প্রশ্ন করলেন,
‘ তবে ওভাবে বের হয়ে গেলি কেন? জানিস কতো ভয় পেয়েছি? ভেবেছি তুই বিয়ে করবি না বলে চলে যাচ্ছিস রাগ করে। ‘
ধ্রুব ঠোঁট চেপে হাসলো।
‘ তার উপর আমার বিশ্বাস আছে মা। আমি শুধু তার এমন পরিস্থিতিতে তার পাশে থাকতে গিয়েছি। তুমি জানো চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। ‘
ধারা মুখে হাত দিয়ে বললেন,
‘ তুই ও বাড়িতে গেছিলি? ‘
ফারিন উৎফুল্ল হয়ে বলল,
‘ তুমি সত্যিই রেগে নেই! তার মানে বিয়ে টা হচ্ছে! ‘
ধ্রুব উপরে চলে যেতে লাগলো।
‘ বিয়ে না করার কোনো কারণ নেই, তবে বিয়ে করার অনেক কারণ আছে। ‘
সমুদ্র পিছু পিছু চলে এসেছে।
‘ কারণগুলো শেয়ার করবে না গুরু? ‘
ধ্রুব ঠা*স করে সমুদ্রের গালে থাপ্পড় দিলো। সমুদ্র গালে হাত রেখে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ মা*রলে কেন গুরু? ‘
ধ্রুব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ তোর ওই কথাগুলো আমার বুক কাপিয়ে দিয়েছিল সে খবর কি তুই রাখিস? একটুর জন্য আমি যদি হার্ট অ্যাটাক করে মা*রা যেতাম, তবে নিনীকাকে অন্য কেউ বিয়ে করে ফেলতো হয়তো! শালা দূর হো আমার রুম থেকে! ‘
সমুদ্র সুর সুর করে বের হয়ে গেলো। ধ্রুব চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই সেই কয়েক সেকেন্ড তার চোখে ভেসে উঠলো। জড়িয়ে ধরার জন্যে নিনীকা কি তাকে পানিশমেন্ট দিবে?
ধ্রুব কি করলো কে জানে, দুপুরের আগেই সোশ্যাল ওয়াল থেকে এডিট করা ভিডিও নাই হয়ে গেলো!
(চলবে)