#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১৫
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
আজ নিনীকার গায়ে হলুদ। শেখ বাড়িতে গ্রাম থেকে আত্মীয় স্বজনরা ভীড় করেছেন এসে। মিথিলার ভাইয়েরা এসেছেন। তাদের বউ, ছেলেমেয়ে সবাই বিবাহিত। এবং তাদের ও বাচ্চা আছে। পুরো গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহ উপযুক্তদের মাঝে নিনীকারই বিয়ের বাকি ছিল।
নিনীকাকে সাজানো হয়েছে। হলুদ লেহেঙ্গা ও সত্যিকারের তাজা ফুলের গহনা পড়েছে সে। চারিদিকে মিডিয়ার অভাব নেই৷ সিনেমা জগতের অনেকেই এসেছেন। নিনীকার গায়ে হলুদ শুরু হয়ে গেলো। ও বাড়ি থেকে এক ঘন্টা আগেই ফোন করে জানানো হয়েছে ধ্রুবর গায়ে হলুদ হয়ে গেছে। ফারিন ও ধ্রুবর কিছু কাজিন এসেছে শেখ বাড়িতে।
রমজান শেখ ও মিথিলার পরে ফারিনই নিনীকার গালে হলুদ ছুঁয়ে দিলো। ক্যামেরাম্যান তো ছবি তুলছেই, সে নিজেও নিনীকার সাথে ছবি তুলে নিলো। আড়ালে দাড়িয়ে পাঠিয়ে দিলো ধ্রুবকে।
ধ্রুবদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার পাট চুকানো হচ্ছে। তারপরই সবাই ঘুমিয়ে পড়বে। আগামীকাল বরযাত্রীতে যাবে দুপুরের দিকে। অতো তাড়া নেই কারো। ধ্রুব হলুদের পর গোসল করে বিছানায় বাবু হয়ে বসে আছে সব কাজিনদের মধ্যমনি হয়ে। তখনই ফারিন ছবি পাঠালো। ধ্রুব দেখার আগেই তার মোবাইল নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেলো। বিশেষ করে সমুদ্র, সে ধ্রুবকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সবাইকে কাহিনি শুনিয়ে দিয়েছে। সেই থেকে সবাই ধ্রুবকে নিয়ে রসিকতা করছে।
ধ্রুব কিছু বলতেও পারছে না। শুধু নিরবে সহ্য করে যাচ্ছে। এরা সবাই তার বড়ো নয়তো সমবয়সী। কিছু বলাও যাবে না। ফারিন ছবি পাঠিয়েছে ধ্রুব দেখবে বলে, অথচ সবাই দেখার পর ধ্রুবকে দেখতে দেওয়া হলো।
ধ্রুবর এক মেয়ে কাজিন মেহেদী আর্টিস্টদের বিদায় করেছে। সে নিজেই সবাইকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে৷ সবার শেষে ধ্রুবর হাতে নিনীকার নাম ছাড়া আর কিছু লিখতে পারেনি। মূলত ধ্রুব দেয়নি।
ফারিন ওখানেই নিনীকার সাথে মেহেদী পড়ে নিলো। ধ্রুবকে ছবিও পাঠালো। এইবার ধ্রুবই সবার আগে ছবিগুলো দেখলো। নিনীকার হাতে তার নামের অক্ষর স্পষ্ট করেই লেখা হয়েছে। ধ্রুব মনে মনে বলল,
‘ মিস নিনীকার মনে কবে লেখা হবে? ‘
ফারিন ফিরলো এগারোটার পর। ধ্রুব আগে থেকেই বোনের রুমে চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল। আসতেই মোবাইল কেঁড়ে নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকেছে। ফারিন ফ্রেশ হতে যাওয়ার আগে ঠোঁট বাকিয়ে বলে গেলো,
‘ বুড়ো বয়সে ভীমরতি। ‘
ধ্রুব কথাটা শুনেও শুনল না। ফারিনের মোবাইল গ্যালারিতে আরও কিছু নতুন ছবি যুক্ত হয়েছে। নিনীকার অনেকগুলো ছবি যেগুলো তাকে পাঠানো হয়নি। ফারিন বের হতেই সে কান টেনে ধরলো।
‘ ছবি পাঠাসনি কেন? ‘
ফারিন ফুসফুস করে উঠলো,
‘ এগুলো আসার সময় তুলেছিলাম, দেওয়ার সময় পাইনি। তাই বলে তুমি এমন করবে? আমি পাপাকে বিচার দিবো। ‘
ধ্রুব গালে মৃদু জোরে হাত ছুঁইয়ে থাপ্পড় দেওয়ার ভঙ্গি করলো। ফারিন তাতে আরও রেগে গেলো। উচু গলায় ডাকলো,
‘ মাম্মা পাপা দেখো ব্রো আমাকে মারছে! ‘
ধ্রুব নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে আবারও বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। ফারিন হাত ধরে টেনে নামাতে চেষ্টা করলো।
‘ তুমি বের হও, আমার বিছানায় তুমি ঘুমাবে না। তোমাকে আমি একটুও ভালোবাসি না। তুমি আমার ভাই নও। তুমি প্রতিবেশী মেয়েদের ভাই। বুঝেছো? ‘
ধ্রুব শরীর দুলিয়ে হাসলো।
‘ প্রতিবেশী বোনদের ডেকে আন, তাদের দায়িত্ব দিবো দিনরাত যাতে তাদের ভাবীর সব আপডেট আমাকে দেয়। তোর মতো ফাঁকিবাজ কে আমার দরকার নেই। ‘
ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
‘ ঠিক আছে, দেখো আর কখনো তোমার কোনো কাজ করে দেই কি না! দেখবো তোমার প্রতিবেশী বোনরা কি কি করে। ‘
ধ্রুব মাথা নাড়ালো। ফারিন ভীষণ ক্লান্ত। বলল,
‘ আমি ঘুমাবো। ‘
ধ্রুব ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ তো ঘুমা, তোকে কি আমি ধরে রেখেছি? ‘
‘ তুমি হাত পা ছড়িয়ে পুরো খাট দখল করে শুয়ে আছো। আমি কোথায় ঘুমাবো? নিনীকা ভাবীকে ফোন করে বলবো বাপের বাড়ি থেকে বড়ো একটা খাট নিয়ে আসতে। তোমার জন্যে বেচারি শান্তি পাবে না, আমি বুঝতে পারছি। ‘
ধ্রুব হতভম্ব হয়ে এক কোণে চেপে গেলো। ফারিন ক্লান্ত শরীর ছেড়ে দিয়ে বলল,
‘ তুমি কি আজ এখানে ঘুমাবে? ‘
‘ যাই করি তোর সমস্যা কি? তোকে বলবো কেন? হু আর ইউ? ‘
‘ সে-ই তোমার কাজ শেষ হয়ে গেছে তো। এখন তো আমি কোনো কাজে আসবো না। ঠিক আছে দেখবো, দরকার হলে কাকে দিয়ে কাজ করাও। ‘
ধ্রুব উঠে বসলো।
‘ বাবার থেকে জানলাম তুই নাকি প্রেমে পড়েছিস! সত্যি? ‘
ফারিন তড়িৎ গতিতে উঠে বসলো।
‘ তোমাকে বাবা জানিয়ে দিলো! ইশ..’
ধ্রুব দাঁত বের করে হাসলো,
‘ কেন অসুবিধা হলো? মাকে বলে দেই? ‘
ফারিন তৎক্ষনাৎ রুপ বদল করে ফেলেছে। ধ্রুবর গলায় ঝুলে গাল টেনে দিলো।
‘ আমার লক্ষী ভাইয়া, তুমি কতো ভালো। আমি তোমাকে নিনীকা ভাবীর একটি সিক্রেট পিক দেখাবো। দেখবে? ‘
ধ্রুবর ভ্রু কুঁচকে গেলো,
‘ কিরকম সিক্রেট পিক? ‘
ফারিন মোবাইল গেঁটে কিছু একটা বের করলো। ধ্রুবর সামনে ধরে বলল,
‘ গতকাল রাতে ভাবীর সাথে কিছু নায়ক, প্রডিউসার, সিনেমা জগতের অনেকের মিটিং হয়েছে। কি বিষয়ে জানি না, তবে সেখানে কারো যাওয়া নিষেধ ছিল জানো। আমি যে বারান্দায় ছিলাম কেউ জানতো না। হি হি, লুকিয়ে ছবি তুলে রেখেছি। দেখো। ‘
ধ্রুব ছবিটা দেখলো। সিনেমা জগতের অনেক পরিচিত মুখ সেখানে। কি বিষয়ে মিটিং হতে পারে? হয়তো সিনেমা নিয়েই। কিন্তু একটা সিনেমার জন্যে কখনো নিশ্চয়ই দু-তিন জন করে এক ক্যাটাগরির মানুষ উপস্থিত হবে না! কি জন্য মিটিং হতে পারে ধ্রুব ভেবে পেলো না। ফারিনকে বলল,
‘ এটা তোমার করা উচিত হয়নি বনু, কারো ব্যক্তিগত কিছু না জানিয়ে এভাবে প্রকাশ করা ঠিক না। সে আমি হলেও না। মিটিং টা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং সিক্রেট রাখার মতো কিছু, তুমি আর কাউকে এ ব্যাপারে বলবে না কেমন? ‘
ফারিন অবাক হয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ ঠিক আছে ব্রো। ‘
ধ্রুব কথা ঘুরালো,
‘ ক্যাপ্টেন নিরবকে তোর সত্যিই পছন্দ? ‘
ফারিন ঠোঁট বাকিয়ে বলল,
‘ তোমাকে কেন বলবো? হু আর ইউ? ‘
নিজের কথা ফিরে পেয়ে ধ্রুব হতাশ হলো।
‘ ঠিক আছে চলে যাচ্ছি। পরে যদি ক্যাপ্টেন বেবি নিয়ে এসে আমাকে বলে মেজর এটা আমার একমাত্র বাচ্চা তবে কিন্তু তুই কিছু বলতে পারবি না। ‘
‘ কিহ! ‘
ধ্রুব হনহন করে বেড়িয়ে গেছে ততোক্ষণে। ফারিন রাগে রীতিমতো ফুঁসছে৷ ধ্রুবর মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে তার।
*
রাত বারোটার পর নেট দুনিয়া উত্তাল হলো! বউ কথা কও তখন গভীর নিদ্রায়। শেখ বাড়িতে ঘুমন্ত নিনীকার সাইলেন্ট ফোনে এসে চলেছে একের পর এক ফোনকল। নিশ্চিন্তে ঘুমানো নিনীকা জানতেও পারলো না আগামীকালের সকালে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে!
ধ্রুব ভোরে উঠে শরীরচর্চা করে। সমুদ্র ও তার সাথে উঠে পড়ে। মোবাইলে চোখ রেখে মাঝেসাঝে ধ্রুবকে দেখে। ধ্রুব তখন একনাগারে বুক ডাউন দিচ্ছিলো। তখনই সমুদ্র প্রায় চিৎকার করে উঠলো।
‘ ধ্রুব সি ইজ এ চিটার! ই’উর স্টার উডবি ভাইরাল! কাম ফাস্ট ব্রাদার। ‘
ধ্রুবর বুক ডাউন থেমে গেলো। বাগান পেরিয়ে চিন্তিত হয়ে সে পাতা টেবিলের কাছের একটি চেয়ারে বসলো।
‘ কি হয়েছে? ‘
সমুদ্র ঢুক গিলে অসহায় হয়ে বলল,
‘ একদম দুঃখ পাবে না কথা দাও গুরু! সিনেমা জগতের কেউই ভালো হয়না সেটা তো তুমি জানতে তাই না? এটা এখানেই শেষ করে দাও। বিয়ে আজ হতো তবে হয়নি এখনো। তুমি বেঁচে গেছো। ‘
ধ্রুবর অবিশ্বাস্য উদ্বিগ্ন গলায় বলে উঠলো,
‘ হোয়াট! ‘
(চলবে)