#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১৪
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
আজকে ফারিনকে শেখ বাড়ি থেকে চলে যেতে হলো। আগামীকাল থেকে গায়ে হলুদ, সুতরাং ধারার দেওয়া শর্তানুযায়ী সে আর শেখ বাড়িতে থাকতে পারবে না। সকালে ধ্রুব গিয়ে তাকে নিয়ে এসেছে। বাড়িতে আসার পর থেকে ফারিন মুখ গোমড়া করে বসে আছে। চারিদিকে আত্নীয় স্বজনের ভীড়। সবাই কাজে ব্যস্ত। ধারা মাঝে মধ্যে এটা সেটা করতে বলছেন ফারিনকে। ফারিন ইতিমধ্যে কয়েকটা ধমকও খেয়ে ফেলেছে। ধারেকাছেও ফাহিম মাহবুব কে দেখা যাচ্ছে না। ফারিনের ঠোঁট ফুলে যাচ্ছে সে যেকোনো সময় কেঁদে ফেলতে পারে।
সময় টা বিকেল। সদর দরজা দিয়ে ফাহিম মাহবুব ঢুকলেন। সাথে ধারার পরিবার। মূলত এয়ারপোর্টে এদেরই রিসিভ করতে গেছিলেন ফাহিম মাহবুব। ধারার মা বাবা বেঁচে নেই৷ ভাইয়েরা পরিবার নিয়ে বিদেশে সেটেল্ড। একমাত্র বোনের একমাত্র ছেলের বিয়ে উপলক্ষে তাদের আসতেই হলো।
বাবাকে দেখে ফারিন আচমকা কেঁদে ফেললো। আহ্লাদীর মতো দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো বুকে। ফাহিম মাহবুব আকস্মিক ঘটনায় অবাক হলেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে হায় হায় করে উঠলেন।
‘ ধারা! আমার রাজকন্যা কাঁদছে কেন! এতো লোক বাড়িতে থাকতে আমার মেয়ে কান্না করছে কেন! আশ্চর্য, কয়েকঘন্টা বাড়িতে ছিলাম না, তোমরা আমার মেয়েকে কে কি বলেছো? ‘
ধারা বিরক্তি নিয়ে তাকালেন।
‘ তোমার মেয়েকে কেউ কিছু বলতে হয় নাকি? ‘
ধারা দাঁড়ালেন না। অনেকদিন পর নিজের ভাই ও তার পরিবারকে দেখে তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ফাহিম মাহবুব সোফায় বসে মেয়েকে নিচু কন্ঠে বললেন,
‘ কি নিয়ে কান্না করেছো মা? ‘
ফারিন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ফাহিম মাহবুব মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
‘ কার উপর অভিমান করেছো? ‘
ফারিন আকস্মিক প্রশ্ন করলো,
‘ আমি কি অনেক ছোট বাবা? ‘
ফাহিম মাহবুব একটু বেশিই অবাক হলেন।
‘ আমার কাছে তুমি সবসময়ই আমার আদরের ছোট রাজকন্যা। ‘
ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে ফেললো আবারও। ফাহিম মাহবুব বিস্মিত হলেন।
‘ কি হয়েছে? ‘
‘ তুমি বাবা হয়ে যদি আমাকে ছোট বলো ওই নিরব ফিরব ছোট বোন মনে করবে না কেন? ‘
কথা বলতে ভুলে যাওয়া ফাহিম মাহবুবকে রেখে ফারিন গটগট পায়ে উপরে চলে গেলো। উপরে এসে অনেকক্ষণ পর সে বুঝতে পারলো বাবাকে এসব বলা উচিত হয়নি। বাবা নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সে যখন নিচে নামলো তখন ধারেকাছেও ফাহিম মাহবুব নেই।
ফারিন বিকেলটা আফসোস করেই কাটালো। সন্ধ্যার পর ফাহিম মাহবুব বাসায় ফিরলেন। ফারিন তৎক্ষনাৎ ঝাপিয়ে পড়েছে। বার-বার স্যরি বলেছে। অথচ তাকে আশ্চর্য করে দিয়ে ফাহিম মাহবুব বললেন,
‘ তুমি তখন কি বলেছো আমি বুঝতেই পারিনি মা, রাগ করা তো পরের বিষয়। আগে বাবাকে সেটা বুঝিয়ে বলো। তারপর ভাববো রাগ করা যাবে কি না। ‘
বাবা মেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে সোফায় বসলেন। ফারিন কাচুমাচু করতে করতে বলল,
‘ একজনকে আমার পছন্দ হয়েছে বাবা, সে আমাকে ছোটবোনের নজরে দেখে। তুমি আমাকে তখন ছোট বলেছো সেজন্য না বুঝে রেগে গেছিলাম। ‘
ফাহিম মাহবুব কিছু সেকেন্ড পরই শরীর দুলিয়ে হেসেছেন। ফারিন ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ হেঁসো না, আমি সিরিয়াস হু। ‘
মেয়ের কাঁধে হাত জড়িয়ে ফাহিম বললেন,
‘ ছেলেটা কে? ‘
‘ ভাইয়ার ওই ক্যাপ্টেন, নিরব আয়মান। ‘
‘ তোমাকে কি বলেছে? ‘
‘ বাবা, ভাবীদের বাসায় থাকতে আমি কোচিং থেকে বের হয়ে ভাবীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখন ওই ক্যাপ্টেন হঠাৎ সামনে গাড়ি থামিয়ে বলে উঠে পড়তে বাসায় পৌঁছে দিবে। আমি না করেছি সেজন্য বলেছে আমি নাকি ছোটবোনের মতোই। ‘
‘ তুমি কি বলেছো? ‘
‘ আমি কিছু বলিনি! ‘
ফাহিম মাহবুব মেয়ের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করলেন,
‘ এ বিষয়ে তুমি কি সিরিয়াস? দেখো বয়সটা আবেগের, সবকিছুই ভালো লেগে যাবে। কিন্তু আমার মেয়ে তো বুদ্ধিমান সে জানে কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয়। ‘
‘ আমি বুঝতে পারছি না বাবা। ‘
‘ মাই চাইল্ড তুমি আগে নিজের অনুভূতি নিয়ে শিওর হও। নিরব ভালো ছেলে, যদিও তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়, বাট নো প্রব্লেম এসব তেমন ফ্যাক্ট হবে না। বাবা আছি না? সময় নিয়ে ভাবো। ‘
ফারিনের চোখমুখ উজ্জ্বল হলো। ফাহিম মাহবুব বললেন,
‘ আমার কাছে তুমি সবসময়ই ছোট থাকবে। আমার মেয়ে আমার একমাত্র আদরের রাজকন্যা তুমি। তবে তোমার বয়স কয়েকদিন পর আঠারো হবে। বাহিরের সবার কাছে তুমি বড় হয়ে যাবে। ‘
‘ সত্যি? ‘
ফারিনের চোখমুখ চিকচিক করছে। সে যে কথাটা শুনে খুশি হয়েছে তা বুঝা যাচ্ছে। ফাহিম মাহবুব হাসি চেপে বললেন,
‘ এটাই সত্যি মা। তুমি তোমার অনুভূতি সম্পর্কে ভাবো। নিরবের বয়স যে পর্যায়ে আছে তাতে ওর বিয়ের তেমন দেরি নেই। সময় হাতে কম। আমার মেয়ে যদি দুঃখ পায় সেটা আমার সহ্য হবে না। তুমি শীগগির আমাকে জানাবে। ‘
ফারিন গলা জড়িয়ে ধরলো,
‘ আমার প্রিয় বাবা..’
*
সন্ধ্যা থেকে রুমে পায়চারি করছে ধ্রুব। ফারিন চলে এসেছে মানে সে আর নিনীকার কোনোরকম আপডেট পাবে না। যোগাযোগ করার কোনো রাস্তা বাকি নেই। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তাকে। খাটের উপর ধ্রুবর বিদেশ থেকে আসা দুটো সমবয়সী মামাতো ভাই বসে আছে। তারা ধ্রুবর কান্ড দেখে হাসছে৷ দুজনই বিবাহিত। তাদের মধ্যে একজন বলল,
‘ এতো অস্থির হচ্ছিস কেন? ঠিক সময়ে বিয়ে করিস নি এখন অস্থির হয়ে লাভ আছে? অপেক্ষা কর ধ্রুব অপেক্ষা কর। ‘
ধ্রুব কোণা চোখে তাকালো,
‘ খুব মজা লাগছে তোদের? ‘
‘ অফকোর্স। আমার মামাতো কাজিন তোর জন্য কতো পাগল ছিল। না তুই বেটা রাজি হলি না। সে বেচারি বিয়ে করে বিদেশে সেটেল্ড। দু বাচ্চার মা হয়ে বসে আছে। এদিকে তুই এখনও ভার্জিনটি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস! ভাবতেই আমার দুঃখ হচ্ছে তোর জন্য৷ তা মামা কোনো ব্যবস্থা করবো নাকি? যেভাবে অস্থির হচ্ছিস মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে সামনে হাজির না করলে তুই মা*রা পড়বি। ‘
ধ্রুব অসহায় চোখে তাকালো,
‘ কোনো ব্যবস্থা করতে পারবি? ওকে একটু দেখবো শুধু! ‘
ধ্রুবর মামাতো ভাই সমুদ্র হাই তুললো,
‘ ফোন করস না কেন? ‘
‘ ফোন করতে পারলে কি এভাবে অস্থির হয়ে পায়চারি করি? আমার নাম্বার ব্লক লিস্টে রেখেছেন ম্যাডাম, অধিকার পাওয়ার পর নিজে সেটা খুলতে বলেছে। ‘
সমুদ্র নিজের মোবাইল এগিয়ে দিলো।
‘ নে এটা দিয়ে ফোন কর। ‘
ধ্রুবর চোখ চিকচিক করে উঠলো। পরমুহূর্তে থেমে গিয়ে বলল,
‘ নাহ্, সে যদি অন্যভাবে নেয়? ‘
সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ তাহলে ম্যা ম্যা করা বাদ দে। এক কাজ কর নাম্বার দে আমিই কথা বলি। তুই শুধু শুনে যাবি। দেবর হিসেবে তো আমি কথা বলতেই পারি তাই না? ‘
ধ্রুব নাকচ করলো। অনুভব করলো সে মারাত্মক হিংসুটে হয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের সাথে নিনীকা কথা বলবে এটা তার সহ্য হবে না৷
রাতে খাওয়ার পর সমুদ্র হাই তুলতে তুলতে বলল,
‘ দারুণ ফেঁসে গেছিস মনে হচ্ছে, লাভ কেস নাকি গুরু?’
ধ্রুব রাগ দেখাতে গিয়ে ও হেসে ফেললো।
‘ লাভ হবে হবে ভাব। ‘
‘ সিগনাল কিরকম? ‘
ধ্রুব পাশে শুয়ে বলল,
‘ তার পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিগন্যাল আসেনি। ঝুলে আছি। ‘
(চলবে)