#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১৩
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
বিয়ের শপিং করতে এসে নিনীকার দেখা পেলো ধ্রুব। সঙ্গে দুই পরিবারের সকলেই রয়েছেন। আজ থেকেই সবকিছু কেনাকাটা করছেন তারা। যদিও আগে একবার করেছেন তবে এখনো অনেক কিছু কেনা বাকি। ধারা নিনীকাকে নিয়ে বিশাল এই শপিং মলের শাড়ি লেহেঙ্গা কিছু দেখাতে বাদ রাখেন নি। মুখে মাস্ক পড়া নিনীকার গরমে হাসফাস লাগছিলো। কখন এখান থেকে বের হতে পারবে সেটাই ভাবছিলো। কিন্তু এখনো তার কোনো কিছু পছন্দ হলো না। ধারা ফাহিম মাহবুব ও রমজান শেখের সাথে দাড়ানো ধ্রুবকে ডাকলেন। আসতেই ক্লান্তি নিয়ে বললেন,
‘ ধ্রুব তোমার বউয়ের কিছু পছন্দ হচ্ছে না, এই নাও তুমিই ওকে নিয়ে পছন্দ করো সব। আমি একটু বসে নেই। ‘
ধ্রুবর হাতে নিনীকাকে তুলে দিলেন যেনো ধারা। নিনীকা ধ্রুবর বউ কথাটা কতো স্পষ্ট করে বলে গেলেন। নিনীকা লজ্জায় নয় প্রথমবার কারো বউয়ের সম্মোধনে কেমন কুণ্ঠাবোধ করলো। ধ্রুব হয়তো বুঝতে পারলো। চট করে মুখ ঘুরিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল,
‘ চলুন ঘুরে দেখি। ‘
ধ্রুব ঘুরে ঘুরে একটি শাড়ির দোকানে থামলো। লাল রঙের চকচকে সুন্দর কারুকাজ করা একটি শাড়িতে চোখ পড়তেই সেটা দেখাতে বললো৷ এবং আশ্চর্যের বিষয় এবার শাড়িটা নিনীকার চোখে পড়তেই সেটা পছন্দ হয়ে গেলো। শাড়িটা দারুণ দেখতে। নিনীকা খুশিটা আটকে রাখলো না। বলল,
‘ নাইস, এটা আমার পছন্দ হয়েছে। এটাই বিয়েতে পড়বো। ‘
ধ্রুব অবাক চোখে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ শিওর? ‘
নিনীকা দ্রুত মাথা নাড়াতে লাগলো। ধ্রুব চমৎকার ভঙ্গিতে হেসে বলল,
‘ ওকে ইট’স ফাইনাল। ‘
ধারা শাড়িটা দেখে মুগ্ধ হয়ে বললেন,
‘ আমার চোখে এতোক্ষণ এটা পড়েনি কেন? তবে যাই বলো ধ্রুবর চয়েস ভালো। আমি এতোক্ষণ কতো কি দেখালাম পছন্দ হলো না, কিন্তু যেই ধ্রুব দেখালো তোমার পছন্দ হয়ে গেলো। এবার থেকে তোমার জন্য কিছু কিনলে ধ্রুবকে চয়েস করে দিতে বলবো। ‘
নিনীকা সুর সুর করে মিথিলার কাছে গেলো। মিথিলা নিনীকার গায়ে হলুদ ও মেহেদীর শাড়ি চ্যুজ করছিলেন। ধ্রুব সেদিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো৷ ধারা তাকে টেনে নিয়ে গেলেন,
‘ তুমিই সব চয়েস করে দাও ধ্রুব, নাহলে তোমার বউয়ের পছন্দ হবে না বাবা। ‘
নিনীকার সবকিছু ধ্রুবর চয়েসেই কেনা হলো। নিনীকার সাথে আজ ফারিনের ও শপিং করা শেষ। এবার ধ্রুব ও বাকিরা করবে। তবে আজ নয়। বাকিটা তারা যেকোনো দিন করে নিবে। নিনীকার শপিং শেষ মানে স্বস্তি। কোনোরকম তাড়াহুড়ো নেই আর।
বিকেল হয়ে গেছে। সবাই একটি বড় রেস্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছে। ধ্রুবর জীপগাড়িতে নিনীকা বসেছে সামনে। পেছনে ফারিন বসে বসে চিপস খাচ্ছে। ড্রাইভিং করার ফাঁকে ধ্রুব নিনীকার সেদিনের রাগটা ভাঙাতে চাইলো। ডাকলো,
‘ মিস নিনীকা? ‘
নিনীকা তাকাতেই বলল,
‘ এখনো কি ক্ষমা করেন নি? ‘
অনেকক্ষণ পর নিনীকা মিষ্টি কন্ঠে বলল,
‘ আপনার উপর আমার কোনো রাগ নেই। আপনার নাম্বারটা ব্লক লিস্টে আছে। আপনি নিজেই না-হয় ব্লক লিস্ট থেকে নাম্বারটা তুলবেন। ততোদিন অপেক্ষা করুন না একটু। ‘
ধ্রুব ঠোঁট চেপে মাথা নাড়ালো। নিনীকা ঠোঁট প্রসারিত করে বলল,
‘ আপত্তি থাকলে আমি করে ফেলছি। ‘
ধ্রুব সঙ্গে সঙ্গে না করলো।
‘ একদম না, আমি নিজেই সেটা করবো সময় হলে। ‘
মাস্কের আড়ালে নিনীকা ঠোঁট চেপে হাসছে। ধ্রুব আড়চোখে নিনীকার চিকচিক করা চোখ দেখে সেটা বুঝে ফেললো। ফারিন আচমকা চিৎকার করে গাড়ি থামাতে বললো। ধ্রুব রেগে তাকালো,
‘ কি সমস্যা তোর? ‘
ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
‘ ফুচকা খাবো ব্রো। ‘
‘ প্রতিদিন কত মন ফুচকা খাস তুই? পেটে অসুখ বাঁধবে না? ‘
ফারিন নিরীহ চোখে তাকালো,
‘ আমার সাথে ভাবিও খায়। ‘
ধ্রুব চট করে নিনীকাকে দেখে নিয়ে বলল,
‘ যতো ইচ্ছে খেতে থাকো দুজন, অসুস্থ হলে উল্টো করে ঝুলিয়ে পে*টাবো। ‘
ফারিন পিটপিট করে তাকিয়ে বলল,
‘ আমাকে একা? নাকি ভাবিকেও? ‘
ধ্রুব দারুণ ফেসাদে পড়লো যেনো। সে দেখলো নিনীকাও উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। অনেক ভেবে জবাব দিলো,
‘ যারা আমার নিজের তাদের সবাইকে পে*টাবো। সে তোর ভাবি হলেও রেহাই নেই। ‘
ফারিন অভিজ্ঞদের মতো মাথা নাড়ালো,
‘ তোমার দ্বারা সব সম্ভব৷ আর্মির মেজর বলে কথা। ‘
ফারিন কথাটা বলে থেমে থাকলো না। গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দিলো ফুচকা স্টলের দিকে। ধ্রুব বোকা হয়ে সেদিকে হা করে তাকিয়ে আছে দেখে নিনীকা শব্দ করে হেঁসে ফেললো।
‘ ও আপনাকে কথার মধ্যে ফাঁ*সিয়ে নেমে চলে গেলো।’
ধ্রুব তৎক্ষনাৎ জীপ থেকে নামলো। ফুচকা স্টলটায় রাস্তা পাড় হয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ তাদের গাড়ির বিপরীতে সেটা। ফারিন মাঝখানে আটকে আছে গাড়ির জ্যামে পড়ে। এবার নিনীকাও চিন্তিত হয়ে নেমে দাড়ালো। ফারিনের অবস্থান দেখে মুখে হাত তার।
‘ সর্বনাশ, একটু এদিক সেদিক হলেই ওর উপর গাড়ি উঠে যেতে পারে। ‘
ধ্রুব রাগে ঘাড়ে মাসাজ করছে। নিনীকা ঢুক গিললো। আর্মি অফিসারদের অনেক রাগ হয় তনু আপা বলেছেন তাকে। নিনীকা দেখলো ধ্রুব রাস্তা পেরিয়ে মাঝখানে চলে গেছে। ফারিন পেছনে একবারও তাকায় নি। ধ্রুব দু’হাতে বোনকে কোলে তুলে রাস্তা পেরিয়ে ফুচকা স্টলে নিয়ে গেলো। ফারিন প্রথমে ভড়কে গেলেও ধ্রুবকে দেখে গলা জড়িয়ে ধরে হাসছিলো। যেনো সে জানতো তার ভাই তাকে বিপদ থেকে বাঁচাতে আসবেই।
ফারিন একটা ফুচকা খাচ্ছিল আর সাথে ধ্রুবর একটা ধমক। নিনীকা জীপে হেলান দিয়ে ওপর পাশের সেই দৃশ্য দেখছে। ফারিনের খাওয়া হয়ে গেলে ধ্রুব ফিরে এলো। গাড়িতে বসে নিনীকার দিকে প্যাক করা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ এখানে অনেক জ্যাম, এই শয়তানটা নেমে গেছে দেখলেন তো। আপনাকে নামিয়ে আর রিস্ক নেইনি। গাড়িতে বসেই খেয়ে নিন। ‘
ফারিন পেছনে বসে মুখ বাকালো। তার হাতে প্যাক করে আনা ফুচকা। খেয়ে আরও এনেছে যাতে গাড়িতে বসে খেতে পারে। ধ্রুব একবার পেছনে তাকিয়ে দেখলো তার বোন গপাগপ করে খাচ্ছে। একটা মানুষ এতো খেতে পারে কিভাবে, তাও যদি সে হয় লিলিপুট। ধ্রুব চেপে না রেখে জিজ্ঞেস করে ফেললো,
‘ তোর পেট এতো ছোট, জায়গা হচ্ছে কিভাবে? ‘
ফারিনের মুখ অপমানে থমথমে। কিছু কড়া কথা শুনাতে চাইছিল সে। তার আগেই ধ্রুবর ফোন বাজলো। এতোক্ষণে যেনো ধ্রুবর মাথায় এলো তারা রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিল খেতে। রমজান শেখ ফোন করে ছিলেন, ধ্রুবর থেকে মোবাইল নিয়ে নিনীকা কথা বলল,
‘ বাবা আমরা ফুচকা খাচ্ছি বুঝলে৷ তোমরা বরং রেস্টুরেন্টে খাও। আমরা এখানেই আছি৷ বাসায় পৌঁছে যাবো চিন্তা করো না। তোমরাও সাবধানে ফিরো। ‘
কথা বলে ধ্রুবর মোবাইল এগিয়ে দিলো সে। ধ্রুবর পেট ক্ষিধায় জ্বালাতন করছে। সে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ আপনাদের কি পৌঁছে দিবো এখন? ‘
নিনীকার যেনো মনে পড়লে হঠাৎ। বলল,
‘ আরে আপনি তো কিছু খাননি, সামনে কোনো রেস্টুরেন্টে চলুন তো। খেয়ে তারপর ফিরে যাবো না-হয়। আমার সত্যি মনে ছিল না। ‘
ধ্রুব মাথা দুলিয়ে গাড়ি চালানোতে মন দিলো। ফারিন পেছন থেকে বলল,
‘ ব্রো তোমার যদি বেশি খিদে পায় তবে আমার থেকে ফুচকা নিয়ে খেতে পারো। কি দিবো? ‘
ধ্রুব রেগে গলা উঁচু করে বলল,
‘ আর একটা কথা বলবি তবে রাস্তায় ফেলে দিবো বলে দিলাম। ‘
ফারিন আর কোনো কথা বললো না। রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে নিনীকা ও ফারিনকে শেখ বাড়িতে পৌঁছে দিলো ধ্রুব। যাওয়ার আগে নিনীকা নিচু কন্ঠে বলল,
‘ আমি সত্যি জানতাম না বা মনে ছিল না সেজন্য দুঃখীত। এটার জন্যে আপনাকে আমি একদিন রেঁধে খাওয়াবো না-হয়। তাহলে শোধবোধ হয়ে যাবে তাই না?’
ধ্রুবর থেকে উত্তর এলো,
‘ একদিন নয়, প্রতিদিন যদি কেউ যত্ন করে রেঁধে খাওয়ায় তবে আমি রাজি