#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১১
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
রমজান শেখ রোজকার মতো সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরেছেন। গত দুদির ধরে অফিস থেকে ফিরে ডোয়িং রুমে বসে ফারিন ও নিনীকার সাথে আড্ডা দেওয়াটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আজ ও আড্ডা দিতে বসেছে সবাই। রুম্পা নাস্তা এনে ছোট টেবিলে রেখে নিজেও বসলো সোফায়। ফারিনের চটপটে স্বভাব তারও ভালো লাগে। শেখ বাড়ির সবাইকে দুদিনে যেনো নিজের বশে এনে ফেলেছে ফারিন।
সবার সাথে আড্ডা দেওয়ার মধ্যে ফারিনের মোবাইলে ধ্রুবর মেসেজ আসছে সেকেন্ডের গতিতে। ফারিন চোখমুখ শক্ত করে বসে আছে। তার ভাই যে তাকে দুদণ্ড শান্তিতে বসতে দিবে না সেটা যেনো পণ করেছে।
ফারিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আজ ধ্রুবর কোনো মেসেজ সিন করবে না। সকালবেলা বলবে মোবাইলে চার্জ ছিল না। ব্যস!
রাত নয়টা তখন। ফারিনকে পড়াচ্ছে নিনীকা। মাঝে মধ্যে ভাবছে ধ্রুবর কথা। আচমকা ফারিনকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ তোমার ভাই কি বিজি থাকে? ‘
ফারিন চোখ না তুলেই জবাব দিলো,
‘ আপাতত ছুটিতে, বিজি থাকার প্রশ্নই আসে না। ‘
ব্যস নিনীকা নিজের উত্তর পেয়ে গেলো। চোখমুখ শক্ত হলো তার। মানুষটা কি তাকে অবহেলা করছে?
রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত মোবাইল হাতে নিয়ে নিনীকা এসবই ভাবলো। দু’দিন ধরে ধ্রুব কোনোরকম ফোনকল করছে না। তবে কেন সেদিন নিজ থেকে ফোন দিয়ে নিনীকাকে নতুন কিছুর আশা দিলো! ব্যাপার টা নিনীকার আত্নসম্মানে আঘাত করছে ভীষণ ভাবে। ঘুমানোর আগে সে ধ্রুবর নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেললো। মোবাইল টা অফ করে রাখলো।
মধ্যরাতে পায়চারি করতে করতে ধ্রুব যখন নিনীকার মোবাইলে ফোন করলো তখন বন্ধ পেলো। একে তো ফারিনের উপর রাগ, তার উপর নিনীকার মোবাইল বন্ধ! ধ্রুবর রাগটা দ্বিগুণ বাড়লো। ভাব হবার আগেই ভাঙন হওয়ার সম্ভাবনা!
পরদিন ফারিনকে কোচিং-এ ড্রপ করে ফিরছিলো নিনীকা। সামনে জীপগাড়ি থামলেও কোনোরকম ভাবাবেগ দেখালো না সে। ধ্রুব নিজেই গাড়ি থেকে নেমে নিনীকার গাড়ির কাঁচে ঠুকা দিল। কাচ নামাতেই বলল,
‘ কথা আছে আমার। ‘
‘ যা বলার বলে ফেলুন। ‘
নিনীকার মধ্যে নিরুৎসাহিত ভাব। ধ্রুব আহত হলো মনে মনে। বলল,
‘ বেশি সময় নিবো না। ‘
অগত্যা বের হতে হলো নিনীকাকে। গাড়ি থেকে বের হয়ে ধ্রুবর জীপগাড়িতে উঠে বসলো। ধ্রুব কয়েক মিনিট চুপ থেকে বলল,
‘ আপনার মোবাইল বন্ধ দেখাচ্ছে কেন? কেউ যে চিন্তা করতে পারে সেটা কি আপনার মনে নেই? ‘
‘ দুদিন যখন কেউ চিন্তা করেনি, তাহলে মোবাইল বন্ধ দেখালে যে কেউ চিন্তা করবে সেটা ভাবা বিলাসিতা। ‘
ধ্রুব থমথমে কন্ঠে বলল,
‘ আমি এক্সপ্লেইন করছি মিস..ফারিনের মাধ্যমে আপনার খুঁজ খবর নিয়ে নিতাম, গতকাল সন্ধ্যা থেকে ফারিন আমার কোনোরকম কল বা মেসেজ সিন ওর রিসিভ করছিল না। সেজন্য আমি অপেক্ষা করতে করতে মধ্যরাতে আপনাকে ফোন করেছিলাম। আই নো দ্যাট আপনি অপেক্ষা করছিলেন। আ’ম স্যরি নিনীকা। ‘
‘ ফারিনের মাধ্যমে খুঁজ নিতেন যেহেতু এখনও তাই নিন না-হয়। ‘
‘ নিনীকা প্লিজ বুঝতে চেষ্টা করুন! ‘
নিনীকা তাকালো,
‘ কি বুঝবো? ‘
ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ ওকে ওকে আমি বলছি। আসলে আমি দেখতে চেয়েছিলাম আপনি নিজ থেকে আমাকে স্মরণ করেন কি না। প্লিজ অভিমান করে থাকবেন না। আ’ম স্যরি এগেইন মিস হিরোইন৷ ‘
নিনীকা অবাক হলো।
‘ আপনাকে কে বললো আমি অভিমান করেছি? ‘
ধ্রুব হাসলো,
‘ কাউকে বলতে হবে কেনো, যাকে দু’দিন পর নিজের সাথে জড়াবো তার স্বভাব, মুখ দেখে মনের কথা পড়ে নেওয়া সবকিছুর দায়িত্ব তো আমারই হবে। সেটা এখন থেকেই পালন করতে চেষ্টা করছি। ‘
নিনীকা বলল,
‘ ওকে মিস্টার, আপনি তবে বিয়ের আগ পর্যন্ত ফারিনের থেকেই খুঁজ খবর নিন। নাম্বার টা ব্লক লিস্ট থেকে সেদিনই বের করবো, যেদিন আপনার সাথে জড়িয়ে যাবো। ‘
ধ্রুব অসহায় চোখে তাকালো। নিনীকা নির্লিপ্ত ভাবে জীপগাড়ি থেকে নেমে চলে গেলো। ধ্রুব চেয়ে চেয়ে দেখলো নিনীকার কালো রঙের গাড়িটা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
ধ্রুব বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরলো। ধারা ছেলের মুখ দেখে চিন্তিত হলেন। দুপুরে খেতে বসেও ধ্রুবর চেহারা একই ছিল। ধারা যে পছন্দের সব খাবার রান্না করেছেন সেটাও কেমন অনিচ্ছুক ভাবে খেলো। ধারা জিজ্ঞেস করেই ফেললেন,
‘ কি হয়েছে ধ্রুব? ‘
ধ্রুব মুখ কালো করে বলল,
‘ বিয়ের ডেট টা এগিয়ে আনা যায় না মা? ‘
‘ কেন তোমার কি ছুটি বাতিল হয়ে গেছে? ‘
ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে না করলো।
‘ কিছু না মা, আ’ম আপসেট না-ও। ‘
ধারা মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন।
‘ কি নিয়ে ব্যাটা? ‘
ধ্রুব সব বললো। শুনে ধারা বললেন,
‘ এটা হয়তো তোমার করা উচিত হয়নি। স্যরি বলেছো তো? সব ঠিক হয়ে যাবে সময় দাও। ‘
ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো রুমে। ধারা সোফায় বসে ভাবলেন, অবশেষে ধ্রুব কারো জন্যে ভাবছে। নিনীকার সাথে দেখা করতে যাওয়ার আগে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ধ্রুব কি কঠিন স্বরেই না বলেছিল উত্তর একই থাকবে!
রুমে এসে ধ্রুব অনেকক্ষণ নিনীকার নাম্বারে ট্রাই করলো। না ব্লক খুলেনি। ধ্রুব মনে মনে পাষাণ উপাধি দিলো নিনীকাকে। রাত দশটার পর ফারিনের হয়তো মায়া হলো। ধ্রুবর মেসেজের উত্তর দিলো। ধ্রুব ফারিনকে ধমক না দিয়ে নিনীকার বিষয়ে কথা বলতে লাগলো। ফারিনকে পরে দেখে নিবে সে। আপাতত চুপ থাকাই শ্রেয়, নাহলে ফারিন তাকে কোনোরকম আপডেট দিবে না৷
নিনীকার সাথেই ঘুমায় ফারিন। ধ্রুবর সাথে মেসেজে কথা বলার মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়েছে। নিনীকা ফারিনের মোবাইল নিয়ে ধ্রুবর সব মেসেজ দেখলো। শেষ মেসেজটা ছিলো,
‘ তোর ভাবি অনেক রাগ করেছে বুঝলি, বুঝিয়ে বলিস একটু। আমি তো এতকিছু ভেবে কিছু করিনি। জানতাম নাকি মহারানী এতো রাগ করে ফেলবে। ‘
নিনীকা মেসেজটা পড়ে হাসলো৷ রিপ্লাই দিলো,
‘ ঠিক আছে বলবো। ‘
সেকেন্ডের গতিতে সেটা সিন করেছে ধ্রুব। নিনীকা অবাক হচ্ছে শুধু। ধ্রুব লিখেছে,
‘ সে কি ঘুমিয়ে গেছে? একটা ছবি তুলে পাঠা তো বনু। ‘
নিনীকা চোখ বড়বড় করে মেসেজটা দেখলো। এটার উত্তরে কি বলবে সে বুঝতে পারছে না। কিছু না বলাই শ্রেয় ভেবে মোবাইল টা রেখে দিলো।
সকালে ফারিন মোবাইলে ধ্রুবর মেসেজ দেখে তেমন কিছু বুঝতে পারলো না। কারণ রাতে সে ঘুমের ঘুরেও কয়েকটা মেসেজের উত্তর দিয়েছিল। নিনীকা যে তার হয়ে ধ্রুবর সাথে কথা বলেছে সেটা তার ভাবনাতেও এলো না।
নাস্তা করার মধ্যে ফারিনকে পরখ করছিল নিনীকা। ধরা পড়েনি বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। ফারিন যদি তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতো তবে সে বিব্রতবোধ করতো অনেক। যতোই হোক মেয়েটা তার অনেক ছোট।
রাতের কথা ভেবে নিনীকা নাস্তা করতে করতে মিটিমিটি হাসছিল। সেটা লক্ষ্য করে ফারিন প্রশ্ন ছুড়লো,
‘ তুমি হাসছো কেন ভাবি? ‘
নিনীকা বিষম খেতে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নিয়েছে। এরা ভাই বোন দুটোই ডেঞ্জারাস।
‘ ফানি একটি বিষয় মনে পড়েছে, সেজন্য হাসছি। ‘
ফারিন মাথা নাড়িয়ে খেতে মন দিলো। নিনীকা আড়চোখে রুম্পাকে দেখলো। যে তার দিকে তখন থেকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ স্বাভাবিক, নিনীকা স্বভাববিরুদ্ধ কাজ করছে, রুম্পা এভাবে তাকাবেই। নিনীকা সোজা হয়ে বসে খেতে লাগলো। রুম্পার নজর নিজের উপর ভেবে তার দারুণ অস্বস্তি হচ্ছে। মনে হচ্ছে সে চুর!
(চলবে)