#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১০
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
আজ শেখ বাড়ি থেকে প্রথমবার কোচিং-এ গেছিল ফারিন। এখন বিকেল গড়িয়ে গেছে। নিনীকা বলেছিল তাকে নিতে আসবে। সেজন্য রাস্তায় দাড়িয়ে আছে সে। ফারিন চারিদিকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল। তন্মোধ্যে তার সামনে এসে থামলো একটি কালো গাড়ি। নাহ্ গাড়িটা নিনীকার নয়। কালো হলেও নিনীকার গাড়ি একটু অন্যরকম। ফারিনকে অবাক করে দিয়ে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে মুখ বের করলো নিরব।
‘ আপনি কি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন মিস? ‘
ফারিন বিস্ময়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। নিরবকে সে আশা করেনি। নিরব ফারিনের মুখের হা করা দেখে ইতস্তত করে বলল,
‘ আপনি মেজরের বোন তো? ‘
ফারিন রোবটের মতো মাথা নাড়াতেই নিরব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
‘ গ্রেট, সেজন্যই আমি আপনাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামিয়েছি। বাট আপনার রিয়াকশন দেখে মনে হচ্ছিল আমি হয়তো ভুল কাউকে মেজরের বোন ভেবে ফেলেছি। ‘
ফারিন হেসে ফেললো এবার। চঞ্চলতা তার কন্ঠে।
‘ কোথায় যাচ্ছিলেন আপনি? ‘
নিরব সরল হাসি দিলো।
‘ একটু কাজ ছিল ম্যাম সেজন্য বের হয়েছিলাম। আপনি যদি উঠে বসেন তবে আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আমি আর্লি চলে যেতে পারি। ‘
ফারিন মুখ বাকালো। কি সুন্দর ম্যাম ম্যাম করছে! কেনরে বেটা? তোর কোন কালের ম্যাম লাগি! মুখে বলল,
‘ আপনাকে কষ্ট করতে হবে না, ভাবী গাড়ি নিয়ে আসবে। আমি তার সাথেই যাবো। আপনি বরং সে না আসা পর্যন্ত আমার সাথে গল্প করুন। ‘
নিরব অসহায় চোখে তাকালো। মেজরের ছোট বোন বলে সে এক ধরনের দায়িত্ব থেকেই হেল্প করতে এসেছিলো। গল্প করার মুড বা ইচ্ছে কোনটাই এখন তার নেই।
ফারিন জিজ্ঞেস করল,
‘ আপনি বিয়ে করেছেন? ‘
নিরব অদ্ভুত চোখে তাকালো এবার। নিজেকে সামলে বললো,
‘ না আপনার ভাবি এখনো আসেন নি। ‘
ফারিনের উত্তর টা পছন্দ হলো না।
‘ কে ভাবি? ‘
‘ আমি বিয়ে করলে যে আসবে সে। ‘
এমন স্পষ্ট উত্তরে ফারিন পাল্টা কি বলবে ভেবে পেলো না। নিরবের উত্তর তার ভালো লাগে নি। এরমধ্যেই নিরব আবার ও বলল,
‘ মেজরের হবু ওয়াইফ কি সত্যি আসবেন? আপনি বিনা সঙ্কোচে গাড়িতে উঠতে পারেন। আপনি আমার ছোটবোনের মতোই। ‘
ফারিন তেতে উঠলো,
‘ কিসের ছোটবোন মশাই? আপনি কি আমাকে সম্পত্তির ভাগ দিবেন? ‘
নিরব আশ্চর্য হয়ে গেলো। তারা দু’ভাই। কোনো বোন নেই বলে নিজের থেকে ছোট কাউকে দেখলেই তার বোন বোন ফিলিংস আসে। তাছাড়া মেজরের বোন মানেই তো তার বোন! এই সহজ হিসাবটার এমন গড়মিল করছে কেন মেয়েটা?
গলা কাঁকড়ি দিয়ে বলল,
‘ আপনি মেজরের বোন যেহেতু সেহেতু আমারও বোনের মতোই। ‘
ফারিন নাক ফুলিয়ে বলল,
‘বোনের মতোই কিন্তু বোন না! ‘
নিরব এমন আশ্চর্য মেয়ে এর আগে দেখেনি। কি পটপট করে কথা বলে। নিরব কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু তার আগেই সামনে থামা একটি কালো গাড়িতে উঠে গেলো ফারিন। নিরব বেআক্কল হয়ে ভাবলো শুরুতে মেয়েটার গলার স্বরে চঞ্চলতা ছিল বোন বলতেই সেটা উধাও হয়ে গেলো কেন!
নিনীকার পাশে গাল ফুলিয়ে বসে আছে ফারিন। হাতে কোণ আইসক্রিম। নিনীকা ড্রাইভিংয়ের ফাঁকে ফারিনকে খেয়াল করছে।
‘ মন খারাপ কেন বারবিডল? ‘
ফারিন অদ্ভুত একটি প্রশ্ন করলো।
‘ আমি কি অনেক বেশিই ছোট ভাবী? ‘
‘ না তো, এ মাসটা শেষ হলেই তো তোমার আঠারো হয়ে যাবে। তুমি তো অলরেডি বড় হয়ে গেছো। ‘
‘ তাহলে সবাই আমাকে বোন বানায় কেন? ‘
নিনীকা চিন্তিত হয়ে বলল,
‘ কে ডেকেছে? ‘
‘ ধরো তুমি কাউকে পছন্দ করো, সে তোমাকে ছোট বোন হিসেবে দেখে! তখন তোমার কেমন লাগবে? ‘
‘ কাকে পছন্দ করো তুমি? ‘
‘ বলবো না। ‘
ফারিন গাল ফুলিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকলো। নিনীকা গাড়ি সাইড করলো।
‘ যাকে পছন্দ করো তাকেও তো জানতে হবে, যে তুমি তাকে পছন্দ করো। নাহলে তো তোমাকে ছোট বোন কেন অন্য কিছু ও ভাবতে পারে। যেমন তোমার ভাইকে আমি আগে এয়ারপোর্টে দেখেছি। তখন আমার কাছে সে শুধুমাত্র একজন আর্মি অফিসার ছিল। বাট এখন সে আমার হবু, সবকিছু ঠিক থাকলে আমাদের বিয়ে হবে। সে আমার বর হয়ে যাবে। সম্পর্কের বদল হবে। ‘
ফারিনের মুখে হাসি ফুটলো,
‘ আমি কি তাকে পছন্দের ব্যাপারে বলে দিবো? ‘
নিনীকা ফারিনের উচ্ছসিত মুখশ্রীটি দেখলো কয়েক সেকেন্ড।
‘ পছন্দ করো, সেটা বলাতে কোনো দোষ নেই। একটা ছেলে যেমন একটা মেয়েকে পছন্দ করলে প্রপোজ করে তেমনই একটা মেয়ে ও একটা ছেলেকে প্রপোজ করতে পারে। কিন্তু তার আগে তোমাকে নিজের অনুভূতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে হবে। তোমার এই বয়সটা আবেগের। এ সময় অনেককেই ভালো লাগবে। কিন্তু ভালো লেগেছে বলে তাকে প্রপোজ করে সম্পর্কে যেতে হবে তেমন না। তুমি তার সাথেই সম্পর্কে যেতে পারো যার প্রতি তোমার ভালো লাগাটার স্থায়িত্ব হবে সারাজীবনের জন্য। দু’দিনের ভালো লাগার জন্যে কারো সাথে সম্পর্কে গিয়ে নিজের চরিত্রে দাগ লাগানোর কোনো মানে নেই। এবং আমি মনে করি এগুলো তুমিও জানো এবং বুঝো। ‘
ফারিন মাথা নাড়ালো,
‘ আমি জানি এগুলো ভাবি। বাট তুমি এখন বুঝিয়ে বললে বলে আমি ভাবতে বাধ্য হবো। এবং নিজের অনুভূতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করেই কিছু করতে এগোব। ঠিক আছে? ‘
নিনীকা গাল টেনে দিলো।
‘ দ্যাটস গুড গার্ল। ‘
‘ তুমি জানতে চাইবে না সে কে? ‘
নিনীকা ড্রাইভিং শুরু করেছে আবারও।
‘ কে? ‘
‘ থাক এখন বলবো না। আগে নিজের অনুভূতি পাকাপোক্ত ভাবে জেনে নেই। ‘
নিনীকা শব্দ করে হাসলো। ফারিনের ফোনে নোটিফিকেশনের শব্দ হলো। ফারিন দেখলো তার ভাই লিখেছে,
‘ কোথায় আছিস এখন? ‘
ফারিন উত্তর দিলো,
‘ গাড়িতে, কোচিং থেকে বাড়িতে যাচ্ছি। ‘
ধ্রুব লিখেছে,
‘ একটা ছবি তুলে দে তো লুকিয়ে। ‘
ফারিন চট করে নিনীকার কাঁধে মুখ রেখে দুজনের সেলফি তুলে ফেললো। নিনীকা সেটা স্বাভাবিক ভাবেই নিলো। ধ্রুবকে পাঠিয়ে দিয়ে ফারিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। ধ্রুব অনেকক্ষণ পর রিপ্লাই দিলো,
‘ একা ছবি দিতে বলেছি, পুরোটাতে তো তোর বান্দরমুখটাই দেখা যাচ্ছে বেশি। ‘
ফারিন ফুঁসে উঠে লিখলো,
‘ আর পারবো না। আমাকে আবার বকা দিলে ভাবিকে বলে দিবো তোমার মতলব। ‘
ধ্রুব সেটাতে এংরি রিয়েক্ট দিয়ে রিপ্লাই দিয়েছে,
‘ বাসায় আয় একবার। তুলে একটা আছাড় মা*রবো দেখিস। ‘
ধ্রুবর মেসেজে স্পষ্ট ধমক টের পেরো ফারিন। মোবাইল বন্ধ করে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে রইলো। নিনীকা খেয়াল করে বলল,
‘ কি হয়েছে? ‘
‘ ভাবি আমি আচার খাবো, ফুচকা খাবো, ঝালমুড়ি খাবো, চটপটি খাবো। ‘
নিনীকা অবাক হয়ে বলল,
‘ খাবে, তাতে মন খারাপ করার কি আছে? ‘
‘ তুমি কি আমার সাথে খেতে পারবে? ‘
নিনীকা ভেবে বলল,
‘ অবশ্যই। গাড়িতে বসে একসাথে খাবো। ‘
নিনীকা ফুচকা স্টলের সামনে গাড়ি থামালো। ফারিন অর্ডার দিয়ে এসে গাড়িতে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর ফুচকাওয়ালা ফুচকা দিয়ে গেলেন। দুজন খেতে খেতে কথা বলতে লাগলো। এই ফাঁকে চোখ বন্ধ করে ফুচকা খেতে ব্যস্ত নিনীকার একটি ছবি তুলে ফেললো ফারিন। ধ্রুবকে সেটা পাঠিয়ে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
(চলবে)