#বিয়ে_থা_২
#পর্ব- ০২ + ০৩
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
বাড়ির নাম বউ কথা কও। বিশাল আভিজাত্যপূর্ণ ডোয়িং রুমে আত্নীয় স্বজনদের ভীড়। ফাহিম মাহবুব ও তার স্ত্রী ধারা আহমেদের বিবাহ বার্ষিকী আজ। নিজের বয়সী কিশোরীদের সাথে গানের তালে নাচছে একটি মেয়ে। পড়োনে বারবি ফ্রক। মেয়েটির নাম ফারিন মাহবুব৷ এ বাড়ির একমাত্র রাজকন্যা। সবার মুখে হাসি থাকলেও ধারার মুখে হাসি নেই। আর মাত্র কিছু সময়, তারপরই তিনি কেক কা*টবেন। তার একমাত্র ছেলে বাড়িতে নেই। বলেছিল আসতে চেষ্টা করবে। ধারা ছেলের আসার অপেক্ষায় আছেন এখনো।
সময় গড়ালো। সবাই কেক কা*টার জন্য অপেক্ষা করছে। ফাহিম মাহবুব স্ত্রীর গোমড়া মুখ দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ছেলেটা আসছে কি না আদোও কে জানে। হয়তো আসবেই না। ধারার হাত টেনে নাইফ ধরিয়ে দিলেন। ধারা ছলছল চোখে তাকিয়ে না করলেন।
‘ ও আসবে দেখো। আরেকটু! ‘
ফাহিম মাহবুব অসহায় চোখে আশেপাশে তাকালেন। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে তার পুরনো কর্নেল বন্ধু ও তার স্ত্রী রয়েছেন। রাত বেড়ে যাচ্ছে, সবাই অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়িতে ফিরে যাবে। আর কতক্ষণ এভাবে অপেক্ষা করাবেন!
আরও পাঁচ মিনিট সময় দেখে ধারার হাত টেনে নাইফ ধরলেন। কেক-এ নাইফ লাগাতেই সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো আর্মি ইউনিফর্ম পরিহিত বলিষ্ঠ শরীরের একজন পুরুষ। ধারা তৎক্ষনাৎ হাত ছাড়িয়ে নিলেন। দৌড়ে গেলেন সেদিকে। আছড়ে পড়লেন ছেলের বুকে।
‘ ধ্রুব..’
ধ্রুব দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো,
‘ মা..আমি এসেছি৷ ‘
ধারার কন্ঠে অভিমান ঝরে পড়লো।
‘ এতো দেরি করলে কেন! আরেকটুর জন্য কেক কে*টে ফেলতে হতো। ‘
‘ কেক কে*টে ফেললে কিছু হতো না মা৷ এরকম কতো কেক তুমি নিজে তৈরি করে খাইয়েছো। চাইলেই বানিয়ে আমার সামনে কা*টতে পারবে যখন তখন। ‘
‘ আজ তোমার বাবার ও আমার বিবাহবার্ষিকী ব্যাটা, তোমরা দু ভাই বোন যদি পাশে না থাকো তো কেমন করে হবে? আমাদের জীবনে তোমরা দুজনই তো আছো শুধু। ‘
‘ আ’ম স্যরি মাই মাদার। চলুন কেক কা*টবেন। ‘।
ধ্রুব মাকে নিয়ে কেকের সামনে দাঁড়ালো। ফাহিম মাহবুব ফারিনকে নিজের সামনে দাড় করালেন। মা বাবার বিবাহবার্ষিকীর কেক হলেও ছেলেমেয়েসহ কা*টা হলো। এবং এমনটাই চাইছিলেন ধারা। এবার তাকে সবচেয়ে বেশি খুশি দেখাচ্ছে।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সবাই চলে গেলেন। বাড়িতে শুধু তারা চারজন ও একজন সার্ভেন্ট। ধ্রুবর পড়োনে এখনো ইউনিফর্ম। ধারা ছেলেকে তাড়া দিলেন।
‘ ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে বসো ধ্রুব। তোমার পছন্দের সবকিছু রান্না করেছি। ‘
ধ্রুব হাত-মুখ ধুয়ে টেবিলে বসলো। ফারিন বাবার হাতে খাচ্ছে। খাওয়ার ফাঁকে ভাইকে দেখে নিলো। বলল,
‘ ইউনিফর্ম ছাড়োনি কেন? ‘
ধ্রুব আড়চোখে নিজের মাকে দেখে নিলো। যিনি প্লেটে সবরকমের খাবার তুলে দিতে ব্যস্ত৷ ধারা ছেলের সামনে চেয়ার টেনে বসলেন। খাইয়ে দিতে লাগলেন। ধ্রুবর ইচ্ছে হলো না কিছু বলে মাকে এখন কষ্ট দিতে।
‘ কেমন হয়েছে ধ্রুব? ‘
‘ সবসময়ের মতোই সুস্বাদু৷ বিশেষ করে মিট। ‘
‘ সকালে কলিজা ভুনা করে দিবো, তোমার ফেভারিট পরোটা দিয়ে খাবে। ‘
ধ্রুব চুপচাপ খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে যখন সবাই সোফায় বসলো তখনই সে বলল,
‘ আমার আসলে ছুটি নেই মা। আর্জেন্ট বলে এসেছি। এখনই ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা হতে হবে। তবে কথা দিচ্ছি কয়েকমাস পর ছুটি পেলে পুরোটা সময় বাড়িতে থাকবো। তোমার হাতের সুস্বাদু খাবার খাবো। ফ্যামিলি ট্যুরে ও যাবো। ‘
ধারা ইতিমধ্যে কেঁদে ফেলেছেন। ধ্রুব হাঁটু গেঁড়ে বসলো। দুহাতে মুখ তুলে ধরলো।
‘ প্লিজ মা। তুমি যদি না বুঝো কে বুঝবে বলো তো? আমি যদি না যাই তবে কথা রাখা হবে না। তুমি তো সেরকম শিক্ষা আমাকে দাওনি বলো। ‘
ধারা নাক টেনে বললেন,
‘ সাবধানে যেও। তাড়াতাড়ি ফিরবে কিন্তু। ‘
ধ্রুব জড়িয়ে ধরলো,
‘ কয়েকমাস পরই ফিরবো, এবং তাড়াতাড়ি ফিরবো কথা দিচ্ছি। ‘
ফারিন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ মিস ইউ ভাইয়া। ‘
ফারিনের গালে টান পড়লো।
‘ মিস ইউ টু মাই লিটল সিস্টার্স। বনুর জন্য কি আনবো? ‘
‘ কিছু লাগবে না, তুমি তাড়াতাড়ি এসো। আমরা সবাই তোমাকে অনেক মিস করি। ‘
ফাহিম মাহবুব ছেলের কাঁধে চাপড় দিলেন। তিনি একটু আগেই জেনেছেন ধ্রুব গুরুত্বপূর্ণ মিশনে দেশের বাহিরে যাবে। বললেন,
‘ সফল ও সুস্থ হয়ে ফিরে এসো বাবা।
ধ্রুব পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে গটগট পায়ে সদর দরজা পেরোলো। উঠে বসলো জিপগাড়িতে। পেছনে একবারও না তাকিয়ে দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করে যেতে লাগলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আগে তাকে টিমের কাছে পৌঁছাতে হবে। তারপর সবাইকে নিয়ে সকালে এয়ারপোর্টে!
ধারা গোমড়ামুখে ফাহিম মাহবুবকে বললেন,
‘ তোমার বন্ধুকে না করে দাও, বলো কয়েকমাস পর সব হবে ধ্রুব ফিরলেই! ‘
ফাহিম মাহবুব চিন্তিত হলেন,
‘ সে নাহয় বলবো, ধ্রুব রাজি হবে তো? ‘
‘ সেটা কিভাবে বলবো, ছেলেটার সাথে তো ঠিক করে দুটো কথা ও বলতে পারলাম না। ভাবলাম সকালে ধীরেসুস্থে সব বলবো। সব হলো তোমার দোষ। নিজের মতো আমার ছেলেকেও বানিয়েছো। ‘
ফাহিম মাহবুব কোনো কথা বললেন না। চুপ করে শুনতে লাগলেন।
–
শেখ বাড়ি অন্ধকার। ধীরে ধীরে পা ফেলে ট্রলি হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামলো নিনীকা। সদর দরজার সামনে রুম্পা দাড়িয়ে আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। নিনীকা ফিসফিস করে বলল,
‘ রুমে চিরকুট রেখে গেছি, মাকে যেকোনো বাহানায় সেটা দেখিয়ে দিবি। ব্যস। ‘
রুম্পা হ্যাঁ বললো। নিনীকা ট্রলি টেনে নিয়ে বের হয়ে গেলো সদর দরজা দিয়ে৷ গাড়িতে উঠে স্প্রিড তুলে ছুটলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আগামীকাল ভোরে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও সে আজই রওনা হচ্ছে। রুম্পার মাধ্যমে খবর পেয়েছে তার বাবা বন্ধুর ছেলের সাথে একমাত্র মেয়ের কাবিনের বিষয়ে সব ঠিকঠাক করে ফেলেছেন গোপনে। এবং সেটা আগামীকাল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেজন্য সে সকালে নয় এই মধ্যরাতেই বের হয়েছে। আপাতত একটা হোটেলে থাকবে। সকালে শুটিংয়ের কাজে বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এয়ারপোর্টে উপস্থিত হবে।
নিনীকা বের হয়ে যেতেই সিঁড়ি দিয়ে নামলেন মিথিলা। রুম্পা চমকে গেলো। মিথিলা হাসলেন।
‘ তোর আপা আর তুই একইরকম ছাগল বুঝলি। নিনীকার সাথে যার কাবিন হওয়ার কথা সে ব্যস্ত সেজন্য কাবিনের ডেট পেছানো হয়েছে৷ ততোদিনে তোর আপা বাড়িতে ফিরে আসবে বিদেশের শুটিং শেষ করে। ‘
রুম্পা মাথা নিচু করে রইলো। মিথিলা রেগে বললেন,
‘ আর কখনো যদি দেখেছি ওর কাছে কিছু বলেছিস তবে তোকে কাজ থেকে বের করে দিতে দু’বার ভাববো না। আর কখনো যেনো হাঁড়ি পাততে না দেখি। বেয়াদব কোথাকার। ‘
মিথিলা গটগট পায়ে উপরে উঠলেন। ফাইলে চোখ রাখা রমজান শেখ বললেন,
‘ তোমার মেয়ে পালিয়েছে? ‘
‘ সে আর বলতে। ‘
‘ এই নিয়ে কতোবার? ‘
মিথিলা একটু ভাবলেন,
‘ গুনে দেখিনি। যতোবারই কিছু করার চেষ্টা করেছি ততোবারই পালিয়েছে। ‘
রমজান শেখ হাসলেন,
‘ পালাতে দাও। ঘরে তো ফিরতেই হবে। ‘
‘ তুমি মেয়েটাকে জোর দিয়ে কিছু বলো না, নাহলে ও কখনো এসব করার সাহস পেতো না শেখ বাবু। ‘
‘ ওহ মিথি, মেয়েকে জোর করতে তো পারবো না। আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো, কিন্তু এখানে তার মতামতের ও বিষয় আছে। তার উপর যদি চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করি তবে সে সুখী হবে না। ‘
‘ এটা কি তোমার মেয়ে বুঝে? ‘
‘ না, বুঝলে তো বার-বার পালাতো না। সে ভেবে নিয়েছে আমরা তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবো। ‘
‘ তারপরও তুমি ওকে কিছু বলো না। ‘
‘ সে বুঝতে পারবে, যখন আমরা তার মতামত চাইবো তখন। আপাতত যা ভাবছে ভাবতে দাও। ‘
‘ হসপিটালে কি বাচ্চা পাল্টিয়ে ছিলে? ‘
রমজান শেখ অদ্ভুত চোখে তাকালেন।
‘ হোয়াট! ‘
(চলবে)
#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-০৩
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভীড় জমেছে। নিনীকা বিরক্তিতে চোখমুখ শক্ত করে রেখেছে। বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তার ঘুম হয়নি। মাথা ব্যথায় মনে হচ্ছে চিৎ হয়ে পড়ে যাবে যেকোনো সময়। তার উপর চারিদিকের এমন হৈচৈ তার মাথা ব্যথা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। গেইটের বাহিরে মিডিয়াকে সামলাচ্ছেন ডিরেক্টর। নিনীকার পাশে দাড়িয়ে আছে তার সিনেমার নায়ক নির্ঝর আব্রাহাম। সে ও যে মারাত্মক বিরক্ত তা নিনীকা বুঝতে পারছে। ইতিমধ্যেই আব্রাহাম কয়েকবার বলে ফেলেছে,
‘ মিস নিনীকা মাথা ধরে যাচ্ছে, আপনি ঠিক আছেন কিভাবে এখনো? ‘
নিনীকা বিনিময়ে হাসি দিয়েছে। তারও যে মাথা ফে*টে যাচ্ছে সেটা সে একদমই বুঝতে দিচ্ছে না। পেইন কিলার খেয়েছে, বিমানে উঠে একটু ঘুম দিবে। ব্যস রিলিফ কাজ করবে অনেক।
বিমানবন্দরে সাদা পোশাক পড়া একদল লম্বা ও বলিষ্ঠ শরীরের পুরুষের প্রবেশ ঘটেছে। সবাই হা করে সেদিকে তাকিয়ে আছে। মাথার আর্মি কাট বলে দিচ্ছে তাদের পরিচয়৷ নিনীকার ডান দিকে দাঁড়ানো কাজের বোয়ার চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী তনু মুখে হাত দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘ এদেরকেই বলে সত্যিকারের পুরুষ। দেখেছো নিনীকা? ‘
নিনীকা নিজেও তাকিয়ে ছিল। একসাথে এতজন লম্বাচওড়া শরীরের পুরুষ দলবদ্ধ হয়ে আসাতে দেখতে সুন্দর লাগছিল। কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে বলল,
‘ আল্লাহর সৃষ্টি সব সুন্দর তনু আপা। ‘
‘ এদের মধ্যে কেউ যদি আমাকে প্রপোজ করতো! নিনীকা আমি কি একটু ট্রাই করে দেখবো? ‘
নিনীকার মাথা ব্যথা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। বলল,
‘ দেখতে পারেন। ‘
তনু হাইহিলের শব্দ তুলে এগিয়ে গেলো। সোজা গিয়ে দাড়ালো দলবদ্ধ সেই পুরুষদের সামনে। সাদা পোশাকে থাকা আর্মি অফিসার গুলো একসাথে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তনুর দিকে। স্বাভাবিক দৃষ্টি অথচ কতো ধারালো৷ তনু কিছু বলতে পারলো না, বরং স্যরি বলে সামনে থেকে সরে পড়লো।
একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা নিনীকা ও আব্রাহাম ঠোঁট চেপে হাসলো। আব্রাহাম বলল,
‘ এই তনু আপা ও পারেন বটে। ‘
অফিসার ওগুলোকে আড়চোখে দেখলো নিনীকা। চেহারা ফ্যাক্ট নয়, এদের জন্য প্রায় অনেক মেয়েই পাগল থাকে শুধুমাত্র ফ্যাশনের জন্য। ওদের স্টাইল টিনেজারদের অনেক পছন্দের। তার উপর দেশের সৈনিক, নরম মনের মেয়েদের মনে প্রভাব পড়বে স্বাভাবিক। তনু আপা টিনেজার নন, কিন্তু নরম মনের মানুষ। তিনিও যে ইতিমধ্যে দলবদ্ধ থাকা সব সৈনিকের উপর মারাত্মক ক্রাশ খেয়েছেন সেটা ভেবেই নিনীকার হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে।
তনু আপা গোমড়ামুখে এসে দাঁড়ালেন।
‘ বুঝলে নিনীকা অফিসার গুলো কেমন যেনো। ‘
‘ কেমন আপা? ‘
‘ জানিনা বাবা, কেমন করে যেনো তাকালো আমি ভয় পেয়ে কিছু বলতেই পারিনি। ‘
আব্রাহাম হেসে বলল,
‘ তারা সবাইকে প্রথমে অপরাধীর দৃষ্টিতে দেখে। যদি তাকানোর পর মনে হয় সামনে দাড়ানো ব্যক্তি চোর বা অপরাধী হতে পারে না তখনই তাদের দৃষ্টি নরম হয়। ‘
তুন আপা ভেঙচি দিলেন,
‘ তুমি এতো কিছু জানো কেমনে বাপু। ‘
‘ আমার একটা জমজ ভাই আছে আপা, সে আর্মির একজন ক্যাপ্টেন। ‘
মিডিয়া সামলে ডিরেক্টর অবশেষে এলেন। নিনীকাদের সাথে অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বাকি অভিনেত্রী অভিনেতারাও এসেছেন। সবাই এয়ারপোর্টের ফর্মালিটি সেরে বিমানে চেপে বসলেন। এবং সবাইকে বকবকানি করতে দেখতে দেখতে নিনীকা ঘুমিয়ে ও পড়লো। নায়ক আব্রাহাম নিজের পাশে বসা নিনীকার আকস্মিক ঘুমিয়ে পড়াতে অবাক হলো। ডিরেক্টর ইশারায় নিনীকার মাথা ব্যথার কথা জানিয়ে দিলেন। আব্রাহাম ঠোঁট উল্টে ভাবলো মেয়েটাকে সে যখন নিজের মাথা যন্ত্রণার কথা বললো তখন হাসলো কেন!
নিনীকা শেখ একটু অদ্ভুত টাইপের মানুষ। আব্রাহামের সাথে এটা নিয়ে দ্বিতীয় সিনেমায় অভিনয় করবে সে। দারুণ একজন অভিনেত্রী সে। সেটা প্রথম সিনেমার কাজেই বুঝেছে আব্রাহাম৷ কিন্তু নিনীকাকে তার একটু অহংকারী মনে হয়। যেখানে সব নায়িকারা তার সাথে কাজ করতে এসে রীতিমতো উপরে পড়তে চায় সেখানে নিনীকা কখনো নিজ থেকে কথাও বলেনা প্রয়োজন ছাড়া। আপনি ছাড়া কখনো তুমি বলেছে বলে আব্রাহাম মনে করতে পারছে না। তারা সমবয়সী। নিজের এই ক্যারিয়ারে আব্রাহাম অসংখ্য নায়িকার বেড অফার রিজেক্ট করেছে। কারণ আছে অবশ্য, তার প্রেমিকা আছে। এবং সেই প্রেমিকাকে নিয়েই সে হ্যাপি। অন্য কোনো নারীর সান্নিধ্য তার প্রয়োজন হয়না।
নিনীকাকে এদিক থেকে আব্রাহামের ভালো লেগেছে। অযথা ঘেঁষাঘেঁষি সে নিজেও পছন্দ করে না। এমনি সিনেমায় অভিনয় করা ঘনিষ্ঠ কোনো দৃশ্য দেখলে তার প্রেমিকা খাওয়াদাওয়া বাদ দিয়ে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। স্কুল লাইফের প্রেমিকাকে নিয়ে আব্রাহাম বরাবরই ভীষণ চিন্তিত থাকে।
থাইল্যান্ডের এয়ারপোর্টে যখন সবাই নামলো তখন তনু আপা মৃদু চিৎকার করে উঠলেন।
‘নিনীকা লুক, সেই অফিসার গুলো! ‘
নিনীকা তাকালো। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
‘ হ্যাঁ তো? ‘
‘ ওহ নিনীকা, তুমি অনেক নিরামিষ। ‘
নিনীকা কিছু বললো না। ট্রলি টেনে নিয়ে সবার সাথে এয়ারপোর্ট ত্যাগ করলো।
*
রাত হয়ে গেছে। ধারা সেই সকাল থেকে ছেলেকে একের পর এক কল দিচ্ছেন। কিন্তু বন্ধ দেখাচ্ছে। ধ্রুব তো প্রতিদিন একবার করে হলেও ফোন দিয়ে কথা বলে। আজ বলেনি, সেজন্য ধারার চিন্তার শেষ নেই। ফারিন নিজেও মন খারাপ করে বসে আছে। তার ভাই ঠিক ভাবে পৌঁছেছে কি না সেটা ও তো জানাতে ফোন করতে পারতো।
ফাহিম মাহবুব বাড়িতে ঢুকে স্ত্রী ও কন্যার গোমড়ামুখ দেখে চিন্তিত হলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
‘ দুজনের কি হয়েছে? ‘
ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
‘ বাবা ব্রো’র ফোন বন্ধ সকাল থেকে, সে নিজে থেকে একটাও কল করেনি আজ। ‘
‘ তোমার ছেলেকে কি আমি বেশি চাপ দেই ফাহিম? একটা দুটো কলই তো প্রতিদিন দিতে বলি। মা আমি, আমার কি সন্তানের জন্য মন পুড়ে না? ‘
‘ ধারা তুমি ভুল ভাবছো। ধ্রুব দেশে নেই। ‘
ধারা আঁতকে উঠলেন,
‘ কিহ! কোথায় ধ্রুব? কোথায় আমায় ছেলে? ‘
‘ সে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিশনে দেশের বাহিরে গেছে। ‘
ধারা কেঁদে ফেললেন,
‘ তুমি আমাকে এখন এসব বলছো! ফাহিম ধ্রুব মিশনে গেছে! বুঝতে পারছো তুমি? আমার ছেলেকে ফিরিয়ে এনে দাও। আমার একটামাত্র ছেলে ফাহিম। ‘
‘ আমি কিছু করতে পারবো না ধারা। আর তাছাড়া ধ্রুব এরকম কতো মিশনে যায়, মেজর সে এসব তো তার কাজ।’
‘ লাস্ট মিশন থেকে ফিরে ওর কি অবস্থা হয়েছিল দেখোনি? আমার ছেলের গুলি লেগেছিল। তুমি, তুমি চাইলেই পারতে গতকাল আমাকে বলে দিতে। কিন্তু তুমি বলোনি৷ আমার ছেলের কিছু হলে আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না। ‘
ফাহিম মাহবুব বুঝাতে চেষ্টা করলেন,
‘ লিসেন ধারা, ধ্রুব নিজে আমাকে বারণ করেছিলো। আর এটা ওর কাজ। তুমি যদি ওকে না করতে ও কি শুনতো? আর তাছাড়া তুমি কিভাবে ওকে মানা করতে? বি স্ট্রং ধারা, তুমি তো এমন নও। তুমি ধ্রুবর সেই মা যে ধ্রুকে শিখিয়েছে কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমি ধ্রুবর বাবা, ও আমাকে বিশ্বাস করে বলেছে। তোমাকে যদি আগে জানিয়ে দিতাম তো ধ্রুব আর কখনো আমাকে কিছু বলতো না। ছেলের সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্ক রয়েছে। ‘
‘ ফাহিম আমার একটামাত্র ছেলে! ওর কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে থাকবো! ‘
‘ কিছু হবে না, ওর জন্য দোয়া করবে শুধু। ও আমারও ছেলে। আমি যখন আর্মির জব করে এতো বছর পরিবারের পাশে আছি, ধ্রুব ও থাকবে। ও নিজের বাবার থেকেও সাহসী! এবং আমি আমার ছেলেকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি। সে বলেছে সফল হয়ে ফিরে আসবে। ‘
(চলবে)