#বিয়ে_থা_২
#পর্ব – ০৯
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
মাসের শেষ দিকে বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে। সুতরাং এখন হাতে অফুরন্ত সময়। গতকাল এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো। পার্টির পর আর তাদের দেখা বা কথা হয়নি।
রাত দশটা। ধ্রুব সবে খেয়ে রুমে এসেছে। মোবাইল হাতে বারান্দায় কিছুক্ষণ পায়চারি করলো সে। গতকাল বাড়িতে এসে বার-বার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নিনীকাকে ফোন করা হয়নি। আজ-ও ফোন করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোথাও একটা জড়তা কাজ করছে ধ্রুবর। ইতিহাসের পাতায় কেউ লেখেনি সবার আগে ছেলেদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নিনীকা নিজে কি পারতো না? নিজ থেকে ফোন করে ধ্রুবর এই জড়তা কাটিয়ে দিতে!
ধ্রুব অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো সে আজ ফোন করেই ছাড়বে। দুরুদুরু বুক নিয়ে ডায়াল করলো নিনীকার নাম্বারে। রিসিভ হতেই ধ্রুব থমকে গেলো। ওপাশ থেকে নিনীকা হ্যালো বলছে। ধ্রুব কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না। নিনীকা হয়তো ধ্রুবর পরিস্থিতি বুঝতে পারলো, নাকি বুঝলো না সেটা ধ্রুব জানে না। তবে চমৎকার বুদ্ধিমান মেয়েটি চট করে তার জড়তা কাটিয়ে দিলো।
‘ কেমন আছেন ধ্রুব? ‘
ধ্রুব কথা খুঁজে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। ভাগ্যিস নিনীকা জিজ্ঞেস করেনি কেন ফোন দিয়েছেন! ধ্রুব উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ আপনি কেমন আছেন নিনীকা? ‘
‘ আমি বরাবরই ভীষণ ভালো থাকি। বাড়ির সবাই কেমন আছে? আন্টি..মানে মায়ের শরীর ভালো? ‘
ধ্রুব হাসতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। গতকাল পার্টিতে তার মা বোন নিনীকাকে অনেক বিরক্ত করেছে। ধারা নিনীকার মুখে মা ডাক শুনে তবেই শান্ত হয়ে বসেছিলেন।
‘সবাই ভালো আছে, আপনি চলে এলে আরও ভালো থাকবে সবাই। ফারিন আপনার অনেক ভক্ত হয়ে গেছে। সারাক্ষণ আপনার কথাই বলে। সে নাকি বিয়ে যতোদিন না হচ্ছে ততোদিন আপনার সাথে গিয়ে থাকবে। মা অনেক ধমকে আটকে রেখেছেন। সামনে এডমিশন ওর, রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে এবার পড়াশোনাতে মনোযোগ দিতে হবে। সেজন্য জোর করে হলেও পড়তে বসাচ্ছেন। ‘
নিনীকার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
‘ বেশিই কি ধমকানো হয়েছে ওকে? ‘
‘ না তেমন না, তবে বাবা না থাকলে মা*র খেতো হয়তো। ‘
নিনীকা কেমন অনুরোধের স্বরে বলল,
‘ আপনি প্লিজ মাকে বলে ফারিনের এডমিশনের সমস্ত বইপত্র সাথে করে এখানে দিয়ে যাবেন? আমি মাকে ফোন করে বলবো যাতে তিনি আমার কাছে ফারিনকে পাঠিয়ে দেন। আমিও তাকে অনেক মিস করি। ‘
ধ্রুব কি বলবে বুঝলো না।
‘ কিন্তু ওর তো কোচিং আছে! ‘
‘ আমাদের বাড়ি থেকে কোচিং-এ যেতে কোনো অসুবিধা হবে না। আমিই ওকে ড্রপ করে দিয়ে আবার নিয়ে আসবো। ‘
ধ্রুব অনেকটাই অবাক হলো। মেয়েটির কথাবার্তা শুনে কে বলবে সেলিব্রিটি। একটু তো অহংকারী ভাব থাকবে সেটাই তার ধারণা ছিল। তার সব ধারণা গুলো মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে। তাতে অবশ্য ধ্রুবর ভালো লাগছে। নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে এরকম একজনকেই চেয়েছিল সে, যে তার পরিবারকে সবটুকু দিয়ে ভালোবাসবে।
নিনীকা ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করছে। ধ্রুব উত্তর দিলো,
‘ ঠিক আছে, মা যদি রাজি হোন তবে আমি দিয়ে আসবো। ‘
‘ আরে মা আমার কথাতে পুরোপুরি রাজি হবেন না। আপনিও তাকে বলবেন প্লিজ। তাতেও যদি রাজি না হোন আমি বাবাকে পাঠাবো। ‘
ধ্রুব এবার হেসে ফেললো। বিয়ের কনে হবু বরের জন্য পাগল থাকবে তা না হবু ননদের জন্য পাগলামি করছে।
ধ্রুবর রুমের দরজায শব্দ হলো। ধারা কফি নিয়ে ঢুকেছেন। ধ্রুব মাকে দেখে বলল,
‘ তোমার হবু বউমা কি বলে শুনে নাও মা। ‘
ধ্রুব মোবাইল এগিয়ে দিলো। ধারা আগ্রহী হয়ে মোবাইল কানে ধরলেন। নিনীকা তাকে ফারিনের বিষয়ে বলতেই তিনি নাকচ করলেন।
‘ ওর এডমিশনের বেশিদিন নেই নিনীকা, তোমার কাছে গেলে ঠিকমতো পড়বে না। সারাক্ষণ লাফালাফি করবে। ‘
‘ আমি পড়াবো মা, আপনি প্লিজ রাজি হয়ে যান। আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি ফারিন প্রতিদিন পড়তে বসবে। কোচিং-এ ও আমিই নিয়ে যাবো। ‘
ধারা না করতে পারলেন না আর।
‘ ঠিক আছে। তবে গায়ে হলুদের আগের দিন চলে আসতে তবে ওকে৷
ফারিনকে গলা উঁচু করে ডাক দিলেন। আসতেই মোবাইল বাড়িয়ে দিলেন। কানে নিতেই নিনীকা বলল,
‘ আগামীকাল তোমার ভাইয়ের সাথে চলে এসো সবকিছু নিয়ে। মাকে আমি রাজি করিয়েছি। ‘
ফারিন উজ্জ্বল চোখে ধারার দিকে তাকালো। ধারা হাত দিয়ে মার দেখালেন। ফারিন ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ ভাবী মা তো মার দেখায়৷ ‘
নিনীকা হেসে বলল,
‘ আগামীকাল আমার কাছে চলে আসলে আর দেখাবে না। ‘
ধারা মেয়ের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছেন। ধ্রুব মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফারিনের কথা শুনছিল। বলল,
‘ বেচারিকে আর ভয় দেখিও না মা। দেখবে শেষে সবাই রাজি অথচ ও যাবে না ভয় পেয়ে। ‘
ফারিনের চঞ্চল মুখে ভয়, সে মোবাইল এগিয়ে দিলো ধ্রুবর দিকে। ধারা মেয়েকে আগলে নিলেন।
‘ আগামীকাল চলে যেও, শান্তশিষ্ট হয়ে থাকবে কেমন?’
ফারিন বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালো। ধারা চলে যেতেই ধ্রুবকে ধরে লাফালাফি করলো।
‘ থ্যাংক ইউ ব্রো, থ্যাংক ইউ সো মাচ। ‘
ধ্রুব নিজেকে সামলিয়ে মোবাইল কানে নিলো। নিনীকা হেসে বলল,
‘ রাখছি তবে ভালো থাকুন। ‘
মোবাইল কান থেকে নামিয়ে ধ্রুব ফারিনের কান টেনে ধরলো।
‘ যা বলেছি তা ঠিকঠাক পালন করবি। প্রতিদিন সব খবর দিবি। মনে থাকবে তো? ‘
ফারিন মাথা নাড়ালো,
‘ অবশ্যই, তুমি আমাকে ভাবির কাছে পাঠানোর জন্য মাকে রাজি করিয়েছো। তোমার কাজ ও হয়ে যাবে চিল। ‘
ধ্রুব গাল টেনে দিলো।
‘ চিল বের করবো যদি যেটা বললাম সেটা ঠিকভাবে না করিস। ‘
ফারিন মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। ধ্রুব বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে মিটিমিটি হাসলো। এভাবে নিনীকাকে ফোন করে খুজ খবর নিতে হবে না আর। ফারিন তাকে সবরকম আপডেট দিবে। সে দেখবে কিভাবে নিনীকা তাকে ফোন না করে থাকে।
নিনীকার মনে যদি ধ্রুবর জন্য একটুও ভালো লাগা থেকে থাকে, তবে ধ্রুব ফোন দিচ্ছে না বলে নিনীকা নিজ থেকে অবশ্যই ফোন দিতে বাধ্য হবে। এবং এটাই দেখতে চায় ধ্রুব। বিয়ের আগে দুজনের মধ্যেকার এই জড়তার দেয়াল ভাঙতে হবে তাকে। যোগাযোগটা দুজনের দিক থেকে হওয়াটা জরুরি। ধ্রুব আজ ফোন দিয়েছে, নিনীকা নিশ্চয়ই ভেবেছে ধ্রুব প্রতিদিন ফোন দিবে। সেজন্য নিজ থেকে কোনো ফোন দিবে না। ধ্রুব চায় খুব করে চায় নিনীকা বাধ্য হয়ে ফোন দিক। গলা শুকিয়ে গেলে একফোঁটা জলের আশায় মানুষ যেমন মরিয়া হয়ে যায় তেমনই করে নিনীকা ধ্রুবর কন্ঠ শোনার জন্যে নিজ থেকে স্মরণ করুক।
এইযে একটু আগে ফারিনের সাথে কথা বলার পর ধ্রুবকে বললো রাখছি তবে ভালো থাকুন! এটা যেনো নিনীকা কখনো বলতে না পারে। বরং প্রেমিকাদের মতো রাত জেগে কথা বলার আবদার করুক। ধ্রুব নির্দ্বিধায় মেনে নিবে। এরকমই তো সে চায়।
পরদিন সকালবেলা নিজের জীপগাড়িতে করে ফারিনকে নিয়ে শেখ বাড়িতে গেলো। গেইটের বাহিরে থেকে ফারিন কে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে ভেবেছিল সে। কিন্তু নিনীকা সবাইকে জানিয়ে রেখেছে কি না ধ্রুব জানে না, রমজান শেখ ও মিথিলা তাকে শেখ বাড়িতে ঢুকতে বাধ্য করলেন। সেখানেই থেমে নেই। ফারিন এসেই নিনীকার সাথে আড়ালে চলে গেছে। নিচে পুরো এক টেবিল খাবারের অত্যাচারে সে কাচুমাচু করেছে শুধু। অনেক কষ্টে ছাড়া পেয়ে বেরিয়ে এসেছে বিদায় নিয়ে।
(চলবে)