বিয়ে থা ২ পর্ব-০৮

0
54

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-০৮
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

নিনীকা বিয়েতে রাজি হয়েছে, সেটা ফাহিম মাহবুবকে জানিয়ে দিলেন রমজান শেখ। ফাহিম মাহবুব থেকে সেটা বাড়ির সব সদস্যের কানে গেলো। ধ্রুব টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিল। ফারিন পাশে বসে নিচু স্বরে বলল,

‘ খুব তো বলেছিলে উত্তর একই থাকবে! এখন তো বিয়ের ধুম পড়ে গেছে। ‘

ধ্রুব কিছু না বলে একদৃষ্টিতে টিভি দেখলে লাগলো। ভাব এমন সে কিছু শুনে নি। ফারিন নাছোড়বান্দার মতো ঘেঁষে বসলো। ধ্রুব চোখ রাঙিয়ে বলল,

‘ কি সমস্যা বনু? ‘

ফারিন চোখ ছোটছোট করে বলল,

‘ তুমি আমাকে ট্রিট দাও। নাহলে আমি ভাবীকে বলে দিবো। ‘

ধ্রুব বোকার মতো বলল,

‘ কি বলে দিবি? ‘

‘ এইযে তুমি বলেছিলে যতোই সুন্দরী হোক তোমার সিদ্ধান্ত একই থাকবে। ‘

ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এক হাতে কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ কি চাই তোমার? ‘

ফারিন গলা জড়িয়ে ধরলো,

‘ একমাস পর বলো তো কি? ‘

ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ভাবলো।

‘ আমাদের বাড়ির একমাত্র রাজকন্যার আঠারোতম জন্মদিন। ‘

ফারিন খুশি হলো।

‘ তোমার মনে আছে? ‘

ধ্রুব মাথা নাড়ালো,

‘ অবশ্যই, নাহলে এ বাড়িতে ঠাঁই হবে আমার? ‘

ফারিন খিলখিল করে হাসলো।

‘ একমাসের মধ্যে তো ভাবি চলে আসবে। তখন আমাকে ও ভাবিকে তুমি ঘুরতে নিয়ে যাবে। ‘

ধ্রুব মাথা নাড়ালো,

‘ অবশ্যই নিয়ে যাবো৷ ‘

*

আজ ধ্রুব নিনীকার এনগেজমেন্ট। শেখ বাড়িতেই আয়োজনটা করা হয়েছে। এরমধ্যে নিনীকা বা ধ্রুব কেউ কখনো কাউকে কোনোরকম ফোন বা মেসেজ করেনি। সেদিনের পর আজই তাদের প্রথম দেখা। ধারা ও ফারিনই নিনীকাকে নিয়ে শপিং করেছেন।

ধ্রুব প্রথমবার শেখ বাড়িতে প্রবেশ করলো। পড়োনে কালো স্যুট। প্রিন্সেস লাগছে তাকে। নিনীকা সাদা গাউন পড়েছে। মাথায় সাদা দোপাট্টা। ধ্রুবর সামনে যখন দাঁড় করানো হলো তখন ধ্রুবর মনে হলো এ যেনো রুপকথার রাজকুমারী।

নিনীকার হাতে হীরের আংটি পড়িয়ে দিয়ে ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে রইলো। পেছন থেকে ধ্রুবর এক কলেজ বন্ধু ধাক্কা দিয়ে নিচু কন্ঠে বলল,

‘ আরে ভাই একটু স্মার্ট হো, একটা চুমু দিতে পারতি আংটি পড়িয়ে। ‘

তীব্র অস্বস্তিতে ধ্রুব হাসফাস করতে লাগলো। এতো এতো মানুষের সামনে হাতে চুমু দেওয়াটা তার জন্য মারাত্মক লজ্জার।

মিথিলা মেয়েকে তাড়া দিলেন। নিনীকার আরেক পাশে তনু আপা দাড়িয়ে আছেন। তিনি নিনীকার হাতে আংটি ধরিয়ে দিলেন। ধ্রুব হাত বাড়িয়ে দিলো। একদৃষ্টিতে চেয়ে দেখলো একটি কাঁপা কাঁপা হাত তার আঙুলে সোনালি রঙের আংটিটা একটু একটু করে ঢুকিয়ে দিয়েছে।

নিনীকার কাঁধে তনু আপা ধাক্কা দিলেন। নিচু কন্ঠে বললেন,

‘ তোমরা দুজনই আন রোমান্টিক! ‘

নিনীকা কিছু বললো না। ধ্রুব ও নিনীকাকে পাশাপাশি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবার। একে একে সবাই দুজনের পাশে বসে ছবি তুলছে। দুজনের বেশকিছু কাপল ছবিও তুলা হলো। কিন্তু বিপত্তি বাধলো যখন ক্যামেরাম্যান দুজনকে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসতে বললেন। ধ্রুব শরীর ঘেষে তো বসে পড়লো, কিন্তু কাঁধ জড়িয়ে ধরতে ইতস্তত করছিল। এবং তাকে অবাক করে দিয়ে নিনীকা নিজেই বাহু জড়িয়ে ধরে হেসে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছিল। ধ্রুব যখন অবাক হয়ে নিনীকার দিকে তাকিয়ে তখনই ফটো’টা উঠে যায়।

খাওয়ার টেবিলে একই রকম দেখতে দুটো মানুষকে দেখে চমকালো ফারিন৷ চেহারাটা তার পরিচিত। নায়ক নির্ঝর আব্রাহামকে সবাই চেনে। পাশে বসা একই রকম চেহারার ছেলেটি কে সে বুঝতে পারলো না। নিজের পাশে বসা নিনীকার কানে কানে বলল,

‘ একই রকম দেখতে নায়ক আব্রাহামের মতো যে লোকটা সে কে ভাবি? ‘

ধ্রুব নিনীকার পাশে বসা ছিল। নিনীকাকে প্রথম লোকমাটা সে নিজ হাতেই খাইয়ে দিয়েছে। ফারিনের প্রশ্ন তারও কানে গেলো। বলল,

‘ ওরা জমজ ভাই। ‘

ফারিন অবাক হলো,

‘ তুমি কিভাবে জানো? ‘

‘ নিরব আয়মান আমার চেনা একজন অফিসার। একসাথে অনেক কাজ করেছি। সে বর্তমানে একজন ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে আছে। পাশে তার ভাই নির্ঝর আব্রাহাম যে মিডিয়াতে কাজ করে। ‘

ফারিনের সাথে সাথে নিনীকাও যেনো আকাশ থেকে টুপ করে নিচে পড়লো। কাকতালীয় ভাবে হলেও সে এর আগে জানতো না আব্রাহামের ভাই ধ্রুবর পরিচিত কেউ হতে পারে।

ধ্রুব হয়তো নিনীকার ভাবনা ধরে ফেললো। বলল,

‘ অনেক সময় এরকমটা হয়ে থাকে। কাকতালীয় অনেক কিছুই হয়৷ ‘

নিনীকা কিছু বললো না। ফারিন ফিক করে হাসলো। ধ্রুব ঠোঁট চেপে নিজেও হাসছে। নিনীকা এই দু ভাই-বোনের মাঝখানে পড়ে অসহায়বোধ করলো। ধ্রুবর সাথে তার কথাবার্তা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। লোকটা একটু হাসলেও তার অস্বস্তি বেড়ে যায়।

ধ্রুবর সোজাসুজি চেয়ারে তনু আপা বসেছেন। তিনি আচমকা ধ্রুবকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ নিনীকার হবু বর, আপনার আর কোনো অফিসার এখানে আসেন নি? ওইযে যাদের এয়ারপোর্টে দেখেছিলাম। ‘

ধ্রুব একটু অবাক হলো।

‘ আপনি কবে আমাকে এয়ারপোর্টে দেখেছেন? ‘

তনু আপা হয়তো একটু বিরক্ত হলেন।

‘ আরে আপনি ভুলে গেছেন মশাই! কয়েকমাস আগে নিনীকা আমি আমাদের পুরো টিম থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্যে এয়ারপোর্টে হাজির হয়েছিলাম। আপনাদের তো আমি এয়ারপোর্টে দেখার পর থাইল্যান্ডেও দেখেছি। ‘

ধ্রুব নিনীকার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালো। নিনীকা মনে মনে চরম বিরক্ত তনু আপার উপর। ধ্রুবকে বলল,

‘ হ্যাঁ তনু আপা আপনাকে দেখেছেন এয়ারপোর্টে। ‘

নিনীকার উত্তরে তনু আপা হয়তো সন্তুষ্ট হোন নি। আওয়াজ একটু উঁচু শুনালো,

‘ আরে আমি কি একা দেখেছি নাকি? তুমি ও তো দেখেছো! ‘

নিনীকা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছিলো না। ফারিন খিলখিল করে হাসছে৷ সে দারুণ মজা পেয়েছে৷ ধ্রুব নিনীকার থেকে চোখ ফিরিয়ে মুখ নিচু করে হাসলো। নিনীকা সেটা দেখে গুটিয়ে গেলো। কি একটা অস্বস্তিতে সারাক্ষণ জড়িয়ে যাচ্ছে সে। লোকটা বার-বার হেসে তাকে বিব্রত করে!

তনু আপা আবারও জিজ্ঞেস করলেন,

‘ বললেন না তো মশাই, কোনো অফিসার এই পার্টিতে উপস্থিত কি না? ‘

ধ্রুব জবাব দিলো,

‘ এয়ারপোর্টে আমার সাথে থাকা কেউ এখানে উপস্থিত নেই। তবে আমার পরিচিত একজন আর্মির ক্যাপ্টেন উপস্থিত আছে। কেন বলুন তো? ‘

নিনীকা তনু আপাকে টাইট দিতে বলল,

‘ তনু আপা আর্মিদের প্রতি মারাত্মক ক্রাশিত! ‘

তনু আপার গলায় খাবার আটকে গেলো। ধ্রুব আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো নিনীকাকে তনু আপা চোখ দিয়ে শাসাচ্ছেন কিন্তু নিনীকা পাত্তা না দিয়ে নিঃশব্দে কিছু একটা বলে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে।

এ প্রথম নিনীকাকে হাসতে দেখলো ধ্রুব। সুন্দরী মেয়েটা হয়তো তার সামনে হাসতে চায় না।

তনু আপা ধ্রুবর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন আবারও।

‘ আপনার ওই ক্যাপ্টেন টা কোথায়? ‘

উত্তর দিলো নিনীকা,

‘ মিস্টার নির্ঝর আব্রাহামের জমজ ভাই, তাকিয়ে দেখো। ‘

তনু আপা চট করে পাশে তাকালেন। লম্বা টেবিলে তার আরও চার পাঁচ চেয়ার পরে বসেছে একইরকম দেখতে দুটো ছেলে। একটা আব্রাহাম আরেকটা অবিকল আব্রাহামের মতো দেখতে। তনু আপা খুশিতে আব্রাহামকে ডাক দিলেন। আব্রাহাম তাকাতেই ইশারায় কিছু একটা দেখালেন। আব্রাহাম বুঝলো না। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বিরক্ত হচ্ছে অনেক। এই তনু আপা সবাইকে এতো বিরক্ত করতে ভালোবাসে কেন কে জানে!

খাওয়া শেষে নিনীকা ও ধ্রুব আবারও পাশাপাশি বসে আছে। ফারিন ধ্রুবর পাশে বসে নিনীকার পাশে বসা তনু আপার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এরমধ্যে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে এলো নায়ক আব্রাহামের জমজ ভাই।

‘ আমার একটু কাজ পড়ে গেছে মেজর, আমি আসছি।’

ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে বিদায় দিলো। তনু আপা নিনীকার কাঁধে ঝুলে পড়ে হলেও নিরবকে দেখছেন। ফারিন নাক ফুলিয়ে ক্যাপ্টেন নিরব আয়মানকে দেখলো এক নজর। তার জীবনের প্রথম ক্রাশ এভাবে কেউ চিনিয়ে নিয়ে যাবে সেটা সে কখনোই হতে দিবে না!

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে