#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-০৭
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
(কপি নিষিদ্ধ)
ধ্রুব থমথমে মুখশ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরলো। ডোয়িং রুমে বসা ধারা ও ফারিন চেপে ধরলো তাকে। ধ্রুব মিনমিন করে বলল,
‘আমাকে একটু সময় দাও মা। ‘
ফারিন মুখ বাঁকিয়ে বলল,
‘ তুমি যে হ্যাঁ বলবে সেটা আমি বুঝতে পারছি। ‘
ধ্রুব গটগট পায়ে রুমে চলে গেলো।
এদিকে শেখ বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই মিথিলা মেয়েকে চেপে ধরলেন।
‘ কেমন দেখলি ধ্রুবকে? ‘
নিনীকা কি বলবে বুঝতে পারলো না। ড্রাইভারকে দিয়ে ফুচকা আনিয়ে গাড়িতে বসে খেয়ে তবেই বাসায় এসেছে সে। যাতে তাড়াতাড়ি আসার জন্যে মা সন্দেহ না করেন। মিথিলা গলার স্বর উচু করলেন।
‘ কিরে? ‘
নিনীকা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো।
‘ আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি মা। ফ্রেশ হয়ে আসি আগে, ততোক্ষণে তুমি খাবার রেডি করো। অনেক ক্ষিদে পেয়েছে। ‘
মিথিলা হতাশ হলেন। খাবার গরম করতে বললেন রুম্পাকে। রুম্পা এতোক্ষণ কিচেনের দরজায় সামনে দাড়িয়ে ছিলো। মিথিলাকে নিচু কন্ঠে বলল,
‘ আপার মুখের হাবভাব ভালো লাগছে না খালাম্মা। নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল আছে। ‘
মিথিলা ধমক দিলেন।
‘ চুপ কর, কোনো গন্ডগোল নেই। ধ্রুব সোনার টুকরো ছেলে। তোর আপা হয়তো ওমন রাজপুত্র দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে বুঝলি। ‘
রুম্পা মুখ বাঁকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। নিনীকা ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো আধাঘন্টা পর। খাবার খেতে খেতে মিথিলা আবারও প্রশ্ন ছুড়লেন।
‘ বললি না তো কেমন দেখলি। ‘
নিনীকা খাবার গিলে বলল,
‘ ভালোই ‘
‘ তোর বাবাকে মতামত কখন জানাবি? ‘
‘ সময় দাও মা, আমি আরেকটু ভাবি। ‘
মিথিলা কিছু বললেন না আর। নিনীকা খেয়ে রুমে চলে গেলো। ধ্রুবর সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার সবটুকু সময় কি কি হয়েছে ভাবতে লাগলো। তার বয়স বা ধ্রুবর বয়সটা সিরিয়াস টাইপ বয়স। এ বয়সে সিরিয়াস কথাবার্তা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু না তাদের কোনো কথাই হলো না।
ধ্রুব যখন খেতে নিচে নামলো তখন আচমকা ধারাকে বলল,
‘ মা সে সত্যিই সুন্দর। ‘
ধারা খুশি হলেন।
‘ তুই রাজি তবে? ‘
ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ আমি ভাবতে চাই মা। সৌন্দর্য কখনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে না। আমি তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তবে আমি তারমধ্যে আরেকটি জিনিস খুঁজবো, সেটা যদি পাই তবে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। ‘
ফারিস চোখ ছোটছোট করে বলল,
‘ আর কি চাও? ‘
‘ এরকম কিছু, যাতে আমার মনে হয় তাকে আমি চোখবন্ধ করে বিয়ে করে নিতে পারবো। ‘
‘ এখনও চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে নিতে পারো, সে সবদিক থেকে ফিট। তুমি যা খুঁজছ তা পেয়ে যাবে। ‘
‘ যদি না পাই বিয়ের পর? ‘
ধারা চিন্তিত হয়ে বললেন,
‘ তুই ঠিক কি খুজচ্ছিস বাবা? ‘
ধ্রুব একটু হাসলো,
‘ জেনে যাবে মা, আমি তোমাদের শীগ্রই মতামত জানাবো। ‘
ধ্রুব খেয়ে রুমে গিয়ে নিনীকার নম্বরে মেসেজ দিলো। নম্বরটি তাকে ধারা দিয়েছেন। লিখলো,
‘ ভীষণ নার্ভাস হয়ে গেছিলাম। সেজন্য কিছু বলতে পারিনি। আপনি কি বিরক্ত হয়েছেন? ‘
নিনীকা সঙ্গে সঙ্গে দেখলো সেটা। উত্তর দিলো,
‘ নাহ, আমি নিজেও নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম যদিও। ‘
‘ আপনি যেটা ভেবেছেন সেটা আসলে ঠিক নয়। পরিবার থেকে আমাকে জোর করে কিছু করাবে না। আমি মতামত দিলে তবেই সব হবে। ‘
নিনীকা লিখলো,
‘ গুড। ‘
এর পরিবর্তে কি বলা যায় ধ্রুব বুঝতে পারলো না। অনেক ভেবে লিখলো,
‘ আপনার কাছে সম্পর্কের গুরুত্ব কতটুকু? ‘
নিনীকা দেখলো সেটা। হেসে লিখলো,
‘ মিস্টার ধ্রুব মাহবুব, মিডিয়া জগতের সবাই খারাপ হয় না। ‘
ধ্রুব রিপ্লাই টা দেখে একটু চমকে গেলো। কি বুদ্ধিমান! সে তো কোনোরকম ইঙ্গিত ও দেয়নি। ধ্রুব কিছু লিখার আগেই নিনীকার আরও একটি মেসেজ এলো।
‘ আপনি যাকে বিয়ে করবেন তার বিষয়ে আগে পুরোপুরি শিওর হোন। যাতে পরবর্তীতে কখনো মনে না-হয় যে আগে একটু খুঁজ খবর নিলে ভালো হতো! ভবিষ্যতে যাতে আফসোস না করেন। ‘
ধ্রুব রিপ্লাই দিলো না। বরং চিৎকার করে ডাকলো ধারাকে। ধারা দৌড়ে এলেন।
‘ কি হয়েছে ধ্রুব? ‘
ধ্রুব জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ আমি তাকে বিয়ে করতে রাজি মা। আঙ্কেল কে জানিয়ে দাও৷ ‘
ধারা বিস্মিত হলেন। হঠাৎ ধ্রুবর কি হলো বুঝতে পারলেন না। তবে খুশিও হলেন। ফারিন ঘুমিয়ে পড়েছিল। ধ্রুবর চিৎকারে ছুটে এসেছে। পিটপিট করে তাকিয়ে বলল,
‘ সে-ই তো হ্যাঁ বলে দিলি। বলেছিলাম না? ‘
ধ্রুব কিছু না বলে হাসলো। ফারিন ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ তুমি কি যেন একটা খুঁজে পেলে তবেই রাজি হবে বলেছিলে! পেয়েছো? ‘
‘ একটু বেশিই পেয়েছি। ‘
ফারিন খুশি হয়ে চলে গেলো। ধারা যাওয়ার আগে বললেন,
‘ তোর বাবা খুব খুশি হবে এটা জেনে। ‘
*
সন্ধ্যায় রমজান শেখ বাসায় ফিরলেন। মেয়ে ও স্ত্রী কে নিয়ে নাস্তা করতে বসলেন। খেতে খেতে বললেন,
‘ ধ্রুব হ্যাঁ বলে দিয়েছে। ‘
নিনীকা চমকালো। মনে করতে চেষ্টা করলো রেস্টুরেন্টে দেখা ধ্রুবর কিছুটা স্তব্ধ, কিছুটা নার্ভাস মুখটা। না চোখে ভাসছে না সেটা। মিথিলা বললেন,
‘ হ্যাঁ না বলে উপায় আছে? আমাদের নিনীকাকে পছন্দ করবে না এমন ছেলে হতেই পারে না। ‘
রমজান শেখ মেয়েকে পরোখ করলেন।
‘ তুমি যদি মতামত টা জানিয়ে দাও তবেই আমরা আগাতে পারবো নিনী৷ ‘
নিনীকা চুপচাপ নাস্তা করে রুমে চলে গেলো। মিথিলা একটু মন খারাপ করে বললেন,
‘ তোমার মেয়ে হ্যাঁ বলবে তো? ‘
রমজান শেখ চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করে বললেন,
‘ আমার মেয়ে বুদ্ধিমতী। সে যা সিদ্ধান্ত নিবে ভেবেচিন্তেই নিবে। ‘
‘ ধরো, নিনীকা না করে দিলো। তখন? ‘
‘ ওইযে বললাম আমার মেয়ে বুদ্ধিমতী। সে যদি না করে দেয় তারমানে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। আমি বাবা হিসেবে তার সব সিদ্ধান্তকেই সাপোর্ট করবো। ‘
মিথিলা অবাক হলেন,
‘ ধ্রুবর মতো ছেলেকে রিজেক্ট করার কি কারণ থাকবে? ‘
‘ আহ্, মিথি! নিনী এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। আমি শুধু বলেছি সে যদি ‘না’ বলে তারজন্যে কোনো কারণ থাকবে। কারণ আমার থেকে তুমি ভালো করেই জানো নিনীকা এই সম্মন্ধে একটু হলেও আগ্রহ দেখিয়েছে৷ আগের মতো মুখের উপর কিছু বলেনি। তুমি আমি যা বলছি সে সব শুনছে। ধ্রুবর সাথে দেখা করতেও গেছে।’
মিথিলা মাথা নাড়ালেন। এবার তার মাথায় কিছু টা হলেও ঢুকছে।
রমজান শেখ তখন সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন। মিথিলা পাশে বসে কম সাউন্ড দিয়ে টিভি দেখছেন। একপাশে রাখা স্মার্টফোনে নোটিফিকেশনের শব্দ হলো। রমজান শেখ কাজে ডুবে। মিথিলা উঁকি দিলেন। উপরে নিনীকার নাম!
তড়িৎ গতিতে মোবাইল টা হাতে নিলেন। মেসেজ বক্সে গিয়ে মেসেজ পড়ে খুশিতে চিৎকার করে উঠলেন।রমজান শেখ চমকে গেলেন।
‘ কি হলো? ‘
মিথিলা মোবাইল বাড়িয়ে দিলেন। রমজান শেখ দেখলেন নিনীকা মেসেজ পাঠিয়েছে৷ লিখেছে,
‘ তোমার বন্ধুর ছেলেকে রিজেক্ট করার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি বাবা। দেখা যখন হলো তখন অস্বস্তিতে কেউই কিছু বলতে পারিনি। তোমার ভালো বন্ধুর কিপ্টা ছেলে আমাকে কোনো খাওয়ার অফার করেনি। আমি চাইলেই এই কারণটা দেখিয়ে প্রস্তাব টা রিজেক্ট করে দিতে পারি। কিন্তু দিলাম না। আমি একটু বেশিই বুদ্ধিমান কি না। তার অস্বস্তিটা বুঝে ফেলেছি। সামনাসামনি হ্যাঁ বলতে পারছিলাম না, সেজন্য মেসেজে বলে দিলাম। তোমার মেয়ের জন্যে যদি তোমার বন্ধুর ছেলেকে উপযুক্ত মনে হয় তবে আমি রাজি! ‘
(চলবে)