বিয়ে থা ২ পর্ব-০৬

0
55

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-০৬
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

টেবিলে খাবার খেতে বসেছে শেখ বাড়ির সবাই। তখনই মিথিলা কথাটা বললেন।

‘ নিনীকা, তোমার আন্টি আঙ্কেল চাইছেন তুমি ধ্রুবর সাথে দেখা করো। ‘

নিনীকা খাওয়া থামিয়ে মিথিলার দিকে তাকালো। রমজান শেখ মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন,

‘ দেখা করলে তোমার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে নিনী। কথা বললে তুমি বুঝতে পারবে তার বিষয়ে কিছু টা হলেও। ‘

নিনীকা মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘ ঠিক আছে। ‘

‘ তবে আগামীকাল দেখা করে ফেলো। ধ্রুবর ছুটি রয়েছে কয়েকমাস। দুজন যদি রাজি থাকো তবে আমরা এরমধ্যেই তোমাদের বিয়ের কাজটা সেরে নিতে চাই। ‘

নিনীকা একটু থমকালো। সে যদি হ্যাঁ বলে দেয় তবে তার বিয়ে হয়ে যাবে! নিনীকার নামের সাথে মিসেস শব্দ টা যুক্ত হবে৷ এ যেনো অবিশ্বাস্য!

খাবার খেয়ে নিনীকা যখন রুমে যাচ্ছিল তখন মিথিলা মেয়েকে আটকালেন। রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দিয়ে বললেন,

‘ শাড়ি পড়ে যেও। তোমাকে শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগে। ‘

নিনীকা কিছু না বলে মাথা নাড়ালো শুধু। রুমে এসে ঘুমাতে চেষ্টা করলো। সে জানে ভোর হলেই মিথিলা তাকে ডেকে তুলবেন। তারপর শাড়ি গহনার মাঝে বসিয়ে দিয়ে বলবেন,

‘ দেখ তো মা, তোর কোনটা পছন্দ হয়? ‘

নিনীকার ভাবনা সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে মিথিলা ভোরে নিনীকাকে ডেকে তুললেন। শাড়ি ও গহনার মাঝে বসিয়ে একটা একটা করে শরীরে লাগিয়ে দেখতে লাগলেন কোনটায় বেশি সুন্দর লাগে। মিথিলার এ কাজ চললো আটটা পর্যন্ত। রমজান শেখ স্ত্রীর কান্ড দেখে হেসে চলে গেছেন। আজ তাকে একাই টেবিলে বসে নাস্তা করতে হলো। অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাওয়ার আগে মিথিলাকে ডেকে বিদায় নিয়ে বললেন,

‘ ওকে কোনো প্রকার চাপ দিও না। ওর কোনটা পছন্দ সেটা জিজ্ঞেস করবে আগে। দেখবে ও অনেক সহজ হয়ে যাবে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা বিয়েকে এক প্রকার ভয়ের চোখে দেখে। নিনী ও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের ওর সাথে সহজ আচরণ করতে হবে। যাতে ওর কখনোই মনে না হয় বিয়ে একটা ঝামেলা। ‘

মিথিলা মুগ্ধ হয়ে শুনলেন। চুল ঠিক করে দিয়ে বললেন,

‘ তুমি এতো সুন্দর করে কথা বলো কিভাবে? মোটিভেশনাল স্পীকার হিসেবে ভালোই নাম কামাতে পারবে। ‘

রমজান শেখ না হেসে পারলেন না।

‘ পরিবারের কাউকে না কাউকে মোটিভেশনাল স্পীকার হতে হয় বুঝলে মেয়ের আম্মু? ‘

‘ এটা কি নিয়ম শেখ বাবু? ‘

‘ নাহ্ এটা নিয়ম নয়, তবে তুমি খেয়াল করে দেখবে প্রত্যেক পরিবারেই একজন করে মোটিভেট করা মানুষ থাকে। আমি সেরকমই কেউ হতে চেষ্টা করছি। যাতে আমার মেয়ের জীবনটা গুছিয়ে দিতে পারি সুন্দর করে। এবং আমি এটাও জানি মেয়ের মাকেও আমাকেই সামলাতে হবে। মেয়ের মা-ও মেয়ের মতো একটু অদ্ভুত৷ ‘

রমজান শেখ অফিসে চলে গেলেন। মিথিলা আবারও নিনীকার রুমে গেলেন। সাদা জামদানী শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

‘ এটা পড় মা, তোকে সাদাতেই বেশি সুন্দর লাগে। ‘

নিনীকা সুন্দর করে গুছিয়ে শাড়ি পড়লো। এর ফাঁকে মিথিলা মুখে তুলে নাস্তা খাইয়ে দিয়েছেন। নিনীকার কানে ডায়মন্ডের সাদা টপ পড়িয়ে দিয়ে বললেন,

‘ কোনো সাজ ছাড়াই আমার মেয়েকে কতো সুন্দর লাগছে। আমারই নজর লেগে যাচ্ছে। ‘

নিনীকা একটু হাসলো।

‘ বাবা তো আর এমনি এমনি বলে না, আমি তোমার মতো হয়েছি। ‘

‘ তুই আমাকেও ছাড়িয়ে গেছিস বুঝলি। ‘

‘ মা এরকম সিম্পলই থাক, সাধারণই সুন্দর। ‘

মিথিলা মাথা নাড়ালেন।

‘ অবশ্যই। কৃত্রিম কোনোকিছু দেওয়ার দরকার নেই। একটু লিপবাম দিতে পারিস। আর চুলগুলো গুছিয়ে দেই আয়। ‘

চুল গুছানো শেষে মিথিলা সাদা কারুকাজ করা চুড়ি পড়িয়ে দিলেন দু’হাতে। গলায় ছোট্ট সিম্পল একটি সাদা পাথরের চিকন চেইন।

মিথিলা একটু আফসোস করে বললেন,

‘ নাক ছিদ্র করাবো তোর বুঝলি, এখন যদি একটা ডায়মন্ডের ছোট নাক ফুল পড়তি তো আরও সুন্দর লাগতো। ‘

‘ ঠিক আছে করবো। ‘

মিথিলা খুশি হলেন। নিনীকার আচরণে পরিবর্তন এসেছে। যে মেয়ে পাত্রপক্ষ আসবে শুনলেই তুলকালাম করতো সে পাত্রের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। নিজ থেকে আগ্রহ দেখাচ্ছে সবকিছুতে। যদিও আগ্রহটা সামান্য তবুও মিথিলার কাছে তা বড় কিছু। তার বিশ্বাস নিনীকা আজ দেখা করে এসে হ্যাঁ বলে দিবে।

নিনীকা সাদা হাইহিল ও ব্যাগ বের করে বলল,

‘ মা দেখো তো এগুলো ঠিকঠাক মানাবে কি না। ‘

*

ধ্রুব রেডি হচ্ছে। ফারিন বিছানায় বসে দেখছে। ধ্রুবর ড্রেস সে-ই পছন্দ করে দিয়েছে। ধ্রুব কেমন যেন নির্লিপ্ত। কোনোরকম আগ্রহ সে দেখাচ্ছে না। ফারিন মনে মনে বলল,

‘ একবার দেখা তো করো বাছাধন, এমনভাবে পা পিছলে পড়বে না! কোনোদিন উঠতে পারবে না। ‘

ধ্রুব রেডি হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। ফারিন পেছন থেকে তাড়াতাড়ি গিয়ে সামনে দাড়ালো।

‘ তুমি আমাকে না বলে চলে যাচ্ছো কেন? ‘

ধারা সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন। ধ্রুবকে নামতে দেখে উঠে দাড়ালেন। মুখে হাত বুলিয়ে বললেন,

‘ সাবধানে যেও, তাকে নিয়ে আসতে পারলে নিয়ে এসো। আমাদের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে যাবে। তার ভালো লাগবে। ‘

ধ্রুব মাথা নাড়ালো। ফারিন ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

‘ যাও যাও, মনে থাকে যেনো। তুমি বলেছো উত্তর একই থাকবে। ‘

ধারা চোখ রাঙালেন। ধ্রুব কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো।

‘ উত্তর একই থাকবে বলেছি তারমানে একই থাকবে। দেখে নিস। ‘

‘ হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও দেখবো৷ তুমি যদি উত্তর একই রেখে ভাব দেখাও তবে তার কিছু আসবে যাবে না। তার জন্যে পাত্রের অভাব হবে না বুঝলে! ‘

ধ্রুব রেগে গেলো।

‘ মা! ‘

ধারা ফারিনের মুখ চেপে ধরলেন।

‘ তুই সাবধানে যা বাবা। ওর কথায় কান দিস না। ‘

*

রেস্টুরেন্টের একটি টেবিলে পাঁচ মিনিট ধরে বসে আছে ধ্রুব৷ বার-বার ঘড়ির দিকে চোখ বোলাচ্ছে। এগারোটা বেজে গেছে। মায়ের বলা সুন্দরীর কোনো দেখা নেই এখনো। আরও দশ মিনিট সময় গড়ালো। তখনই রেস্টুরেন্টের সামনে থামলো একটি কালো গাড়ি। ধ্রুব কাঁচের ফাঁক দিয়ে দেখলো সাদা শাড়ি পরিহিত একজন রমনী এগিয়ে আসছে। মুখে মাস্ক ও চোখে রোদচশমা। রমনীটি ধ্রুবর বুক করা টেবিলের কাছে এসে থামলো। চেয়ার টেনে বসে রোদচশমা খুলে এক পলক তাকালো। মাস্ক খুলে যখন আবারও তাকালো তখনই ধ্রুব থমকালো। বুক টিপটিপ করছে তার। রমনীটি ঠোঁট প্রসারিত করে বলল,

‘ হাই, আমি নিনীকা শেখ। ‘

ধ্রুবর মুখটা হা হয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পরখ করছে নিনীকাকে। মুখে কোনো প্রসাধনী নেই। গাল নাকে গোলাপি আভা। ফারিনের কথা মনে হতেই গলা শুকিয়ে গেলো তার। ফারিন বলেছিল মোমের পুতুল। ধ্রুবর মনে হলো তার সামনে সত্যিই মোমের তৈরি কেউ বসে আছে। সাদা শাড়িতে স্নো ওয়াইট লাগছে।

নিনীকা ধ্রুবর কোনো উত্তর না পেয়ে একটু নার্ভাস ফিল করলো। এরকম আগ বাড়িয়ে কথা বলাটা হয়তো ঠিক হয়নি। সামনের মানুষ টা নিজ থেকে ও কিছু বলছেনা। শুধু তাকিয়ে আছে৷ ধ্রুবর তাকানোর স্থায়ীত্ব ত্রিশ মিনিটেরও বেশি ছিলো। তারপর সে মুখ খুললো।

‘ আপনি ভালো আছেন? ‘

নিনীকা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না। এতোক্ষণ পর একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো। কি অদ্ভুত!

‘ আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি? ‘

ধ্রুব উত্তর দিলো না। বলল,

‘ আপনি কি বিয়েতে রাজি? ‘

নিনীকা এবার পুরোপুরি নার্ভাস হয়ে গেলো। এই উত্তর টা সে নিজের মা বাবাকেও দেয়নি। ধ্রুব উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে।

‘ সেটা আমি বাসায় গিয়ে জানিয়ে দিবো। ‘

উত্তরে সন্তুষ্ট হলো কি না বুঝা গেলো না। ধ্রুব উঠে দাড়ালো।

‘ আপনি বাসায় চলে যান। ‘

নিনীকা শুধু অবাক হচ্ছে। জীবনে প্রথমবার পাত্রের সাথে দেখা করতে এসেছিল সে। সবারই কি তার মতো এমন অভিজ্ঞতা হয়! নাকি তার বেলাতেই ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো! নিনীকা উঠে দাড়ালো।

‘ আমার মনে হচ্ছে আপনি প্রস্তাবে রাজি নন, বা আপনাকে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আমার সাথে দেখা করার জন্য। আপনি যদি ফ্যামিলির জন্য না করতে না পারেন, তবে আমাকে মেসেজে বলে দিবেন। আমি বাকিটা দেখে নিবো। আসছি। ‘

নিনীকা মাস্ক লাগিয়ে চলে গেলো। ধ্রুব হতভম্ব চোখে তাকিয়ে থাকলো। এমন অদ্ভুত সাক্ষাৎকার তার জীবনে প্রথম। মেয়েটাকে দেখার পর থেকে সে নিজেই বেশি নার্ভাস হয়ে গেছে।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে