#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-০৫
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
(কপি নিষিদ্ধ)
খেয়েদেয়ে রাতে নিনীকা যখন রুমে আসলো তখন তার ফোনে মেসেজের নোটিফিকেশনের শব্দ হলো। বাড়িতে থেকেও রমজান শেখ মেসেজ দিয়েছেন।
পাত্রের বিষয়ে সবকিছু পাঠিয়েছেন। সাথে ছোট একটি মেসেজ লিখেছেন,
‘ নিনীকা আমার বুদ্ধিমতী মেয়ে, আমি জানি তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে। বাবা তোমার সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায়। তোমার উপর আমার ভরসা আছে মা আমার। ‘
নিনীকার ঠোঁটে হাসি ফুটলো। পাত্রের নাম ধ্রুব মাহবুব। বয়স বত্রিশের কাছাকাছি। পেশায় আর্মি অফিসার। আপাতত একটি মিশনে থাইল্যান্ডে আছে।
নিনীকার ভ্রু কুঁচকে গেলো। তারমানে যাকে নিনীকা দেখেছে সেই এই লোকটা। নিনীকা তনু আপাকে সবকিছু পাঠালো মেসেজে। ধ্রুবর ছবি দেখে তনু আপা লিখেছেন,
‘ ও মা গো, নিনীকা! এটা তো ওই অফিসারদের মধ্যে একজন! ‘
নিনীকা লিখলো,
‘ হ্যাঁ তনু আপা। ‘
‘ নিনীকা তুমি কি তার উপর ক্রাশ? হঠাৎ তার ছবি পাঠালে যে? আর তুমি ছবিটা পেয়েছো কিভাবে? ‘
নিনীকা ধীরেসুস্থে লিখলো,
‘ বাবার বন্ধুর ছেলে। ‘
‘ ও মাই গড! সেই বন্ধুর ছেলে? যার সাথে তোমাকে বিয়ে দিতে চায় তোমার পরিবার! ‘
‘ হ্যা আপা, এটা তিনিই। ‘
নিনীকা উত্তরের অপেক্ষা করলো। ওপাশ থেকে বড়সড় মেসেজ পাঠাবেন হয়তো তনু আপা। টাইপিং দেখাচ্ছে। তনু আপার মেসেজ এলো।
‘ আ’ম সো এক্সাইটেড নিনীকা। তোমার সাথে তাকে অনেক মানাবে। তুমি নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে তাকে বিয়ে করে ফেলতে পারো। যদি না করো তবে আমাকে একটু চান্স করে দিও। ‘
মেসেজটা পড়ে নিনীকার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। নাক ফুলিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লিখলো,
‘ বাবার আমার উপর অনেক ভরসা। তার বুদ্ধিমান মেয়ে যে প্রস্তাব টা ফিরিয়ে দিবে না সেটা তিনি জেনে রিলাক্সে বসে আছেন তনু আপা। ‘
‘ তার মানে তুমি বিয়ে টা করছো? ‘
নিনীকা উত্তর দিলো না আর। মোবাইল রেখে শুয়ে পড়লো। ঘুম দরকার, লম্বা জার্নি করে শরীরে অনেক ক্লান্তি ভর করেছে।
*
বউ কথা কও বাড়ির সামনে থামলো জীপ গাড়িটি। শার্ট প্যান্ট পড়া বলিষ্ঠ শরীরের পুরুষটি সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে উচ্চস্বরে ডাকলো, ‘মা!’
ধারা দুপুরের জন্য রান্না করছিলেন। কানে মা ডাকটা আসতেই দৌড়ে বের হলেন কিচেন থেকে। ততোক্ষণে ধ্রুব ডোয়িং রুমে চলে এসেছে। ধারা আছড়ে পড়লেন ছেলের উপর।
‘ ধ্রুব, আমার বাবা। ‘
ধ্রুব আগলে নিলো। সোফায় বসে বলল,
‘ কেমন আছো মা? ‘
ধারা চোখের পানি ঝরালেন। ধ্রুবর মুখে তার হাতের বিচরণ চলছে।
‘ তোকে দেখে ভালো লাগছে, এতোদিন এক ধরনের চিন্তার মধ্যে থাকতাম কবে তুই ফিরবি। ‘
ফারিন ও ফাহিম মাহবুব বাহিরে ছিলেন। দুজন বাড়িতে ঢুকেই দেখলেন ধ্রুব সোফায় বসে আছে। ফারিন উচ্চস্বরে ডাকলো, ‘ব্রো! ‘
ধ্রুব হাত বাড়ালো। ফারিন দৌড়ে এলো। ফাহিম মাহবুব ছেলের পাশে বসলেন। মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ তোমার এই সাফল্যে আমি অনেক খুশি এবং গর্বিত ধ্রুব। ‘
ধারা টেবিলে খাবার এনে রাখছেন। প্রশ্ন করলেন,
‘ কিসের কথা বলছো? ‘
ধ্রুব বললো,
‘ থাইল্যান্ডের মিশনে সাকসেস হওয়ার জন্যে প্রমোশন হয়েছে মা। ‘
ধারা বিস্ময় নিয়ে বললেন,
‘ তার মানে? ‘
ফাহিম মাহবুব হেসে বললেন,
‘ তোমার ছেলে এখন আর্মির ক্যাপ্টেন থেকে একজন মেজর হয়ে গেছে। ‘
ফারিন কংগ্রেস জানালো। ধারা কপালে আদর দিলেন।
‘ এভাবেই জয়ী হও আমার বাবা। তোমার এই সাফল্যে আমরা অনেক খুশি হয়েছি। যদিও তোমাকে নিয়ে ভয়ও থাকে। ‘
ধ্রুব হাসলো,
‘ কোনো ভয় নেই মা, আমাদের সবকিছু পূর্বনির্ধারিত করা। আমার ভাগ্যে যেভাবে যা লিখা আছে সব হবে। তুমি শুধু দোয়া করবে, ব্যস। ‘
বহুদিন পর টেবিলে একসাথে বসেছে সবাই। ধারা ছেলেকে যত্ন করে খাওয়াচ্ছেন। এটা ওটা তুলে দিতে পাশে বসেছেন। ধ্রুব খেতে খেতে বলল,
‘ তুমিও খাওয়া শুরু করো মা, কিছু লাগলে আমি নিতে পারবো। ‘
‘ কতোদিন তোকে যত্ন করে পাশে বসিয়ে খাওয়াতে পারিনি ধ্রুব৷ ‘
ফারিন খেয়ে ধ্রুবর লাগেজ খুলে বসলো। ধ্রুব থাইল্যান্ড থেকে কি কি এনেছে দেখতে বসলো। সোফায় বসে থাকা ধ্রুবকে ধারা ঘুমিয়ে রেস্ট নিতে বললেন। ধ্রুব ঘুমাতে চলে গেলো। তার ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যার দিকে। ফ্রেশ হয়ে যখন নিচে নামলো তখনই ধারা ছেলেকে কথাটা বললেন।
‘ তোমার বাবার বন্ধুর একটি মেয়ে আছে ধ্রুব। আমরা চাই তার সাথে তোমার বিয়ে দিতে। তুমি কি একটু ভেবে দেখবে বাবা? ‘
ধ্রুবর পাশে ফারিন। দু ভাই বোন কফি খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। ফারিন কানে কানে বলল,
‘ একবার দেখতে পারো ব্রো, তোমার পছন্দ হয়ে যেতে পারে বলে আমার ধারণা। ‘
ধ্রুব তেমন গুরুত্ব দিলো না। ফারিন আবারও বললো,
‘ না সে সুন্দর বলে বলছি না। কিন্তু তার মধ্যে একধরনের আকর্ষণ আছে। তুমি তো সহজে আটকাবে না। সুতরাং দেখতে দোষ কি? ‘
ধ্রুব তবুও চুপ থাকলো। ফারিন ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ একবার দেখোই না ভাইয়া, তোমাকে দেখতে বলা হয়েছে। বিয়ে করতে বলা হয়নি। পছন্দ না হলে তো জোর করে বিয়ে দিবে না! ‘
ধ্রুব অতিষ্ঠ হলো। ধারার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
‘ দাও ‘
ধারা নিজের মোবাইল দিলেন। স্কিনে নিনীকার ছবি। ধ্রুব এক পলক দেখলো। সম্ভবত জিন্স আর শার্ট পড়া। ধারা আরেকটা বের করলেন। ধ্রুব সেটাও এক পলক দেখলো। সবুজ রঙের ঝলমলে শাড়ি পড়া। ধারা ও ফারিন ধ্রুবর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে। তাদের ধারণা এমন সুন্দরী দেখতে মেয়েকে ধ্রুবর অবশ্যই পছন্দ হবে। কিন্তু ধ্রুব তাদের ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে বললো,
‘ পছন্দ হয়নি। ‘
ধারা অবাক হলেন।
‘ কি বললে বাবা? এমন সুন্দর একটা মেয়েকে তোমার পছন্দ হয়নি! আরেকটু ভালো করে দেখো? ‘
‘ না মা, সত্যিই পছন্দ হয়নি। ‘
ফারিন নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ তুমি জানো সে কে? তার জন্য কতো কতো ছেলেরা পাগল। তার সিনেমা দেখতে বাংলার ইয়াং জেনারেশন থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও হুমড়ি খায়। ‘
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ ওহ হ স্টার! ‘
‘ তবুও বলবে পছন্দ হয়নি? ‘
‘ একবার তো বললামই। এসব স্টারকে জীবনসঙ্গী করার কোনো মানে হয়না৷ ‘
ধারা হতাশ হলেন।
‘ আরেকটু ভেবে দেখলে হতো না ধ্রুব? মেয়ে টা অসম্ভব ভালো। এ পর্যন্ত কোনো বাজে রেকর্ড নেই। মিডিয়া জগতেও তার দারুণ প্রশংসা চলে। সে অন্যান্য স্টারদের মতো নয়। ‘
ফারিন তাল মিলালো,
‘ হ্যাঁ ভাইয়া, আর তুমি জানো? সে সিনেমার অফার পেলে আগে দেখে সেটাতে কোনো ক্লজ সিন থাকবে কি না। যদি থাকে তো সে সেটা রিজেক্ট করে দেয়। এজন্য ও তার অনেক সুনাম আছে মিডিয়া জগতে। আর আমি তার একটা সাক্ষাৎকার দেখেছিলাম। সেখানে তিনি বলেছিলেন সিনেমা জগতে এসেছেন শখের বসে। যেকোনো সময় তিনি সিনেমা করা বাদ দিতে পারেন। কজ তার এক কাজ বেশিদিন করতে ভালো লাগে না। তার অভিনেত্রী ক্যারিয়ারের আট বছর রানিং। ‘
ধ্রুব বিরক্ত হলো।
‘এসব আমাকে শুনাচ্ছিস কেন? ‘
‘ কারণ আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি নায়িকাদের পছন্দ করো না। বাট ব্রো সে আলাদা। তুমি ভেবে দেখতে পারো। বা তার সাথে কথা বলে দেখতে পারো। ‘
ধারাও ছেলের হাত ধরলেন।
‘ প্লিজ ধ্রুব, একটু দেখা করে দেখো না? এরপরে যদি তোমার মনে হয় সে তোমার যোগ্য না তবে আমরা আর জোর করবো না। কথা দিচ্ছি। ‘
ধ্রুব দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
‘ ঠিক আছে। তবে জেনে রেখো তাকে আমার কোনোদিনই পছন্দ হবে না। এবং আমার উত্তর একই থাকবে। ‘
(চলবে)