বিয়ে থা ২ পর্ব-০৪

0
52

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব – ০৪
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

থাইল্যান্ডে থাকা দিনগুলোতে তনু আপা যখনই ওই অফিসারদের দেখেছেন তখনই নিনীকার কাছে বলেছেন,

‘ নিনীকা লুক, ওই অফিসারগুলো। ‘

নিনীকা কিছু না বলে শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তনু আপা তার মাথা খারাপ করে দিতে যথেষ্ট।

শুটিংয়ের কাজ শেষ করে নিনীকা যখন বাড়ি ফিরলো তখন গোধুলি বিকেল। দীর্ঘ কয়েকমাস সে থাইল্যান্ডে ছিলো। সদর দরজা খোলা। নিনীকা উঁকি দিয়ে দেখলো ভেতরে কিছু মানুষজন বসে আছে। তাদের নিনীকা চিনে না।

আকস্মিক নিনীকাকে দেখে রুম্পা চিৎকার দিলো,

‘ খালাম্মা আপা আইয়া পড়ছে। ‘

ডোয়িং রুমের সবাই সদর দরজার দিকে তাকালো তৎক্ষনাৎ। নিনীকা ধীর পায়ে প্রবেশ করলো। মিথিলা মেয়েকে দেখে হাসলেন। এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।

‘ শুকিয়ে গেছো কেন এতো? ‘

নিনীকা ঠোঁট উল্টে তাকালো।

‘ সিনেমাতে স্লিম নায়িকার অভিনয় করেছি সেজন্য। ‘

‘ ব্যাপার না কয়েকদিন খাইয়ে গুলোমোলো বানিয়ে দিবো। ‘

নিনীকা দু’হাতে পিঠ জড়িয়ে ধরলো।

‘ আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি। ‘

মিথিলা মাথায় চুমু দিলেন।

‘ আমরাও তোমাকে মিস করেছি অনেক। এসো দেখবে কে এসেছে আজ। ‘

মিথিলা নিনীকাকে ধরে সোফার কাছে নিয়ে গেলেন। বসিয়ে দিলেন রমজান শেখের পাশে। নিনীকা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। রমজান শেখ মেয়েকে আগলে নিয়ে সামনে বসা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বললেন,

‘ নিনীকা মাত্রই এলো থাইল্যান্ড থেকে, শুটিংয়ের কাজে গেছিল। আর নিনীকা মা উনারা হলেন তোমার আঙ্কেল ও আন্টি, পাশে তাদের মেয়ে ফারিন। পরিচিত হও মা। ‘

নিনীকা পরিচিত হলো। ধারা নিনীকাকে টেনে নিজের পাশে বসালেন।

‘ মাশাআল্লাহ একেবারে মোমের পুতুল তুমি মা। ছবি ও সিনেমার থেকে সামনাসামনি তোমাকে বেশি সুন্দর লাগে। ‘

‘ আপনারাও অনেক সুন্দর এবং ভালো আন্টি। আমি ফ্রেশ হয়ে আপনাদের সাথে এসে জয়েন করি? ‘

ধারা হাসলেন,

‘ অবশ্যই, ফ্রেশ হয়ে এসো। আমরা অপেক্ষা করবো।

নিনীকা ফ্রেশ হতে চলে গেলো। পেছনে রুম্পা ট্রলি নিয়ে যেতে লাগলো। রুমে ঢুকতেই রুম্পা ফিসফিস করে বলল,

‘ আপা উনারা হলেন খালুর বন্ধু ও বন্ধুর বউ, সাথে তাদের মেয়ে। ‘

‘ এরকম শুদ্ধ করেই কথা বলবি সবসময়। ‘

নিনীকা রুম্পার বলা কথা খেয়াল করেনি হয়তো। রুম্পা আবার বললো,

‘ আপা উনারা তারা যার ছেলের সাথে আপনার বিয়ে হবে। ‘

নিনীকা চমকে তাকালো,

‘ কিহ! ‘

রুম্পা মাথা নাড়ালো।

‘ আজ আপনি আসবেন সেজন্য খালু তাদের আসতে বলছে যাতে আপনার সাথে দেখা হয়ে যায়। ‘

নিনীকা রাগে ফুসফুস করতে করতে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। চেহারার রিয়াকশন ঠিকঠাক করে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে নিচে নামলো। জীবনে প্রথমবার পাত্রপক্ষের সামনে বসতে হয়েছে তাকে।

টেবিলে সকলের সাথে বসে খাওয়া দাওয়া করলো। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বললো। মিথিলা মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। নিনীকা অভিনয় করেই হোক হাসছে তো। নাহলে পাত্রপক্ষের সামনে নিনীকা কোনো সিনক্রিয়েট করলে তাদের মানসম্মান থাকতো না।

সন্ধ্যার পর পাত্রপক্ষ বিদায় নিলেন। ফারিন যাওয়ার আগে নিনীকার গাল টেনে দিয়ে বলল,

‘ তুমি একদম মোমের মতো। ‘

নিনীকা সোফায় শান্ত হয়ে বসে আছে। রমজান শেখ ও মিথিলা একে-অপরের দিকে তাকালেন। রমজান শেখ গলা পরিষ্কার করে বললেন,

‘ নিনী তাদের তোমার কেমন মনে হলো? ‘

নিনীকার স্পষ্ট উত্তর,

‘ ভালো। ‘

‘ আমার বন্ধু ও তার পরিবার, যদিও তাদের ছেলে অনুপস্থিত ছিল। তোমার তাদের ভালো লেগেছে সেটা জেনে ভালো লাগছে। তুমি যদি চাও তাদের ছেলেকে দেখতে পারো। খারাপ না, তোমার ভালো লাগবে বলেই আমি আশাবাদী৷ একবার দেখবে? ‘

নিনীকা হাত বাড়ালো,

‘ দাও ‘

রমজান শেখ মোবাইল থেকে ছবি বের করে নিনীকার হাতে দিলেন। নিনীকার সামনে ভেসে উঠলো আর্মি ইউনিফর্ম পরিহিত একজন বলিষ্ঠ শরীরের পুরুষ। তার মনে হলো এই পুরুষকে সে আগে কোথাও দেখেছে।

‘ আমি তাকে কোথাও একটা দেখেছি বাবা। ‘

রমজান শেখ উৎসাহ নিয়ে তাকালেন,

‘ কোথায় দেখেছো মাই চাইল্ড? ‘

মিথিলার চোখেমুখে কৌতূহল। রুম্পা নিজেও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নিনীকা সবার চাহনি দেখে একটু ভড়কে গেলো। সবার ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে বলল,

‘দেখেছি হয়তো আশা যাওয়ার পথে, আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। ‘

মিথিলা মেয়ের পাশে বসলেন।

‘ একটু মনে করতে চেষ্টা কর না মা। ‘

নিনীকা ঠোঁট কামড়ে ভাবলো। বললো,

‘ যাওয়ার সময় এয়ারপোর্টে সাদা পোশাক পড়া একদল ডিফেন্স অফিসার দেখেছিলাম। তনু আপাকে তো চিনোই, সে ওদের উপর ক্রাশ। সারাক্ষণ এদের কথা কানের কাছে বকবক করেছে। আমরা যখন থাইল্যান্ডের এয়ারপোর্টে নামি তখনও তাদের তনু আপা দেখেছেন৷ এবং যে কটা দিন ছিলাম তনু আপা মাঝেমধ্যে তাদের দেখেছেন। সেইরকম বলেছেন। আমি তেমন করে তাকিয়ে দেখিনি৷ হয়তো তাদের মধ্যেই কেউ একজন হবে ছবির এই অফিসারটা। ‘

মিথিলার মুখে হাত।

‘ নিনীকা! তুমি তাকে দেখেছো! বলো কেমন লেগেছে তোমার? ‘

রমজান শেখ মুখ লুকিয়ে হাসলেন। নিনীকা বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ মা আমি তাকে তেমন করে দেখিনি, এমনকি শিওর না তিনি ওই অফিসারদের মধ্যে ছিলেন কি না। আমার কাছে সবকিছু অস্পষ্ট। তবে তোমাকে কথা দিচ্ছি পরের বার দেখা হলে একটা ছবি তুলে নিয়ে আসবো প্রমাণ হিসেবে৷ যাতে তুমি দেখতে পারো। ‘

মিথিলা মুখ বাঁকালেন।

‘ এখন দেখো ভালো করে। সুপুরুষ একজন। তোমার তাকে পছন্দ হচ্ছে না? ‘

‘ মা তাকে অপছন্দ হবার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীর সব মানুষকেই আমার পছন্দ৷ ‘

‘ আরে ওই পছন্দ বলছি না, আমরা চাই তুমি তাকে বিয়ে করো। নিজের জন্য তোমার তাকে পছন্দ কি না? ‘

নিনীকা নিজের বাবার দিকে তাকালো। রমজান শেখ বুঝিয়ে বললেন,

‘ দেখো মা, আমরা আজ আছি কাল না-ও থাকতে পারি। তোমাকে এই ছেলেটাকেই বিয়ে করতে হবে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তুমি চাইলেই তাকে রিজেক্ট করে দিতে পারো। তবে আমরা কিন্তু থেমে থাকবো না। একের পর এক পাত্র তোমার সামনে হাজির করবো। কারণ বাবা মা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব অনেক। এরকম একের পর এক পাত্র দেখাতে দেখাতে তুমি অতিষ্ঠ হয়ে একসময় বিয়ে করে ফেলবে। কিন্তু তখন সেই পাত্র যদি এই পাত্রের মতো না-হয়? আমি কি তোমাকে বুঝাতে পেরেছি নিনী? তোমার হাতের মোবাইলে থাকা ছবির ছেলেটিকে আমি চোখ বন্ধ করে সবার থেকে বেশি বিশ্বাস করতে পারবো। কারণ তাকে আমি দেখেছি চিনেছি। সে নিঃসন্দেহে এ পর্যন্ত দেখা সব পাত্রের থেকে ভালো, এবং আমি মনে করি আজ যদি তুমি তাকে রিজেক্ট করো তবে ভবিষ্যতে পাত্রের অভাব না হলেও একজন বিশ্বস্ত মানুষের অভাব থেকে যাবে। আমি এতো নির্ভয়ে তোমাকে আর কারো হাতে তুলে দিতে পারবো না। আমার চিন্তা থাকবে তোমাকে নিয়ে সবসময়। ভেবেচিন্তে উত্তর দিও মা আমার। আমরা তোমার খারাপ চাই না। এবং আমি জানি তুমি একসময় অবশ্যই বিয়ে করতে রাজি হবে, বিয়ে যেহেতু করবেই এখনই না-হয় যোগ্য কাউকে করো? ‘

নিনীকার মস্তিষ্কে রমজান শেখের একেক টা কথা প্রতিধ্বনিক হতে লাগলো। মিথিলা বিস্ময় নিয়ে নিজের স্বামীকে দেখছেন। এই লোক কতো সহজ করে নিনীকার মস্তিষ্কে সবকিছু ভরে দিলো। মিথিলা জানেন এবার নিনীকা ভাবতে বাধ্য হবে।

নিনীকা আড়চোখে হাতে রাখা মোবাইলের ছবিটার দিকে তাকালো। বলল,

‘ আমাকে ভাবতে দাও বাবা। ‘

রমজান শেখ মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন,

‘ অবশ্যই আমার মা, তুমি ধীরেসুস্থে ভাবো। কোনো তাড়াহুড়ো নেই৷ ‘

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে