#বিয়ে_থা_২
#সূচনা_পর্ব
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
‘ বিয়ে করলে নিজের ভার্জিনটি হারাতে হবে! সেজন্যই আমি বিয়ে করবো না। এন্ড মোস্ট ইমপোর্টেন্ট ব্যাপার বিয়ে করলে সম্পূর্ণ অপরিচিত কারো পাশে ঘুমাতে হবে, কারো ঘামের গন্ধ বা নাক ডাকার শব্দ শুনতে হবে। বিয়ের থেকে কঠিন ব্যাপার জগৎসংসারে দুটো হতে পারে না। বিয়ে মোটামুটি কঠিন একটি বিষয় আমার মতে! ’
সাংবাদিকের ‘ আপনি বিয়ে করছেন না কেন? ‘ প্রশ্নের পরিপেক্ষিতে উপরোক্ত কথাটি ছুঁড়ে দিলো বাংলা চলচ্চিত্রের একজন স্টার নিনীকা শেখ। সাংবাদিক সহ আশেপাশে ভীড় জমানো দর্শকদের মধ্যে হৈচৈ পড়ে গেলো। কেউ কেউ নির্লজ্জ বলে আখ্যায়িত করতে ভুললো না। তাতে নিনীকার তেমন যায় আসলো না। সে চোখের গগলস ঠিক করে গাড়ির ছাদের উপরের খোলা গ্লাসটা টেনে দিলো। লাগিয়ে বসে পড়লো সিটে। ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরাতে বলে রিলাক্স মুডে কানে হ্যাডফোন গুঁজে গান শুনতে লাগলো। গানটা তার সদ্য মুক্তি পাওয়া সিনেমার।
নিনীকার বর্তমান বয়স ত্রিশ। কিন্তু তাকে দেখে বিশ-বাইশের মনে হয়। নিজে থেকে না বললে বয়স বুঝা দুষ্কর।
শেখ বাড়িতে প্রবেশ করতেই রান্না ঘর থেকে মিথিলা বেরিয়ে এলেন। নিনীকা সবে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চাইছিল। মিথিলার ডাকে থেমে গেলো।
‘ আজ পাত্রপক্ষ আসবে, আশা করি তুমি কোনো আপত্তি করবে না। বয়স তো কম হলো না। বেঁচে থাকতে তোমাকে কারো দায়িত্বে দিয়ে যেতে পারলে তোমার বাবা ও আমি শান্তি পাবো। ‘
নিনীকা নাক ফুলালো। একটু আগেই সে বিয়ে নিয়ে কতো নেগেটিভ কথা মিডিয়ার সামনে বলে এসেছে। এখন কি না তাকে পাত্রপক্ষের সামনে বসতে হবে! বলল,
‘ আ’ম স্যরি মা। আমি বিয়ে করবো না। তুমি প্লিজ জোর করো না। ‘
মিথিলা হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়লেন। এটা নতুন নয়। নিনীকাকে আজ পর্যন্ত পাত্রপক্ষের সামনে বসানো যায় নি। তবে আজ তিনি বসিয়েই ছাড়বেন বলে ঠিক করেছেন। সার্ভেন্ট একটি মেয়ের থেকে বুদ্ধি ও নিয়েছেন। শুরু করে দিলেন ফিল্মের নায়িকার সামনে নিজের অভিনয়।
মিথিলা আহ্ করে বুকে হাত রেখে সোফায় বসে পড়লেন। নিনীকা গগলস হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে নিজের মায়ের অভিনয় দেখছে। মিথিলা আড়চোখে মেয়েকে দেখছেন।
‘ ওরে পাষাণী তোর মায়ের বুকে ব্যথা করছে তুই আমাকে না ধরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কি দেখিস? ‘
নিনীকা এগিয়ে এসে ধরলো। মিথিলা নিজেকে ছাড়িয়ে নিলেন।
‘ আমি বলেছি বলে ধরেছিস। নাহলে তো ধরতি না। তুই তোর ফিল্ম নিয়েই থাক যা। আমাকে মা ডাকবি না। ‘
‘ মা তুমি বাচ্চামো করছো না? ‘
মিথিলা ফুঁসে উঠলেন,
‘ আমি বাচ্চামি করছি? তোর যদি মনে হয় আমি বাচ্চামি করছি তবে তাই। যা ভাগ। ‘
নিনীকা দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো।
‘ মা তুমি বুঝতে পারছো না কেন? আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। বিয়ে জীবনের ছোট্ট একটি অংশ মাত্র। আর কিছু না। এটা না করলে কিছু হবে না। প্লিজ বুঝতে চেষ্টা করো। ‘
‘ ছোট হোক বা বড় তোকে বিয়ে করতেই হবে। নাহলে আমাকে মা ডাকবি না। ‘
‘ শিওর? ‘
‘ হ্যাঁ ‘
‘ ঠিক আছে। ‘
নিনীকা গটগট পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে গেলো। মিথিলা সত্যি সত্যি কেঁদে ফেললেন। তার মতো নরম সহজ সরল মায়ের এমন শক্ত পাষাণ মেয়ে হলো কেন! মেয়ের বাপ ও তো সহজ সরল মানুষ। হসপিটালে নিশ্চয়ই বাচ্চা বদল করা হয়েছে!
রুমে ঢুকে নিনীকা ফ্রেশ হয়ে ঘুমের রাজ্যে চলে গেলো। সে ভীষণ টায়ার্ড ছিলো।
এদিকে বিকাল হতেই শেখ বাড়িতে পাত্রপক্ষ হাজির। পাত্র বাবু খুশিতে গদগদ। স্টার নিনীকার সে যে বিশাল বড় ফ্যান সেটা মিথিলা ইতিমধ্যে বুঝে গেছেন। পাত্র বাবু চোখের চারব্যাটারি ঠিক করে বললেন,
‘ আন্টি নিনীকা ম্যাডাম কোথায়? ‘
মিথিলা এই নিয়ে পাঁচ বারের মতো বললেন,
‘ ঘুমে, আমি একটু পরই ডেকে আনবো। ‘
পাত্র বাবু লজ্জা পাওয়ার মতো করে মুখে হাত দিলো।
‘ আন্টি আপনি কি নিনীকা ম্যাডামের রিসেন্টলি মুক্তি পাওয়া মুভিটা দেখেছেন? ‘
‘ না ‘
‘ ও আন্টি আপনি তো দারুণ কিছু মিস করে গেছেন। ‘
মিথিলা বিরক্ত হলেন। পাত্রের মা বাবা ও একইরকম। তারা নিনীকার সিনেমা নিয়ে কথা বলে চলেছেন। মিথিলা মেয়েকে ডাকবেন কি নিজেই বিরক্ত হয়ে এদের বিদায় করলেন। আর যাই হোক সিনেমাপাগলদের সাথে তিনি মেয়ের বিয়ে দিবেন না। তিনি তো অন্যরকম পাত্র চান মেয়ের জন্য। মেয়েকে কতো বুঝালেন এসব সিনেমা জগতে না যেতে। কিন্তু মেয়ে শুনলো না। নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী সব করে।
মিথিলা ঘটককে ফোন করে বললেন,
‘ এমন পাত্র দেখো যে কখনো সিনেমা দেখা তো দূরে থাক। সিনেমার নামই মুখে নেয়নি। ‘
ঘটক ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন।
‘ আজ্ঞে এ যুগের তো সবাই সিনেমা দেখে। যদিও হঠাৎ কেউ পাওয়া যাবে সিনেমা দেখে না কিন্তু সিনেমার নাম যে জানবে না সেরকম কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখন তো সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন ম্যাডাম। ‘
মিথিলা ধমক দিলেন,
‘ তবে আপনি পাত্র খোঁজা বাদ দিন। আমার মেয়ের জন্য আমি নিজেই পাত্র খুঁজে বের করবো। ‘
মিথিলা মোবাইল কান থেকে নামিয়ে রাখলেন। নিনীকা হাই তুলতে তুলতে সিঁড়ি দিয়ে নামলো। পড়োনে ঢিলেঢালা প্লাজু ও টি-শার্ট। টেবিলে বসে বলল,
‘ বাবার বউ ভাত দাও। ‘
মিথিলা অবাক হলেন না। মেয়েকে মা ডাকতে নিষেধ করেছেন বলে এখন ঘুরিয়ে পেচিয়ে ডাকছে। সার্ভেন্টকে বললেন নিনীকাকে খাবার দিতে। নিজে রুমে চলে গেলেন। যাতে নিনীকা বুঝে তিনি রেগে আছেন।
সার্ভেন্ট মেয়েটি নিনীকার অনেক ছোট। সে জিজ্ঞেস করলো,
‘ বাড়িতে কে এসেছিল রে? ‘
‘ পাত্রপক্ষ আসছিল আপা, কিন্তু খালাম্মা তো নিজেই তাড়াইয়া দিছে। ‘
নিনীকা অবাক হলো,
‘ তোর খালাম্মা নিজেই পাত্রপক্ষ এনে নিজেই তাড়িয়ে দিলো! হোয়াই? ‘
‘ খালাম্মা স্পষ্ট কইরা কইছে, হেই তার মাইয়ারে সিনেমা পাগল অথবা সিনেমার নাম শুনছে এরকম কারো লগে বিয়া দিবো না। পাত্রকে আপনে যেমন বিয়ে বিদ্বেষী তেমন কইরা সিনেমা বিদ্বেষী হইতে হইবো। ‘
নিনীকা হেসে ফেললো। এরকম পাত্র ইহজনমেও পাওয়া সম্ভব না। এখন তো সবাই স্মার্ট। যাক সে নিশ্চিত হলো। বিয়ে নিয়ে এখন আর কোনো প্যারা খেতে হবে না।
‘ তয় আপা.. ‘
নিনীকা ভ্রু কুঁচকে তাকালো,
‘ কি? ‘
‘ খালাম্মা কিন্তু রাইগা ওসব কইছে। ‘
‘ আরে তোর খালাম্মা রাগ করে বললেও সিনেমাজগতের কিছু পছন্দ করে না আগে থেকেই। সুতরাং সে যে আমাকে সিনেমাপাগল কারো সাথে বিয়ে দিবে না নিশ্চিত থাক। ‘
‘ আপা আরেকটা কথা কই? ‘
‘ বল ‘
সার্ভেন্ট মেয়েটি মুখ এগিয়ে আনলো একটু।
‘ খালুরে দেখছি কার সাথে জানি ফোনে কথা কইছে আপনের ব্যাপারে। হের বন্ধুর কোন পোলার লগে আপনের বিয়া দিবার চায়। ‘
নিনীকার খাবার গলায় আটকে গেলো। পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে বলল,
‘ আর কিছু শুনলে আমাকে সাথে সাথে জানাবি। আমি আগামীকাল বের হয়ে যাবো নতুন মুভির শুটিং এর কাজে। বুঝেছিস? ‘
মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। নিনীকা খেতে খেতে বাবার বন্ধুর নাম না জানা ছেলেটিকে কিছু বিশ্রী গালি দিলো। গালি গুলো এরকম-
‘ শালা দুনিয়ায় আর কোনো মেয়ে পায়নি। বাবার বন্ধুর মেয়ে কে বিয়ে করবে। জীবনে কি মেয়ে দেখেনি। যেই দেখেছে বাবার বন্ধুর মেয়ে সুন্দর অমনি বিয়ে করার জন্য হাজির। ‘
সার্ভেন্ট মেয়েটিকে বলল,
‘ বুঝলি রুম্পা, বাংলাদেশের ৯৯% পরিবারে মেয়েরা বাবার বন্ধুর ছেলে, আর মায়ের বান্ধবীর ছেলের জন্য ঠিকমতো লাইফ লিড করতে পারে না। এরা যে কোথা থেকে উৎপন্ন হয়ে হুট করে বিয়ে করতে এসে পড়ে আল্লাহই জানেন। ‘
রুম্পা আফসোস করে বলল,
‘ বুঝলেন আপা আমার হেতিও আমার আব্বার লেংটা কালের বন্ধুর পোলা। ‘
(চলবে)
বিয়ে থা সিজন-০১ পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন