#বিয়ে_থা
#পর্ব- ৪৩
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
নিনীকার ফোন হাতে নিয়ে কিছু একটা করছে দিব্য। মাঝেমধ্যে ঘুমন্ত মায়ের বুকে মুখ গুঁজছে। মুখ ফুলাতে দেখা যাচ্ছে তাকে। নিনীকা জেগে গেলো। ছেলের মুখ ফুলানো দেখে বুঝলো কিছু একটা হয়েছে। দিব্য মোবাইল দেখালো৷ নিনীকা হেসে ফেললো,
‘ দিব্য কি তার বাবাকে ফোন দিতে চায়? ‘
দিব্য খুশিতে চিৎকার করে মাথা নাড়ালো। নিনীকা ফোন দিলো ধ্রুবকে। রিসিভ করতেই বলল,
‘ দিব্য সোনা তার বাবার সাথে কথা বলতে চায় মিস্টার মেজর। ‘
ধ্রুব ছেলেকে ডাক দিলো,
‘ দিব্য? ‘
‘ বাবা…তুমি আতো ‘
‘ বাবা তো অফিসে দিব্য। আসার সময় তোমার জন্য কি আনবো বলো তো? ‘
দিব্য ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে ফেললো,
‘ তুমি আতো ‘
নিনীকা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
‘ ধ্রুব তাড়াতাড়ি এসো তো, দিব্য কাঁদে। ‘
‘ তাড়াতাড়ি আসবো মিসেস। দিব্যর কি লাগবে জিজ্ঞেস করো। ‘
নিনীকা ছেলের গালে আদর দিলো।
‘ দিব্যর কি লাগবে বাবাকে বলো সোনা৷ ‘
দিব্য ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ বাবা ‘
ধ্রুবর মন খারাপ হলো। বলল,
‘ দিব্যকে নিয়ে বের হও তো মিসেস, সেনানিবাসের দিকে আসো। আমি কিছুক্ষণের ভেতরে বের হতে চেষ্টা করছি। ‘
‘ ছেলের জন্য এতো মায়া, কই আমার জন্য তো কখনো অফিস রেখে আসো না। ‘
ধ্রুব কিছু বলতে নিলো তার আগেই দিব্য শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো। বলতে লাগলো,
‘ বাবা আতো, বাবা আতো ‘
‘ নিনীকা দিব্যকে নিয়ে আসো। আমার ছেলে কাঁদছে কেন? তোমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিবো, কি করেছো আমার ছেলেকে? দিব্য বাবা আমার কেঁদো না। তোমার মাম্মাকে আমরা বের করে দিবো। কেমন? ‘
দিব্য কান্না থামিয়ে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। নিনীকা নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ তোমরা বাবা ছেলে থাকবে আমি চলেই যাবো। দেখবো কতোদিন থাকতে পারো। ‘
দিব্য নিনীকার গালে মুখ লাগিয়ে রাখলো। মোবাইল এক হাতে কানে লাগিয়ে বলল,
‘ মাম্মা দাবে না ‘
ধ্রুব হেসে বলল,
‘ ঠিক আছে তোমার মাম্মা যাবে না। এবার তুমি তাড়াতাড়ি বাবার কাছে এলো এসো। বাবা ওয়েটিং ফর ইউ দিব্য। ‘
দিব্য কান থেকে মোবাইল নামালো। মায়ের গালে হাত রেখে বলল,
‘ না না মাম্মা কাঁদে না, মাম্মা দাবে না৷ ‘
নিনীকা দিব্যকে জাপ্টে ধরলো৷ মুখে অজস্র আদর দিতে দিতে বলল,
‘ দিব্য আমার লক্ষী বাচ্চা। ‘
দিব্য মায়ের সাথে বাবার কাছে যেতে রওনা হলো। নিনীকা ড্রাইভ করছে। মা ছেলের চোখে গগলস। দিব্য বড়োদের মতো সিটে বসেছে৷ মাঝেমধ্যে পাশ দিয়ে যাওয়া গাড়ি দেখিয়ে বলছে,
‘ মাম্মা উ..’
নিনীকা ড্রাইভ করার ফাঁকে ছেলের উচ্ছাস দেখছে। সেনানিবাসের সামনে আসতেই দিব্য হাততালি দিয়ে ধ্রুবকে ডাকতে লাগলো। নিনীকা নিজে নেমে ছেলের সিট বেল্ট খুলে নামিয়ে দিলো। দিব্য নিজেই ছোট ছোট পায়ে হেটে সেনানিবাসে ঢুকতে লাগলো৷ ডাকতে লাগলো,
‘ বাবা, বাবা, বাবা…’
অফিসার রা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছেন। দিব্য নিজেও মাঝে মধ্যে সবার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। নিজের ভাষায় জিজ্ঞেস করছে,
‘ বাবা কুথায়? ‘
নিনীকা দিব্যর অনেক পেছনে। সে হাসছে। তন্মধ্যে বেরিয়ে এলো ধ্রুব। দিব্য বাবাকে দেখে খুশিতে চিৎকার করলো৷ নিচে পড়ে গেলেও কাদলো না৷ হামাগুড়ি দিয়ে যেতে যেতে ডাকলো,
‘ বাবা..বাবা..’
ধ্রুব তৎক্ষণাৎ ছেলেকে কোলে তুলে নিয়েছে৷ দিব্য বাবার কাঁধে মুখ লুকিয়ে ফেললো। অফিসার রা জিজ্ঞেস করলেন,
‘ আপনার ছেলে? কি সাহস বাবাকে খুঁজতে একা একা ঢুকে পড়েছে। ‘
‘ না একা আসেনি আমার মিসেস ও এসেছেন। সে তার মায়ের সাথে এসেছে। ‘
‘ ও তাই বলুন, আপনার বাচ্চা মাশাআল্লাহ। নাম কি তোমার বাবা? ‘
দিব্য বাবার কাঁধ থেকে মুখ তুলে পিটপিট করে তাকালো।
‘ আমি চুনা বাচ্চা ‘
ধ্রুব শুধরে দিয়ে বলল,
‘ দিব্য মাহবুব। দিব্যকে তার মা সোনা বাচ্চা ডাকে। ‘
ধ্রুব অফিসারদের থেকে বিদায় নিলো। দিব্যকে নিয়ে এলো গেইটের বাহিরে। নিনীকা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। বাবা ছেলেকে আসতে দেখে হাসলো।
‘ দিব্যর মা ভেতরে গেলো না যে? ‘
‘ দিব্যর বাবাকে দিব্যই নিয়ে আসতে পারবে। সেজন্য অর্ধেক গিয়ে ফিরে এসেছি৷ ‘
ধ্রুব এক হাতে ছেলেকে ধরে, আরেক হাতে নিনীকার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। নিনীকা চোখ রাঙালো।
‘ অসভ্য লোক গাড়িতে উঠো। ‘
ধ্রুব গাড়িতে উঠে বসলো ছেলেকে কোলে নিয়ে৷ নিনীকা ড্রাইভ করছে। তাদের গন্তব্য অজানা। চারিদিকে গোধুলি পেরিয়ে আঁধার নামতে শুরু করেছে। নিনীকা একটি নির্জন জায়গায় গাড়ি থামালো সূর্যাস্ত দেখার জন্য।
আর্মি ইউনিফর্ম পরিহিত ধ্রুব গাড়ি থেকে নেমে ছেলেকে দুহাতে উঁচু করে উপরে তুলে ধরলো। দিব্য হাত ছড়িয়ে খিলখিল করে হাসছে। তাদের চোখেমুখে গোধুলির অন্তিম আলো ছড়িয়ে পড়েছে৷ নিনীকা ধ্রুবকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ছেলের হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি সুন্দর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য!
গাড়িতে আবারও উঠে বসলো তারা। তখনই নিনীকা ছেলে ও ছেলের বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ দিব্যর বোন আসতে চলেছে দিব্যর আব্বু। ‘
*
দার্জিলিংয়ে ফ্যামিলি ট্যুরে যাচ্ছে সবাই। দিব্য বাবার কোলে বাবু সেজে বসে আছে গাড়িতে। হালকা উচু পেট নিয়ে নিনীকা তাদের পাশে উঠে বসলো। দিব্য হাত বাড়িয়ে মায়ের পেটে রাখলো। বলল,
‘ বোন বোন উম্মাহ..’
নিনীকা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। নিনীকার পাশে উঠে বসলেন ধারা। আরেক গাড়িতে ফারিন, নিরব ও ফাহিম মাহবুব৷
গাড়ি চলতে শুরু করেছে। তিন বছরের দিব্য কাঁচের ফাঁক গলিয়ে বাহির দেখতে চেষ্টা করছে। ধ্রুব ছেলেকে ধরে রেখেছে। ধারা নিনীকাকে ধরে বসেছেন। দ্বিতীয়বারের মতো প্রেগন্যান্ট তার বউমা।
নিনীকার পড়োনে সাদা লং শার্ট। উপর দিয়ে ওড়না দিয়ে পেট ঢেকে রাখা। হাইহিল পড়া বারণ তার৷ গাড়িতে সে জুতো খুলে বসে আছে৷ এসি তে-ও ঘামছে সে৷
ধ্রুব মাথায় হাত রাখলো।
‘ ঠান্ডা কিছু খাবে? ‘
নিনীকা মাথা নাড়ালো। ধ্রুব গাড়ি থামাতে বললো। নেমে গিয়ে কিছু ফাস্টফুড ও ঠান্ডা পানি কোল ড্রিংক নিয়ে এলো। নিনীকা পানি খেলো। আরাম করে চোখ বন্ধ করে কাঁধে মাথা রাখলো৷
দিব্য নিনীকার মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মধ্যে চিপসের প্যাকেট থেকে চিপস বের করে মায়ের মুখে দিচ্ছে। সে জানে তার মতো তার মাও চিপস খায়।
নিনীকা হাত বাড়িয়ে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আদর করে ডাকলো,
‘ আমার সোনা বাচ্চা। ‘
দিব্য হাসছে। মায়ের কোলে যেতে চাইছে। ধ্রুব ধরে রাখলো।
‘ তোমার মা ব্যথা পাবে দিব্য, বাবার কোলে থাকো। ‘
দিব্য ঠোঁট উল্টে ফেলল।
‘ মাম্মা ব্যথা পায়? দিব্য ও ব্যথা পায়। ‘
নিনীকা ছেলেকে কোলে নিলো সাবধানে।
‘ দিব্য শান্ত হয়ে বসলে মাম্মা ব্যথা পাবে না। ‘
সন্ধ্যা নাগাদ ওরা দার্জিলিংয়ে পৌঁছে গেলো। হোটেল বুক করে খাবার অর্ডার দিয়ে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো।
নিনীকা ভীষণ ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। ধ্রুব ছেলেকে খাইয়ে দিয়ে নিনীকাকে টেনে তুলে খাইয়ে দিলো। ঘুমানোর আগে দিব্যকে ওয়াশরুম নিয়ে গেলো। দিব্য কমোডে বসে এটা ওটা বলছে। বাবার সাথে বিস্তর আলাপ চলে তার। ধ্রুবর চোখেমুখে ক্লান্তি। ছেলের গালে হাত রাখলো।
‘ তাড়াতাড়ি চু চু করে ফেলো বাবা, তোমার মাম্মা আমাদের ঘুমাতে ডাকছে। ‘
দিব্য ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ বাবা চুচু আতে না৷ ‘
(চলবে)