#বিয়ে_থা
#পর্ব-৩৫
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
( কপি নিষিদ্ধ )
বিয়ের অনুষ্ঠানের পর ছোট করে একটি বৌভাতের অনুষ্ঠান করা হলো। রমজান শেখ ও মিথিলা আসলেন না। ডাক্টারের কাছে যেতে হবে তাদের। তারপরই সব আত্মীয় স্বজন বিধায় নিলেন। ধারার ভাইয়েরাও বিদেশে চলে গেলেন। সুমিত্রাও ফিরে গেছে ইন্ডিয়ায়।
সময় দ্রুত গতিতে চলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে নিনীকার। তার পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ হয়েছে। আগামীকাল তাকে ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। এদিকে ধ্রুবর ও ছুটি শেষ। ফারিনের এসএসসি পরীক্ষা চলছে।
সময়টা রাত দশটা। খেয়ে ধ্রুব একটু বেরিয়ে গেছে। ঘরে নিনীকা একা। এই কয়েকটা দিন তার স্বপ্নের মতো কেটেছে। ধ্রুবের হাতে হাত রেখে কতো জায়গায় ঘুরেছে। রাতের আঁধারে নির্জন রাস্তায় হেঁটেছে। লং ড্রাইভে গিয়েছে। দিনশেষে একে অপরের উষ্ণতায় ডুবে থেকেছে।
এবার তাদের সাময়িক সময়ের জন্যে আলাদা হতে হবে। নিনীকা ভাবলো, সে না-হয় কয়েকদিন পর পরীক্ষার পাঠ চুকিয়ে নেবে, কিন্তু ধ্রুব! তার যে চাকরিটাই এমন, সারাজীবনই কি সে পরিবার ছেড়ে ওখানে এখানে ঘুরবে?
ধ্রুব ফিরলো এগারোটা নাগাদ। হাতে প্যাকেট করে আনা ফুচকা। ছোট্ট টেবিলে রেখে বউকে জড়িয়ে ধরলো।
‘ ফুচকা এনেছি। ‘
নিনীকা নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে চলে গেলো। প্লেট নিয়ে আসার সময় ডেকে এলো ফারিনকে। ফারিন এলো। চোখের নিচে কালো দাগ। বেচারি রাত জেগে পড়ে। নিনীকা টেনে বিছানায় বসালো। ফুচকা সামনে দিয়ে বলল,
‘ খেতে শুরু করো। কি অবস্থা করেছো নিজের বলো তো? সুস্থ না থাকলে কিভাবে হবে? ‘
ফারিন হেসে খেতে শুরু করলো। ধ্রুব গালে হাত দিয়ে বউ ও বোনকে দেখছে। নিনীকা ঠেসে একটি ফুচকা ঢুকিয়ে দিয়েছে তার মুখে। বহু কষ্টে সে সেটা গিললো। বলল,
‘ অনেক টক। ‘
ফারিন চোখ বন্ধ করে গপাগপ খাচ্ছে।
‘ তুমি এর স্বাদ কি বুঝবে? মেয়েদের ইমোশন এটা। ‘
‘ খেয়ে বের হো। ‘
ফারিন ঠোঁট বাকালো,
‘ যাবো না, ভাবি আমার বই খাতা নিয়ে আসো তো। এখানেই পড়বো আজ। এখানেই ঘুমাবো। তোমার হাসবেন্ডকে বলো আমার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়তে। ‘
ধ্রুবর মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো। নিনীকা সত্যি সত্যি উঠে দাড়িয়েছে। ধ্রুব টেনে ধরলো হাত।
‘ খাওয়া শেষ করো তাড়াতাড়ি, তারপর এই শয়তানকে বের করো রুম থেকে। ‘
ফারিন নিনীকার আরেক হাত টেনে ধরলো।
‘ ভাবি তুমি প্লিজ বই খাতাগুলো নিয়ে এসো। ‘
ধ্রুব ফারিনের হাত থেকে বউকে ছাড়িয়ে প্রায় জড়িয়েই ধরেছে।
‘ আমার বৌ থেকে দূরে থাক। খেয়ে বিদেয় হো, তোর না পরীক্ষা? ‘
‘ তো? আগামীকাল ভাবি চলে যাবে, তার সাথে সেজন্য আজ আমি থাকতে চাই। ‘
ধ্রুবের মুখ দেখার মতো হলো। বোনের সামনে এর বেশি নির্লজ্জ হওয়া সম্ভব না। এখন শেষ ভরসা নিনীকা। যাকে সে শক্ত করে ধরে রেখেছে। একদম বের হতে দিবে না।
ফারিন ঠোঁট চিপে হাসছে,
‘ তুমি ভাবিকে ছাড়ছো না কেন? ‘
নিনীকা এই দুজনের টানাটানিতে বিরক্ত হলো। নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো, কিন্তু ধ্রুব আরও শক্ত করলো বন্ধন। নিনীকা আস্তে করে বলল,
‘ বোনের সামনে এমন নির্লজ্জ আচরণ করছেন কেন? কি ভাববে সে? ‘
ধ্রুব ও আস্তে করে উত্তর দিলো,
‘ বউয়ের সাথে এবারের মতো আজই আমার শেষরাত, তোমার বোঝা উচিত মিসেস। ‘
নিনীকা শরীরে অদ্ভুত শিহরণ অনুভব করলো। কয়েকদিন তার মেয়েলি প্রব্লেমের কারণে ধ্রুব তার কাছাকাছি আসেনি। বুকে জড়িয়ে রেখে ঘুমাতো আর বলতো,
‘ তোমার এই প্রব্লেমটা আসার আর সময় পায়নি? ‘
নিনীকা হেসে ফেলতো। মানুষটা এতো পাগল।
ফারিন ফুচকা খেয়ে শেষ করে বলল,
‘ যা-ও এইবার চলে যাচ্ছি, নেক্সট টাইম থেকে আর ছাড়বো না ভাবিকে। ‘
ধ্রুব শব্দ করে দরজা বন্ধ করেছে। নিনীকা মুখে হাত রেখে হাসছে। ধ্রুব ঠেলে ছুঁড়ে ফেললো বিছানায়। নিজের সমস্ত ভর ছেড়ে দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো গাল,
‘ খুব মজা নেওয়া হচ্ছিল? ‘
নিনীকা ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়িয়ে না করলো। ধ্রুব কাত হয়ে সরে গেলো। মিছিমিছি চোখ বন্ধ করে ঘুমের অভিনয় করছে। নিনীকা বুঝতে পেরে ঠেলে সোজা করলো। বুকে কনুই ঠেকিয়ে রেখে বলল,
‘ ওতো রাগ করছো কেন? আমি তো জানতাম ও মজা করছে। ‘
ধ্রুব সাড়া দিলো না। নিনীকা আবার বলল,
‘ তুমি কতোদিনের জন্য চলে যাচ্ছো বলো তো, আমি থাকবো কিভাবে? ‘
–
‘ কথা বলবে না? আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে? ‘
ধ্রুব ফট করে চোখ মেলে তাকালো। তাদের সংসারের একমাস পূর্ণ হয়েছে। একমাস! আগামীকাল নিনীকাকেও হোস্টেলে দিয়ে তাকে রওনা হতে হবে কাজে। তবে সে অনেক কিছু গুছিয়ে নিয়েছে। নিনীকাকেও বলা হয়নি।
‘ এর পরের বার থেকে ঢাকাতেই সব হবে। পোস্টিং যেখানেই হোক তুমি সাথে যাবে। ‘
নিনীকার মুখ উজ্জ্বল হলো। ফট করে চুমু খেলো ঠোঁটে।
‘ আগে বলো-নি কেন গো? ‘
ধ্রুবের মুখ থেকে অভিমানের চাপ সরে গেলো। হাতের বন্ধন শক্ত করলো।
‘ তুমি কাছে থাকলে আমার এতকিছু মনে থাকে না। ‘
নিনীকা গাল টেনে দিলো,
‘ অভিমান ও করতে জানেন আপনি? ‘
ধ্রুব হাসছে,
‘ কেন ওটা কি শুধু মেয়েরা করে নাকি? ছেলেরা করতে পারে না? ‘
নিনীকা উন্মুক্ত বক্ষে ঠোঁট ছুইয়ে মুখ গুঁজলো।
‘ আমার অভিমান করা ধ্রুব, মেয়েদের অভিমানী বলা হয়। তোমাকে কি বলবো? অভিমানা? ‘
*
পরদিন সকালে নাস্তা করেই রেডি হতে হয় তাদের। নিনীকা সবার থেকে বিদায় নিলো। ধারা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলেন কিছুক্ষণ। একসময় যে মেয়েটির সাথে ঝগড়া করার জন্যে ছেলের বউয়ের অভাববোধ করছিলেন সেই মেয়েটিই তার ছেলের বউ আজ। এবং আজ তিনি মেয়েটিকে ভালোও বাসেন।
নিনীকা আহ্লাদী কন্ঠে ডাকলো,
‘ মা…’
ধারা কপালে আদর দিলেন,
‘ ভালো করে পরীক্ষা দিও, পরীক্ষা শেষ হলে তোমার তো কিছুদিন বন্ধ থাকবে তাই না? তোমার শ্বশুর মশাইকে পাঠিয়ে দিবো নিয়ে আসবে না-হয়। বাড়িটা ফাঁকা ফাকা লাগবে এখন। কেন এসেছিলে মায়া বাড়াতে? ‘
নিনীকার চোখ ছলছল করলো। সবাই এতো ভালো কেন?
ফাহিম মাহবুব তার দজ্জাল চেহারার ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ আমার পুত্রবধূকে সহিসালামতে পৌঁছে দিবে। তার যেনো কোনো অসুবিধা না হয়। ‘
ধ্রুব মাথা নাড়ালো। ধারা ছেলেকে নিচু হতে বললেন। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে মাথা নিচু করলো। কপালে ভেজা একটি আদর টের পেলো। বহুদিন পর মায়ের আদর পেয়ে তার মুখে হাসি ফুটলো। চাকরির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে মাকে তেমন সময়ই দিতে পারেনি সে। কোথায় যে এই আদর গুলো চাপা পড়ে গেছিল কে জানে। ধ্রুব মাকে জড়িয়ে ধরেছে।
‘ এইবার সবকিছু চুকিয়ে আসবো বুঝলে। তোমাকে আর ছেলের প্রতিক্ষায় দিন গুনতে হবে না। ‘
ধারা আঁচল দিয়ে মুখ মুছে দিলেন।
‘ মিশনে গেলে সাবধানে থেকো বাবা, দেশের কাজ করার জন্যে অনেক মেজর আসবে যাবে। কিন্তু তোমার মায়ের একমাত্র ছেলে হারিয়ে গেলে আর ফিরে আসবে না। ‘
ধ্রুব অভয় দিলো।
‘ আমি সাবধানে থাকবো মা, চিন্তা করো না। ‘
ফারিনের পড়োনে স্কুল ড্রেস। ভাই ভাবিকে বিদায় দিয়ে বাবাকে নিয়ে পরীক্ষার হলের উদ্দেশ্যে বের হবে সে।
নিনীকা ফারিনকে জড়িয়ে ধরলো,
‘ ভালো করে পরীক্ষা দিও। নিজের ও মা বাবার খেয়াল রেখো। ‘
সবশেষে ফাহিম মাহবুবের থেকে বিদায় নিয়ে দুজন জিপ গাড়িতে উঠে বসলো। নিনীকা ধ্রুবর চোখ থেকে গগলস নিয়ে নিজের চোখে পড়ে নিলো। পড়োনে তার সাদা শার্ট, গলায় ছোট্ট স্কার্ফ। লং একটি স্কার্ট ও পড়েছে। ধ্রব আড়চোখে তাকিয়ে বউ কথা কও অতিক্রম করতে করতে বলল,
‘ সেই প্রথম মুখোমুখি হবার দিনের মতোই তোমাকে সুন্দর লাগছে। আজ স্কার্ট উপরে তুলে দৌড় দিবে না? ‘
নিনীকা বাহুতে ঘুষি দিলো,
‘ বদমাইশ মেজর। ‘
(চলবে)
#বিয়ে_থা
#পর্ব-৩৬
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
( কপি নিষিদ্ধ )
একটানা সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে এসে কাউন্সিলিং করেছেন রমজান শেখ। আজ শেষ দিন। মিথিলা ও রমজান শেখ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। সাইকিয়াট্রিস্টের নাম রুহুল আমিন। চোখের চশমা ঠিক করে রমজান শেখের দিকে তাকালেন। কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে বললেন,
‘ কেমন আছো ইয়াং ম্যান? ‘
রমজান শেখ এই একমাস যাবত অনেক বার মধ্যবয়সী এই লোকের ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি মানতে নারাজ হয়তো। সেজন্য বার-বার ইয়াং ম্যান বলেই ডাকেন। রমজানের মুখে হাসি। তার ভেতর এখন পানির মতো সহজ সরল। বললেন,
‘ আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? ‘
রুহুল আমিন উত্তর দিলেন। তারপর ঔষধ পত্র নাড়াচাড়া করলেন কিছুক্ষণ। ফের প্রশ্ন করলেন,
‘ আজকাল কেমন ফিল করো? ‘
‘ ভালো, আমি নিজের মধ্যে সেই পুরনো আমিকে খুঁজে পাই। ‘
‘ ভেরি গুড। আজকের পর থেকে তোমাকে আর আসতে হবে না। এবং এসব ঔষধপত্র ও খেতে হবে না।শুধু কয়েকটা ঔষধের নাম বলে দিবো। ওগুলো মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখবে তোমার। আর তোমার ডায়বেটিসের ঔষধ গুলো তো আর সারাজীবনই খেতে হবে। হা হা। ‘
রমজান শেখ মাথা নাড়ালেন। ডক্টর আবার বললেন,
‘ তুমি অনেক জটিল পেশেন্ট ছিলে। বাট আ’ম সাকসেস না-ও। একটু বাহিরে অপেক্ষা করবে? তোমার স্ত্রীর সাথে আমি একটু কথা বলবো। ‘
রমজান শেখ বের হয়ে গেলেন। মিথিলা হেসে বললেন,
‘ বলুন ডক্টর, কি বলবেন? ‘
‘দেখুন মিসেস শেখ আমি আপনাকে পার্সোনাল কিছু প্রশ্ন করবো। আপনার হাসবেন্ড স্বামী স্ত্রীর বিশেষ মুহুর্তে কি আগের মতো হিংস্রতা প্রকাশ করেন? বা আগের মতো কোনো কর্মকাণ্ড করেন? যেটা করলে আপনার মনে হতো সে নিজের রাগ মেটাচ্ছে। ‘
‘ না। সে আর এরকম করে না। আমাকে ছুলেও এমন ভাবে ছুয় যেনো আমি একটি নরম পুতুল, সে একটু জুড়ে চাপ দিয়ে ধরলেই ব্যথা পেয়ে কেঁদে ফেলবো। মানুষটার অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেকবার কেঁদে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। নিজের মেয়ের কথা আজকাল বেশি বলে। মেয়েকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইবে। ‘
‘ দ্যাটস গুড। হি ইজ ফুল ফিট। বাট রিমেম্বার, সে যেনো এরকম আঘাত আর কখনো না পায়। সামান্যতম মনকষ্ট হলে তার ব্রেনে ইফেক্ট পড়বে মারাত্মক ভাবে। তাকে সর্বদা হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করবেন। তার সাথে কেউ যাতে কখনো রেগে বা আঘাত দিয়ে কথা না বলে সেটার খেয়াল রাখবেন। তাকে কোনোভাবেই উত্তেজিত যাতে করা না হয়। সবাইকে বলবেন তার সাথে সফট ও নরম স্বরে কথা বলতে। ‘
মিথিলা হাসিমুখে বেরিয়ে গেলেন। রমজান শেখ হাত ধরে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন,
‘ কি বললো? ‘
‘ শেখ বাবু ফুল ফিট। ‘
‘ সত্যি? ‘
মিথিলা বাহুতে মাথা রাখলেন,
‘ সত্যি গো, তুমি সুস্থ পুরোপুরি। ‘
*
বন্ধ চোখজোড়ায় জানালার ফাঁক গলিয়ে অল্প আলো পড়তেই নিনীকা পিটপিট করে তাকালো। চোখের নিচে কালো দাগ স্পষ্ট। মাথা ভারী হয়ে আছে। মুখে দুঃখের চাপ। নিনীকা দূর্বল শরীর টেনে উঠে বসলো। গতকাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে তার। রুমমেট দুজন গতকালই বাড়ি চলে গেছে।
নিনীকা মোবাইল হাতে নিলো। ধ্রুবর দুটো মিসকলড। কল দিতেই রিসিভ করলো। উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
‘ ঘুম ভেঙেছে তোমার মিসেস? ‘
ধ্রুব ভোর থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত পার্সোনাল মোবাইল অন করে রাখে। এ সময়ের মধ্যেই নিনীকা ও বাড়িতে কথা বলে নেয়। নিনীকা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ হু..। ‘
‘ তোমার কি মন খারাপ? ‘
‘ না ‘
ধ্রুবর চিন্তিত স্বর,
‘ তবে মুখ শুকনো যে? ‘
‘ অডিও কলে কিভাবে দেখলে?
‘ আমি গলার স্বর শুনে বুঝতে পারি। তাছাড়া তুমি কয়েকদিন ধরে ভিডিও কলে কথা বলতে রাজি হচ্ছো না, বললেও এড়িয়ে যাচ্ছো। কেন বলো তো? আমার কি তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না? ‘
‘ স্যরি। ‘
‘ তোমার কি হয়েছে বলবে? আমার দ্বারা কি কোনো ভুল হয়েছে? ‘
‘ না গো। ‘
‘ নিনীকা! প্লিজ বলো কি হয়েছে তোমার? ‘
নিনীকা ভেজা কন্ঠে বলল,
‘ তুমি কি আসবে? আমার তোমাকে প্রয়োজন। ‘
ওপাশ থেকে কিছু সময় ধ্রুব কোনো কথা বললো না। সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত? বা এমন কিছু যা মনে লুকিয়ে রেখেছো? ‘
নিনীকা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালো,
‘ আমি..আমি তোমাকে ফোনে বলতে পারবো না। তুমি এসো, একবার এসো প্লিজ। ‘
নিনীকার কন্ঠে অসহায়ত্ব। ধ্রুবর বুক চিনচিন করে উঠলো। কি হয়েছে তার মিসেসের?
‘ আমি চেষ্টা করবো মিসেস। তুমি কেঁদো না তো, প্লিজ ভিডিও কলে আসবে? ‘
নিনীকা কল কেটে ভিডিও কল করলো। স্কিনে ভেসে উঠলো আর্মির ইউনিফর্ম পড়া ধ্রুবর মুখ। ক্লিন শেভ করা মুখটায় চিন্তিত ভাব। নিনীকাকে গভীর চোখে দেখলো ধ্রুব। কিছু মুহুর্ত পর বললো,
‘ চোখের নিচে কালো দাগ, চোখমুখ শুকনো। তুমি তো নিজের প্রতি যত্নবান মিসেস। তবে এগুলো কি? রাত জাগো? কিন্তু কেন? ‘
‘ওই পরীক্ষা ছিলো…’
‘ মিথ্যা বলো না, সত্যিটাই শুনতে চাই। ‘
নিনীকা মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললো।
‘ তুমি এসো প্লিজ, আমি পারছি না। ‘
ধ্রুবর চোখ টলমল করছে। আশ্চর্য সে কেঁদে ফেলবে নাকি? এমন তো আগে ছিল না, এতো নরম হলো কবে সে! শুধু বললো,
‘ অপেক্ষা করো মিসেস। ‘
ধ্রুব এরপর দু’দিন কোনো যোগাযোগ করলো না। নিনীকা ফোন দিয়ে ও বন্ধ পেলো। তার নিজের উপর রাগ হলো। মানুষটা অতদূরে নিশ্চয়ই তার হেয়ালিতে রেগে গেছিলো সেদিন।
নিনীকার ভাবনা মিথ্যা করে দিয়ে তিনদিনের মাথায় হোস্টেলের সামনে এসে থামলো একটি জিপ গাড়ি। ধ্রুব চোখের গগলস খুলে দারোয়ানকে বলল,
‘ নিনীকা নামে একজন ছাত্রী আছে, তাকে বলবেন ব্যাগপত্র গুছিয়ে একেবারে নিচে নেমে আসতে। যদি বলে কেন, তবে বলবেন কেউ তাকে নিতে এসেছে। ‘
দারোয়ান মাথা নাড়িয়ে চলে গেলেন। নিনীকাকে কথাটা বলতেই সে চমকে গেলো। তাকে কে নিতে আসতে পারে আন্দাজ করতে পারলো না। তবে ধারা বলেছিলেন তাকে নেওয়ার জন্যে ফাহিম মাহবুবকে পাঠাবেন। অভিমানে নিনীকার ঠোঁট বেঁকে গেলো। ফুপাতে ফুপাতে ব্যাগপত্র গুছালো। গায়ে চাপালো একটি ফতোয়া ও জিন্স। চুলগুলো কোনোরকমে জুটি করে বেঁধে ট্রলি নিয়ে ছুটলো নিচে।
নিচে এসে যখন আশেপাশে ফাহিম মাহবুব কে খুঁজলো তখন চোখের সামনে দেখা দিলো চিরপরিচিত জীপগাড়ি। নিনীকার মুখ থেকে ধীরে ধীরে অভিমান সরে গেলো। ধীর পায়ে এড়িয়ে এসে বসলো জীপে। পেছনে ব্যাগপত্র রাখলো। ধ্রুব এতোক্ষণ নিরবে তাকেই পর্যবেক্ষণ করেছে। নিনীকা কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চেষ্টা করলো। ধ্রুব তার আগেই টেনে নিলো। বুকে জড়িয়ে মুখ গুঁজলো নরম অঙ্গে। নিনীকার শরীর কেঁপে উঠছে মাঝে মধ্যে। ধ্রুব পিঠে হাত ভোলাচ্ছে।
‘ এতো কান্না কিসের? এসেছি তো। ‘
নিনীকা অনেক পর থামলো। মুখ তুলে তাকালো পিটপিট করে। ধ্রুব দু’হাতের ভাজে মুখ নিয়ে ঠোঁটে দীর্ঘ চুম্বন করলো। কপালে কপাল ঠেকিয়ে হাসলো।
‘ আমাকে পাগল করে দিবে তুমি। ‘
নিনীকা ধ্রুবকে অবাক করে দিয়ে গলায় মুখ গুঁজে নিজের কাজে ব্যস্ত হলো। ধ্রুব অবাক হতে গিয়ে হেসে ফেললো। হাতের বন্ধন শক্ত করে বলল,
‘ আমরা রাস্তায় মিসেস। একটু দূরে হোটেল বুক করেছি। বেশি সময় লাগবে না, চলো যাই? ‘
নিনীকা শুনলো। অভাবেই পড়ে রইলো ধ্রুবের কোলে বসে কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে। হাত দু’খানা গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে। ধ্রুব ওভাবেই জীপ টান দিলো। যেতে যেতে বউকে দেখতে গিয়ে মনের মধ্যে চিন্তারা বাসা বাঁধলো। তার মিসেসের কিছু তো একটা হয়েছেই!
(চলবে)