#বিয়ে_থা
#পর্ব-৩১
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
(কপি নিষিদ্ধ)
দীর্ঘ এক রাত এক দিন জ্বরে ভুগতে হয়েছে রমজান শেখ কে। এখন কিছু টা সুস্থ তিনি। কিন্তু শরীর প্রচন্ড দূর্বল। চেহারাটা যতোই অল্প বয়সী পুরুষদের মতো হোক, শরীর তো বয়সের সাথে সাথে ক্ষয়ে যেতে চাইবেই। রমজান শেখ নিজের শরীরের তেমন যত্ন নিতেন না। নিজের প্রতি ঘৃণা থেকে উপরে উপরে নিজেকে ভালো করেই রেখেছিলেন শুধু। যাতে সবাই ভাবে তিনি অলটাইম ফিট। ডক্টর বাসায় এসে দেখে গেছেন। শরীরের ডায়বেটিস কন্ট্রোলে নেই। শীগ্রই তাকে একজন ডায়াবেটিস ডক্টরের শরণাপন্ন হতে বলেছেন। যেহেতু জ্বর কমে গেছে সেজন্য এই সন্ধ্যা বেলাতেই মিথিলা রমজান শেখ কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলেন। কিন্তু বাঁধা দিলেন রমজান, তার সত্যিই আজ বিছানা থেকে উঠে বাহিরে পা রাখতে ইচ্ছে করছে না। মিথিলা মেনে নিলেন। গরম স্যুপ এনে খাইয়ে দিতে লাগলেন। স্যুপটা একটু টক, রমজান শেখ টক খেতে চেয়েছেন।
বউ কথা কও এ বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। ধারা ছেলের আনুষ্ঠানিক বিয়ের প্রসঙ্গ তুলেছেন। ফাহিম মাহবুব চিন্তিত স্বরে বললেন,
‘ বউমার মা বাবাকে তো জানাতে হবে আগে। ‘
‘ তো জানাবো। দুই পরিবারের আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ‘
নিনীকা ফারিনের পাশে বসেছিল। এবার সে মুখ তুলে তাকিয়েছে। ধারা আগ্রহ দেখিয়ে বললেন,
‘ নিনীকা তোমার মা বাবার নাম্বার দাও তো। আমি কথা বলবো। ‘
ফাহিম মাহবুব নিজের মোবাইল থেকে রমজান শেখের নাম্বার বের করে দিলেন। ধারা সেই নম্বর টাতেই ডায়াল করলেন।
রমজান শেখের মোবাইল বিকট আওয়াজে বেজে উঠলো। রিসিভ করলেন মিথিলা। রমজান শেখ ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন কে?
মিথিলা লাউঞ্জে দিয়ে দিলেন। ভেসে এলো ধারার গলা।
‘ আসসালামু আলাইকুম, আমি ধারা আহমেদ বলছি। ধ্রুবর মা। ‘
রমজান শেখ তৎক্ষনাৎ মোবাইল কেড়ে নিলেন। বললেন,
‘ আমি রমজান শেখ বলছি। ‘
ভেসে এলো ফাহিম মাহবুব এর গলা,
‘ রমজান শুনছিস? নিনীকা মা ও ধ্রুবর আনুষ্ঠানিক বিয়ের আয়োজন করবো ভাবছি। তুই কি ভাবিকে নিয়ে একবার বাড়িতে আসতে পারবি? ‘
রমজান শেখ আড়চোখে মিথিলার দিকে তাকালেন। মিথিলা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতে বলছেন। রমজান শেখ উত্তর দিলেন,
‘ আমি তো অসুস্থ মিথিকে পাঠাবো না-হয়। ‘
ফাহিম মাহবুব ‘ঠিক আছে’ বলে রেখে দিলেন। ‘
মিথিলা ফুসফুস করে বললেন,
‘ সবকিছুতে তোমার বাড়াবাড়ি। কি হতো বললে যে আমরা যাবো? মেয়েটাকে কতোদিন দেখি না, বলতে পারতে ওদের আসার জন্য। ‘
রমজান শেখ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
‘ বলেছি তো তুমি যাবে। আর কি চাও? ‘
মিথিলা কাঁধে হাত রাখলেন,
‘ চলো না তুমিও যাবে। সুস্থ হয়ে যাবে তো। আমি থাকতে তোমার চিন্তা কিসের বলো তো? ‘
‘ মিথিলা, আমার মেয়ে আমার যাওয়াটা পছন্দ করবে না। তার খুশি আমার জন্যে নষ্ট হয়ে যাক তা আমি চাই না। তুমি যেও, ও তোমাকে দেখলে খুশি হবে। ‘
মিথিলা চুপ হয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন এ সুযোগে মেয়েকে সব বলে আসবেন। জানিয়ে আসবেন নিজের স্বামীর অসহায়ত্ব, অভিযোগ, অপরাধবোধ, ঘৃণা থেকে করা কাজকর্মের কারণ!
পরদিন সকালে রমজান শেখকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলেন মিথিলা। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর রমজান শেখ ঘুমিয়ে পড়লেন। মিথিলা ড্রাইভারকে দিয়ে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্যে অনেককিছু কিনলেন। তারপর গাড়িতে করে রওনা হলেন নিনীকার শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে।
বাড়ির কেউ এখনো দুপুরের খাবার খায়নি। সবাই সোফায় বসে অপেক্ষা করছে মিথিলার। উদ্দেশ্য একসাথে খাবার খাবে। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গেইট দিয়ে ঢুকলো একটি কালো গাড়ি। নিনীকা দৌড়ে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো। মিথিলা গাড়ি থেকে বের হতেই ঝাপিয়ে পড়লো।
কতো দিন, কতো মাস পর! মা মেয়ের চোখে জল। মিথিলা মেয়ের কপালে আদর দিলেন। গালে হাত রেখে বললেন,
‘ কেমন আছিস নিনীকা? ‘
‘ আমি অনেক ভালো আছি মা, তোমার শরীর ভালো তো? ‘
‘ ভালো আছে। ‘
বাড়ির সবাই সদর দরজায় দাড়িয়ে আছেন। ধ্রুব এগিয়ে এসে সালাম দিলো। মিথিলা মেয়ে জামাইয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন। ধারা ও ফাহিম মাহবুবের সাথে কুশল বিনিময় করে প্রথমবারের মতো প্রবেশ করলেন বউ কথা কও এ।
দুপুরের খাবার খেয়ে সোফায় বসে আলোচনা করা হলো। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো এক সপ্তাহ পর শুক্রবারে অনুষ্ঠান করা হবে ধ্রুবদের বাড়িতে। মিথিলাকে উপরের রুমে রেস্ট করতে বলা হলো। কিন্তু তিনি রাজি হলেন না। ইচ্ছে ছিল মেয়েকে সব বলে দিবেন আজ। কিন্তু এই খুশির সময়ে এসব বলে মেয়ের মন খারাপ করাতে চাইলেন না। মাথায় চলছে স্বামীর চিন্তা। অসুস্থ মানুষ টা কি করছে কে জানে। মিথিলা বিদায় নিলেন। বিয়ের আয়োজন করার জন্যে অনেকবারই আসা যাওয়া হবে তার। মিথিলা যখন সদর দরজা পেরিয়ে গাড়িতে উঠবেন তখন নিনীকা দৌড়ে এলো। নিচু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
‘ তিনি কি বেশি-ই অসুস্থ? ডাক্তার কি বলেছেন? ‘
মিথিলা না হেসে পারলেন না। বললেন,
‘ তিনি কিছু টা সুস্থ আছেন। ডায়বেটিস বেড়ে গেছে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করতে হবে। তাহলে আগের মতো কন্ট্রোলে চলে আসবে। ‘
‘ তাকে মিষ্টি খেতে নিষেধ করো। ‘
‘ তুই করে দিস। ‘
নিনীকা মুখ অন্ধকার করে ফেললো,
‘ তোমার বরকে তুমিই বলো। ‘
‘ ওমা আমার বর কি তোর কেউ হয় না? ‘
‘ তোমার বর এতো শান্ত হলো কবে থেকে? আমি সংসার করছি, কিছু দিন পর আনুষ্ঠানিক বিয়ে। তার তো শান্তিতে থাকার কথা নয়। আফটার অল আমি তার পছন্দের পুরুষের সাথে সংসার করবো না বলে পালিয়ে গেছিলাম। আবার ফিরেও এলাম। যাই হোক তাকে আমার পক্ষ থেকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিও। বাবা হিসেবে তিনি ভালো না হলেও আমার জন্যে ভালো কাউকেই চ্যুজ করেছিলেন। আমি সেজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ। ‘
‘ ধন্যবাদ টা তাকে তুই-ই দিস না-হয়। মানুষ টা খুশি হবে। ‘
‘ ওই জঘন্য ব্যক্তিটার প্রতি তোমার অন্ধ ভালোবাসা দেখলে আমার রাগ হয় মা। ‘
মিথিলা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
‘ ভালো থাকিস মা, মানুষটাকে পারলে ক্ষমা করে দিস।’
কালো গাড়িটি সাই-সাই করে চলে গেলো। নিনীকার চোখে অশ্রু টলমল করছে। যেকোনো সময় গড়িয়ে পড়বে ভাব। সে অশ্রুকণা ঝরতে দিলো না। চোখমুখ শক্ত করে রইলো। ওই মানুষটার জন্যে অশ্রু ঝরানোর কোনো মানে হয়না।
‘ তোমার মন খারাপ কেন মিসেস? ‘
নিনীকা মুখে হাসি ফুটাতে চেষ্টা করলো। ধ্রুব সম্মুখে এসে দাড়িয়েছে।
‘ একদম মিথ্যা হাসি দেখাতে চেষ্টা করবে না। কি হয়েছে বলো আমাকে। ‘
‘ কিছু হয়নি। এমনি মা চলে গেলো বলে খারাপ লাগছে। ‘
‘ শিওর? ‘
‘ হু। ‘
ধ্রুব কাঁধ জড়িয়ে ধরলো।
‘ তুমি ভালো করে মিথ্যাও বলতে পারো না আমার মিসেস। ‘
নিনীকা চুপ করে রইলো। ধ্রুব বউকে নিয়ে রুমে গেলো। কোলে বসিয়ে চেপে ধরলো সত্যি জানার জন্য। নিনীকা কেঁদে ফেললো।
‘ আপনি অনেক খারাপ, আমি ওই লোকটার জন্যে একদম কাঁদতে চাইনি। দিলেন তো কাঁদিয়ে। ‘
ধ্রুব হতভম্ব তার বউ কাঁদছে কেন!
‘ তুমি কার জন্যে কাঁদছো মিসেস? কে তোমাকে কি বলেছে বলো আমায়। ‘
‘ কেউ কিছু বলেনি। ‘
‘ তুমি নিজেই তো এখন বললে তুমি ওই লোকটার জন্যে কাঁদতে চাওনি। কোন লোকটা নিনীকা? ‘
নিনীকা রেগে ধ্রুবের বুকে দাঁত বসিয়ে দিলো।
‘ বলবো না, একদম বলবো না। ‘
(চলবে)
#বিয়ে_থা
#পর্ব-৩২
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
( কপি নিষিদ্ধ)
বউ কথা কও জ্বলজ্বল করছে। বাড়িকে ঘিরে রেখেছে রঙবেরঙের লাইট। সন্ধ্যার এই সময়টিতে গেইট দিয়ে ঢুকলো ধ্রুবর জিপগাড়িটি। গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো নিরব ও সুমিত্রা। সুমিত্রকাকে রিসিভ করার দায়িত্ব নিরবকে দেওয়া হয়েছিলো। বিয়ে বাড়ির সবাই আপাতত ব্যস্ত। আর মাত্র দুদিন পর বিয়ের অনুষ্ঠান। আগামীকাল গায়ে হলুদেরও আয়োজন করা হবে।
সুমিত্রা দৌড়ে সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো। ‘নিনীকা ইয়ার’ বলে চিৎকার করে উঠলো। উপর থেকে দৌড়ে নেমে এলো নিনীকা। একটি গভীর আলিঙ্গন হলো। উচ্ছাসে দুজনের মুখ দিয়ে খুশির শব্দ বের হচ্ছে। সুমিত্রা খুশিতে চিৎকার করছে।
বাংলাদেশে আবারও পা রাখতে পেরে তার অনেক আনন্দ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আনন্দের কারণ নিনীকার বিয়ে। যদিও মা বাবা রাজি ছিলেন না প্রথম। কারণ সুমিত্রার আশির্বাদ হয়ে গেছে। বিয়ে মাসের শেষের দিকে। এ অবস্থায় মেয়েকে ভিন্ন দেশে দিতে নারাজ ছিলেন তারা। অগত্যা ধ্রুবর মা বাবা ফোন করে অনুরোধ করলেন। আশ্বাস দিলেন সুমিত্রাকে সহিসালামতে পৌঁছে দিবেন তারা।
সুমিত্রার সাথে সবার পরিচয় করানো হলো। তারপর নিয়ে যাওয়া হলো রুমে। নিনীকার সময়টা ঘরেই কাটে এখন। বউ বলে তার বের হওয়া বারণ। দুদিন হলো ধ্রুবের থেকে আলাদা হতে হয়েছে তাকে। ধারার হুকুম, বিয়ের আগে আর বউয়ের কাছাকাছি থাকা যাবে না। নিজের মায়ের এহেন অত্যাচারে ধ্রুব মর্মাহত। দু’দিন ধরে বউ তার ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
সুমিত্রাকে বলতেই সে খিলখিল করে হেসে উঠলো। আফসোস করে বলল,
‘ আহারে, বেচারা জিজু। দু’দিন ধরে না খেয়ে আছে। ‘
নিনীকা চোখ রাঙালো,
‘ চুপ কর বেয়াদব। কেউ শুনলে কি ভাববে। ‘
‘ ওমা তুই লজ্জা পাচ্ছিস নাকি? আমার ভাবনা কি তবে সঠিক? জিজু আর তোর মধ্যে সব হয়ে গেছে! ‘
নিনীকার মুখ লাল হয়ে গেলো।
‘ তুই চুপ করবি? ‘
সুমিত্রা অবাক হয়ে বলল,
‘ তোর এই রুপটা আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন। জিজু কি বেশিই রোমান্টিক? নিতে পারিস তো? আজ সারারাত এই কয়েকদিনের তোর রাত্রি যাপন শুনবো। আ’ম সো এক্সাইটেড ডিয়ার। ‘
নিনীকা ওর কাঁধে চাপড় মারলো,
‘ চুপ কর না, তুই নির্লজ্জ হয়ে গেছিস। ‘
‘ ওমা তুমি করতে পারবে আর আমি বলতে পারবো না? ‘
নিনীকা প্রসঙ্গ পাল্টালো,
‘ যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে কেমন? ‘
সুমিত্রা সিরিয়াস হলো,
‘ মানুষ হিসেবে যতোটুকু বুঝেছি মন্দ না। ডাক্তারি পাশ করেছে। ফ্যামিলি ও ভালো। নাম অনিরুদ্ধ দাশগুপ্ত। দেখতে সুদর্শন বলা যায়। আমার সাথে মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয় শুধু। সে নিজেই খুঁজ নিতে ফোন করে। ভেবেছিলাম আমার বিয়ের পর তোর বিয়ে হবে, কিন্তু দেখ তোরটা আগে হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য জামাই সহ আসতে পারলাম না। কিন্তু তুই জামাই নিয়েই আমার বিয়েতে যাবি। তখন তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। ‘
নিনীকা জড়িয়ে ধরলো,
‘ অভিনন্দন ডিয়ার। ‘
দুজন ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। ধ্রুবের সাথে এই খাবার টেবিলেই দেখা হয় শুধু। কিন্তু তার বর আজ এখনো টেবিলে উপস্থিত হয়নি। নিনীকা আশপাশে উঁকিঝুঁকি দিলো। সদর দরজা দিয়ে ধ্রুবকে ঢুকতে দেখা গেলো। পড়োনে বাহিরের পোশাক। চেহারায় ক্লান্তি ভাব। উপরে যেতে যেতে নিনীকার দিকে অসহায় চাহনি নিক্ষেপ করলো। সুমিত্রা সেটা দেখে বলল,
‘ ইশ, আমার জিজুটার কতো কষ্ট হচ্ছে। বেচারা! ‘
নিনীকার মন খারাপ হয়ে গেলো। মানুষটা ক্লান্ত শরীরে ফেরার পর তাকে সবসময়ই জড়িয়ে ধরে। আদর দিয়ে তারপর ফ্রেশ হতে যায়। দুদিন ধরে সেটাও পারছে না। বাড়ি ফিরে বউকে কাছে পাচ্ছে না বলে নিশ্চয়ই তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তার মানুষটার রোমান্টিসিজম একটু বেশিই। এমন নয় যে নিনীকার সেগুলো বিরক্ত লাগে। তার ভালো লাগে। সব শেষে যখন মানুষটার চোখেমুখে তৃপ্তি দেখতে পায় তখন নিজেকে সুখী সুখী লাগে। নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হয়। নিনীকা সেই সুখানুভূতি মিস করছে। প্রচন্ড ভাবে মিস করছে। ভেতরের উত্তেজিত মন গোপন কিছুর জন্যে হাহাকার করছে। আন্দোলন তুলছে বিশ্রীভাবে।
ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। চেয়ার টেনে নিনীকার মুখোমুখি বসলো। পাশে ফারিন। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভাই ভাবীকে দেখে রাখার। টেবিলে তেমন কেউ নেই। ফাহিম মাহবুবের বংশের আত্নীয়রা আগামীকাল আসবেন। আগামীকাল বিদেশ থেকে ধারার ভাইয়েরা আসবেন। অর্থাৎ সবাই আসবেন আগামীকাল। আজ শুধু সুমিত্রা এলো। নিরব তো আর সবমসময় থাকছেই। তার উপর অনেক দায়িত্ব।
ধ্রুবর প্লেটে লেগ পিস পড়লো। সে সেটা তুলে বউয়ের প্লেটে দিয়ে দিলো। ধারা ও ফাহিম নিশ্চুপে হাসলেন। ফারিন ভাইয়ের কানে কানে বলল,
‘ ভাবির দিকে তাকাচ্ছো না কেন তুমি? দেখো ভাবিকে কতো সুন্দর লাগছে। ‘
ধ্রুব তাকালো। এবং তার সর্বনাশটা হয়েই গেলো। এতোক্ষণ মনে মনে বললো তাকাবে না৷ বউ ছাড়া থাকাটা এমনিতেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে তার।
নিনীকার নাকে হীরের ছোট্ট নাক ফুল জ্বলজ্বল করছে। পড়োনে গোলাপি রঙা শাড়ি। ধ্রুব ঢুক গিলে মাথা নিচু করে নিলো।
সুমিত্রা ফিসফিস করে নিনীকাকে বলল,
‘ আমার তো বুকটা ফেটে যাচ্ছে দোস্ত। মুখটা একবার দেখ। ‘
নিনীকা তাকালো, ধ্রুব ও তাকিয়েই ছিল। দুজনের চোখাচোখি হলো। নিনীকা মুচকি হাসলো। ধ্রুব বিনিময়ে চোখের ইশারায় খেতে বলল।
রাত তখন নয়টা। নিনীকাকেও ফারিনের ঘরে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। এবার থেকে সুমিত্রাও থাকবে। ফারিন ঘুমে কাত৷ আজ তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়েছে সবাই। তাছাড়া সকাল থেকে সবাইকেই দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। সেজন্য সবাই ক্লান্ত। সুমিত্রা নিনীকাকে আস্তে করে বলল,
‘ আমি ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে নেবো। তুই জিজুর কাছে চলে যা। ‘
নিনীকার মুখশ্রী উজ্জ্বল হলো। সে বের হয়ে যেতেই সুমিত্রা দরজা লাগিয়ে বিছানায় এলো। ফারিন ফট করে চোখ মেলে তাকালো।
‘ মাম্মা জানতে পারলে আমাকে ছাড়বে না। ‘
সুমিত্রা গাল টেনে দিলো,
‘ কেউ জানবে না। তোমার ভাবি সবাই জেগে উঠার আগেই ফিরে আসবে। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও, চিন্তা করার জন্যে আমি আছি। ‘
বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে এক হাত কপালে রেখে চোখ বন্ধ করে ছিল ধ্রুব। দরজা লাগানোর শব্দে উঠে বসলো। লাইট অন করে সম্মুখে তাকাতেই চমকে গেলো।
‘মিসেস। ‘
নিনীকা দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়লো। ধ্রুব চিৎ হয়ে বিছানায় পড়ে গেলো। নিনীকা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। ধ্রুব পিঠে হাত রাখলো।
‘ শান্ত হও, আমি আছি তো। ‘
নিনীকা তখনো কাঁপছে। ধ্রুব হাতের সাহায্যে মুখ তুলে ধরলো।
‘ কাঁদছো কেন মিসেস? আমি আছি তো। ‘
‘ মিস ইউ মেজর। ‘
ধ্রুব ঠোঁট চেপে হাসলো,
‘ তোমার মেজরও তোমায় মিস করেছে মিসেস। ‘
নিনীকা ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁধে মুখ গুঁজে দিলো। হাতের সাহায্যে এক এক করে খুলে ফেললো ধ্রুবের পড়োনের শার্টের বোতাম।
মধ্যরাত। ঘুম নেই দুজনের চোখে। ধ্রুবের বুকে মুখ গুঁজে রেখেছে নিনীকা। আরেকটু পর আবারও আলাদা হয়ে যেতে হবে তাদের। ধ্রুব কখনো ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে কখনো হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে। কখনো সান্তনা দিচ্ছে,
‘ আর মাত্র একদিন, তারপরই আবারও আমরা একসাথে থাকবো। কেঁদো না। আমার তোমাকে কাঁদতে দেখতে ভালো লাগে না। তুমি না স্ট্রং মেয়ে? আমার মিসেস এতো আবেগি হলো কবে থেকে? ‘
নিনীকা রেগে নাকমুখ কোঁচকালো,
‘ আবগেটা আপনার জন্যেই বেড়ে গেছে। ঠিক আছে আর আসবো না। চলে যাচ্ছি। ‘
নিনীকা সত্যি সত্যি উঠে যাচ্ছে। ধ্রুব টেনে জড়িয়ে ধরলো।
‘ তুমি এভাবে কাঁদলে আমি কিন্তু কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলবো মিসেস। দেখা গেলো সকালে দরজার বাহিরে তোমার শ্বাশুড়ি খুন্তি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। ‘
নিনীকা চোখ ছোটছোট করে তাকালো,
‘ কিছু ঘটাতে বাদ রেখেছেন নাকি? ‘
ধ্রুব হাসলো,
‘ সামান্যতে কি আর মনে ভরে গো? যদি চাও তো আমি শুরু করতে পারি।
ধ্রুব চোখ মারলো। নিনীকা চুল টেনে দিলো।
‘ অসভ্য মেজর। ‘
‘ নিনীকা, আমার রোমান্টিক বউ। ‘
নিনীকা বুকের উপর উঠে বসেছে। ধ্রুব মুখ তুলে চোখ ভুলিয়ে বলল,
‘ আমার আবেদনময়ী মিসেস। ‘
(চলবে)