বিয়ে থা পর্ব-৩০

0
212

#বিয়ে_থা
#পর্ব-৩০
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

( কপি নিষিদ্ধ)

খাবার টেবিলে বিশাল আয়োজন। দুপুরের খাবার খেতে বসেছে সবাই। নিরবকে ফাহিম মাহবুব যেতে দেন নি। বলেছেন দুপুরে খেয়ে তারপর যেতে। নিরব মেনে নিলো। তার তেমন কাজ নেই, বর্তমানে ধ্রুবের মতো সেও ছুটিতে আছে। সুতরাং আরও কিছু সময় থাকাই যায়।

নিনীকা ওড়না দিয়ে বারবার শরীর ঢাকতে চেষ্টা করছে। মাঝে মধ্যে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে ধ্রুবের দিকে। দিনেদুপুরেও এই লোকের রোমান্স পায়। ধ্রুব টেবিলের নিচে নিজের পা দিয়ে নিনীকাকে খুঁচিয়ে মজা নিচ্ছে। একটি হাত রেখেছে নিনীকার হাটুর কাছে। খেতে খেতে মাঝে মধ্যে এটা সেটা বউয়ের প্লেটে তুলে দিচ্ছে। নিনীকার তখন রাগ চলে যায়। এতো যত্নশীল তার বরটা।

সকালে ধ্রুব বউকে নিয়ে সেই যে দরজা দিয়েছে তারপর আর খুলেনি। ধারা ফাহিম মাহবুবকে টেনে নিয়ে গেছেন। ছেলে বিবাহিত তা এই লোকটার মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো হয়তো। ছেলেটাও হয়েছে তেমন। যেমন বাপ তার তেমন ছেলে।

ফারিনের সামনাসামনি চেয়ারে বসেছে নিরব। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সে সামনের দিকে তাকাচ্ছে। চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। ফারিন বিরক্ত হচ্ছে প্রচন্ড। এমন ছ্যাচড়া লোক তার পছন্দ নয়। এই বেটা যে তাকে মনে মনে পছন্দ করে সে তা বুঝে গেছে। বুড়ো লোক কোথাকার, হাটুর বয়সী মেয়ের দিকে নজর দেয়! ফারিন বিরক্ত কন্ঠে বলল,

‘ আপনি বাব-রার এদিকে তাকিয়ে কি দেখেন মিস্টার ক্যাপ্টেন? ‘

নিরবের গলায় খাবার আটকে গেলো। ধারা পানি এগিয়ে দিলেন। ফাহিম মাহবুব চিন্তিত হয়ে বললেন,

‘ কি দেখো অফিসার? ‘

নিরব অসহায় চোখে তাকালো। এ বাড়ির কেউ তার পরিস্থিতি বুঝতে পারছে না। আমতা আমতা করে বলল,

‘ সামনাসামনি বসেছেন উনি সেজন্য বার-বার নজর সেদিকেই চলে যায়, আ..মানে বলতে চাইছি আমাদের নজর সবমসময়ই সামনের দিকেই যায়। আপনি যদি সামনে বসতেন তবুও যেতো। যেমন আপনার সামনের দিকে মেজর বসে আছেন। আপনার নজর সর্বপ্রথম সেদিকেই যাবে না? ‘

ফাহিম মাহবুব মাথা নাড়ালেন। ফারিন চোখমুখ শক্ত করে নিলো। কি ধান্দাবাজ লোক!

খাওয়া শেষ হলে নিরব কিছুক্ষণ সোফায় বসে এটা সেটা বললো। তারপর বিদায় নিলো। ফারিন হাফ ছেড়ে বাচলো। মনে মনে বিরবির করলো,

‘ আর আসিস না ভাই, নিজের বয়সী কাউকে খুঁজে নে। বাবা মার আহ্লাদী কন্যা নাহলে তোকে কি যে করতাম! ‘

বউ কথা কও এ আড্ডা জমেছে। ফারিন একপর্যায়ে বললো,

‘ চলো সবাই একটা গেম খেলি? ‘

নিনীকা আগ্রহ দেখালো,

‘ কি গেম? ‘

‘পাপা বলবে, পাপা বলো না কি খেলা যায়। ‘

ফাহিম মাহবুব বললেন,

‘ লুডু খেলবো চলো। ‘

‘ কিন্তু আমরা তো পাঁচ জন। ‘

ধ্রুব উঠে দাড়ালো,

‘ তোমরা খেলো, আমি একটু ঘুমাবো। ‘

নিনীকা আড়চোখে তাকাতেই ধ্রুব ইশারা করলো। নিনীকা উঠে ধ্রুবের পেছন পেছন চলে গেলো। যাওয়ার আগে বলে গেলো,

‘ আমি আসছি, ততোক্ষণে তুমি লুডু বের করো ওকে? ‘

ফারিন খুশি হয়ে লুডু বের করে আনতে চলে গেলো।

রুমে এসে ধ্রুব দরজা দিলো। নিনীকাকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো। নিনীকা কিছু বললো না। নিশ্চুপে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে লাগলো। ধ্রুব মাথা তুলে দীর্ঘসময় নিয়ে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। তারপর তলিয়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে। নিজের উপর ধ্রুবর গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতেই নিনীকা বুঝলো তার বর ঘুমিয়ে পড়েছে। নিজের পরিবর্তে পাশবালিশ রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলো ধীরে ধীরে। ধ্রুবের ঠোঁট কিঞ্চিৎ বেঁকে গেলো। বউয়ের জায়গায় বালিশে মুখ গুঁজলো।

ধ্রুব যখন ঘুম থেকে উঠে নিচে নামলো তখন বিকেল হয়ে গেছে। এখনো খেলা চলছে। সে বউয়ের সাথে ঘেষে বসলো। ফারিন উচ্ছাস নিয়ে বলল,

‘ ব্রো বাবা ও ভাবিকে আমি ও মা দুবার হারিয়েছি। এবারও ওরাই হারবে দেখো। ‘

ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হেসে নিনীকার দিকে তাকালো। বেচারি অসহায় কন্ঠে বলল,

‘ আমি তেমন পারি না তো, তবে বাবা পারেন। আপনি আমার হয়ে খেলায় উঠুন না, বাবাকে জিতিয়ে দিন একবার। ‘

ধ্রুব নিজের জায়গায় নিনীকাকে বসিয়ে নিজে নিনীকার জায়গায় বসলো। ফারিন এবার নাক ফুলালো,

‘ তোমার সাথে কি আমি পারবো? এটা চিটিং না? তুমি কেন ভাবির বদলে খেলবে? ‘

ধারা ফাহিম মাহবুবকে কটাক্ষ করলেন,

‘ দুটোই গাধা, দেখছিস না দু’বার হেরে গেছে। তা বাবা আমার তুমি এবার দেখো এদের জেতাতে পারো কি না।’

ফাহিম মাহবুবের মুখে কোনো কথা নেই। চেহারার অবস্থা থমথমে। নিনীকা এই নিয়ে দশবার শ্বশুরকে স্যরি বলেছে। পরের সময়টা দুর্দান্ত খেললো ধ্রুব। এবং এবার জিতেও গেলো। নিনীকা খুশিতে ধ্রুবকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। ফারিন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

‘ আমি মানি না, ব্রো তুমি ওদের জিতিয়ে দিলে। ‘

ধারা ঘরের দিকে উঠে যেতে যেতে বললেন,

‘ সবকটা চিটিংবাজ, চলে আয় মা এদের সাথে আর খেলিস না। ‘

ফাহিম মাহবুব মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন,

‘ বাবা হেরেছি তো মা, তুমিই তো জিতলে। তিন ম্যাচের মধ্যে দু’ম্যাচ তুমি জিতেছো। তার মানে তো উইন তুমি। বুঝেছো? ‘

এবার ফারিন খুশি হয়ে গেলো। ধারা সিঁড়ি পেরিয়ে যেতে যেতে হাসলেন। এ লোক সর্বদা মেয়ের মন রাখতে চেষ্টা করে।

ফাহিম মাহবুব উঠে ঘরে চলে গেলেন। ফারিন পড়তে বসতে হবে বলে চলে গেলো। রইলো ধ্রুব ও নিনীকা। ধ্রুব হাই তুলতে তুলতে বউকে টেনে নিজের কোলে বসালো।

‘ তুমি আমাকে ঘুমে রেখে চলে এসেছো, এতবড় সাহস।’

নিনীকা ঠোঁটে চুমু খেলো।

‘ ফারিন বলেছিল তো, না এলে মন খারাপ করতো না বলুন? ‘

ধ্রুব হাত টেনে পেটে রাখলো,

‘ অনেক ক্ষিধে পেয়েছে। ‘

নিনীকা উঠে কিচেনে চলে গেলো। ফিরে এলো দশ মিনিট পর। ধ্রুবের সামনের ছোট টেবিলে ভাত ও গরম তরকারি রাখলো। ধ্রুব এতোক্ষণ ধরে চালানো ফোনটা নিনীকার কাছে দিয়ে প্লেট হাতে নিলো। নিনীকা স্কিনে তাকালো। ফেসবুক লগইন করা। সে ধ্রুবের আইডি ঘুরতে লাগলো। মাঝে মধ্যে হা করে ধ্রুবর হাতে খেতে লাগলো।

প্রোফাইলে বাগানে তুলা সেই ফটো দেওয়া। নিনীকা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ এটা কখন দিলেন? ‘

‘ মাত্রই। ‘

ধ্রুবর লিস্টে ফারিন ও ধারা ছাড়া আর কোনো মেয়ে নেই। তার উপর প্রোফাইল লক করা। হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ শুধু। রিলেশনশিপ দেওয়া নেই। নিজের আইডি খুঁজে রিকুয়েস্ট পাঠালো। নিনীকা নিজের ফোন খুঁজলো। ধ্রুব পকেট থেকে বউয়ের ফোন বের করে এক হাতে নিজেই অন করলো। নিজেই নিজেকে এক্সেপ্ট করে নিলো। নিজের আইডির সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ম্যারিড দিয়ে তবেই থামলো। নিনীকা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব দাঁত বের করে হাসছে।

‘ তোমার আইডির সব ছেলে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছি। ‘

‘ আমার আইডিতে ছেলে বলতে তেমন কেউ ছিলো ও না, কিছু ক্লাসমেইট ছিল হয়তো। ‘

ধ্রুব মুখে ভাত ঢুকিয়ে দিলো।

‘ যে-ই হোক, আনফ্রেন্ড করে দিলাম। ‘

নিনীকা ভাত গিলে বলল,

‘ আপনি তো অনেক হিংসুটে। ‘

‘ তোমার মতো। ‘

‘ আমি কি করেছি? ‘

‘ এইযে দেখছো তোমার বরের লিস্টে কোন মেয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে কি না ‘

নিনীকা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ অনেক মেয়ে ঝুলে আছে, এতো এতো ফলোয়ারস আপনার। বেছে বেছে কয়েকজনকে এড করে দেই? ‘

ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হাসলো,

‘ দরকার নেই, আমার মিসেস আছে। ‘

‘ তাতে কি? ‘

‘বউ থাকতে অন্য মেয়ে লিস্টে নিয়ে আইডি অপবিত্র করবো কেন? তাছাড়া আমি প্রচুর বউ পাগল, বউকে অনেক ভালোবাসি। আমার বউয়ের এতোটুকু খারাপ লাগাও আমার সহ্য হবে না। দরকার হলে ফেসবুক আইডিই রাখবো না। তবুও সে যাতে মন খারাপ না করে। ‘

নিনীকা ঠোঁট ফুলিয়ে বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। ধ্রুব সাবধানে হাতের প্লেটটি নিচে রাখলো। হাত দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে চুলের ভাজে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।

‘ তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি মিসেস। ‘

নিনীকার কান্নারত স্বর,

‘ মিসেসও আপনাকে অনেক ভালোবাসে ধ্রুব। ‘

‘একটা কথা রাখবে? ‘

‘কি? ‘

‘তুমি করে বলা যায় না? আপনি বলে ডাকাটা এখনের যুগের জন্য ঠিকঠাক যদিও। বাট আমার ওই পুরনো ব্যাকডেটেড তুমি ডাক-টাই শুনতে ইচ্ছে করে। ‘

‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি ধ্রুব। ‘

ধ্রুবের ঠোঁট প্রসারিত হলো।

‘ মেজর ধ্রুব মাহবুবের মিসেস হওয়ার জন্যে, আমাকে এভাবে রাঙিয়ে দেওয়ার জন্যে, তোমাকে আমার হওয়ার জন্যে ধন্যবাদ মেজরের বউ। ‘

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে