#বিয়ে_থা
#পর্ব-২৪
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
( কপি নিষিদ্ধ)
‘বউ কথা কও’ এ উৎসব লেগেছে যেনো। ফাহিম মাহবুব ও ফারিন সবকিছুর আয়োজন করেছেন। ধারা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে স্বামী ও সন্তানের কাজকর্ম দেখছেন। তিনি ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন তার ছেলে পালিয়ে যাওয়া বউ নিয়ে বাড়ি ফিরছে। সাদামাটা এই আয়োজনটা বউ বরণ করার জন্যে। কাউকে দাওয়াত করা হয়নি, সবাইকে একেবারে জানানো হবে আনুষ্ঠানিক বিয়ের সময়। আজকের রান্নাটা করেছেন ফাহিম মাহবুব নিজে। তার অত্যন্ত প্রিয় খাবার চিকেন রোস্ট। ধ্রুবের থেকে অবগত হয়েছেন তাহার বউমা-ও চিকেন রোস্ট খেতে অত্যাধিক পছন্দ করেন। সুতরাং বসে থাকতে পারলেন না ফাহিম মাহবুব। স্ত্রীকে আজ রান্নাঘর থেকে ছুটি দিলেন। সবকিছু গুছিয়ে বাবা মেয়ে ফিটফাট হয়ে সোফায় বসলেন। আগে থেকে সোফাতে বসা ধারা আহমেদ আড়চোখে পরক করছেন এদের বাপ মেয়েকে। একজন খুশি ছেলে বউ নিয়ে আসবে বলে, আরেকজন খুশি ভাই সেই নরম তুলার মতো মেয়েটিকে নিয়ে আসবে বলে। ধারা কি জন্য খুশি হবেন? তিনি তো এসবের আদি-অন্ত কিছুর সাথেই জড়িত নন। ছেলে যখন বিয়ে করেছে তখনও তিনি ছিলেন না। ছেলের বউয়ের সাথে শ্বাশুড়ি হিসেবে তার কখনো কথা বা দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। একবার যা-ও হলো তা-ও ঝগড়ার মধ্য দিয়ে। মেয়েটিকে তিনি ভালো করে দেখেননি। তবে তিনি পুরনো সব ভুলে যাবেন। আজ তিনি মেয়েটিকে বৌমা হিসেবেই দেখবেন।
রাত সাড়ে নয়টা। বউ কথা কও এর গেইট দিয়ে ঢুকলো সেনাবাহিনীর জিপ গাড়িটি। ধ্রুব আগে নেমে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে নামিয়ে আনলো নিনীকাকে। হাতে হাত রেখে দাঁড়ালো সদর দরজার সামনে। ডোরবেল বাজাতে হবে না, দরজা আগে থেকেই খুলা। দরজার সামনে একটি বড়পাত্র। তারমধ্যে লাল রঙের আলতাসহ গোলাপের পাপড়ি। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে সব পর্যবেক্ষণ করলো। ফারিন হৈচৈ করতে লাগলো। নিনীকার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
‘ মাম্মা সিরিয়াল দেখে না? সেখানে দেখেছি এরকম করে বধূবরণ করে। সেজন্য আমিও এরকম ব্যবস্থা করেছি। ‘
ফাহিম মাহবুব মিষ্টি ও শরবতের ট্রে নিয়ে এক সাইডে দাড়িয়ে আছেন। তন্মোধ্যে এসে দাঁড়ালেন ধারা। গভীর চোখে পর্যবেক্ষণ করলেন নিজের বউমাকে। নিনীকার পড়োনে সাদা শার্ট ও ডেনিম প্লাজু। গলায় স্কার্ফ। ফারিন ক্যামেরা সেট করে এসে দাড়ালো। ধারা গম্ভীর স্বরে ছেলেকে বললেন,
‘ বউকে নিয়ে প্রবেশ করে ধন্য করো বাবা আমার। ‘
জুতো খুলে এক সাইটে রেখে, ধ্রুবের হাতে হাত রেখে নিনীকা আলতার পাত্রে পা রাখলো। হাটিহাটি পা ফেলে এসে থামলো ফাহিম মাহবুবের কাছে। ফারিন ট্রে থেকে মিষ্টি খাওয়াতে বললো। তারা একে অপরকে খাইয়ে দিলো। ফাহিম মাহবুব শরবত এগিয়ে দিলেন। কিচেনের পাশে দাড়ানো সার্ভেন্টরা মিটিমিটি হাসছে। ধারা গম্ভীর স্বরে বললেন,
‘ আমাকে দাও আমি দিচ্ছি। ‘
ফাহিম মাহবুব ট্রে দিয়ে দিলেন। ধারা নিজের কর্তব্য পালন করছেন। ছেলে ও ছেলে বউকে সোফায় বসালেন। ধ্রুবের মুখে বিরক্তির কোনো চাপ নেই। বরং সে আনন্দ পাচ্ছে। আড়চোখে নিনীকাকেও দেখে নিয়েছে। তার মিসেস যে বেজায় খুশি সেটা ধ্রুব আন্দাজ করতে পারছে।
সবাই সোফায় বসে আছে। নিনীকার মাথায় গলায় জড়ানো সেই স্কার্ফ। ফাহিম মাহবুব কথা বলে উঠলেন,
‘ দুজন অনেক জার্নি করেছো, ফারিন মা তোমার ভাবিকে ভাইয়ের ঘরে নিয়ে যাও। ‘
ফারিন ধীরে ধীরে নিনীকার তুলতুলে হাত ধরলো। তার চোখেমুখে উচ্ছাস। নিনীকা ধ্রুবের ইশারায় উঠে গেলো। সোফাতে কেবল তিনজন। ধারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
‘ বউ নিয়েই তবে এলে। ‘
ধ্রুব মাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে।
‘ তোমার তাকে মেনে নিতে আপত্তি আছে মা? ‘
‘ একদম না, আগে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা ধরে থাকলে তো হবে না। বউ এসেছে বউয়ের মতোই যেনো থাকে। বলে দিও। ‘
ফাহিম মাহবুব ফুঁড়োন কাটলেন,
‘ তোমার কি কোথাও জ্বলছে ধারা? আমার পছন্দের মেয়েকে ধ্রুব বিয়ে করেছে বলে? ‘
ধারা ফুঁসে উঠলেন,
‘ একদম বাজে কথা বলবে না। তোমরা বাপ ছেলে একটা কথা মনে রেখো, পালিয়ে যাওয়া বউ নিয়ে এসেছো। আগেরবার আত্নীয় স্বজন জানতো না। তবে এবার জানবে। আগেরবারের মতো যদি কিছু হয় তো তোমাদের দুজনকে বউমার সাথে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে ঝুলিয়ে রাখবো। ‘
ধ্রুব ঠোঁট চিপে হাসছে।
‘ তাকে তুমি গড়ে নিও মা, একটু বেখেয়ালি তবে তুমি যদি শিক্ষক হও সে ছাত্রী হিসেবে পাশ করবে নিশ্চিত। কি পারবে না? ‘
ধারা ছেলের কান টেনে ধরলেন,
‘ ঠিক বাপের মতো হয়েছিস, কথার মারপেঁচে সব হাসিল করে নিস। ‘
ধ্রুব মিথ্যা ব্যথা পাওয়ার অভিনয় করলো। ধারা ছেলের এলোমেলো চুলে হাত ভুলিয়ে দিলেন।
‘ ঘরে যাও, ফ্রেশ হয়ে একেবারে টেবিলে নিয়ে এসো তাকে। আর হ্যাঁ তোমার ঘরে শাড়ি রাখা আছে। তাকে বলবে ওটা পড়ে নিতে। কেমন? ‘
ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে উঠে গেলো। ফাহিম মাহবুব একা বাঘিনীর সামনে বসে থাকলেন। মিনমিন করে বললেন,
‘ আমি কি করবো? ‘
‘ তুমি গিয়ে খাবার টেবিলে রাখো যাও। সার্ভেন্ট সব গরম করে নিয়েছে। ‘
ফাহিম মাহবুব উঠে গেলেন। এটা তার শাস্তি। ছেলের মাকে না বলে ছেলেকে বিয়ে করানোর দ্বায়ে তাকে মাঝেমধ্যেই ধারা এমন শাস্তি দিয়ে থাকেন।
ধ্রুব রুমে এসেছে। তার রুমটা দক্ষিণ দিকে। খোলা বারান্দায় হরেকরকম ফুলের গাছ রয়েছে। ফারিন সেসবই দেখাচ্ছিল নিনীকাকে। ধ্রুবকে দেখে ‘তোমরা ফ্রেশ হয়ে এসো’ বলে চলে গেলো। নিনীকার পায়ের তলায় এখনো কিছু আলতা লেগে আছে। ধ্রুবের রুমের সাদা মেঝেতে যার চাপ পড়ে গেছে। ধ্রুব শূন্যে তুলে ধরলো, একেবারে ওয়াশরুমে নামিয়ে দিলো।
‘ ফ্রেশ হয়ে একেবারে বের হবে। ওয়েট আমি শাড়ি দিচ্ছি। ‘
বিছানা থেকে শাড়ি দিলো ধ্রুব। নিনীকা শাড়ি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রইলো। ধ্রুবের ভ্রু কুঁচকে গেলো,
‘ দাড়িয়ে আছো কেন? গো তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও। আমাকেও ফ্রেশ হতে হবে তো মিসেস। ‘
নিনীকা আমতা আমতা করলো,
‘ আসলে আমি শাড়ি পড়তে জানি না। ‘
ধ্রুব অবাক হয়ে তাকালো। পরক্ষণেই হেঁসে বলল,
‘ সমস্যা নেই, ফ্রেশ হয়ে বের হও, মোবাইলে দেখে পড়ে নিবে। সাহায্য করতে আমি আছি। ‘
নিনীকা মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলো ধ্রুব ফোন এক কোণে সেট করে রেখেছে। ভিডিও চলছে। নিনীকার পড়োনে ব্লাউজ ও পেটিকোট। নিচে জিন্স পড়তেও ভুলেনি বেচারি। ধ্রুবের সাহায্যে শাড়ি পড়তে সক্ষম হয় সে। যদিও লোকটা তাকে লজ্জা দিতে এক ইঞ্চি ও ছাড় দেয়নি। তাতে কি? তারই তো স্বামী।
ধ্রুব প্রায় ত্রিশ মিনিটে যুদ্ধ জয় করলো। ততোক্ষণে ফারিন দরজায় কয়েকবার টুকা দিয়ে চলে গেছে। বেচারা তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। একটা টাউজার ও টিশার্ট পড়ে বউকে নিয়ে ছুটলো খাবার টেবিলে।
ধারা আহমেদ মুগ্ধ চোখে দেখছেন। লাল শাড়ি পরিহিতা সদ্য গোসল করা রমনীটিকে দেখে তার চোখ জুড়িয়ে গেলো৷ ফারিন ফিসফিস করে বলল,
‘ দেখেছো মা? বলেছিলাম না? কতো তুলতুলে। ‘
ধারা গম্ভীর হলেন,
‘ না ধরেই বুঝবো কিভাবে তুলতুলে নাকি শক্ত? ‘
ফারিন নাক মুখ কুঁচকে বলল,
‘ আরে দেখতে নরম তুলতুলে মোমের পুতুল লাগছে না? আমি সেটা বলেছি। ‘
ধারা গলা কাঁকড়ি দিলেন,
‘ হ্যা সে লাগছে বৈকি। ‘
ফাহিম মাহবুব সযত্নে নিজের পুত্রবধূকে চেয়ার টেনে বসালেন। প্লেটে নিজ হাতে খাবার তুলে দিলেন। নিনীকা মাথা নিচু করে রইলো। এই বাড়িতে সব উল্টো হচ্ছে। কোথায় পুত্রবধূ হিসেবে সে সবাইকে খাবার বেড়ে দিবে তা না তার শ্বশুর তার প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছেন। সবকিছু কেমন অন্যরকম!
(চলবে)