#বিয়ে_থা
#পর্ব-২০
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
( কপি নিষিদ্ধ)
ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। শরীরের শর্টস ভিজে চুপচুপে হয়ে লেপ্টে আছে শরীরে। সাদা শার্ট ভেজার কারণে ভেতরের অন্তর্বাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভেজা চুলগুলো লেপ্টে আছে গালে, কাঁধে। ক্যাম্প থেকে একটু দূরে অবস্থান করছে সে। হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাচ্ছে দ্রুতগতিতে। তন্মধ্যে পেছন থেকে টেনে ধরলো একটি হাত। টেনে নিয়ে যেতে লাগলো বিপরীত দিকে। মেয়েটি চেচিয়ে উঠলো।
‘ ছেড়ে দে সুমিত্রা, আমাকে যেতে হবে। ’
সুমিত্রা ছাড়লো না। বরং শক্ত করে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
‘ তুই পাগল হয়ে গেছিস, নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ। মেজর তার বউকে এভাবে সব সৈনিকের সামনে দেখলে খুশি তো হবেই না বরং মুখ ফিরিয়ে নিতে দু’বার ভাববে না। ’
নিনীকা চুপসে গেলো। তিরতির করে কাঁপছে তার ঠোঁট। আকাশ গর্জন করছে মাঝে মধ্যে। সুমিত্রা পেছন ফিরে একবার দেখে নিলো।
‘ চারিদিকের অবস্থা দেখেছিস? জ্বর হবে নিশ্চিত। তোর জন্য আমিও ভিজে গেছি। ‘
‘ অন্ধকারে তেমন কিছুই কেউ দেখতে পাবে না, তুই শুধু শুধু চিন্তা করছিস। ‘
‘ ওদের তাঁবুর পাশে মশাল আছে নিনীকা, এতো অবুঝ হচ্ছিস কেন? ‘
নিনীকা টু শব্দ ও করলো না। তার হাত টেনে নিয়ে সুমিত্রা কটেজে পৌঁছালো। দুজন কাপড় চেঞ্জ করে নিয়ে কাঁথার তলে ঢুকে উষ্ণতায় তলিয়ে গেলো। মাঝে মধ্যে হাঁচি দিচ্ছে নিনীকা। সাথে ভেসে আসছে সুমিত্রার রাগী স্বর,
‘ দেখেছিস? বলেছিলাম না? লাগলো তো ঠান্ডা! ‘
নিনীকা ঠোঁট উল্টে পাশ ফিরে শুয়ে আছে। তার ভালো লাগছে না। বালিশের নিচ থেকে বের করলো মুঠোফোন। ডায়াল করলো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে। আশ্চর্যের বিষয় কল ঢুকলো। এবং রিসিভ ও হলো। নিনীকা মুখে হাত দিয়ে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। ওপাশ থেকে ভেসে এসেছে ধ্রুবের গলার স্বর,
‘ এনি প্রব্লেম? ‘
নিনীকা বিস্মিত হলো। ধ্রুব তার নম্বর চিনে। অবশ্য চিনবে না-ই বা কেনো, সুমিত্রা নাম্বার দিবে না তা কি হয়? সে বহু কষ্টে উচ্চারণ করলো,
‘ আপনার নাম্বার একটু আগে বন্ধ দেখাচ্ছিল। ‘
ধ্রুবের নির্লিপ্ত উত্তর,
‘ পার্সোনাল নাম্বার বন্ধই থাকে, জরুরি না হলে অন করা হয় না। ‘
‘ এখন কেন অন করেছিলেন? ‘
‘ বিশেষ কারো খুঁজ নিতে, বাট তার আগেই তুমি ফোন করলে। ‘
নিনীকা শ্বাসরুদ্ধ করে প্রশ্ন ছুড়লো,
‘ সে-ই বিশেষ কেউ-টা কে? ‘
ধ্রুব নিঃশব্দে হাসলো,
‘ আর যাই হোক সে তুমি নও। ‘
নিনীকার কোথাও আঘাত লাগলো কি? হয়তো। সে ফুপিয়ে উঠলো,
‘ সাড়ে তিন মাসও হয়নি, বিশেষ কেউ জুটিয়ে ফেলেছেন? ‘
‘ জুটিয়ে ফেলিনি, সে সবসময়ই ছিল। ‘
নিনীকা রেগে গেলো,
‘ তবে আমার কাছে গিয়েছিলেন কেন? নাটক করতে? দয়া দেখাতে? আপনারা সব পুরুষ এক রকম। আপনাকে আমি ভিন্ন ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনি! আপনিও সেরকমই প্রমাণিত হলেন। আই হেইট ইউ মিস্টার ধ্রুব মাহবুব। ‘
সুমিত্রা মোবাইল কেড়ে নিলো। নিজে প্রশ্ন ছুড়লো,
‘ বিশেষ কেউ -টা কে জিজু? কেন আমার বান্ধবীকে কাঁদাচ্ছেন বলুন তো? ‘
ধ্রুব বলল,
‘ বিশেষ কেউ টা আমার বোন শালীকা। আপনার বান্ধবীকে বলবেন, যেদিন সত্যিকারের বিশ্বাস করতে পারবে, ভরসা করতে পারবে সেদিন যেনো আসে। ধ্রুব মাহবুব ফিরিয়ে দিবে না। কিন্তু যদি কয়েক ঘন্টার অস্থায়ী বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসে, এবং তা সামান্য কথাতেই ভেঙে যায় তবে সেরকম কিছু আমার দরকার নেই। হয়তো তাকে পাবো না, তবে কখনো মনে হবে না আমার পার্টনার আমাকে অস্থায়ী বিশ্বাস করে, যার স্থায়িত্ব সর্বোচ্চ এক ঘন্টা বা এক দিন! ‘
ধ্রুব ফোন রেখে দিলো। সুমিত্রা অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে। নিনীকা কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলল,
‘ আবারও ভুল করে ফেললাম। সে হয়তো আমাকে মেনেই নিবে না। ‘
‘ মেনে নিবে কেন? তুই তাকে বিশ্বাস ভরসা কোনোটাই করিস না। আর কতো নিনীকা? কবে তুই তোর ওভারথিংকিং বন্ধ করবি? এটা তোকে শেষ করে দিবে কেন বুঝিস না? ‘
নিনীকা অসহায় কন্ঠে বলল,
‘ আমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, ওভারথিংকার মানসিক রোগ। ‘
‘ব্যস, আর নিতে পারছি না আমি। তুই মন থেকে ভাব। দেখ তোর মন কি বলে, যা বলে তাই করবি। না-হয় এখানেই সব শেষ করে ফিরে যাবি। তুই আমার বান্ধবী বলে একজন ভালো মানুষের জীবন নিয়ে এভাবে খেলবি আর আমি মেনে নিবো সেরকম কখনোই হবে না। হয় একেবারে ছেড়ে দে, নয়তো সারাজীবনের জন্য ধরে রাখ। এবং সেটা এখন থেকেই। গড ইট? ‘
সুমিত্রা পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। নিনীকার দু’চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেলো। সে ভাবলো। অনেকক্ষণ, অনেক ঘন্টা। তখন প্রায় মধ্যরাত। ডায়াল করলো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে। ওপাশের মানুষটি হয়তো জেগেই ছিলো। তৎক্ষণাৎ রিসিভ করলো। বলল,
‘ সবকিছুতে এতো দেরি করো কেন মিসেস? ‘
নিনীকা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালো।
‘ আমার চান্স আছে না? ‘
ধ্রুব হাসলো,
‘ তোমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না, কখনোই না। তুমি সবসময়ই থেকে যাবে তোমার জন্য বরাদ্দকৃত জায়গাতে। ‘
‘ আমাকে নিয়ে যান। ‘
‘ আজ নয়, আরও কয়েকটা দিন ভেবে নাও। ‘
নিনীকা মুখ ফুলালো,
‘ ভাবাভাবির কিছু নেই, এটাই ফাইনাল। ‘
ধ্রুব লম্বা শ্বাস ছাড়লো। দৃঢ়ভাবে বলল,
‘ তুমি এসো, বার-বার এসো।
যখন মন চাইবে তখনই চলে এসো।
মনে মেঘ জমলে, চোখ থেকে বৃষ্টি ঝড়লে,
কান্না পেলে, কিংবা বিষন্ন মন খারাপে
আমার বুকে মাথা রাখতে, তুমি চলে এসো।
তবে তুমিও জেনে রেখো,
একবার চলে এলে
তোমার ফিরে যাওয়ার পথ নেই। ’
তবে তুমিও মনে রেখো,
মিসেস নিনীকা শেখকে
মেজর ধ্রুব মাহবুবের হয়ে থেকে যেতে হবে আজীবন! ব্যস তুমি শুধু একবার চলে এসো! ’
নিনীকা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। বলল,
‘ কবিতাটি কার আবিষ্কার? ‘
‘ আমার, মাত্রই আবিষ্কার করলাম। ‘
নিনীকা দরজা খুলে বের হলো। অন্ধকার বারান্দায় দাড়িয়ে হেসে বলল,
‘ আসবো, এমন ভাবে আসবো যাতে আর ফিরে যেতে না হয়। ‘
‘ তবে তাই হোক। ‘
কথা বন্ধ। দুজন দুজনের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে শুধু। সেই ক্ষণে ধ্রুব আচমকা বলল,
‘ দার্জিলিংয়ে যার সাথে কোমড় বেঁধে ঝগড়া করেছিলে তিনি তোমার শ্রদ্ধেয় শ্বাশুড়ি মিসেস। ‘
নিনীকার ভেতরে কেউ তীব্রভাবে চিৎকার করে উঠলো। মৃদু জোরে বলল,
‘ মাই গড! ‘
ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হাসলো,
‘ ভালো মানাবে, বউ-শ্বাশুড়ি যুদ্ধ করবে আমরা দেখবো। ‘
নিনীকা মানতে নারাজ।
‘ একদমই না, যুদ্ধ কেন করবো? তিনি যদি আমাকে মেনে নেন আমার মানিয়ে নিতে আপত্তি নেই। তবে আপনাকে একটা কথা জানিয়ে রাখি মেজর। আমার মা বাবা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে বা আমাকে কথা শুনালে আমার ভালো লাগবে না। আমার দূর্বলতায় আঘাত লাগলে আমি সবকিছু ছেড়ে আসতে দ্বিধা করবো না। আপনাকে জানিয়ে রাখলাম জাস্ট! ‘
ধ্রুব চুপ করে থাকলো। নিনীকা আবারও বলল,
‘ আমি সবকিছু মেনে নিতে পারবো, আমার মা বাবাকে নিয়ে কেউ কিছু বললে মেনে নিতে পারবো না। আপনি বুঝতে পারছেন আমার কথা? ‘
‘ তোমার অতীত, তোমার দূর্বলতা আমাকে কি বলা যায় না মিসেস? ‘
নিনীকার কথা আটকে গেলো,
‘ বলবো অন্য কোনো সময়। ‘
ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,
‘ আজ বললে আগামীতে তোমাকে প্রটেক্ট করতে সুবিধা হতো মিসেস। ‘
‘ বললাম তো অন্য কোনো সময়। ‘
ধ্রুব মেনে নিলো। তাদের দীর্ঘ আলাপ চললো ভোর রাত পর্যন্ত।
(চলবে)