#বিয়ে_থা
#পর্ব-১৯
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
( কপি নিষিদ্ধ)
বিষন্ন সন্ধ্যা। কটেজের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে নিনীকা। পড়োনে হাটু সমান শর্টস ও শার্ট। নরম তুলতুলে দেহ কেঁপে উঠছে একটু পরপর। মাঝে মধ্যে ফুপিয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে তাকে। সুমিত্রা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছিলো। সন্ধ্যা হলেও রুমে লাইট অন করা হয়নি, তার উপর মশার আক্রমণ। তড়িৎ গতিতে উঠে বসেছে সে। হাত পা জ্বালা করছে। মশারা ইচ্ছে মতো তার রক্ত খেয়ে চলে গেছে। সুমিত্রার নাকের পাটা ফুলে গেলো। ফুসফুস করে নিনীকা বলে চিৎকার করলো। কিন্তু নিনীকার কোনোদিকে খেয়াল নেই। সুমিত্রা বাধ্য হয়ে নামলো। ঘরের লাইট অন করতেই বারান্দা কিঞ্চিৎ আলোকিত হলো। আবছায়া নিনীকাকে দেখে সে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো। ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে পাশে দাড়ালো। নিনীকার মতো করে নিজেও দৃষ্টি ফেললো আকাশের দিকে। বলল,
‘ আফসোস করে কি সময় ফিরে পাওয়া যাবে? সময় ফুরিয়ে গেলে আফসোস করে তো লাভ হবে না নিনীকা। সে ধরা দিবে না। সুতরাং যতোটুকু সময় আছে তা কাজে ব্যয় করো। তুমি নিজেই না-হয় তাকে ধরা দিলে। ক্ষতি কি? ‘
নিনীকা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,
‘ সে আমাকে গ্রহণ করবে? ‘
‘ করবে ইয়ার, তুমি তার স্ত্রী। তার চোখে তোমার জন্যে সত্যিকারের ভালো লাগা, ভালোবাসা দেখেছি আমি। সেদিন দেখেছিলাম পালিয়ে আসা বউয়ের খুঁজ পাওয়ার জন্য তীব্র আকুতি। সেজন্যই তোমাকে না বলে তাকে তোমার খুজ দিয়েছিলাম। ট্যুর এর নাম করে নিয়ে গেছিলাম দার্জিলিংয়ে। ‘
নিনীকা কৌতূহলী হলো,
‘ সে তোমার খুঁজ পেলো কিভাবে? ‘
সুমিত্রা হেসে ফেললো,
‘ সে মেজর ভুলে যাও কেন? কোনো না কোনো ভাবে আমার খুঁজ পেয়েছে। সেটা না-হয় তুমি তার থেকেই জেনে নিও। ‘
নিনীকা চুপ করে রইলো। সুমিত্রা কাঁধ ঝাকিয়ে বলল,
‘ তুমি এতো কি ভাবছো ডেয়ার? তাকে এখনো তোমার অবিশ্বাস হয়? তোমার মনে হয় সে কাপুরুষের মতো? সত্যি কথা বলো তো? ‘
‘কি?’
‘ তুমি ভার্জিন রাইট? ‘
নিনীকার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগলো। সুমিত্রা নিরবতা সম্মতির লক্ষ্মণ ধরে নিলো। বলল,
‘ সে কতোটা সুপুরুষ ভাবতে পারছো? আজকের যুগে হোক বা আদিম যুগ কোনো পুরুষ অধিকার থাকা সত্ত্বেও নিজের বিবাহিত বউকে ভার্জিন রাখবে সেটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য। হ্যা গল্প উপন্যাসে অনেক কিছুই লেখা হয়। কিন্তু তুমি উপন্যাসের কোনো চরিত্র নও। তুমি বাস্তব উপন্যাসের একজন ভাঙাচোরা নায়িকা। যাকে একমাত্র এবং শুধুমাত্র মেজর ধ্রুব মাহবুব জোড়া দিতে পারবে! ‘
নিনীকা সুমিত্রাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
‘ তুমি যাকে বিয়ে করবে সে অনেক লাকি পার্সন সুমিত্রা। তোমার মতো এমন বুঝদার পার্টনার পেয়ে সে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবে দেখে নিও। এন্ড আ’ম সো হ্যাপি, ক’জ ইউ আর মাই বেস্টফ্রেন্ড। ‘
সুমিত্রা নিজেও জড়িয়ে ধরলো,
‘ সে সৌভাগ্যবান হবে কি না জানি না, তবে আমি আমার পার্টনারকে সৌভাগ্যবান করবো। যাতে সে গর্ব করে বলতে পারে দিস লেই’ডি, এক্সট্রা অর্ডিনারী কিউট গার্লস মাই ওয়াইফ৷ হা হা হা। ‘
‘ তুমি আলাদা, সবার থেকে আলাদা আমার সুমিত্রা। ‘
‘ দোয়া করো যাতে সে-ও এই কথাটা তোমার মতো উচ্ছাস নিয়ে বলতে পারে। ‘
‘ ও…সে…তার নাম কি হু হু? ‘
সুমিত্রা লজ্জা পেলো,
‘ জানি না ইয়ার, তবে ছবি দেখেছি। সম্ভবত এখান থেকে ফিরে গেলেই আশীর্বাদ হয়ে যাবে। আমি চাই আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে তুমি আমার পাশে থাকো। থাকবে তো নিনীকা? ‘
নিনীকা কোমল স্বরে বলল,
‘ থাকবো ডেয়ার, তুমি যেভাবে আমার পাশে থেকেছো, সেভাবে আমিও তোমার পাশে থাকবো। কথা দিচ্ছি। ‘
সুমিত্রা হাসলো,
‘ তুমি কি কিছু করবে না? দেখা গেলো একদিন সুযোগটাই চলে গেলো, সে অন্য কারো হয়ে গেলো। তখন কি করবে? ‘
নিনীকার মুখের খুশি খুশি ভাবটা নিভে গেলো।
‘ সে অন্য কারো হয়ে যাবে? ‘
‘ তুমি কে হও? সে কেনো তোমার জন্যে তার পুরো জীবনটা একলা কাটিয়ে দিবে, বলো? ‘
‘ আমি তার কিছু হই না? ‘
‘ তাকে সুযোগ দিয়েছো? তাকে কখনো অধিকার দেখিয়ে বলেছো তুমি তার কি হও? তবে সে কেনো তোমার জন্যে সেক্রিফাইস করবে বলতে পারো? সবারই তো ভালো থাকার অধিকার আছে নিনীকা! সে তোমার বিরহে বেশি হলে দু’বছর একা থাকবে। তারপর? তার ফ্যামিলি রয়েছে, পুরো জীবন পড়ে রয়েছে। তুমি কল্পনা থেকে বের হও ডেয়ার। বাস্তবতা দিয়ে ভাবো জাস্ট। সে যদি অন্য কাউকে জীবনে জড়াতেও না চায় তবে সমাজ পরিবার জড়িয়ে দিবে। আর তুমি ভালো করেই জানো পবিত্র সম্পর্কের জোর ঠিক কতোটুকু! যেমনটা দেখেছো নিজের বেলায়। তুমি তার চেনা কেউ ছিলে না, সম্পূর্ণ অচেনা তুমিকে শুধুমাত্র পবিত্র সম্পর্কের জোরে সে ভালোবেসে ফেলেছিলো। এবং এটাই পবিত্র সম্পর্কের জোর। মাই ডেয়ার আমি কি তোমাকে বুঝাতে পেরেছি? ‘
নিনীকার আঁখি দ্বয় ছলছল,
‘ আমি বুঝতে পেরেছি ডেয়ার। তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। শুধু বলবো এভাবেই থেকে যেও, আমার জীবনে তুমি নামক বুঝদার মেয়েটার অনেক দরকার। ‘
সুমিত্রা অভয় দিলো,
‘ থাকবো, সারাজীবন থাকবো। ‘
নিনীকা কেঁদে ফেললো,
‘ তুমি জানো না ডেয়ার,, আমাকে এর আগে কখনো কেউ এমন করে বুঝায়নি। আমি সত্যিই অনেক লাকি, তোমার মতো কেউ আমার জন্যে থেকে গেছে! আ’ম সো হ্যাপি। ‘
‘ তাকে ফোন করো এখনই। ‘
নিনীকা অবাক হলো,
‘ এখন কেন? ‘
‘ ধরো আর এক ঘন্টা পর তুমি পৃথিবীতে থাকলে না, কিন্তু তোমার মনে আফসোস থেকে যাবে তুমি কাউকে কিছু একটা বলতে পারো নি। তার থেকে এটা ভালো নয় কি এখনই বলে দিলে? তোমাদের ধর্মে তো আছে মানুষের এক সেকেন্ডেরও ভরসা নেই। এই মুহুর্তে আমি তোমার সামনে দাড়িয়ে আছি কাল না-ও থাকতে পারি। আমরা কি আগে থেকে ভবিষ্যত জানি বলো? ‘
নিনীকা শর্টস থেকে মুঠোফোন বের করলো। ডায়াল লিস্টে চেক করলো, সেভ লিস্ট চেক করলো। কি আশ্চর্য তার মাত্রই উপলব্ধি হলো প্রায় সাড়ে ছয়মাসের বিবাহিত জীবনে এখনো নিজের বরের নাম্বার তার জানা হয়নি!
সুমিত্রা পরিস্থিতি বুঝে গেলো। নিজের মোবাইল থেকে নাম্বার বের করে দিলো। নিনীকা ডায়াল করলো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে। এক বার, দু’বার করে দশবার। নাহ্ ওপাশ থেকে ফোন বন্ধ। নিনীকা মন খারাপ করে বলল,
‘ তাকে বুঝি হারিয়ে ফেললাম সুমিত্রা। আমি হয়তো দেরি করে ফেলেছি। ‘
সুমিত্রা চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলো,
‘ তুমি ওভারথিংকার ডেয়ার। এসব ভেবো না। সে ডিউটিতে আছে। সেজন্য হয়তো পার্সোনাল সিম বন্ধ করে রেখেছে। বি পজিটিভ। ‘
‘ এখন তবে কি করবো? আ…পেয়েছি! ‘
সুমিত্রার ভ্রু কুঁচকে গেলো,
‘ কি পেয়েছো? ‘
নিনীকার হাসির সাথে সাথে চোখ বড়বড় হলো।
‘ আমি এখনই ওই কটেজের দিকে যাবো। তাকে নিজের মনের কথা বলে তবেই ফিরবো। তুমি ততোক্ষণ একা থাকতে পারবে না? ‘
সুমিত্রার বিস্ময়ে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো,
‘ একদম না। পাগল তুমি? ওই সৈনিকরা তোমাকে না দেখেই গুলি করবে। কোনো রকম রিস্ক নিবে না। তারা কিভাবে জানবে তুমি মেজরের বউ? ‘
নিনীকা শুনলো না। কটেজের বারান্দা পেরিয়ে মাঠ, মাঠ পেরিয়ে উঁচু নিচু পাহাড়ি পথ ধরে দৌড়াতে শুরু করেছে৷ পেছনে সুমিত্রা চিৎকার করে ডাকছে,
‘ যেও না ইয়ার, শুনো আমার কথা। পাগলামি করো না। ‘
নিনীকা শুনলো না। ছুটতে লাগলো দিগবিদিক ছাড়িয়ে। কয়েক ঘন্টা আগেও যাকে মনে মনে ভুলতে চেষ্টা করেছে এখন তার জন্যেই ব্যাকুল হলো হৃদয়। মনে প্রবল ঝড়। তাকে বলতেই হবে। এক্ষুনি। এই মুহুর্তে!
(চলবে)