বিয়ে থা পর্ব-১০

0
180

#বিয়ে_থা
#পর্ব-১০
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

( কপি নিষিদ্ধ।)

সূর্য নিভু নিভু। গোধূলির কিঞ্চিৎ আলো জানালার ফাঁক গলিয়ে এসে পড়ছে ধ্রুবের চোখমুখে। সে পিটপিট করে চোখ মেললো। আশেপাশে তাকিয়ে নিজের অবস্থান বুঝতে চেষ্টা করলো। কিছু সেকেন্ড পর সব মনে পড়ে গেলো৷ রুমে সে ব্যতীত অন্য কারো অস্তিত্ব নেই। মন কেমন করে উঠলো। তার মিসেস তো বলেছিল আশেপাশে ঘুরে ফিরে আসবে। তবে ফিরলো না যে? ধ্রুব উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটলো। এক দৌড়ে এসে থামলো গেইটের বাহিরে। ওইতো তার মিসেস। সামনে দাড়ানো কারো সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে। সে এগিয়ে এলো আরও। ধীরে ধীরে মহিলাটির মুখ তার কাছে স্পষ্ট হতেই চমকে গেলো। লুকিয়ে গেলো গেইটের কোণায়। কোণার ফাঁক দিয়ে পিটপিট করে দেখতে লাগলো তার মিসেস কোমড়ে হাত রেখে কথা বলছে। ঝগড়া করছে নাকি? ধ্রুবের মাথায় হাত। শেষে কি না শ্বাশুড়ি বউমার প্রথম সাক্ষাৎ টা ঝগড়া দিয়ে শুরু হলো!

পেছন থেকে ফাহিম মাহবুব বার-বার স্ত্রীকে টানছেন। কিন্তু ধারা কোনো কথাই শুনছেন না। থেমে নেই নিনীকাও। কোথাকার কে তাকে এভাবে ঝারবে আর সে চুপচাপ বোকার মতো শুনে যাবে তা তো হতে পারে না। তাদের ঝগড়ার মধ্যে ঘুমঘুম চোখকে খুলতে চেষ্টা করতে করতে টেক্সি থেকে নেমে এলো একটি মেয়ে। হাই তুলতে তুলতে নিজের বাবাকে বলল,

‘ তুমি চুপচাপ এক কোণে দাড়িয়ে ঝগড়া দেখো পাপা। মাম্মার ঝগড়া এত সহজে থামবে না। সুতরাং শুধু শুধু টানাটানি করে সময় নষ্ট করো না।’

ফাহিম মাহবুব অসহায় চোখে তাকালেন। ফারিন তখনও চোখ ভালো করে খুলতে পারছে না।

‘টেক্সির ভাড়া দিয়ে বিদেয় করো তো। বেচারা ড্রাইভার নিশ্চয়ই বিরক্ত হচ্ছে। আর তুমি আমাকে ডাকো নি কেন? আমাকে ফেলে চলে যেতে চাইছিলে নাকি?’

ফাহিম মাহবুব অসহায় কন্ঠে বললেন,

‘তোমাকে ডাকার সুযোগই তো পাইনি মা। তোমার মা যেভাবে ঝগড়া করছে মনে হয়না রাতের আগে থামবে।’

ফাহিম মাহবুব টেক্সি ভাড়া মিটিয়ে দিলেন। ফারিন বাবার এক হাত জড়িয়ে ধরে ঝগড়া দেখতে লাগলো। দুনিয়া ভেসে যাওয়ার মতো আফসোস করে বলল,

‘এই মুহুর্তে পপকর্নের খুব অভাববোধ করছি পাপা। তুমি আশপাশ থেকে পপকর্ন আনতে পারবে?’

ফাহিম মাহবুব কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,

‘পপকর্ন তোমাকে পরে খাওয়াবো লক্ষী মা আমার। পারলে তোমার মাকে থামাও।’

ফারিন হেসে ফেললো,

‘এমন অসম্ভব কাজ আমার দ্বারা সম্ভব নহে পিতা জি।’

ধ্রুব আড়াল থেকে অগ্নি চোখে নিজের বাবাকে দেখছে। পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেজ দিলো,

‘তুমি কি ঝগড়া থামাবে? নাকি আমি বেরিয়ে এসে বলে দিবো তুমি আমাকে কিভাবে বিয়ে করিয়েছো?’

ফাহিম মাহবুব মেসেজের শব্দে ফোন বের করলেন। তার গুনধর পুত্রের হুমকিতে শরীর দিয়ে ঘাম ঝরতে লাগলো। রিপ্লাই দিলেন,

‘তুমি তোমার বউকে টেনে নিয়ে যাও বাবা। আমি আমার বউকে নিয়ে যাচ্ছি। তবে সাবধান মুখে মাক্স পড়ে নিও।’

ধ্রুব সাথে সাথে সিন করলো। মাক্স তো পেলো না তবে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ ঢেকে নিলো। দ্রুত গতিতে বাপ বেটা দু’দিক থেকে এগিয়ে এলেন।

ধারা রাগে কিড়মিড়িয়ে বললেন,

‘ছেড়ে দাও আমাকে ওই পুচকে মেয়েটাকে আমি দেখে নিবো ফাহিম। চিনে না ও আমায়। তোমাকে কতোবার বলেছি ছেলেটাকে বিয়ে করাবো। আজ একটা বউমা থাকলে আমার হয়ে ঝগড়া করতে পারতো। তুমি আর তোমার মেয়ে তো অকর্মা। মেয়েটার কতো বড় সাহস। মা বাবা শিক্ষা দিতে পারেনি। বেয়াদব মেয়ে।’

ফাহিম মাহবুব মনে মনে প্রার্থনা করলেন,

‘এবারের মতো বাচিয়ে দাও আল্লাহ। আর জীবনেও এই মহিলাকে লুকিয়ে কিছু করবো না।’

ধ্রুব নিনীকাকে টেনে নিয়ে যেতে না পেরে কাধে তুলে নিয়েছে। নিনীকা একাধারে রাগে ধ্রুবের পিঠে কিল-ঘুষি দিচ্ছে। রেগে বলে চলেছে,

‘অকর্মা লোক, বউয়ের হয়ে ঝগড়া না করে পালিয়ে যাচ্ছে। আমার কপালে এমন ভীতু লোক জুটলো কেন? আপনি না মেজর? বউয়ের সাপোর্টার হতে পারেন না তো কিরকম স্বামী আপনি? আমি আপনার সংসার করবো না। ছাড়ুন আমাকে।’

ধ্রুব হোটেল রুমে এসে দরজা লক করে নিনীকাকে খাটে বসিয়ে তবেই থামলো। নিনীকা তখন ফুসফুস করছে। ধ্রুব প্রস্তুত হলো, তার বউ এখন তার উপর রাগ ঝাড়বে নিশ্চিত। তাই হলো, নিনীকা চুলের মুঠো ধরলো শক্ত করে। টানতে টানতে ছিঁড়ে ফেলবে অবস্থা।

‘আপনি আমাকে নিয়ে এসেছেন কেন? ওই মহিলার কতো বড় সাহস আমার শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। ওই মহিলা কি জানে আমি কিভাবে বড় হয়েছি? জানে না তো। কতোবড় সাহস তার।’

ধ্রুব নিনীকাকে ধরতে চেষ্টা করলো। কিন্তু নিনীকা ধরা দিতে নারাজ। মাঝে মধ্যে নিজের চুল খামচে ধরছে। বিছানার বালিশ কাঁথা সব ফেলছে নিচে। ধ্রুব জোর করে চেপে ধরলো। নিনীকা কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে অসহায় কন্ঠে শুধালো,

‘আমার কি দোষ মেজর? সবাই কেন আমার মা বাবাকে নিয়ে বাজে কথা বলে? কেন বলে? আমার ভালো লাগে না মেজর। একদম ভালো লাগে না। যা বলার আমাকে বলবে ওরা কেন মা বাবা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে? কেন! কেন! কেন!’

নিনীকা শব্দ করে কাঁদছে। ধ্রুবের নিজেকে অসহায় লাগছে। শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে। মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বলছে,

‘হুস কাঁদে না। সে হয়তো বুঝতে পারেনি। দেখবে একদিন তোমাকে যখন বুঝতে পারবে তখন কাছে টেনে নিবে। মন খারাপ করে না মিসেস।’

নিনীকা নাক টানতে টানতে বলল,

‘সে কেন আমাকে কাছে টেনে নিবে? আমি চাই না এসব পাবলিকদের সাথে কখনো দেখা হোক।’

ধ্রুব কিছু বললো না। সত্যি কথা বললে নিনীকা এবার সত্যি সত্যি চুল ছিঁড়ে ফেলবে তার। তবে সে বুঝতে পেরেছে তার বউয়ের নিজের মা বাবাকে নিয়েই কোনো সমস্যা আছে। সেটা সে আগেই আন্দাজ করেছে নিনীকার বাবার নিজের বউয়ের প্রতি ব্যবহার দেখে। কিন্তু গভীরে কি কি সেটা নিনীকার থেকে জানতে হবে। তার বউয়ের সাথে কেউ কোনো অন্যায় করে থাকলে সে ছাড় দিবে না। এক চুল ও না।

নিনীকা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। দরজায় কেউ টুকা দিচ্ছে। ধ্রুব নিনীকাকে শুইয়ে দিলো। দরজা খুলতেই সুমিত্রা উত্তেজিত হয়ে বলল,

‘নিনীকা কেমন আছে ভাইয়া? একজন মহিলাকে দেখলাম কেমন চিৎকার করে করে রিসিপশনে এসে দাড়িয়েছেন৷ আর বলছেন কে যেন তার সাথে বেয়াদবি করেছে। আমার ক্লাসমেইট রা তখন বলল মেয়েটা নাকি নিনীকা। তারা আমাকে বলতেই আসছিল তখনই আপনি ওকে নিয়ে চলে এসেছেন। ও ঠিক আছে তো ভাইয়া? মেয়েটা মা বাবা নিয়ে কথা শুনতে পারে না। ও অনেক কষ্ট পেয়েছে নিশ্চয়ই। বলুন না ও ঠিক আছে তো?’

ধ্রুব ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়লো।

‘রিলাক্স। আপনার বান্ধবী ঠিক আছে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে৷ ঘুম থেকে সকালের আগে উঠবে না হয়তো।’

সুমিত্রা বিছানায় ঘুমানো নিনীকাকে দেখে নিলো।তারপর বিদায় নিলো। বলে গেলো সে সকালে এসে দেখে যাবে। যতোই নিনীকা রেগে থাকুক, মেয়েটা তার দিক থেকে ঠিকই আছে।সে নিজে ওই অবস্থায় থাকলে একই ব্যবহার করতো।

ধ্রুব দরজা বন্ধ করে ওয়াশরুমে ঢুকলো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হওয়া হয়নি তার। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলো। আজ না-হয় না খাওয়াই থাক দুজন। ধ্রুব বুকে স্থান দিলো তাকে। কপালে দীর্ঘ চুম্বন করলো। ফিসফিস করে বলল,

‘তোমার জন্যে বালিশ নিষিদ্ধ করেছিলাম মিসেস। তবে তুমি মাঝে মধ্যে বালিশে মাথা রাখতে পারো। কিন্তু যখন আমি কাছাকাছি থাকবো তখন রাখতে পারবে না। মনে থাকবে?’

ঘুমন্ত নিনীকার থেকে উত্তর এলো না। জেগে থাকলে সে কি করতো? হয়তো বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে কঠিন একটি কথা ছুঁড়ে দিতো ধ্রুবের উদ্দেশ্যে। এমনই ধারণা করে নিলো ধ্রুব।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে