#বিয়ে_থা
#পর্ব-০৪
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
কাঁচের জানালা দিয়ে উদাস মনে মেঘলা আকাশ দেখছেন মিথিলা বেগম। মনে তার নানানরকম চিন্তা। মেয়েটা তার কেমন আছে ভারতে?’
মিথিলার চুলের মুঠি টেনে ধরলো কেউ। মানুষটা কে তিনি জানেন। রমজান শেখ শক্ত করে আরেক হাতে মুখ চেপে ধরলেন। মিথিলা বেগমের মনে হলো তার গালের সাথে দাঁত লেগে গাল ফুটো হয়ে যাবে। রজমান শেখ ধমকে প্রশ্ন ছুঁড়লেন,
‘বাড়ির সবার পাসপোর্ট আমার ঘরের লকারে থাকে। চাবি কোথায় থাকে তা একমাত্র তুই জানিস। নিনীকা’কে পাসপোর্ট তুই বের করে দিয়েছিস তাই না?’
মিথিলা বেগম চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। কিন্তু তার ঠোঁটে হাসি। বললেন,
‘বেশ করেছি। আমার মেয়েকে আমি নরক থেকে মুক্তি দিয়েছি।’
রমজান শেখ দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
‘তোর মোবাইল কোথায়? মোবাইল দে।’
মিথিলা বেগম এবার শব্দ করে হাসছেন।
‘তুমি এতো বোকা রমজান। আমার মেয়েকে যাতে আর কোনো নরপিশাচ আঘাত করতে না পারে সেজন্য আমি নিজেই তাকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে মানা করেছি। নিজের কসম দিয়ে বলেছি আমি না বলা পর্যন্ত ও যাতে আমার সাথে কোনো রকম যোগাযোগ না করে। কারণ আমি জানি তুমি ঠিকই আমার ফোন চেক করবে। গোয়েন্দা লাগিয়ে রেখেছো? বের করতে পারলে কিছু?’
রমজান শেখ সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় বসালেন গালে। মিথিলা বেগমের ঠোঁটের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো লাল রক্ত।
রমজান শেখ রাগে ফুসফুস করছেন। রেগে গেলে তার কিছু খেয়াল থাকে না। তখনই অল্প বয়সী কিশোরী কাজের মেয়েটি মিথিলা বেগমের রুমে এসেছে। হাতে তার হালকা নাস্তা ও ফলমূল। তার ম্যাডাম নাস্তা করেননি। কিশোরী মেয়েটি যদি জানতো তার এই আসাটা তার কাল হবে তবে কি সে পা ফেলতো এ ঘরে!
রমজান মেখ কিশোরী মেয়েটির হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। মিথিলা আঁতকে উঠলেন। টেনে ধরলেন রমজানের হাত।
‘মেয়েটাকে ছেড়ে দাও। ও বাচ্চা মানুষ। তুমি ওর উপর নিজের রাগ মিটাতে পারো না রমজান। আল্লাহর দোহাই লাগে বাচ্চা মেয়েটাকে ছেড়ে দাও।
নরপশুদের মনে কখনো মায়া হয় না। কিশোরী মেয়েটিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো নিজের বেডরুমে। মিথিলা দিশা হারালেন। কিশোরী মেয়েটির নিয়ে আসা নাস্তার ট্রে টা নিচে পড়ে আছে। ফলমূল এর সাথে নিয়ে এসেছিল ছুরি। তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা হাতে তুলে নিয়ে ছুটলেন নরপিশাচের থেকে একটি বাচ্চা মেয়েকে বাঁচাতে।
রমজান শেখ যখন দরজা ঠেলে বেডরুমে ঢুকবেন, তখনই ঠিক তখনই তার বাহুতে কেউ আঘাত করলো। ব্যথায় ছুটে গেলো কিশোরীর হাত। সে মিথিলার দিকে ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে তাকালো। মিথিলা সিঁড়ির দিকে ঠেলে দিলেন।
‘পালা, নিজের বাড়ি যা। আর আসিস না। পালিয়ে যা মা।’
কিশোরী মেয়েটি ছুটলো। সদর দরজা পেরিয়ে বাগান, বাগান পেরিয়ে গেইট।
রমজান শেখের হাত থেকে গলগল করে রক্তের স্রোত বের হচ্ছে। পাপের রক্ত। মিথিলা ছুরি হাতে ছুটলেন নিজের ঘরে। দরজা বন্ধ করে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে বসে রইলেন। নরপশু টা তাকে কি করবে তিনি জানেন না। তবে তার সাথে ভালো কিছু হবে না। মিথিলা মাথার চুল খামচে ধরে চিৎকার করে আল্লাহ কে ডাকলেন।
‘ তোমার কি দয়া হয়না খুদা? একটুও দয়া হয়না।’
রমজান শেখ আধঘন্টা পর দরজায় নক করলেন। মিথিলা তখন তরতর করে কাঁপছেন। অমানুষটা সার্ভেন্টদের ঢেকে এনে দরজা ভেঙে ঢুকলো। মিথিলাকে টেনে বের করলো ওয়াশরুম থেকে। তারপরের মুহূর্ত গুলো আরও অমানবিক, অমানুষিক। স্বামীর অধিকার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়া লোকটার আঘাত সহ্য করতে না পেরে মিথিলা জ্ঞান হারালেন।
কিন্তু তাতে যায় আসে কি তার? সে তার নিজের কাজ শেষ করলো। বড় অবহেলিত ভাবে ফেলে গেলো মিথিলার ঠান্ডা শরীর।
রমজান শেখ চলে যেতেই পুরনো কাজের মহিলা এসে ঢুকলেন। জ্ঞান ফেরাতে চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হলেন তখন ফোন করলেন ডাক্তার কে।
ডাক্তার এলেন। জ্ঞান ফিরানোর ব্যবস্থা করলেন। বললেন,
‘রোগীর অবস্থা ভালো না, হসপিটালে এডমিন করুন। দরজার পাশে দাড়ানো সার্ভেন্ট ভয়ে ভয়ে বললেন,
‘যা করার ঘরেই করতে হবে। স্যারের হুকুম।’
ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তার ডাক্তারি জীবনে অনেকবারই এই বাড়িতে আসা হয়েছে। তবে বেশিরভাগই এসেছেন অত্যাচারীত হওয়া এই নারীটির চিকিৎসা করতে। লুকিয়ে অনেকবার বলেছেন একশান নেওয়ার কথা। কিন্তু নারীটা কিসের ভয়ে যেনো চুপসে থাকতো। সেটা কি? কেউ জানে না।
–
ধারা আহমেদকে ধ্রুব ফোন করলো আরও দুইদিন পর। তাও পাঁচ মিনিটের জন্যে। জানালো সে ভীষণ ব্যস্ত। আগামী ছ’মাস বাড়ি ফিরতে না-ও পারে।
ছেলের ফোন পেয়ে আর কিছু হোক বা না হোক ধারার অভিমান কমেছে। এতেই যেনো ফাহিম মাহবুব শান্তি পেলেন। এবার এই নারীকে ধীরেসুস্থে সব ঘটনা বুঝিয়ে বলতে পারলেই হয়।
–
নিনীকা মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে। দুদিন আগেই সে হোস্টেলে এসে উঠেছে। তার রুমমেটরা অনেক ভালো। সবাই অনেক মিশুক। সুমিত্রার সাহায্যে নিনীকা কয়েকটা টিউশনি পেয়ে গেছে। তার বাবা খারাপ হলেও টাকার অভাব বুঝতে দিতে চান-নি। কিন্তু নিনীকা বুঝেছে। পাপের টাকা ছুড়ে ফেলে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়েছে। আপাতত এই একলা দেশে তার সঙ্গী পড়াশোনা, টিউশনি ও সুমিত্রা।
–
কাঁদা মাটিতে বুটের গটগট শব্দ হচ্ছে শুধু। একদল সৈনিক হেঁটে চলেছে পাহাড়ের গা ঘেষে। হাতের পিস্তল ও বন্দুক গুলো সামনে তাক করে সতর্ক ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। তন্মধ্যে পড়লো একটি খাদ। ছোটখাটো খাদটি লাফ দিয়ে পেরিয়ে গেলো তারা। নিরব হঠাৎ ফিসফিস কন্ঠে ডাকলো,
‘মেজর।’
মেজর কালো চশমার আড়ালের চোখ দুটো ঘুরালেন কিঞ্চিৎ। নিরব হাতের এক আঙ্গুলের ইশারায় কিছু দেখালো। অতঃপর তারা নিঃশব্দে যেতে লাগলো সেদিকে।
কিছু সন্ত্রাসী সেখানে ঘাঁটি গেঁড়েছে। তাদের অ্যারেস্ট করেই ফিরে যাচ্ছে তারা গাড়ির দিকে। আবারও সেই ছোট খাদ। তারা লাফ দিয়ে পেরিয়ে গেলো সেটা। তারপর সড়কে এসে একে একে উঠে বসলো সেনাবাহিনীর সেই গাড়িতে।
সীমান্তে ক্যাম্প গেঁড়েছে সৈন্যরা। সন্ত্রাসীদের ব্যবস্থা করে তারা ক্যাম্পে এসেছে। শক্ত রুটি ও ভাজি খেয়ে কেউ ঘুমিয়ে কেউ জেগে পাড় করে দিলো রাত।
সকালের সূর্য উদয় হওয়ার পরই ঘুম ভাঙলো তাদের। মেজর বন্ধ করে রাখা পার্সোনাল মোবাইলটা বের করলেন। ফোন করলেন কাউকে। রিসিভ হতেই জিজ্ঞেস করলেন,
‘তার নামটা কি বাবা?’
ফাহিম মাহবুব চমকালেন না। তার ছেলে যদি এখন বলে যে আমার বউকে আমি এখনো দেখিনি তবুও তিনি চমকাবেন না। সহজ গলায় বললেন,
‘তার নাম নিনীকা শেখ।’
‘ওহ।’
ফাহিম মাহবুবের গলায় কৌতূহল,
‘হঠাৎ তার কথা জিজ্ঞেস করছো যে?’
ধ্রুব ক্যাম্প থেকে বের হয়ে পকেটে হাত গুজে ধারালো।
‘তার কিছু ছবি পাঠিয়ে দিও বাবা।’
‘পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু হঠাৎ তার কথা কেন?’
ধ্রুব নিজের চুলের ভাজে হাত ডুবালো,
‘আমি স্বপ্ন দেখেছি বাবা। লাল শাড়ি পড়া কেউ ছিল সে। আমার বউ। তার মুখের এক পাশ দেখা যাচ্ছে। সে আমাকে বার-বার বলছে তোমাকে আমার দরকার, তুমি এসো, তুমি এসো, একবার এসো। তুমি বুঝতে পারছো তো বাবা?’
‘বুঝতে পারছি।’ তোমার কি তার জন্য মন কেমন করছে?’
‘জানি না বাবা। সি ইজ এ চিটার। নিজের বিয়ে করা বরকে রেখে পালিয়ে গেছে। আমি তাকে মনে করতে চাই না।’
‘তাহলে তাকে দেখতে চাইছো কেন?’
ধ্রুবের হাতের পেশিগুলো ফুলে উঠছে। সে ভীষণ উত্তেজিত বোধ করলো।
‘আমার মনে হচ্ছে আমি যদি তাকে না দেখি তবে কিছু একটা আটকে যাবে বাবা। তাকে আমার দেখা উচিত।’
ফাহিম ফোন রাখলেন। এক মিনিট পর ধ্রুবের ফোনে শব্দ হলো। সে মেসেজ অন করলো। প্রথম ছবিটা দেখে সে হেঁসে ফেললো। একটা হনুমানের ছবি। দ্বিতীয় টা হাতির। তৃতীয় টা একটি হরিণের। চতুর্থ টায় তার চোখ আটকে গেলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। তার মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বের হলো, ‘ অলীক কন্যা। ’
তখন আরেকটি মেসেজ এলো। ফাহিম মাহবুব লিখেছেন,
‘ বয়স তো কম হলো না বাবা। নাতি-নাতনীর মুখ দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারো তো।’
ধ্রুব ফোন করলো। ফাহিম মাহবুব গম্ভীর স্বরে বললেন,
‘নাতি-নাতনীদের মুখ দেখাচ্ছো কবে?’
সে হাসলো। ফাহিম মাহবুব আফসোস করলেন,
‘বিয়ের দিন যদি হাসতে তাহলে হয়তো আমার সহজ সরল বউমা তোমার দজ্জাল চেহারা দেখে পালিয়ে যেতো না বাবা। বউমার সাথে দেখা হলে সবার প্রথমে হাসবে।’
ধ্রুব নিজেও গম্ভীর হলো,
‘তোমার কেন মনে হচ্ছে সে আমার জন্য পালিয়ে গেছে? অন্য কোনো কারণ ও তো থাকতে পারে।’
‘একদমই না। আমি শিওর তোমার রাক্ষসের মতো চেহারা দেখেই সে জান হাতে নিয়ে পালিয়েছে।
ধ্রুব ফোন রেখে দিলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো চতুর্থ ছবিটি। চারিদিকে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। বাতাসের তোপে ধ্রুব’র অগোছালো চুলগুলো কপালে লেপ্টে রয়েছে। চোখমুখে কি নিদারুণ মুগ্ধতা তার।
(চলবে)
[ আপনাদের কমেন্ট দেখে আমি অবাক, শিহরিত।
১) পাসপোর্ট ছাড়া ইন্ডিয়ায় কিভাবে গেলো।
আপনারা যে ওয়াশরুমে যান, এক কথায় বলেন ফ্রেশ। কিন্তু আপনি টয়লেট করছেন নাকি বসে থাকছেন সেটা তো বলেন না। কেন বলেন না?
ঠিক তেমনই। নিনীকা পাসপোর্ট নিয়ে ট্রেনের সিটে বসলো, চোখ বুজলো, ঘুমালো, মশার কামড় খেলো। ওয়াশরুমে গেলো। রাত গভীর হলো। এগুলো না বলে আমি বলেছি, সে ট্রেনে চেপে বসলো।
২) তিস্তা নদীর বর্ণনা দিয়ে নাকি সময় নষ্ট করেছি। ফালতু বলেছে।
আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি তারা বাসর দেখতে শুধু গল্প পড়ে। ঢলাঢলি তাদের পছন্দ। কিন্তু আপনাদের উদ্দেশ্যে বলবো গল্পে ঢলাঢলি দিবো না। সুতরাং আপনারা পড়া বাদ দিয়ে দিতে পারেন। এমন ফালতু গল্প পড়ার দরকার নেই।
৩) নিনীকা, নামটা নিয়ে অনেকের সমস্যা। আমি অন্যদের মতো পাঠকদের কথায় নাচতে পারি না। আমি যা ভেবে রেখেছি তাই হবে। পড়ার উদ্দেশ্য হলে পড়বেন নাহলে পড়বেন না। নামটা কতোটা সুন্দর যারা জানেনা তারা বুঝবেও না। আপনারা ময়ূরী, বিলকিস টাইপের নাম পছন্দ করলে আমার কিছু করার নাই।
সবশেষে আমি যেরকম ভেবেছি সে-রকমই লিখবো। আপনারা পড়তে না চাইলে পড়বেন না। কিন্তু এরকম টপিক নিয়ে কমেন্ট করে নিজেকে মূর্খ প্রমাণ করবেন না। ফেবুতে অনেক গল্প আছে যেগুলোতে ঢলাঢলি থেকে শুরু করে সব ওপেন দেওয়া। সুতরাং সেগুলো পড়ুন। আপনাদের রুচি দেখলে আমার গা জ্বলে। যদি কমেন্ট করতে হয় ভালো কিছু নিয়ে করুন। ভালো কিছু নিয়ে উপদেশ দিন। ]