#বিয়েকথন
শেখ জারা তাহমিদ
অষ্টম পর্ব
ওয়াহিদের সঙ্গে যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিলো আনাম সাহেবের সেদিন শনিবার। সারা সপ্তাহ ক্লাসের পর ওয়াহিদের ইউনিভার্সিটিতে শুক্র-শনি দু’দিন ছুটি। বুঝেশুনেই সেদিন তিনি সময় দিলেন দুপুর দেড়টায়। উত্তরায় একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বললেন। ওয়াহিদের বাসার একদম কাছে। দেখতে চাইলেন এতো কাছে ওয়াহিদ সময়মতো আসে কি না। ফর্মাল পোশাকে জড়তাহীন, হাসোজ্জল ওয়াহিদ এসেছিলো সময়মতোই।
রেস্টুরেন্টে বসে সাধারণ কুশল বিনিময়ের পর, যখন অর্ডার দেওয়ার সময় হলো ওয়াহিদ ভদ্রভাবে জানতে চেয়েছিলো তার ডায়াবেটিস আছে কি না। ব্যাপারটায় তিনি অবাক হয়েছিলেন। মৃদু হেসে নিশ্চিত করেছিলেন এরকম কোনো ব্যাপার নেই।
খাওয়ার ফাঁকে সেবারে ওয়াহিদের পড়াশোনা, পরিবার, চাকরি নিয়ে টুকটাক কথা বলেছিলেন। সামনে বসা ছেলেটার সাবলীলতায়, বুদ্ধিদীপ্ত কথায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। পড়ায় বলেই বোধহয় ছেলেটা জমিয়ে কথা বলতে জানে। খাওয়া শেষে বিল দেওয়ার সময় বিনীতভাবেই ওয়াহিদ বলেছিলো, “আজকের বিল আমি দিতে চাই আংকেল। আপনি বাবার বন্ধু, সেই সম্মান থেকেই চাচ্ছি।” আনাম সাহেব ওয়াহিদের কথায় রাজি হননি। ছেলের বয়সী ওয়াহিদের এতটুকু কথা-ই তার ভালো লেগেছিলো। তিনি বিশাল ব্যবসায়ী, তার সাথে যে বা যারা দেখা করতে আসে হয় গদগদ ভাব নয়তো কাচুমাচু ভঙ্গিতে নিজেকে প্রকাশ করে। এর আগেও অনেককেই তিনি মেয়ের জন্য দেখতে এসেছেন। কেউ-ই এতটা দৃঢ়তা নিয়ে বলে নি। হয়তো বোঝেই নি বলা যায়! অথচ মেয়ে বিয়ে দিয়ে তিনি শুধুমাত্র মেয়ের জীবনসঙ্গী চান নি! ছেলেও চেয়েছেন! মেয়েকে আগলে রেখে যে কি না তারও ছেলে হয়ে উঠবে।
ওয়াহিদের মাঝের এই স্বতস্ফুর্ত আচরণেই ওকে আরো জানার আগ্রহ হয়েছিলো তার। বলেছিলেন, “তোমার অবসর সময়ে আরেকদিন লাঞ্চ করো আমার সাথে।” ওয়াহিদ কথা রেখেছিলো। নিজেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো। তবে ডিনারে। পরের শুক্রবারে। মিরপুরে। প্রথমবার তিনি গিয়েছিলেন ওয়াহিদের এলাকায়, সেই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়বারে যেনো ওয়াহিদ এসেছিলো তার এলাকায়! রাজনীতি, ব্যবসা নিয়ে কথায় কথায় উঠে এসেছিলো ওয়াহিদের মাছ ব্যবসার কথা। নিজের দিক থেকে কিছু সাজেশন দিয়েছিলেন তিনি। ওয়াহিদের প্রশ্নে সেই সাজেশন দীর্ঘ হয়েছিলো স্বাভাবিক আলোচনায়। রেস্টুরেন্টে আসা যে কারো মনে হতেই পারে, দারুন আলাপচারিতায় মেতে উঠেছে বাবা-ছেলে!
এরপর আরও দু-তিনবার লাঞ্চ-ডিনারে বসলেন ওয়াহিদের সঙ্গে। একবার সঙ্গে এসেছিলো ওয়াহিদের বাবা মাজহার উদ্দিন। আনাম সাহেব অবাক হয়ে দেখলেন কোনো ইতস্ততা ছাড়াই বাবার সাথে হাসি-আড্ডায় প্রাণবন্ত এক ছেলেকে। সেদিনেই তার মনে হলো ব্যাপারটা সামনে এগোতে পারে। পরের বার ওয়াহিদকে নিয়ে গেলেন তার পছন্দের এক ছাদ খোলা রেস্তোরায়। কর্ণস্যুপ খেতে খেতে অবশেষে জানতে চেয়েছিলেন ওয়াহিদ কেনো ফিনল্যান্ড থেকে চলে এলো!
ওয়াহিদ বেশ গুছিয়ে উত্তর টা দিয়েছিলো। সময় নিয়ে সুন্দর করে বলেছিলো, “ফিনল্যান্ডে আমি তিন বছর ছিলাম। মাস্টার্সে প্লেসমেন্টসহ কোর্স শেষ করতে দুইবছর। আর একবছর একটা রিসার্চ ইনস্টিটিউটে জব করেছি। পড়াশোনার দু’টো বছরে প্রচুর অড জব করেছি। দেশ থেকে আব্বু টিউশন ফি অর্ধেকটা দিয়েই পাঠিয়েছিলেন, বাকীটাও দিতে চাইলেন। কিন্তু আমার মনে হলো নিজেরটা এবার নিজেরই দেওয়া উচিত। ক্লাসের ফাঁকে নিয়ম করে ৩০ ঘন্টা সপ্তায় কাজ করেছি। প্রেজেন্টেশন, কেইস স্টাডি, গ্রুপ ডিসকাশন সব করেছি। ২/৩ মাস যাওয়ার পর নিজের রান্না নিজেই করেছি। কিন্তু এতো সবের মাঝেও আমি একা ফিল করেছি। দিনশেষে মনে হতো লুক ফরোয়ার্ড করার কিছু নাই। বাঙালি কমিউনিটির আশেপাশেই থাকতাম। কিন্তু তাদের সাথে আড্ডার সময় আমার যেমন নাই তাদেরও নাই। সবাই ছুটছে। সবাই ব্যস্ত। ভাবলাম সলিড জবে ঢুকে যেতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাগ্য ভালো ছিলো। মাস্টার্স প্লেসমেন্টে আমি যে ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্ন করেছি ওদেরই সিস্টার কনসার্ন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে জব হয়ে গেলো। স্যালারি বেশ ভালো। দুই বেডরুমের বাসা নিয়ে আমি আরামসে থাকতে পারছি। সেভিংসও হচ্ছে। আর একটাবছর পার হলে ইন্সটলমেন্টে খুব ভালো একটা গাড়িও কিনে ফেলতে পারতাম। স্যালারিও তখন আরো বাড়বে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হলো না। একাকিত্ব বোধ আরো গাঢ় হলো! সারাদিন এতো কাজ করতাম ল্যাবে, তারপরও ঘুম আসতো না। বাসায় ফোন দিয়ে কথা বলেও শান্তি পাচ্ছিলাম না। অনেক চিন্তাভাবনা করলাম। বিদেশে যারা পড়তে আসে তারা মোটামুটি তাদের সবটা নিয়ে চলে আসে। সেই টাকা ইনকাম করে দেশে ফেরত পাঠিয়ে আরো ইনকাম করতে পারাটাই সকলের মূল টার্গেট। আমার ক্ষেত্রে এমন কিছুই ছিলো না। আমি কোনো অড জব না করলেও সমস্যা ছিলো না। আব্বু সবসময় ছিলেন সাপোর্ট হিসেবে। তারপরও আব্বু যে টাকা দিয়েছে সেটা আব্বুকে রিটার্ন করে দিয়েছিলাম ফিনল্যান্ডে আসার বছর পার হতেই। না দিলেও আব্বু কখনো বলতো না কেনো দিলাম না! সেসব দেওয়ার পরও আমার কাছে মোটামুটি বড় একটা অ্যামাউন্ট আছে। দেশে ফিরে গিয়ে যদি কোনো জব সঙ্গে সঙ্গে না-ও হয় চলবে। সিজনাল ব্যবসাটা বন্ধুরা মিলে করছি। ওটাতেও হবে। তারপরও কিছু করতে না পারলে আব্বুর ব্যবসায় গিয়ে বসবো। মাথার উপর আব্বুর এই সাপোর্টটা আছে বলেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম আমি দেশে ফিরবো। সবার সাথে থাকবো। দিনশেষে কী করলাম, কী খেলাম, দিন কেমন কাটলো এই কথাগুলো জিজ্ঞেস করার মানুষ আমার আছে। তাহলে কেনো দূরে থাকা? জব ছেড়ে দিয়ে দেশে চলে আসলাম। কারণটা আপনার খুব অযৌক্তিক মনে হতে পারে আংকেল। কিন্তু আমার খুব ঠিক মনে হয়েছে। হ্যাঁ, যদি এমন হতো আমার ফ্যামিলি আমার উপর ডিপেন্ড করে আছে তাহলে কোনোভাবেই ফিরতাম না। যতই একা ফিল হোক। কেউ ডিপেন্ড করে নেই বলেই চলে আসার মতো লাক্সারিয়াস ডিসিশন আমি নিতে পেরেছিলাম।”
মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “তোমার কখনো মনে হয়নি ফিরে আসার সিদ্ধান্তটা ভুল হয়েছে? তুৃমি তিন-সাড়ে তিন বছর আগে ফিরে এসেছো। না ফিরলে এতোদিনে অনেক কিছুই করে ফেলতে পারতে।” ওয়াহিদ মুচকি হেসে জবাব দিয়েছিলো, “আসলেই হয়তো করে ফেলতে পারতাম। স্যালারি বর্তমানে ইউনিভার্সিটিতে চাকরি করে যা পাই তার চারগুন শুরুতেই পেতাম ফিনল্যান্ডে। এতোদিনে আমার ডাবল প্রমোশন হয়ে যেতো! আমি যখন দেশে ফিরে এলাম আমার বয়স তখন সাতাশ। বন্ধুদের বেশিরভাগেরই ততদিনে জব সেক্টরে এক-দুই বছরের ক্যারিয়ার হয়ে গেছে। সেখানে আমি রীতিমতো বেকার! চার-পাঁচ মাস সত্যি বলতে বসেই ছিলাম। জব ইন্টারভিউতে ডাক পেলেও আমার যে এক্সপেরিয়েন্স সেটার সাথে ওনাদের চাহিদা মিলতো না। হতাশ হওয়ারই কথা ছিলো। কিন্তু একবারও হইনি। বরং জব হচ্ছে না দেখে আম্মু যখন চিন্তা করতে না করতো, ফিনল্যান্ডের জব ছেড়ে ফিরলাম বলে আপুরা যখন গাধা বলে মজা করতো, আব্বু যখন গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করে, তার ব্যবসায় জয়েন করতে বলতো -আমার ভালো লাগতো। না ফিরলে আমাকে নিয়ে চিন্তা করার, মজা করার জন্য এই মানুষগুলোকে কোথায় পেতাম?”
ওয়াহিদের কথায় আনাম সাহেব দু’টো ব্যাপার বুঝেছিলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো বিশেষ গুণটা এই ছেলের আছে। সেটা ঠিক-ভুল যেমনই হোক। সে মনের দোটানা কাটিয়ে উঠতে জানে। এটা কোনো সহজ কাজ নয়। এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার এই কাজটাই ওয়াহিদ করে প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে। তার সামনে বসে থাকা ছেলেটার এই আত্মবিশ্বাসী সত্তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
খাওয়া যখন শেষের দিকে তখন তিনি করেছিলেন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা, “তোমার আব্বু বলেছে তুমি এখনই বিয়ে করতে রাজি ছিলে না। মত বদলালে কেনো?”
ওয়াহিদ মাথা চুলকে হেসে ফেলেছিলো। বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলো, “আংকেল, আমি জানি অপরাজিতাকে বিয়ে করতে চাওয়ার লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। আমার মতো আরো অনেকের সাথেই আপনি এভাবে বসেছেন, কথা বলেছেন। তাদেরও সেইম প্রশ্ন করেছেন। তারা অনেকেই হয়তো দারুন সব উত্তর দিয়ে ফেলেছে। আমার উত্তরে খুব যে নতুনত্ব আসবে না সেটা আমি জানি। তাছাড়া আমার কাছে আসলে বলার মতো অনেকগুলো কারণও নেই। তারপরও অপরাজিতাকে কেনো বিয়ে করতে চাই? এককথায় বলতে গেলে, অপরায় মুগ্ধ হয়েছি।”
মত বদলে ফেলার কারণ হিসেবে ওয়াহিদের এই সহজ স্বীকারোক্তিই ছিলো যথেষ্ট। ওয়াহিদের মতো এইভাবে আগে কেউ বলেনি। এতোটা গভীরতা নিয়ে কখনই মনের অনুভূতি প্রকাশ করেনি। একটা মাত্র বাক্যে এতো জোর থাকতে পারে সেটা ওয়াহিদ বুঝিয়ে দিয়েছিলো।
***
যতই ভাবেন, আনাম সাহেবের মনে হয় তিনি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেন নি। ওয়াহিদকে মেয়ের জন্য পছন্দ করা মোটেও ভুল সিদ্ধান্ত নয়। তবে, ভুল কোনটা? মেয়ে কে না জানিয়ে ওদের বাড়ি ডাকা টা? বিয়ের প্রস্তাবে হুট করে রাজি হওয়াটা? নাকি মেয়ের অভিমান বুঝতে না পারা টা?
উত্তর টা তিনি জানেন। এই প্রত্যেকটা কাজ যে ভুল সেটায় কোনো সন্দেহ নেই। তবে মাঝে মাঝে তার মনে প্রশ্ন জাগে, শুধু ভুল? অন্যায় নয়?
অন্যায় যদি না-ই হবে, তবে ইরা কেনো তার সঙ্গে কথা বলে না? বিগত এক মাসে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে না পারার এটাও একটা কারণ। নিশ্চুপ ইরাকে তিনি কখনোই দেখেন নি। সবার সঙ্গে শান্ত ইরা তার কাছে সবসময়ই ছিলো দুরন্ত। মিসক্যারেজের পরেও ইরা তার সাথে হাজার কথা বলেছে। কান্নায় ভেঙে পরেছে। অপরাজিতা এসে সেই ইরাকে বদলে দিয়েছিলো। সেই ইরা কী তবে অপরাজিতার সঙ্গেই আবার হারিয়ে গেলো? ওরা মা-মেয়ে কী তার মনের অস্থিরতা কখনো বুঝবে?
ভাবনার সুঁতো কেটে অবশেষে তিনি বাস্তবে ফিরলেন, গাড়ি থামার শব্দে। নেমে দাঁড়িয়ে, এয়ারপোর্ট ১নং টার্মিনালের আশেপাশে ওয়াহিদ কে খুঁজলেন। ভারত যাচ্ছেন তিনি। ব্যবসার কাজে। সপ্তাহ দুয়েকের জন্য। এবারের জার্নিতে তার সঙ্গী ওয়াহিদ। অপরাজিতা হল ছেড়ে বাসায় উঠেছে এই খবর ওয়াহিদ জানিয়েছে তাকে মাসখানেক আগে। তিনি অবশ্য আগেই জানতেন। সেটা বুঝতে না দিয়ে ওয়াহিদের কথা শুনেছেন। ওয়াহিদের নালিশ শুনে বহু কষ্টে হাসি আটকেছেন। মেয়েকে আহ্লাদ দিয়ে তিনি আসলেই মাথায় উঠিয়েছেন। তাই বলে মেয়ের ভয়-ডর বলে কিছু থাকবে না? তার মেয়ে এতো সাহসী কবে হলো! ইরা কে-ও বলেছেন একা একা বাসায় উঠার এই কথা। চোখমুখ লাল করে তাকে ভস্ম করে দেওয়াটাই বোধহয় বাকী ছিলো ইরার!
খানিক আগেই মা-মেয়ের কথা ভেবে আত্মগ্লানিতে ভুগছিলেন! আবার এখন তাদের কান্ডেই আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন! নাহ, জীবন সুন্দর। পাওয়া-না পাওয়া, অভিমানের ভীড়ে জীবন সুন্দর।
***
ওয়াহিদ ইন্ডিয়া যাচ্ছে কয়েকটা কারণে। ঘুরতে, শপিং করতে। আবার শ্বশুরকেও সঙ্গ দিতে।
অপরাজিতার সঙ্গে আকদের তিন মাস প্রায় হয়ে এসেছে। বাবা-মেয়ের অভিমানের ভীড়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা এখনও থমকে আছে। তবে ওর মনে হচ্ছে অভিমানের গল্প শেষের পথে। বাবা নাকি মেয়ে কে আগে মুভ করবে সেটাই দেখার বিষয়!
অপরাজিতার সঙ্গে সম্পর্কটা আদতে খুব স্বাভাবিক। কিন্তু ও টের পায়। অপরার অস্থিরতা টের পায়। একজন মানুষ কে ভালোবেসে, তাকে শুধুমাত্র ভালালাগার ভান করা সহজ নয়। অপরাজিতা সেই ভান করে চলেছে। অনুভূতি, অভিব্যক্তি লুকানো কী এতোই সোজা? তার ওপর সেটা যদি হয় বিশুদ্ধ প্রেমের, তীব্র ভালোবাসার? তবুও অপরাজিতা পারছে। সেটাতেই অবাক লাগে ওর।
গতকাল যখন বিদায় নিতে গেলো, কী ভীষণ মন খারাপ নিয়ে পুরোটা সময় বসেছিলো। অথচ আচরণে তার ছিটেফোঁটাও নেই। চোখমুখ কুঁচকে প্রায় ধমকের স্বরেই বলেছিলো, “কোন ইউনিভার্সিটি এতোদিন ছুটি দেয়? তা-ও ঘুরতে যাওয়ার জন্য? আপনিও কেমন ফ্যাকাল্টি, স্টুডেন্টদের ক্লাস ক্যানসেল করে ট্যুর দিচ্ছেন!” অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছিলো ওয়াহিদ। গম্ভীর মুখে বলেছিলো, “এতো বছরের চাকরিতে একবারও ছুটি নেইনি। এই ছুটি আমার পাওনা ছিলো বলতে গেলে। ক্লাস ক্যানসেল করেছি, এতে স্টুডেন্টরা বেশ খুশিই বলা চলে। কয়েকজন তো বৃহস্পতিবারে আমার ক্লাস নেই বলে কক্সবাজার ট্যুরেরও প্ল্যান করে ফেলেছে। আমিও ওদের প্ল্যানে টুকটাক আইডিয়া দিলাম। সবাই খুশি। শুধু তোমাকে অখুশি লাগছে। আমার যাওয়াতে তুমি কি মন খারাপ করছো অপরাজিতা?”
সঙ্গে সঙ্গে পাত্তা না দেওয়ার মুখোশ আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো অপরাজিতা। চোখমুখ কঠিন করে স্বাভাবিকভাবে জবাব দিলো, “আপনি এতো খুশি মনে, আনন্দ নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছেন, আমি মন খারাপ করবো কেনো?” ওয়াহিদ আকুলস্বরে বলেছিলো, “আই উইশ তোমার মন খারাপ হতো, অপরা।” এ কথায় অপরাজিতা কী কেঁপে উঠেছিলো একটুখানি? নাকি ও ভুল দেখেছিলো?
অপরাজিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলো কি আনবে ওর জন্য? অনেক ভেবেচিন্তে অপরা ওর জন্য শান মসলাগুঁড়া নিতে বলেছে! তার রান্নায় খুব নাকি হেল্প হবে! জুতো, ব্যাগ, শাড়ি সব বাদ দিয়ে এমন কিছুও কেউ চাইতে পারে?
***
ইন্ডিয়ায় আসার ছয়দিন হয়েছে। প্রথমদিনের পর থেকেই আনাম সাহেব ব্যস্ত। রোজই মিটিংয়ে যাচ্ছেন।
দিল্লীর এখানে-ওখানে ওয়াহিদ ঘুরে বেড়াচ্ছে একা একাই। ঘুরছে কম। শপিং করছে বেশি। নিজের জন্য নয় অবশ্যই। অপরাজিতার জন্য। বেনারশী শাড়িতে অপরাজিতাকে কী স্নিগ্ধ, সুন্দর লাগবে সেটায় কোনো সন্দেহ নেই। ঘুরে ঘুরে তাই বেনারশী কিনেছে ও। সেখানেই এক শাড়ির দোকানের বিক্রেতা বললো পিওর কাঞ্জিভরম শাড়ির কথা। স্যাম্পলও দেখালো। লাল রঙা সিল্কের একটা কাঞ্জিভরম শাড়ি ওর বেশ পছন্দ হলো। খোলা চুলে, গাঢ় লাল লিপস্টিকে এই শাড়িতে অপরাজিতাকে কেমন ভয়ংকর সুন্দর লাগবে সেটা ভাবতেই পানি তেষ্টা পেলো ওর। শাড়িটা কিনে ফেলতে দু’বার ভাবলো না। সিলভার-পিংকের কম্বিনেশনে আরেকটা কাঞ্জিভরম শাড়িতে ওর চোখ আটকে গেলো। অপরাজিতাকে পিংকে দেখেনি ও। তারপরও কিনে ফেললো। মনে হলো এই শাড়িটায় শুধু অপরাকেই মানাবে। কোটা দরিয়া সিল্ক শাড়িও নিলো তিন-চারটে। এমনিতে শপিংয়ে গেলে সহজে ওর কিছুই পছন্দ হয় না। তার ওপর শাড়ি সম্পর্কে ওর তেমন কোনো আইডিয়া নেই বললেই চলে। অথচ মানুষটা অপরা বলেই হুটহাট কিনে ফেলতে পেরেছে।
আচ্ছা অপরাজিতা কী জানে ও শাড়ি পরলে ওয়াহিদ কতটা আকর্ষিত হয়? এই তো কদিন আগে দেখা হলো বিকেলে। অপরাজিতার একটা প্রেজেন্টেশন ছিলো। গুছিয়ে সুন্দর করে শাড়ি পরেছিলো। বেগুনি রঙা সুতি শাড়িটায় অনিন্দ্যসুন্দর লাগছিলো ওকে। ওয়াহিদের হাঁ করে তাকিয়ে থাকা দেখে লজ্জা পেয়েছিলো। শাড়ির প্রতিটা কুঁচির ভাঁজে অপরাজিতার লুকিয়ে রাখা যত্নে ওয়াহিদ অভিভূত হয়েছিলো। এই মেয়েটা কবে ওর ঘরে আসবে? শাড়ি পরে নতুন বউয়ের মতো সংসার সাজাবে? সংকোচ-দ্বিধার অবসান হতে আরও কত দেরি?
আরও দু’তিন দিন পর ঘুরেফিরে ওয়াহিদ চলে গেলো নামকরা ঘড়ির ব্র্যান্ডের একটা শো-রুমে। দুজনের জন্য মিলিয়ে ঘড়ি কিনে ফেললো। কী মনে হতে শ্বশুর-শাশুড়ির জন্যও মিলিয়ে ঘড়ি কিনলো। গল্পে গল্পে অপরাজিতা বলেছিলো ওর বাবা-আম্মু এখনও মিলিয়ে ঘড়ি পড়েন। সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো ব্যাগের শো-রুমে। আম্মুর জন্য শোল্ডার ব্যাগ নিলো দু’টো। আব্বুর জন্য ওয়ালেট। বোনদের জন্য শাড়ি কিনতে চাইলেও সহজে পছন্দ করতে পারবে না জানে ও। তাই আর চেষ্টাও করলো না। চকলেট নিয়ে শপিং শেষ করলো। তারপর মনে পরলো অপরাজিতার বলে দেওয়া মসলার কথা! খুশিমনে একটা ডেইলি শপে গিয়ে নিয়ে নিলো সেগুলোও।
আগামীকাল কলকাতা যাচ্ছে ওরা। আনাম সাহেবের দ্বিতীয় দফার মিটিংগুলো ওখানে। সেখান থেকে অবশ্য তেমন কিছু কেনার নেই। ঘুরে ফিরে বেড়িয়ে সময়টা কাটিয়ে দিবে। অপরাজিতাকে ছাড়া এটাই ওর শেষবারের মতো কোথাও ঘুরতে যাওয়া। বিবাহিত কিন্তু ব্যাচেলার হিসেবে শেষ ট্যুরও বলা যায়।
কলকাতায় গিয়ে ওয়াহিদ প্রচুর ঘুরে বেড়ালো। কলকাতার শহরতলীতে প্রচুর দেখার জিনিস আছে। প্রথমদিন নিউমার্কেট গিয়ে ঘুরে ঘুরে হাবিজাবি এটা-সেটা কিনলো। রাতের হাওড়া ব্রিজ দেখতে গিয়ে, লঞ্চ ঘাট থেকে নৌকায় করে রাতের কলকাতা দেখলো। পরদিন সায়েন্স সিটিতে গেলো কৌতুহল বশত। নাইট-লাইফ ঘুরে দেখতে সন্ধ্যেয় পার্ক স্ট্রিটে গিয়ে মনে হলো অন্য এক কলকাতায় চলে এসেছে ও। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে শুরু হয়ে ভিতরের রাস্তা ধরে পায়ে পায়ে হেঁটে গিয়ে একের পর এক গয়নার দোকান, বিখ্যাত রেস্তোরাঁ, ছবির দোকান সব ঘুরে বেড়ালো। বইয়ের দোকান চোখে পরতেই অপরাজিতার জন্য দুষ্প্রাপ্য কিছু বই কিনে ফেললো।
এর পরদিন বিকেলে প্রিন্সেপ ঘাট দেখতে গিয়ে সন্ধ্যে পর্যন্ত ওখানেই কাটালো। ব্যস্ত শহরের এদিকটায় আশ্চর্য এক নীরবতা ছিলো। সেই নীরবতায় বসে ও অপরাজিতাকে খুব মিস করলো। ক্যামেরা হাতে প্রচুর লোকজনকে ঘুরে বেড়াতে দেখেও ওর ছবি তুলতে ইচ্ছে করলো না। বারবার মনে হলো নরম রোদমাখা আরামের কোনো এক দুপুরে অপরাজিতাকে সঙ্গে নিয়ে ও ফিরে আসবে৷
আনাম সাহেবের অফিশিয়াল কাজকর্ম শেষ হতেই দুদিন সময় নিয়ে ওরা গেলো বিধাননগড়। সল্টলেক সিটি তে গিয়ে নিউ টাউন ইকো পার্কে ঘুরলো। সেখান থেকে সবার জন্য স্যুভেনিয়র কিনলো। ওখানের বিখ্যাত মাল্টিকোর্স রেস্তোরায় ডিনার করলো দু’জনে। মেমোরি ধরে রাখতে ওয়াহিদ বেশ কিছু ছবি তুললো। সেই ছবি ফেইসবুকে স্টোরি দিলো! অপরাজিতা স্টোরি দেখার দশ মিনিটের মাথায় ফোন দিলো। শান্তস্বরে জানতে চাইলো, “আপনি বাবার সঙ্গে ইন্ডিয়া গিয়েছেন! সেটা আমাকে বলেন নি কেনো?” টোপ জায়গা মতো পরেছে বুঝতে পেরে ওয়াহিদ মুচকি হাসলো। তবে সেটা লুকিয়ে রেখে বললো, “বাবার বিজনেসের কাজে আসতেই হবে। কিন্তু আম্মু সঙ্গে আসবেন না। তাই ভাবলাম বাবা-ছেলে মিলেই ঘুরে আসি। তোমাকে আলাদা করে জানাতে হবে বুঝিনি।” অপরাজিতা কি বুঝলো কে জানে! চট করে ফোন কেটে দিলো। ওয়াহিদ সঙ্গে সঙ্গে কল দিলো আবার। বেজে বেজে সেটা কেটে গেলো একসময়। ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি ধরে রেখে সগতোক্তি করে ওয়াহিদ, “অভিমানের দিন ফুরালো বলে, অপরা!”
কলকাতায় থাকার শেষ দিন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি দেখতে গিয়ে আনাম সাহেব পুরোনো গল্প করলেন। অপরাজিতার আম্মু কে নিয়ে বিয়ের পরে আসার গল্প শুনে ওয়াহিদের কেবল মনে হলো শ্বশুর ওর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিচ্ছে!
***
অপরাজিতার ভীষণ মন খারাপ। ওয়াহিদের ফেইসবুক স্টোরিতে বাবার সঙ্গে ছবি দেখার পর থেকেই অস্থির লাগছে ওর। কতগুলো দিন পরে বাবাকে দেখলো। মনের ভেতর হাজারটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। আম্মু কেনো বাবার সঙ্গে নেই? বাবা ইন্ডিয়া গেছে আর আম্মু যায়নি এমনটা কখনোই হয়নি। আম্মু-বাবার মাঝে সব কী ঠিক নেই? ওয়াহিদ ওকে কেনো জানালো না? বাবা কী অসুস্থ? এজন্যই কী ওয়াহিদ কিছু বলেনি? কিন্তু ওয়াহিদের কথায় মনে হয়নি এরকম কিছু। কী অবলীলায় ওয়াহিদ বললো বাবা-ছেলে মিলে ঘুরতে গেছে! বাবা, ওয়াহিদের বাবা হলো কবে থেকে?
ক’দিন ধরেই অপরাজিতার মন খারাপ ছিলো। ওয়াহিদ ইন্ডিয়া যাওয়ার পর থেকে সেভাবে সময় নিয়ে কথা হয়নি। ঘুরে-ফিরে ও ক্লান্ত থাকে। ফোন দিলেও বেশিক্ষণ কথা হয় না তাই। মাঝে চার-পাঁচদিন আগে অবশ্য খুব পাগলামি করেছিলো। বারবার বলেছে, “তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না অপরা। মন কেমন করছে। দেশে ফিরে তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে না ধরলে কিচ্ছু ঠিক হবে না। তুমি প্লিজ পারমিশন দিও।” অপরাজিতা অন্য সব সময়ের মতো লজ্জা পায়নি। বরং ওয়াহিদের ব্যাকুলতা অনুভব করেছে। ফোনের এপাশে নিঃশব্দে কেঁদেছে। ভীষণ দোটানায় মন পুড়েছে। ওয়াহিদের অনুপস্থিতিতে ওকে দেখার বাসনায় মনের অস্থিরতা তীব্র হয়েছে। এই অস্থিরতার কারণটা অপরাজিতা জানে। ওয়াহিদ কে ভালোবাসে ও। ভালোবাসার সহজ অনুভূতিটাই কী ভীষণ কঠিন ওর জন্য। দুজনের মধ্যে যে আবছা প্রাচীর ও তুলে রেখেছিলো স্বেচ্ছায়, সেটাই বেদনাদায়ক হয়ে ওকে আঘাত করছে।
নিজের এই অনুভূতি নিয়ে ও যখন টালমাটাল, ঠিক তখনই নতুন সমস্যাটা হলো। দুদিন আগে, সকালের ক্লাসে গিয়ে বসতেই ক্লাশমেট বিজয় এসে বললো, “তোকে শিহাব ভাই ডেকেছে। বকুলতলায়। ক্লাস শেষে মাস্ট যেতে বলেছে।” শিহাব ভাই ওদের দুই সেমিস্টার সিনিয়র। চমৎকার আবৃত্তি করেন। ওনার মোটামুটি ভালো ফ্যান-ফলোয়ার আছে। ডিবেট করার কারণে ওনার সাথে অপরাজিতার মাঝেমধ্যে কথা হয়েছে। এটাকে সখ্যতা বলা যায় না। ওকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে কথা বলার মতো সখ্যতা তো আরো না। বিস্ময় চেপে রেখেই ও গিয়েছে বকুলতলায়।
কোনো ভনিতা ছাড়াই শিহাব ভাই জানিয়েছে সে রিপা কে পছন্দ করে! আচমকা কনফেশনে অপরাজিতা কী বলবে বুঝে উঠতে পারেনি। রিপা ওদের ডিপার্টমেন্টে সবচেয়ে কঠিন মেয়ে হিসেবে পরিচিত। কম কথা বলা, কারো সাতেপাঁচে না থাকা রিপাকে, অতি ব্যস্ত শিহাব ভাই কখন পছন্দ করলো! কী বলবে ভেবে না পেয়ে অপরাজিতা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো কিছু সময়। শিহাব ভাই তখন আবার বললো, “রিপাকে না বলে তোমাকে বলছি ভেবে অবাক হয়ো না। রিপাকে আগেই বলেছি। সে আমাকে প্লে-বয় বলে ধমক-ধামক মেরে চলে গেছে।” অপরাজিতার প্রচন্ড হাসি পেয়ে গেলো। হাসি আটকে রাখতে ব্যর্থ হয়ে হাসতে হাসতেই বললো, “রিপা আমার কথা শুনবে বলে মনে হয় না, শিহাব ভাই। ওর মতো কঠিন মেয়ে আমি আর একটাও দেখি নাই।” কাতর স্বরে শিহাব ভাই তখন অনুরোধ করলো ও যেনো তা-ও রিপাকে বলে। ডিপার্টমেন্টের সবাই জানে অপরাজিতা-রিপা বেস্ট ফ্রেন্ড। রিপা নিশ্চয়ই বেস্ট ফ্রেন্ডের কথায় ওকে একটা সুযোগ দিবে!
অপরাজিতা অবাক হয়েছিলো। শিহাব ভাইয়ের চোখের উন্মাদনা চিনতে ভুল হয়নি ওর। ওয়াহিদের চোখের ভাষায় হরহামেশাই এই আকুলতা, উন্মাদনা খেলা করে। তাই শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে। রিপাকে বলবে ও। একবার চেষ্টা করে দেখতে তো দোষ নেই। কিন্তু ততক্ষণে ঝামেলা লেগে গেছে। শেষ বর্ষের শিহাবের সাথে তৃতীয় বর্ষের অপরাজিতাকে আলাদা করে কথা বলতে দেখেছে কয়েকজন। অতি কৌতুহলী হয়ে একে-ওকে জিজ্ঞেস করেছে ঘটনা কী। ঘটনা না জানলেও সবাই ধরে নিয়েছে ব্যাপারটা প্রেমঘটিত! এরপর থেকেই সারা দিনভর ব্যাচমেট, ক্লাসমেটদের অসংখ্য প্রশ্ন। ও যতই বলে এমন কিছু না, ওরা ততই বাঁকা হেসে মজা করে! এতো কিছুর মধ্যে রিপাকে আসল কাহিনি বলার সুযোগ হয়নি। তাই ক্লাস শেষে ওকে সঙ্গে করে ক্রিসেন্ট রোডের বাসায় নিয়ে এসেছে। পুরোটা বুঝিয়ে বলতেই বরাবরের শান্ত রিপা ক্ষেপে গেছে। শিহাব ভাইকে পাগল-ছাগল ডেকে তার গুষ্টি উদ্ধার করেছে।
তবে সমস্যা সমাধান হয়নি। সকলের কৌতুহলী দৃষ্টি এড়িয়ে দুদিন যাবত ও ক্লাস করছে ঠিকই। কিন্তু মন বসছে না কিছুতেই। সব ছেড়েছুড়ে বাসায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। নিজের ঘরে গিয়ে সমস্ত মন খারাপ, দায়িত্ব, অভিমান, বোঝাপড়া, ঝামেলাকে ছুটি দিয়ে আরাম করতে ইচ্ছে করছে। আম্মুর গায়ের ঘ্রানকে এতোটা মিস করবে কখনও কী ভেবেছিলো ও?
এই এতোসব ইচ্ছের ভীড়ে ওয়াহিদের স্টোরি দেখে মন খারাপের ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে।
————————————————————————————-
চলবে