#বিয়েকথন
শেখ জারা তাহমিদ
পঞ্চম পর্ব
মিড শেষ হয়েছে গতকাল। বরাবরই ভালো পরীক্ষা দেয়া অপরাজিতার এবারের পরীক্ষাগুলো আপ টু দ্যা মার্ক হয়নি। লিখেছে সবই। তবুও মনে হচ্ছে আরও ভালো লেখা যেতো। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে চাইলেও সেটাকে থামিয়ে রাখে অপরাজিতা। নষ্ট করার মতো সময় নেই। হল থেকে চলে যাচ্ছে ও। আজকেই। অনেক খুঁজে মনের মতো বাসা পেয়েছে। বাসাটা গ্রীন লাইফ হসপিটালের পেছনে। ক্রিসেন্ট রোডে। পাঁচতলা বিল্ডিয়ের চারতলায় দুই রুমের ছোট্ট বাসা। এক রুমে মেডিকেলে পড়া এক মেয়ে থাকে। আরেকটা রুম খালি হয়েছে চার-পাঁচদিন আগে। ফেইসবুকে টু-লেট গ্রুপ থেকে বাসাটার খোঁজ পেয়েছে অপরাজিতা। ভার্সিটি থেকে কাছে হবে বলেই উৎসাহ দেখিয়েছে। পরীক্ষার মাঝেই সময় করে দেখতে গিয়েছে। পছন্দ হয়েছে ভীষণ। একমাসের এডভান্স দিয়ে এসেছে সেদিনই। এন্ড টুডে ইজ মুভ ইন ডে!
অপরাজিতা ভেবেছিলো নেওয়ার কিছু নেই ওর। কিন্তু পরে দেখা গেলো ওর রুমে ফ্যান নেই। ফ্যান কিনতে হবে। লাইট আছে। কোনো খাট নেই। ফ্লোরিং করতে হলেও তোশক লাগবে! ম্যাট্রেস লাগবে! চাদর লাগবে! বালিশ লাগবে! খাওয়ার জন্য প্লেট-গ্লাস লাগবে! রান্নাও নিজেরটা নিজের করতে হবে! সো, হাঁড়ি-পাতিলও লাগবে! আল্টিমেটলি একটা সংসার শুরু করতে যা যা লাগে তার সিকিভাগ হলেও লাগছে অপরাজিতার। সেইসব কিনতেই বেরিয়েছে ও রিপাকে নিয়ে। একাই যাচ্ছিলো। রিপা সঙ্গে এসেছে জোর করে। বলেছে, “তোর পছন্দ করতে সুবিধে হবে। টু ইজ বেটার দ্যান ওয়ান, রিমেম্বার?” রিপার কাছে অপরাজিতার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। বাসা ছেড়ে আসা, বিয়ে, ওয়াহিদ সবটাই রিপাকে বলেছে ও। রিপা রিয়েকশন হিসেবে শুধু বলেছে, “তোর জামাইয়ের ছোট ভাই নিশ্চয়ই আমাদের সিনিয়র হবে। খোঁজ নিস তো সিঙ্গেল কি না!” ব্যাস। এটুকুই। ওদের বাবা-মেয়ের দ্বন্দ্ব, ওয়াহিদ-অপরাজিতার সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে কিছু বলেনি। প্রশ্ন করেনি। কোনো সাজেশন দেয়নি। শুধু আগের চেয়ে বেশি খেয়াল রেখেছে অপরাজিতার। এই এতো এতো মায়া কোথায় পেলো মেয়েটা?
কেনাকাটা করে ক্লান্ত অপরাজিতা, রিপাকে নিয়েই ওর নতুন বাসায় গেলো দুপুরের দিকে। তোশকের দোকানের এক ছেলে ওদের সঙ্গে এলো তোশক নিয়ে। চারতলা অব্দি দিয়ে গেলো। তারপর বাকিটা সেট করলো ওরা দুজনে মিলে। নতুন রুমমেট মুনিরাও হাত লাগালো। ফুডপান্ডায় অর্ডার দিয়ে খাবার আনিয়ে নিলো। খেতে খেতে আড্ডায় নিজেরা ভালোমতো পরিচিত হলো। সন্ধ্যের পরে ফ্যান লাগানোর লোক এলো। সেট করে দিয়ে যাওয়ার পর, রিপা বেরিয়ে গেলো। হলে ফিরবে। বেরিয়ে গেলো মুনিরাও। ওর টিউশন আছে। বাসায় একা রয়ে গেলো অপরাজিতা। বাসার একমাত্র বারান্দায় গিয়ে টুলে বসলো। গ্রিল বেয়ে উঠা মানি-প্ল্যান্টের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেললো একসময়। মানি-প্ল্যান্টটা যেমন গ্রিল অবলম্বন করে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়েছে, তেমনি অপরাজিতাও বড় হয়েছে বাবা-আম্মুর অবলম্বনে। অথচ সেই বাবা-আম্মুকে ছাড়া ওর কতকিছু করতে হচ্ছে। অভিমান এত তীব্র হয় কেনো?
***
পরদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙে অপরাজিতার। চারপাশে এতো হসপিটাল বলেই বোধহয় ভোর হতেই মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। সিএনজি, রিকশার টুংটাং শব্দ শুনতে খারাপ লাগে না। টের পায় খিদে পেয়েছে। গতরাতে বারান্দা থেকে রুমে ফিরে দরজা আটকে শুয়ে পরেছিলো ও। খেতে ইচ্ছে করেনি। ওয়াহিদ ফোন করেছিলো সেটাও ধরেনি। মুনিরা যখন লক খুলে বাসায় ঢুকলো তখনও উঠেনি। একসময় চোখে ঘুম নেমে এসেছিলো। সেই ঘুম এতখনে ভাঙলো। বাইরে থেকে আসা হালকা আলোয় রুমটাকে দেখে ও। বাসায় ফেলে আসা নিজের রুমের কথা মনে পরে। আচ্ছা কখনো কি ওই রুমে আগের মতো ফেরা হবে? বিয়ে যখন হয়ে গেছে, একসময় ওয়াহিদের কাছে চলে যেতেই হবে। ওয়াহিদের রুমটা কি ওর নিজের হবে? সেটায় ওর একার দখলদারিত্ব কী কখনও হবে? নাহ! মুড অফ হয়ে যাচ্ছে। হাবিজাবি ভেবে সকালটা বিগড়ে দেয়ার কোনো মানে নেই। তারচেয়ে বরং ওয়াহিদকে একটা ফোন দেয়া যাক। এই ভোর ছয়টায় ফোন পেয়ে লোকটা নিশ্চয়ই খুব অবাক হবে। তাও আবার অপরাজিতার দেয়া প্রথম ফোন!
দু’বার ফোন দিলো অপরাজিতা। ওয়াহিদ রিসিভ না করায় মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেলো। লোকটা তো খুব বলেছিলো সে ভোরে উঠে! হাঁটতে বেড়োয়! আজকেই কী হাঁটতে না বেরিয়ে আরাম করে ঘুমাচ্ছে? নাকি ফোন রেখে বের হলো? কোনটা? এলোমেলো ভাবনা বেশিদূর যাবার আগেই ওয়াহিদ ফোন দিয়ে ফেললো। একটা ছোট্ট মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে পরলো অপরাজিতার ঠোঁট জুড়ে। আজকাল ওয়াহিদ ফোন দিলেই এই হাসিটা খেলে বেড়ায় ওর চোখেমুখে। সেটা কী মেয়েটা বুঝতে পারে? পারে। পারে বলেই অবাক হয়। মাত্র সতেরো দিনের পরিচয়ে কাউকে ভালো লাগাটা কী যুক্তিসঙ্গত?
অপরাজিতা সময় নিয়ে রিসিভ করলো। সঙ্গে সঙ্গে শোনা গেলো ওয়াহিদের উদ্বিগ্ন গলা, “অপরাজিতা, সব ঠিক আছে? আপনি ঠিক আছেন? রাতে ফোন ধরেননি। এখন এতো ভোরে ফোন দিলেন। আর ইউ অলরাইট?” এইযে এতো অস্থিরতা ওয়াহিদের কন্ঠে, সেটা শুধুমাত্র ওর জন্য। জানে অপরাজিতা। জানে বলেই চোখ ভিজে আসে ওর। হুট করে প্রশ্ন করে ফেলে, “আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন ওয়াহিদ?” ওপাশের নীরবতা ভেঙে কয়েক সেকেন্ডের মাঝে উত্তর দেয় ওয়াহিদ, “খুব ভালোবাসি অপরাজিতা।”
***
অপরাজিতা ফোন কেটে দিয়েছে। মেয়েটা কি কাদঁছে? শিট! রাগ লাগে ওয়াহিদের। এক্ষুণি ভালোবাসি বলার কী দরকার ছিলো! সময় তো চলে যাচ্ছিলো না। রয়েসয়ে জানাবে ভেবেছিলো। কিন্তু অপরাজিতা এতটা আবেগ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, অন্যকিছু বলতে ইচ্ছে করেনি। ইনফ্যাক্ট, ও অন্যকিছু বলতে চায়নি!
আচ্ছা, অপরাজিতাকে এতটা ভালো কখন বাসলো ও? যখন আব্বু অপরাজিতার ছবি দেখালো, তখন? নাকি যখন অপরাজিতাদের বাসায় গেলো তখন? নাকি যখন তিন কবুল পড়ে মেয়েটা চিরতরে ওর হয়ে গেলো তখন? নাকি সেদিন, যখন বটতলার ওপাশে বসে এদিক-সেদিক তাকিয়ে অপরাজিতা ওকে খুজঁছিলো তখন? সেদিনের কথা মনে হতেই মুচকি হাসে ওয়াহিদ। অপরাজিতা ওকে চেনে না সেটায় কোনো সন্দেহ ছিলো না। তাও শিওর হতে আগে বটতলায় গিয়েছিলো ও। ম্যাডাম তখন ব্যস্তভঙ্গিতে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলো! অথচ ও পাশেই ছিলো! অপরাজিতার দুশ্চিন্তা কাটাতেই, পরে ঘুরে অপরাজেয় বাংলার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। টেক্সট পাঠিয়েছে। এই কাহিনি অবশ্যই অপরাজিতাকে কখনো বলা যাবে না। দেখা গেলো লজ্জায় বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেলো! সেদিন একের পর এক যে শক ম্যাডাম ওকে দিয়েছে তাতে এটা খুব কঠিন হবে না! শুধুমাত্র এক রিকশায় উঠতে হতে পারে ভেবে ধানমন্ডি যেতে না করে দিলো! ভাগ্যিস উবার ড্রাইভারকে একটু অপেক্ষা করতে বলেছিলো! নাহয় শুরুর আগেই ডেট শেষ হয়ে যেতো! বউয়ের মতিগতি বোঝা কত কঠিন সেটা ওইদিনই টের পেয়েছে ওয়াহিদ! রেস্টুরেন্টে গিয়ে ও যখন ফোনে কথায় ব্যস্ত ছিলো, ম্যাডাম তখন ওকে দেখছিলো গভীর মনোযোগে! অথচ জিজ্ঞেস করতেই, কী চমৎকার বললো, “সে তো আপনিও করেছেন, স্যার।” যেনো ওয়াহিদ তাকালো বলেই উনি তাকালেন! ভাঙবে তবু মচকাবে না! এইযে খাবার অর্ডারের আগে ইচ্ছে করে মেন্যুকার্ড রেখে দিলো, সেটাও তো ওয়াহিদকে পরীক্ষা করতেই। খেতে গিয়ে অনেকেই সাথের পার্টনারের পছন্দকে ইগনোর করে নিজেই অর্ডার দিয়ে বসে থাকে, ডিসকাস করে অর্ডার দেয়া দূরে থাক। এক্ষেত্রে ওয়াহিদ কী করে সেটাই দেখতে চেয়েছে অপরাজিতা। এই এতোসবের মাঝে ওয়াহিদকে যে ফোন দেয়ার পারমিশন দিলো সেটাই হচ্ছে ম্যাচ পয়েন্ট! এই ভাবনাগুলো ওয়াহিদ আজকে প্রথমবার ভাবছে, সেটা কিন্তু নয়। সেদিনের পর থেকে বারবার ভেবেছে। তবুও নতুন করে ভাবতে ভালো লাগে। অপরাজিতা রিলেটেড সবকিছু ওর দারুণ লাগে।
গতরাতে অপরাজিতাকে ফোনে না পেয়ে চিন্তা হচ্ছিলো। প্রথমবারের মতো ভাবছিলো ওর বউ কেনো ওর সাথে নেই! তারপরই মনে পরেছে বউকে এখনও ‘তুমি’ বলার পারমিশনই ওর হয়নি! আবার একসাথে থাকা! সে যা-ই হোক, মন এতো সমীকরণ বোঝে না। ফলাফল, গতকাল ওয়াহিদ জেগে ছিলো অনেক রাত অব্দি। যদি অপরাজিতা ফোন দেয়। অপেক্ষা করে করে একসময় ঘুমিয়েছে। তবুও ভোরেই ঘুম ভেঙেছে রোজকার নিয়মে। সকালে হাঁটতে যাওয়ার অভ্যেসটা ও রপ্ত করেছে ফিনল্যান্ড থাকতে। দেশে ফেরার তিনবছর হয়ে হলেও অভ্যেস ত্যাগ করেনি। আজও বেরোনোর জন্য তৈরি হচ্ছিলো। ওয়াশরুমে ছিলো যখন অপরাজিতা কল করেছে। বেরিয়ে এসে ‘টু মিসড কল’ দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। অপরাজিতা আগে কখনই ফোন দেয়নি। আজকে দিলো, পরপর দুবার! সেটাও এই ভোরে! রীতিমতো প্যানিকড হয়ে গেছিলো ওয়াহিদ। আর এতেই সত্যিটা বলে ফেলেছে।
আরেকবার কী ফোন দিবে? নাকি অপেক্ষা করবে? অপরাজিতার ফোনের অপেক্ষা?
ওয়াহিদের অপেক্ষা ফুরালো দশটার দিকে। ও তখন ইউনিভার্সিটিতে। ক্লাসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মেসেজে প্রশ্ন ছুড়ে পাঠিয়েছে অপরাজিতা, “দেখা করতে পারবেন? দুপুরে? ২টায়? সেদিনের রেস্টুরেন্টে?” মেসেজের নোটিফিকেশন দেখে ওয়াহিদ যতটা খুশি হয়েছিলো, মেসেজ পড়ে ততটাই চিন্তায় পরে গেলো। ওর শেষ ক্লাসটা দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে দুইটা পর্যন্ত। এরপর পুরোটাই অফিস টাইম। ছুটি চাইলে পাওয়া যাবে। খুব তাড়াহুরো করলেও আড়াইটায় যে ও পৌঁছাতে পারবে সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনটা হচ্ছে ওর জন্য সেইফ টাইম। কিন্তু ততক্ষণ অপরাজিতা লাঞ্চ না করে বসে থাকবে, সেটা ওর ভাল্লাগছে না। কিছুক্ষণ ভেবে শেষে টেক্সট পাঠালো, “বিকেলে দেখা করি? চারটায়? তখন হলে আমি টাইমলি আসতে পারবো।” খানিকবাদে রিপ্লাই আসে অপরাজিতার, “ওকে। সমস্যা নেই। টেইক ইউর টাইম।”
***
অপরাজিতা সুন্দর করে রেডি হলো। লাল-সবুজের মিশেলে সুতির কামিজ পরলো। খোলা চুলে, পিচ রেড ম্যাট লিপস্টিকে ওকে চমৎকার দেখালো। ব্লাশঅন দেওয়া ছাড়াও ওর গাল লাল হয়ে রইল। ভোরবেলায় ওয়াহিদের করা সহজ স্বীকারোক্তিই ক্ষণে ক্ষণে রাঙিয়ে তুলছে ওকে। ও বোধহয় প্রেমে পরে যাচ্ছে। এই যে প্রেমে পরে যাচ্ছে এই নিয়ে ওর মনে সারাক্ষণ একের পর এক হিসেবে বয়ে চলছে। অথচ যাকে ঘিরে এতো হিসেব-নিকেশ সে কিচ্ছু জানতে পারছে না। তাই ওয়াহিদকে ডেকেছে অপরাজিতা। সে-ও জানুক অপরাজিতার অভিমানের গল্প! অপরাজিতার মন খারাপের সঙ্গী হবে কি না সেটাও ভাবুক!
ওয়াহিদ এলো চারটের একটু পরে। অপরাজিতা অপেক্ষা করছিলো রেস্টুরেন্টের বাইরে। আজকে রেস্টুরেন্টে ভীড় বেশি। কথা বলার জন্য ঠিক পারফেক্ট মনে হয়নি ওর। তাই বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওয়াহিদ আসতেই জানালো সে কথা। চটজলদি দুজনে মিলে ঠিক করলো সাতমসজিদ রোডের একটা ক্যাফে তে বসবে। কীভাবে যাবে ভেবে ওয়াহিদ প্রশ্ন করলো সিএনজি ডাকবে কি না। অপরাজিতা হাসলো। তারপর নিজেই রিকশা ডেকে একপাশে উঠে বসলো। এমন গ্রীন সিগন্যাল পাবার পর ওয়াহিদ দেরি করলো না। পাছে ম্যাডাম মন বদলে ফেলে! রিকশায় পুরোটা সময় ওরা মৌন রইল। ওয়াহিদ বারকয়েক অপরাজিতার দিকে তাকালো সরাসরি। বিকেলের কমলা রঙের আলোয় অপরাজিতাকে দেখে ওর মুগ্ধতা সীমা ছাড়ালো। অপরাজিতা কী পিছিয়ে রইল? না। সে-ও তাকালো। আড়চোখে। ফেডেড পার্পল শার্টে ওয়াহিদকে কতোটা চমৎকার লাগছে তাই দেখলো মুগ্ধ হয়ে।
ক্যাফে তে এসে, ওরা বসলো জানালা লাগোয়া এক টেবিলে। চকলেট কোল্ড কফি অর্ডার দিলো দুজনেই। ওয়েটার চলে যেতেই ওয়াহিদ সোজাসাপ্টা বললো, “আপনাকে সুন্দর লাগছে, অপরাজিতা।” স্মিত হাসে অপরাজিতা। ওয়াহিদকে দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে, এই কথাটা বলতে জড়তায় ঠোঁট চেপে ধরে। ওয়াহিদ হয়তো বুঝলো সেটা। মুচকি হেসে বলে, “কমপ্লিমেন্টস দেয়ার জন্য সারাজীবন পরেই আছে। লজ্জা পেতে হবে না।”
ওয়াহিদের এই এক কথায় যেনো অপরাজিতা বাস্তবে ফিরে আসে। সারাজীবন? ওদের কী সারাজীবন একসাথে থাকা হবে? অপরাজিতার লাইফটা এখন কতোটা এলোমেলো হয়ে আছে সেটা তো ওয়াহিদ জানে না। এই এলেমেলো লাইফে ওয়াহিদ কী জড়াতে চাইবে? যতই ওয়াহিদ ওর বাড়ি ছাড়ার সাথে রিলেটেড হোক। ওয়াহিদের ফ্যামিলি তারাও কী এটা ভালোভাবে নেবে? ওরাও তো নতুন বউকে ঘরে তোলার অপেক্ষায় আছে। সেই বউ বাড়ি ছেড়েছে অভিমান করে এটায় তাদের খুশি হবার তো কোনো কারণ নেই। কফির কাপ রেখে ওয়েটারের বলা ‘প্লিজ, এনজয়’ এই শব্দে ওর চিন্তারা ছুটে পালায়। জহুরি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকা ওয়াহিদকে দেখে। এতো মায়া কেনো ওই মানুষটার সবকিছুতে? অস্ফুটস্বরে বলে উঠে, “ওয়াহিদ, আমি বাসা ছেড়ে চলে এসেছি। বিয়ে যেদিন হলো সেদিনই।” কয়েক মুহূর্ত শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে ওয়াহিদ। অতঃপর ওর কপালে পরে থাকা চুলগুলো আলগোছে সরিয়ে দিয়ে বলে, “জানি, অপরা!”
চলবে।