বিধবা পর্ব-১৬

0
2217

♣ বিধবা ♠
{ The insane love }
Writer : Nabila Ishq
Part : 16
ইম্রেত কোনো ভাবে জামা ছেড়ে ওযু করে নামাজে দাড়ালো। চোখের পানি ঝড়ছে ইম্রেতের। চোখে ইছমিকে হাড়িয়ে ফেলার ভয়।
নামাজ আদায় করছে ইম্রেত। ইছমি জীবনে আসার আগে আল্লাহর নাম হয়তো নেয় নি কখনো। আল্লাহর দেওয়া রাস্তায় চলে নি সে।
কিছু চায় নি কখনো নিজের জন্য। আজ চাচ্ছে তার সুইটির জন্য।
জায়নামাজে বসে দু’হাত মেলে দিলো ইম্রেত। চোখের এক ফোটা জল পরলো আল্লাহর দরবারে মেলে দেওয়া হাতের মাঝে। হাউমাউ করে কাদতে পারছে না ইম্রেত ছেলে বলে কথা। কিন্তু তার থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে।
ইম্রেত তার মন থেকে আল্লাহর কাছে তার আবেদন পাঠাচ্ছে নামাজের তাগিদে।
” যদি আমার সুইটি কে আমার থেকে নিতেই হয় তাহলে কেনো পাঠালে। রেখে দিতে তোমার কাছে। এখন যেহেতু পাঠিয়েছো তো আমি আর ছারবো না ওকে। আমার থেকে নিয়ো না আমার সুইটি কে। আমি যে আর সজ্জ করতে পারছিনা এই যন্ত্রনা। আমি পাপ করেছি জীবনে অনেক তার সাস্থি তুমি আমায় এভাবে দিয়ো না। ফিরিয়ে দাও আমার সুইটি কে। ওয়াদা করছি তোমার দেখানো রাস্তায় চলবো।
তোমার বান্দা আমরা তুমি চাইলে পারবে আমার সুইটি কে ফিরিয়ে দিতে।
নানান আর্তনাদ করছে ইম্রেত। চোখ গুলি লাল হয়ে আছে। নামাজ আদায় করে বেড়িয়ে পরলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। নিস্তেজ হয়ে আছে ইম্রেত। ধিরু পায়ে পৌছালো হাসপাতালে। মায়ের পায়ের কাছে ধপাশ করে বসে পরলো। মায়ের কোলে মাথা রেখে নিসশব্দে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। ভেবেছিলো প্রিথীবির সব সুখ দেবে তার ইছমিকে। আর আজ সে তার ইছমিকে প্রটেক্ট করতে পারলো না। আজকে যদি নিজে গিয়ে নিয়ে আসতো তাহলে এমন কিছুই হতো না। সব দোশ সে নিজেকে দিচ্ছে।
মায়ের কোলের শাড়িটা ভিজে যাচ্ছে তার ছেলের চোখের পানি দিয়ে।
অপারেশন থেয়াটারে…
লান্ডান থেকে ভিডিও কলে সব ধরনের চেষ্টা করছে ডাক্তার ইয়াজ জিবস। ইয়াজ জিবস লান্ডানে নাম করা একজন ডাক্তার। কোনো ত্রুটি রাখে নি ইম্রেত তার সুইটির চিকিৎসার ব্যবস্থায়।
ডাক্তাররা দিশেহারা হয়ে পড়েছে একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। ৯ _১০ নাম করা ডাক্তার লেগে পড়ে লেগেছে ইছমির চিকিৎসার জন্য। নার্সদের অভাব নেই। তিন তালা ফ্লাট থেকে লাফ দাওয়া ব্যক্তি যে বাচে না। সেখানে তারা নিজেদের জান লাগিয়ে দিচ্ছে অপারেশনে।
বেডে সাদা কাপড়ে জড়িয়ে রয়েছে ইছমি। রক্ত পুছছে নার্স। ভিডিও কলে ডাক্তার ইয়াজ জিবস অন্য ডাক্তারকে বুঝাচ্ছে। মুখে ঘামের ছিটে পড়েছে ডাক্তারদের। কোনো রেসপন্স করছে না ইছমি। শাস নিচ্ছে না পর্লস চলছে না। চোখ বুঝে পড়ে আছে রিকভার বেডে।
ইছমির বুকে হিট দিয়ে পুশ করা হচ্ছে। ৩ বারে যদি চোখ না মেলে তাহলে আর বাচানো যাবে না ইছমিকে। লাষ্ট চেষ্টা হচ্ছে হিটার পুশ দেওয়া। ডাক্তার জিবস মিনিট সময় নিয়ে পুশ করতে বলল। পাশের অক্সিজেন মাক্স খুলে ফেলতে বলল। অক্সিজেন মাক্স খুলে ৩য় বার পুশ করতেই মনিটরে গ্রিন আন্ডারগ্রাউন্ড চলছে। মানে সাশ চলে এসেছে কিন্তু চোখ খুলে নি এখনো। ডাক্তারদের মনে সাহস এসেছে। তাড়াহুড়ো করে অক্সিজেন মাক্স লাগানো হলো। মাথার পেছনের সাইডে মেডিছিন লাগাচ্ছে নার্স।
ইছমির পার্লস চলা শুরু করেছে ঘনঘন সাশ নিচ্ছে সে। ডক্টর ইয়াজ জিবস হাসি_মাখা মুখ নিয়ে বলল ” ইয়েস উই ডিড ইট “।
অপারেশন থেয়াটারের লাল বাটান বন্ধ হতেই ইম্রেত দাঁড়িয়ে যায়। চোখে ভয় আর জল। করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ডাক্তারের দিকে।
ডাক্তার ইম্রেতের কাধে হাত রেখে বলল….
” আল্লাহতালা ছিলেন তাই হয়তো এই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছি।
ইম্রেত ঠাই ভাবে তাকিয়ে আছে ডাক্তার এর দিক। ডাক্তার মুচকি হেসে বলল…
” সি ইজ আউট ওফ ডেঞ্জার নাও।
ইম্রেত ডাক্তারকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে। পাগলের মতো চিল্লিয়ে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। পাশে মা কে জড়িয়ে বলে উঠলো….
” মা আমার সুইটি ঠিক আছে।
ও আমার কাছে ফিরে এসেছে।
মা তার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে কেদে দিলো। চোখে এক ফোঁটা জল নিয়ে মুচকি হেসে ফেলল ইম্রেত। অপারেশন থেয়াটারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে যাওয়ার পারমিশন নেই। তাও তার সুইটি কে একবার দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠেছে।
ভালোবাসাটা হয় তো এমনি। একজনের কষ্টে অন্যজন কাদে। একটু সাইডে দাড়াতেই অপারেশন থেয়াটার থেকে বেডে করে ইছমিকে বের করছে। একপলকে তাকিয়ে আছে ইম্রেত। চোখ বন্ধ করে সাদা কাপড়ে মুরে শুয়ে আছে তার ইছমি। ইম্রেত হালকা হেসে ইছমির হাতটা হালকা করে ধরলো। ইম্রেতের স্পর্শে হালকা নড়ে উঠলো ইছমি। দু’জন নার্স মিলে ইছমিকে অন্য কেবিনে শিফট করলো।
৩_৪ ঘন্টার মদ্ধে চোখ খুলবে ইছমি। ইম্রেত ডাক্তার থেকে পারমিশন নিয়ে ঢুকলো। বুকটায় মোচর দিচ্ছে ভাবতেই আজ তার ইছমি তার থেকে অনেকদুরে চলে যেতে পারতো। ধিরু পায়ে ইছমির পাশে বসলো। নিজের মুখে মুচকি হেসে কপালে একটা চুমু খেলো। হালকা ভাবে দু গাল ধরে বলল….
” আমি জানতাম আমার সুইটি আমাকে ছাড়া কোথাও যাবে না।
অনেক্ষন অভাবেই তাকিয়ে ছিলো ইছমির দিক। জড়ে নিশাস নিলো ইম্রেত। কেবিন থেকে বেড়িয়ে দেখলো সবাই বসে ঝিমাচ্ছে কারন এখন রাত ২’টা বাঝতে চলল। ইম্রেত সবার উদ্দেশ্যে বলল…
” কিমরান বাদে সবাই বাসায় চলে যাও। ইছমির পাশে আমি আছি। আর আরেকটা কথা ইছমি একটু সুস্থ হলেই আমি এনগেজমেন্ট আর বিয়েটা একদিনেই সেরে ফেলতে চাই। তো বিয়েটা না হওয়া পর্যন্ত ইছমি আমার কাছে আমার সাথেই থাকবে।
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সবাই বুঝেছে ইছমিকে নিয়ে ইম্রেত ভয়ে আছে। সবাইকে ঠেলে ঠুলে বাসায় পাঠিয়েছে কিমরান। আলাদা রেষ্ট কেবিনে কিমরান বসে আছে ইছমির কেবিনের সাথেই। আর ইম্রেত ইছমির পাশেই বসে আছে।
রাত ৪ টা বেজে ৪৫…
ইম্রেতে পাশের চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুঝে আছে। ইছমি কাপছে সার শরীর বেয়ে ঘাম ছুটছে।
চোখ বুঝা অবস্তাই ইছমি চিল্লাতে শুরু করলো…
” প্লিজ প্লিজ ভাইয়া আমায় ছেড়ে দেন। প্লিজ আমার এতো বড় ক্ষতি করেন না। প্লি…জ
ইম্রেত….. ইম্রেত [ বলছে আর কাদছে ]
ইম্রেত ভয়ে রীতিমত কেপে উঠেছে ইছমির এমন ভয়াবহ আর্তনাদ শুনে। পাগলের মতো ইছমির গাল ধরে বলছে….
” এইতো সুইটি তুমি আমার কাছে। কিচ্ছু হয় নি তোমার। আমি আছি তো তোমার পাশে।
ধিরে ধিরে ইছমি ঠান্ডা হলো। চোখ গুলি কাপছে ধিরু ভাবে চোখ খুললো ইছমি। পাশে ইম্রেতের দিক তাকিয়ে স্তব্দ হয়ে গেলো। একমিনিট বিনা আওয়াজে তাকিয়ে ছিলো ইম্রেতের দিক।
হঠাত কেদে দিলো ইছমি ইম্রেত হালকা করে জড়িয়ে বলল….
” কি হয়েছে সুইটি আমি এইতো তোমার পাশে।
ইছমি মুখের মাক্স খুলে ফেলল। পুড় মাথা বেন্ডেজ করা। সব আর্তনাদ তার মাথার উপর গেছে। ইছমি উঠতে নিলে ইম্রেত বালিশ দিয়ে আধশোয়া ভাবে শুইয়ে দেয়। ইছমি কাপা কাপা হাতে ইম্রেতকে জড়িয়ে ধরে। ইম্রেত তার চোখ পুছে নিজেও হালকা ভাবে ধরে। ইছমি কাদতে কাদতে কাপা গলায় বলল….
” আমি ভেবেছিলাম আর আপনায় দেখতে পাবো না।
ইম্রেত ইছমিকে ছেড়ে চোখের পানি পুছে বলল…
” তুমি তো বলেছো কেউ কাউকে নিজের থেকে বেশি চাইলে তাদের মিলাতে পৃথীবি লেগে যায়। আমি তো আমার, তোমার নিজের থেকেও বেশি চাই তোমায়।
ইছমির দু’গালে হাত রেখে বলল। ওরা তোমাকে কি উপড় থেকে ফেলে দিয়েছিলো।
ইম্রেত কল্পনাও করে নি যে ইছমি এমন কিছু বললবে।
ইছমি কাদতে কাদতে বলল….
” ও “””” ওরা আম…. আমায় রে…রে…রেপ করতে চেয়েছিলো। [ বলেই ফুপিয়ে কেদে উঠে ]
নিজেকে… বা..বাচানোর কোনো রাস্তা ছিলো না। তা… তাই লাফ দিয়েছিলাম 😭
ইছমি ধিরে ধিরে সব বলে দেয় কি হয়েছিলো আর কি হয়েছীলো ওর সাথে।
ইম্রেতের চোখ দিয়ে আগুন বেরোচ্ছে। নিজের হাত মুঠ করে ইছমিকে জড় করে বেডে শুইয়ে কিমরানকে ডেকে আনলো…
” তোর ভাবিকে দেখে রাখ আমি একটু আসছি।
পিছনে ডাকছে কিমরান বাট ইম্রেত কোনো সারা নিয়ে দিয়ে গাড়ি বিয়ে বেড়িয়ে পরলো। চোখে আগুন বেরোচ্ছে ইম্রেতের। জলদি পৌছালো পুলিশ স্টেশন…..
চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে