বাসনা বিসর্জন পর্ব-৯+১০

0
653

#বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৯

এক বছর কেটে গেছে, কমিশনার সাহেব নিজে’র বাবা সহ ও বাড়ির কারোর সাথেই যোগাযোগ রাখে না। তবে তিনি যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন মিমের সাথে।
ওর ঠিকানা বের করে বাড়িতে দেখা করতে গিয়ে ছিল। কিন্তু, সেখানে গিয়ে জানা যায়। মিম ওই বাড়ি টি বছর খানেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছে।
তার বর্তমান ঠিকানা কেউ জানে না। যা কিনা হতাশা গ্রস্ত করে তুলে ছিল ভদ্রলোক কে। আদিত্য সাহেব ছেলের সাথে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন তবে সেই প্রচেষ্টার কোনো ফল হলো না। তিনি ব্যর্থ হয়েছে।
জাহানারা বেগম, সে ও নিজের মতোন করে চেষ্টা করেছিলেন।
অবশ্য, তাতে কোনো লাভ হলো না। ওদিকে,মিম মহা ব্যস্ত। দিন রাত চব্বিশঘণ্টা কাজ কাজ করে মাথা খারাপ করে ফেলেছে মেয়ে টা……।
তার যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার যো নেই। সামনে’ই ফ্যাশন শো,
তাই দিন রাত এক করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে মেয়ে টা। নিজের ড্রেস টা ও সে নিজেই ডিজাইন করেছে।
এই প্রথম দেশের মাটিতে ‘কালচারাল ফ্যাশন উইক’ এর আয়োজন হ’য়েছে বলে কথা। দেখতে দেখতে মিমের সেই বহুল কাঙ্খিত দিনটি এসে গেলো। নিজের পুরো টিম নিয়ে তৈরি হ’য়ে আছে মেয়ে টা।
একে একে বাংলাদেশের সকল সনামধন্য ব্রান্ডে’র
প্রদর্শনী শেষ হলো।
এবার, মাশফি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির পালা। একে একে তাদের সকল মডেল র‍্যম্পে হাঁটলো। এই বার তাদের শো-স্টপারের পালা। ধীরে ধীরে মিম মঞ্চে উঠে এলো
তার ওপর থেকে চোখ সরানো যাচ্ছে না।
র‍্যম্পে হাঁটার সময় হঠাৎ তার একজনের সাথে চোখা চোখি হয়ে গেলো। মিম তাকে দেখে’ই মনেমনে ব’লে উঠলো,
– “আশ্চর্য! এখানে কি করছে লোকটা?” ভদ্রলোক তাকে দেখে মুহুর্তেই চিনে ফেললেন। মাশীদ বাবাকে বললো,
– “পাপা তুমি কি জানো?
এই হলো আমার বেস্টফ্রেন্ড মাশফির মাম্মা?” তিনি ছেলের কথা ভালো করে শুনতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– “কি বললে? কার মাম্মা?” ও বললো,
– “মাশফি মাশফি, মাশফির সুইট মাম্মা।”
তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললেন।
– “স’রি বাবা,
বাড়িতে ফিরে গিয়ে না হয় শুনবো? লাউড মিউজিক জন্য এখন কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছি না।” মাশীদ খুব মুগ্ধ হয়ে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে বাবার দিকে তাকিয়ে হাসি-হাসি মুখ করে বললো,
– “সুইট সুইট সুইট, সো সুইট মাম্মা।” র‍্যম্পে হাঁটা শেষ করে ব্যাক স্টেজে চলে এলো মাশফি তখন ছুটে এসে তার মা কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “ইউ আর লুকিং সো, সো বিউটিফুল ম-মা।” মিম ছেলের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,
– “একবার ম-মি একবার ম-মা আমাকে কি মা বলে ডাকা যায় না?” ও হাসতে হাসতে বললো,
– “তুমি তো আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বেশি বেশি আদর করছ না।” মিম ছেলেকে তুলে নিতে যেতেই পাশ থেকে নিবেদিতা আমতা আমতা করে বললো।
– “তুমি এই সাজে ভাইকে কোলে তুলে নিলে পরে গিয়ে ব্যাথা পাবে, সোনা মা।” রুবিনা তখন এসে মিম কে বললো,
– “আমি বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছি। ফ্যাশন শো’র এন্ডিং পার্টিতে তোকে এখানে থাকতেই হবে তাই না?”
– “কচুর পার্টি, উইনার্স এনাউন্সমেন্ট করে দেবে তা না। আমি হার্ট অ্যাটাক করে মরে টরে যাবো বোধহয় শরীর মন কিছুই ভালো লাগছে না।” রুবিনা হাসতে হাসতে মিমে’র মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
– “আর কখনো ম’রার কথা মুখে আনলে তোমার কানের নিচে দেবো একটা।”
– “সে দিবে ভালো কথা, এখন তোমাদের লেট হচ্ছে না?” ওর কথা শুনে হেসে ফেললো সকলে। রুবিনা বললো,
– “আসলেই আমাদের এতো দেরি করা একদম উচিত হচ্ছে না।”
ওদের বিদায় জানিয়ে মিম গ্রীন রুমে এসে তৈরি হয়ে পার্টিতে চলে এলো। সকলে তার পরিচিত হওয়ায় স্বত্বেও তার অস্বস্তি কিছুতেই যেন কমছে না।
কিছুটা দূরেই কমিশনার সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন তার কিছুতে’ই এই খু*নে মেয়েটি’র ওপর থেকে নজর সরছে না। তিনি মনেমনে বলে উঠলেন,
– “অদ্ভুত! আমাকে কি ভুলে গিয়েছে মেয়ে টা?” মিম হঠাৎ করেই তাকে দেখে ভীষণ লজ্জা পেলো, বিড় বিড় করে বললো,
– “আশ্চর্য! এভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে কি দেখছে ওই।
লোকটা?
চোখ দিয়ে’ই যেন গিলে ফেলবে? হাবভাব মোটেও সুবিধার লাগছে না।” মিমের অবস্থা দেখে কমিশনার সাহেব বলে উঠলো,
– “একাএকা কি বিড়বিড় করছে ওই খু*নে মেয়েটা? আমাকে নিশ্চয়ই চিনতে পরেছে? আবার পালানোর ধান্দা করছে না কি?
কি করতে কি চাচ্ছে মেয়ে টা?” মিম কে চুপচাপ দেখে ডেইজি এগিয়ে এসে তাকে জিজ্ঞেস করলো।
– “কি গো তোমার কি অবস্থা?” সে বললো,
– “আর বলো না বোন, প্রাণ যায় যায় অবস্থা।”

হঠাৎ কমিশনার সাহেব এগিয়ে এসে মিমকে তখন সরল গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
– “ক্যান ইউ ডান্স উইথ মি?” সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করা হলো বিজয়ীদের নাম টা। মাশফি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি এবং ডেইজি ক্রিয়েশন যৌথভাবে বিজয়ী হ’য়েছে। যেটা কি না কেউ কল্পনা করতে পারছেনা। তাদের মাথায় বিজয়ী মুকুট তুলে দেওয়া হলো।
সবাই শুভেচ্ছা জানালো তাদের দু’জনকে কমিশনার মিমকে আলাদা ভাবে শুভেচ্ছা জানালো। মিম লজ্জা
-য় ধন্যবাদ দিতে পারলোনা কমিশনার সাহেবকে।
তিনি কিছুটা মন খারাপ করে ফেললেন ফটোসেশান এর পর প্রেস ব্রিফিং শেষে মিম ফিরে গেলো তার বাড়িতে। সেখানে যেতে না যেতে’ই বাড়ির বাচ্চারা মিলে তাকে ঘিরে নাচতে শুরু করলো।
মিম হেসে ফেললো সকলের কাণ্ডকারখানা দেখে। তখন রাত তিন টা,
কমিশনার সাহেব ড্রিংকের গ্লাস হাতে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। তিনি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন।
– “সকলেই কেন আমায় প্রয়োজনে প্রিয়জন বানাতে আসে?
আমি কি কারোর “প্রিয়জন’ হতে পারি না? মা ছাড়া বোধহ’য় আর কেউ’ই কখনো নিঃস্বার্থ ভাবে ভালো বাসেনি আমাকে।”
মিম মাশফিকে বুকে জড়িয়ে বসে ছিলো। কমিশনার সাহেবকে এড়িয়ে চলার জন্য তার একটু খারাপ লাগছে।
ওনার মলিন মুখ টা মিমের নজর এড়ায়নি। কিন্তু, সে পারেনি নিজের জড়তা কাটিয়ে উঠে তার সাথে ঠিক আগের মতোই মন খুলে কথা বলতে। নিজের চোখেই খুব ছোটো হয়ে গেছে মেয়ে টা। তার ভীষণ খারাপ লাগছে।
সেদিন, বৃহস্পতিবার মাশফির হাফ টাইমের পর স্কুল ছুটি হবে বলে মিম আগেই ছেলেকে নিতে তার স্কুলে পৌঁছে গেছে। কমিশনার সাহেব ও সেখানে হাজির। মিম কে তার ছেলে’র ক্লাস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি ও বেশ কিছু টা অবাক হয়েছে। যদিও….!
তিনি মিমের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মিম হঠাৎ তাকে দেখতে গিয়ে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলো তাকে।
তিনি সালামের উওর দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলেন। মিম আবারও বললো,
– “আসসালামু আলাইকুম।”
এইবার কমিশনার সাহেব এড়িয়ে যেতে পারলেন না তাকে।
তিনি পিছন ঘুরে মুখ তুলে মিমের দিকে বেশ ভালো তাকালেন। খেয়াল করে দেখলেন, মেয়ে টা ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে…….
উনি কিঞ্চিৎ হাসলেন, সানগ্লাস ঠিক করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন,
– “অবশেষে, বুঝি আপনি চিনতে পারলেন আমা কে?” মিম বললো,
– “বুঝতে পারিনি সেদিন হঠাৎ করে দেখা হ’য়ে যাবে
তবে স্যার, আমি ইচ্ছে করে ইগনোর করিনি আপনা- কে।” তিনি রেগে গিয়ে, মিম কে ধমক দিয়ে বললেন।
– “তাহলে ওগুলো সব কি ছিলো?”
মিম বললো,
– “আমি দুঃখিত স্যার, সত্যি বলতে আমার জড়তা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছে।”
– “কিসের জড়তা?
– আমি কি আপনার অপরিচিত কোনো ব্যক্তি?” মিম বুঝতে পারলোনা হঠাৎ কেন কমিশনার তাকে রেগে গিয়ে ধমকাচ্ছে? তবুও সে নিজে’র ভুল টা স্বীকার করে বললো,
– “আমি দুঃখিত।” তিনি বললেন,
– “আমার আপনাকে দেখেই মেজাজ টা খারাপ হ’য়ে যাচ্ছে।” মিম থতমত খেয়ে বললো,
– “কেন?”ইমান জবাব দেওয়ার আগেই মাশফি এসে কমিশনার সাহেব কে জিজ্ঞেস করলো,
– “আঙ্কেল, তুমি বকছ কেন আমার আম্মুকে?”ছেলে ‘র বেস্ট ফ্রেন্ডের মুখে ‘আম্মু’ শুনে ইমানের চক্ষু চড়ক গাছ। মাশীদ বাবাকে শাসন করে বললো,
– “তোমার দেখছি, কথায় কথায় চিৎকার চেঁচামেচি করা স্বভাব হয়ে গেছে?”
এতটুকু ছেলের বকুনি খেয়ে তিনি একদম চুপ, মিম একটু অবাক হলেও মিটিমিটি হেসে বললো।
– “ছেলে অবিকল বাবার’ই স্বভাব চরিত্র পেয়েছে।” ইমান কথা টা শুনে শুকনো ঢোক গিললো, মশীদ বললো,
– “তুমি বকলে কেন ম-মি কে?”
এতটুকু ছেলের শাসন করা দেখে মিমের হাসি থামার যো-নেই অথচ কমিশনার সাহেবে’র চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যেন তিনি চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পরেছে। যদিওবা….!
মিম মাশফি মাশীদ দু’জনকে আদর করে সামলে নিলো। কমিশনার সাহেব পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে বললেন,
– “সামনে এগোনো যাক? কাছে’ই একটা রেস্টুরেন্ট আছে।” মাশীদ তখন বাবাকে রাগ দেখিয়ে বললো,
– “হ্যাঁ তো?” তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
– “স’রি বাবা, আমার ভুল হ’য়ে গেছে।” অতঃপর,
তারা রেস্টুরেন্টে চলে এলো।
কমিশনার সাহেব সকালের পছন্দের খাবার অডার করল ওয়েটারে’র কাছে। মিম তখন মাশীদ মাশফি কে গল্প শোনাচ্ছিলো…..
তিনিও বেশ মনোযোগ দিয়ে মিমের বলা গল্প শুনছে। আধঘন্টা পর, ওয়েটার তাদের অডারকৃত সকল খাবার নিয়ে এলো। মিম খাবার সার্ফ করতে করতে ইমান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “নিন, স্যার৷ আপনি শুরু করুণ। আমি খেয়ে নেবো
বাচ্চাদের সাথে।”
পুরো বিষয় টি কমিশনার সাহেবের কাছে দৃষ্টিকটু বলে মনে হলো, তিনি বললেন,
– ” খেতে হলে, আমি আপনার সাথে খাবো৷ না হলে থাক। কোনো সমস্যা নেই ইট’স ওকে।
মা-বাবা হ’য়েছি বলে সন্তানেরা সারাজীবন আমাদের ‘টেকেন ফর গ্রান্টেট’ হিসেবে ধরে নেবে এটাও ভুল। আমদের ও আকাশচুম্বী শখ না থাকুক কিছু না কিছু নিশ্চয়’ই শখ আহ্লাদের ব্যাপার আছে?” মিম মুচকি হেসে বললো,
– “হ্যাঁ, তা ঠিক। তবে বাবা-মায়েররা তাদের সন্তান কেই সবকিছুর উর্ধ্বে রাখে। আপনি খাবার সামনে নিয়ে বসে থাকবেন না স্যার।
প্লিজ কিছু মুখে দিন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ভালো লাগবে না খেতে।”
– “আমার যা বলার ছিল,
আগেই বলে দিয়েছি। জনেন? কখনো ভাবিনি আমা-
দের আবারও এভাবে দেখা হয়ে যাবে।” মিম হাসি মুখে বললো,
– “হুমম, কমপ্লিটলি আনএক্সপেক্টেড। অবশ্য, কেন যেন মনে হয় আবারও দেখা হয়ে বেশ ভালো হয়েছে।আমার এতটুকু জীবন ভালো মানুষ খুব কম দেখেছি
আর সেই ভালো মানুষ গুলোর মধ্যে আপনার নামও আছে।”
কমিশনার সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন,ছেলে মাশীদকে জিজ্ঞেস করলেন,
– “আব্বু তোমার কি করে পরিচয় হ’য়েছে আন্টির সাথে?” মাশীদ বললো,
– “আমার নতুন স্কুলে ভর্তির সময় আন্টির সাথে পরিচয় হয়েছে।” মিম মুচকি হেসে বললো,
– “ওর ফরম পূরণে কিছুটা অসুবিধে হচ্ছিলো সেটাই দেখি দিয়েছিলাম ওর সাথে থাকা ভদ্রলোককে।” তিনি মুচকি হেসে বললেন,
– “ওহ, ধন্যবাদ।” মিম বললো
– “কোনো ব্যাপার না, ইট’স ওকে।” মাশীদ তখন মিমকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “আর খাবোনা।”মিম তাকে আদুরে গলায় বললো।
– “আরে না খেলে তোমার গায়ে বাবার মতো সুপার ম্যানের শক্তি কি করে হবে?
সবসময় পেট ভরে খেতে হবে বাবা না খেলে শরীর খারাপ হবে তোমার। তুমি যুদ্ধে জয়ী হতে পারবেনা শত্রুদের সাথে। এই যে মাশফি কে দেখ…..
তুমি জানো তোমার ভাইয়ার গায়ে কত জোর? এক দমই, খাবার নিয়ে অনিহা করে না সে।” মিমের কথা শুনে মাশীদ আবারও খাবার খেতে লাগলো। মাশফি মা কে বললো,
– “তুমি একটু ও আদর করোনা আমাকে।”
ছেলের অভিযোগ শুনে, মিম হাসতে হাসতে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। নিজের অপরাধ স্বীকার করে বললো।
– “আমাকে ক্ষমা করে দেন, আব্বা। ভুল হয়ে গেছে।”
মাশফি মায়ের বুকের সাথে মিশে রইলো। মাশীদ ও তার বুকের সাথে মিশে আছে।
কমিশনার সাহেব দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন, তিনি বুঝতে পারেন মাশীদ কত টা মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য উতলা হয়ে আছে? লাঞ্চ, শেষ করে কমিশনার সাহেব একাই পুরো বিল দিলেন।
মিম বিল শেয়ার করতে চাইলে তিনি মানা করে দিয়ে ছিলেন তাকে।
বাসায় ফেরার পথে, উভয় তাদের ফোন এক্সচেঞ্জ করে নিলেন একে অপরের সাথে। এরপর, তাদের গন্তব্য আলাদা হয়ে গেলো।
মিম মুখে প্রকাশ না করলেও তার কমিশনার সাহেব এবং মাশীদের সাথে সময় কাটাতে বেশ ভালো লেগে -ছে।বাড়ি ফিরে এসে সে শুনতে পেলো রুবিনা তাকে আবারও বিয়ে-থা দেওয়ার কথা ভাবছে। মিম তাকে সরাসরি না করে দিলো।
রুবিনা মিমের কোল থেকে মাশফিকে নিয়ে বললো।
– “এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি, মা আমার। তোর পুরো জীবন টা এখনো পরে আছে।”
– “তাহলে তুমি নিজের বিয়ের কথা ভাবছ না কেন?”
– “কারণ আমি চাই না নিজেকে আর কারোর সাথে জড়িয়ে রাখতে।” মিম তাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
– “ভাবি মা,
আমি আমার মাশফিকে নিয়ে পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবো।”
– “মা বলে মানিস তো?
একটু মায়ের কথা মেনে নিলে কি হবে?” মিম ধরা গলায় বললো,
– “আগে ছেলের কাস্টাডি টা পাই। তারপর, না হ’য় ভেবে জানাবো তোমাকে?”
– “সত্যি বলছিস?”
– “হুমম।”
– “তাহলে এটাও শুনে রাখ, আমার কাছে এমন এক জন পাএের সন্ধান আছে যে কিনা তোকে মাশফিকে আগলে রাখবে।
তিনি কখনো মাশফিকে বাবার অভাব বুঝতে দেবেন না। তোর যত্নে কোনো কমতি রাখবেনা এই আশ্বাস টুকু আমি দিতে পারি তোকে।”

চলবে,,,

#বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১০

মিম রুবিনার কথায় মিটি মিটি হাসলো। কিন্ত,
ওদিকে তার মাথায় অন্য আরেক টি দুঃশ্চিন্তা ভর করছে। কাল বাদ পরশু, কোর্টের হিয়ারিং সে কি করে তার সন্তান কে নিজের কাছে ধরে রাখবে? যার জন্য এতকিছু।
বিচারপতি, কি তার দিক টাও ভেবে দেখবে? ওর দুঃশ্চিন্তা কারণ রুবিনার কাছে স্পষ্ট। ওদিকে, কেস এর হিয়া রিং এর দিন তাকে স্কটল্যান্ডে চলে যেতেই হচ্ছে। তিনি মিমকে বললেন,
– “আল্লাহ তায়া’লার ওপরে ভরসা রাখ, আমি বলছি মাশফি আমাদের কাছেই থাকবে। তার মায়ের কোল আলো করে থাকবে।” মিম সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেললো নিবেদিতা ক্যামেলিয়াকে বললো,
– “সোনা মায়ের জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।”
– “আমি বলে দিচ্ছি, আমাদের ভাইয়ের কিছু হবেনা। ও মায়ের ছেলে, মায়ের কোলে’ই ফিরে আসবে।”
পরেরদিন,
কমিশনার সাহেব মিম কে ব্লক বি এর চৌদ্দ নম্বর বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন।
তিনি তৎক্ষনাৎ গাড়ি থামিয়ে তাকে চমকে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– “আমি কোনো সাহায্য করতে পারি আপনাকে?” সে মেকি হেসে বললো,
– “না না, তার কোনো প্রয়োজন নেই।” কমিশনার সাহেব তাকে চিন্তিত দেখে বললেন,
– “আপনি চাইলে কিন্তু সত্যি আমি সাহায্য করতে পারি আপনাকে।” মিম হেসে বললো,
– “সত্যি’ই আপনার কোনো সাহায্য আমার লাগবেনা
….।” তিনি বললেন,
– “আমাদের দেখা হওয়ার আগেই আমি বেশ কয়েক বার কোর্ট চত্বরে দেখেছি আপনাকে।” মিম এবার না চাইতেও কিছুটা ইমোশনাল হ’য়ে পরলো। কমিশনার সাহেব তাকে ধরে নিয়ে এলেন কাছের এক টি কফি শপে।
মিম ধীরে ধীরে সকল কথা’ই তাকে খুলে বললো। তিনি বললেন,
– “একদম নিশ্চিন্ত থাকুন,
কেউ আপনার কোল থেকে কেড়ে নিতে পারবেনা আপনার সন্তানকে।” মিম কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে কেঁদে ফেললো। নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সে জড়িয়ে ধরলো পাশে বসা মানুষটিকে। কমিশনার সাহেব তাকে শান্ত হতে বললেন, বললেন নিজেকে সামলে নিতে।
যদিওবা তার বুকে মেয়েটি মাথা রাখায় তিনি কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছিলেন। তার উপস্থিত তাকে আনন্দ দিচ্ছে। মিম নিজেকে সামলে নিয়ে তার বুকের ওপর থেকে সরে এলো। নিজের এই কাণ্ডের জন্য তার খুব লজ্জা করছে। সেসব বুঝতে পেরে কমিশনার সাহেব তাকে কিছুটা কম্ফোর্টেবল ফিল করানোর চেষ্টা করলেন। অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে লাগলেন তার সাথে। মিম ও ইন্টারেস্টেড হয়ে তার সাথে আলোচনা করতে লাগলো। এ কথায় সে কথায় সে তার কাছে জিজ্ঞেস করলো,
– “মাশীদ কেমন আছে?”কমিশনার সাহেব হাসিমুখে বললেন,
– ” জ্বি ভালো। তবে আপনি বুঝিয়ে বলার পর একটু নিজের খাওয়াদাওয়া প্রতি কর্নসান হয়েছে।” মিম বললো,
– “দ্যাট’স গ্রেট, একটু নজরে রাখবেন ওকে।” তিনি বললেন,
– “অবশ্যই, আর একটা কথা। আপনার মাশফি শুধু আপনার থাকবে।” মিম তার কথা শুনে মন খুলে হাসলো, ঘড়িতে সময় দেখে বললো,
– “আমাকে এখন যেতে হবে।
– ” আমি ড্রপ করে দেবো?” মিম হাসিমুখে বললো,
– “শিওর।” তারপর, তিনি ইডেন কলেজের সামনে পৌঁছে দিলেন মিমকে।
আজ কোর্টের হিয়ারিং সকলের মুখ যেন সকাল থেকে থমথমে হয়ে আছে। মিমের মুখে হাসি নেই। সে ছেলেকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে কোর্টে বসে আছে। তার পাশেই বাকি সকলে বসে। কিছুটা দূরেই কমিশনার সাহেব বসে আছে।
একে একে কোর্টে স্বাক্ষ গ্রহণ শেষ হলো। উভয় পক্ষ থেকেই কিছু তথ্য প্রমাণ পেশ করা হ’য়েছে মিমে’র কেইস অনেক স্ট্রং। ওদিকে, ওদের বিপক্ষীয় উকিল শুধু মিমে’র করা দু’টো খু*নের দিকেই ফোকাস করছে। এতে বিচারক কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন।
– “মূল বিষয়ে আসুন,
আপনার পেশকৃত বক্তব্যের কোনো সামঞ্জস্য নেই এই কেসের সাথে। এর আগে হাইকোর্টে প্রামাণিত হয়েছে উনি নিজের এবং বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য খুন দু’টি করেছে…..
কাজেই আপনার এই সকল ভিত্তিহীন কথার কোনো মূল্য নেই আমার কাছে।” বিচারক মহোদয়ের বক্তব্য শুনে চুপ করে গেলেন তিনি।
সকল সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে মাশফিকে কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়েছে।
তাকে বিচারক কোমল গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
– “তুমি কার কাছে থাকতে চাও?” মাশফি মা কে দেখিয়ে বললো,
– “মায়ের কাছে।” মিম সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেললো। মা কে কাঁদতে দেখে মাশফি কিছুটা বিচলিত হ’য়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
আরিশ, এগিয়ে এসে ছেলেকে বিচারকের সামনোই ধরের টানাটানি শুরু করলে। রীতিমতো, সে মিমের গায়ে হাত তোলারও চেষ্টা করেছে।
কমিশনার সাহেব সাথে সাথে রেগে গিয়ে আরিশকে বাঁধা প্রদান করলেন। একরকম মিমের কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরিয়ে ফেললেন তাকে।
বিচারক আরিশের এমন কাণ্ড দেখে অনেক অবাক হলেন। আরও অবাক হলেন তাকে নিজের সন্তানের মা কে যাচ্ছেতাই বলে গালিগালাজ করতে দেখে। অতঃপর,
অবশেষে তিনি ফাইনাল সিদ্ধান্ত জানালেন, বললেন,
– “বাচ্চা তার মায়ের কাছেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকবে, ভাল থাকবে।” আরিশ, তখন বিচারপতির দিকে তেড়ে গেলো। তিনি রেগে গিয়ে কমিশনার সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
– “কমিশনার সাহেব আপনি যত দ্রুত সম্ভব জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করুণ এই লোকটাকে।
দেখে মনে হ’য় যেন সাইকোপ্যাথ বাচ্চা এবং বাচ্চার মা কেউ নিরাপদ নয় ওনার কাছে। আমার পরামর্শ রইলো,”বাচ্চাকে বাবার সাথে দেখা করতে না দেওয়া হোক হিতেবিপরীত ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা নিরানব্বই শতাংশ আছে।
পুরো কেস স্টাডি করে আমি যা বুঝলাম, নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য’ই এখন তারা বাচ্চার কাস্টাডি পাওয়ার আশায় পায়তারা করছে। পরিশেষে, বলবো প্রয়োজনে পুলিশ প্রটেকশনের ব্যবস্থা নেবেন। আশা করছি সমস্যা সল্ভ হ’য়ে যাবে।” কমিশনার তারপর তাকে বিদায় জানিয়ে মিমের কাছে এগিয়ে এলেন। মিম তাখনো মাশফিকে বুকে জড়িয়ে কাঁন্না করছে। ক্যামেলিয়া নিবেদিতা কমিশনার সাহেবের কাছে এগিয়ে গেলো, বললো,
– “আঙ্কেল এইবার আপনি কিছু করুণ মাকে কাঁদতে দেখে আমাদের ও খুব কষ্ট হচ্ছে।” তিনি মুচকি হেসে বললেন,
– “তোমাদের মা (মিম) তো আমাকে বলেননি তার আরও দু’টো সন্তান আছে?”নিবেদিতা হাসতে হাসতে বললো,
– ” হয়তো-বা তার সময় হ’য়নি?
সময় করে কখনো নিশ্চয়ই আমাদের সম্পর্কে বলবে আপনাকে।” তখন হঠাৎ, মাশফি কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেললো।
কমিশনার সাহেব এগিয়ে গিয়ে বোতল থেকে পানি খাইয়ে সামলে নিলেন তাকে। তবুও, সে আবারও কেঁদে ফেললো। তিনি জিজ্ঞেস বললেন,
– “কেঁদো না বাবা,তুমি কাঁদলে মা ও খুব কষ্ট পাবে।” মাশফি মা কে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “তাহলে ম-মি কাঁদছে কেন? হুমম? আমার ম-মি কে দেখেই কান্না পাচ্ছে।”
ক্যামেলিয়া এগিয়ে গিয়ে ভাইকে কোলে তুলে নিলো
কমিশনার সাহেব গিয়ে রুমাল এগিয়ে দিয়ে বললেন।
– “কাঁদবেন না প্লিজ,আপনাকে দেখেই বাচ্চা ছেলেটা কষ্ট পাচ্ছে।” মিম রুমাল টা নিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বললো।
– “আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আবারও ঋণী করে ফেললেন আপনি আমাকে।”
– “আমি মোটেও আপনাকে ঋণী করিনি, ম্যাডাম।
কারণ, আমি নিজেও মনে করি মাশফি ওর বাবার থেকে বেশি আপনার কাছে ভালো থাকবে।
আর তাছাড়া উনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। ওনার স্ত্রী কে দেখে আমার একটুও মনে হ’য়নি যে তিনি ভালো চোখে দেখেন মাশফি কে……….তারপর, শুনলাম সে নিজেই সন্তান সম্ভবা।
উনি কখনো আপন করে নিতে পারতেন না মাশফি কে। যাগগে, সেসব কথা। বেলা গড়িয়ে গেছে। চলুন, লাঞ্চ টা করে নেই। সবার নিশ্চয়ই খিদে লেগেছে?” মিম হঠাৎ করে’ই তার দু’হাত চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
– “মাশীদ আসেনি?” তিনি হাসিমুখে বললেন,
– “না, ও বাড়িতে আছে কেয়ারটেকারে’র কাছে।”
– “উনি ঠিক মতো ওর যত্ন নিচ্ছে তো?”
– “নিচ্ছে,
তবে কি বলুন তো? মা নেই তো? বাচ্চা টা খুব করে একটা মা চাইছে।”
– “আপনি তবে দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবছেন না কেন
…..?”
– “কেন কারণ, সে যদি মনে নিতে না পারে আমার সন্তানকে?
আমি হ’য়তো একজন সজ্জাসঙ্গিনী পেয়ে যাবো। কিন্তু,আমার ছেলে কি মায়ের পূর্ণ ভালোবাসা পাবে? পাবেনা কারণ বিভেদ সৃষ্টি হবে তাদের মাঝে।
দেখুন, আমি চাইলই বিয়ে করতে পারি। কিন্তু, ইচ্ছে করে না আবারও নতুন করে কারোর মায়ার জড়িয়ে পরতে। একজনের মায়ায় বেশ কয়েক বছর আগে পরে ছিলাম।
কিন্তু, আমি ব্যর্থ হয়েছি তার সেই সকল উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে। আমি বরাবর, সীমিত চাহিদা সম্পন্ন মানুষ নিজের যা কিছু আছে তাই নিয়ে চাই ভালো থাকতে। আর তাছাড়া, বয়স হচ্ছে।
এখন কেই বা বিয়ে করতে চাইবে আমাকে? আমি মনে করি না বিয়েই সকল সমস্যার সমাধান। তবে মাঝে- মধ্যে খারাপ লাগে ছেলেটা’র কথা ভেবে।” ওনার কথা শুনে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো মিম, মনেমনে সে বলে উঠলো,
– “আমরা সকলে কতই না অসুখী যে যার ব্যক্তিগত লাইফে। কারোর জীবনে’ই সুখ নেই। কি করলে তবে সুখের দেখা মেলবে?” ওনাদের দু’জন কে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখে নিবেদিতা ক্যামেলিয়াকে খোঁচা মে’রে বললো,
– “দেখ আপু, আঙ্কেল আর সোনা মা কে পাশাপাশি খুব মানিয়েছে।”
– “হুমম,একদম আমার মনের কথা বলেছিস।” তখন কমিশনার সাহেব এগিয়ে এসে ওদের দু’জনের কাছে জিজ্ঞেস করলেন,
– “মামণি তোমরা কি খাবে?” ওরা দু’বোন হাসিমুখে বললো,
– “আপনি যা খাওয়াবেন তাই।” মিম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– “ভাবি মা কি ফোন করেছিল? খালুজান কেমন আছে?”
ক্যামেলিয়া মিটিমিটি হেসে বললো,
– “তুমি চিন্তা করো না মা, সোনা মা পৌঁছে ফোন
করবে বলেছে আমাকে।”
মিম একটু অবাক হলো।কারণ,নিবেদিতা ক্যামেলিয়া
দু’জনেই তাকে মা বলে ডাকছে। যদিও, সে তা নিয়ে কোনো মাথা ঘামায়নি। মিম মেয়েদের আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলো,
– “দুপুর, হ’য়ে গেছে। বলো মাম্মা তোমরা কি খাবে?”
ওরা দু’জনেই কমিশনার সাহেবকে দেখিয়ে বললো।
– “তেমন কিছু না, তবে আঙ্কেল যা খাওয়াবে।” মিম একটু অবাক হলো কমিশনার সাহেব তার মুখশ্রী দেখে মেয়েদের হাসতে হাসতে বললেন,
– “বুঝলে মামণি, তোমাদের মা আমার কাছে ঋণী হতে হতে ক্লান্ত হ’য়ে গেছে।” ওনার কথা শুনে, মিম কি মনে করে হেসে ফেললো।
কমিশনার সাহেব তাদের সঙ্গে করে নিয়ে এলেন নিজের প্রিয় একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। সেখানে গিয়ে মেয়েদে’র পছন্দে’র খাবার অডার করলেন।
মিম ওয়েটারকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
– “এখানে ওয়াশরুম টা কোন দিকে? কমিশনার সাহেব তখন মুচকি হেসে বললেন,
– “আপনি আমার সাথে আসুন।” মিম মাশফিকে তার বোনদের কাছে রেখে এগিয়ে চললো কমিশনার সাহেবের সাথে। তিনি, এ কথায় সে কথায় বললেন
– “আপনি এর আগে কখনো’ই ব’লেননি আপনার আরও দু’টো সন্তান আছে?”
– “হুমম, বলিনি। তার কারণ, তখন এতোটা ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠেনি আমাদের মাঝে।” তিনি মিটিমিটি হেসে বললেন,
– “হুমম, তা ঠিক। তবে আপনার বাচ্চারা খুবই মিষ্টি ওদের এক সাথে দেখে খুব ভালো লাগছে।” মিম তার কথা শুনে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো,
– “এবার, আমি তবে ওয়াশরুমে যাই?” তিনি মুচকি হেসে বললেন,
– “শিওর, দুঃখিত। এই বিষয়টি মাথা থেকেই বেড়িয়ে গেছে।”
– “কোনো ব্যাপার না, জনাব।
তবে সত্যি বলতে আপনার মতো পরোপকারী মানুষ খুব কমই আছে।”তিনি মিমের কথায় মুচকি হাসলেন
বললেন,
– “যাক নোটিশ করেছেন তবে?” মিম বাথরুমে যেতে যেতে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “হুমম, জেলে থাকতেই নোটিশ করেছিলাম আপনা
-কে।” মিমের কথায় তার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির ঝলক দেখা দিলো।
দুপুরে, লাঞ্চ শেষ করে মিম তাকে হাসিমুখে বললো।
-“কমিশনার সাহেব, কাল আপনার এবং মাশীদের দাওয়াত রইলো আমার বাসায়। যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন আপনার, আপনাকে অবশ্যই রাতে এক বার আসতে হবে।” তিনি ওর কথায় মিটিমিটি হাসলেন, বললেন,
– “আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে।”

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে