বাসনা বিসর্জন পর্ব-৭+৮

0
671

#বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৭

তবুও মা, সামনে তোমার পরীক্ষা।” মিম হাসতে হাসতে বললো।
– “পরীক্ষার আগে তোমাদের জেলার সাহেবের আমি এমন অবস্থা করবো যে তিনি কেঁদেও কুল পাবেননা।
অসুস্থতা, শুধু বাহানা মাএ মাসি।
আমি ওর হাতে তোমাদের ধুঁকে ধুঁকে ম’রতে দেবনা।
সে যাই হোক,
এতো কথা এখন এখানে বসে বলা যাবেনা। বুঝতেই পারছ! দেওয়ালের ও কান আছে। কানের কাছে এই সকল খবর পৌঁছে যাক তা আমি চাই না।”
– “তুই কি একটু ও হেয়ালি ছাড়া কথা বলতে পারো না?”
– “না গো, এটা আমার স্টাইল। ও তোমরা বুঝবেনা।”
মিমের কথা শুনে হেসে উঠলেন বিন্তি মাসি, তিনি বললেন।
– “তোর সাথে কেউ কথায় পারবে না।” হঠাৎ লাইলি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে মিমকে বললো।
– “জলদি, পরনের কাপড়চোপড় ঠিক করেনে। নতুন বড় সাহেবের ঘরে যাবি না?” মিম হাসতে হাসতে বললো।
– “বড় সাহেবের ঘরে পরে যাবো। উনি নিরেট ভদ্র- লোক। এতো ছলচাতুরী বোঝেননা……
আজ আমায় একবার তোরা জেলার সাহেবের ঘরে পাঠা। ও হ্যাঁ, সুন্দর করে আমায় সাজিয়ে দিতে ভুল-
বেনা।” ওর হাবভাব দেখে অবাক সবাই,
রাকা ওর মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে জিজ্ঞেস করে বসল,
– “তোর কি মাথায় ছিট আছে, মা?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “ছিট কেন থাকবে? হুমম?
একটা ভালো কথা বলেছি, তোমাদের দেখছি তাও সহ্য হচ্ছে না।”
– “দেখ, ওই লোকটা কিন্তু মোটেও সুবিধার না।” মিম মাধবির কথা শুনে, হাসতে বললো,
– “সুবিধার না। তা আমিও জানি, বুবু। কিন্তু, আমি ওই লোকের ঘরে তো আর এমনি এমনি যাচ্ছি না।” ওর কথা শুনে, অবাক সবাই। মিম একটু থেমে আবারও বললো।
– “আজকের দিন টা তোমাদের জেলার সাহেব আর কখনোই ভুলবেনা।
এত স্মরণীয় করে রাখবো আমি আজের দিন। যে উনি সত্যি সত্যিই কেঁদে খুল পাবেন না।”
বেলা এগারো টা, আজুয়াদ নিজে’র কিছু জরুরী কাজ সে’রে কেবিনে ঢুকে দেখলো।
মিম সামনেই চেয়ারে বসা। সে যেন চমকে গেলো। মনেমনে বলে উঠলো,
– “তোমার এই সময়ে এখানে থাকার ছিলো না।”মিম চমকে দিয়ে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। ক্রমশ ধীরে ধীরে যেন ভারী হ’য়ে উঠছে আজুয়াদের নিশ্বাস
তার মুখে থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না।” মিম তার অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে। আচমকা তাকে ধাক্কা মে’রে তাকে মেঝেতে ফেলে দিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে বললো,
– “আপনাকে আমি ‘বড় ভা’ই ভেবেছিলাম। আমার এমন সর্বনাশ করার আগে আপনার এক বার ও বুক কাঁপালো না?” ও চেঁচামেচির শব্দ শুনে, জড়ো হলো সবাই। মিমকে কিছু টা এলোমেলো অবস্থায় দেখে কমিশনার গিয়ে কয়েক দফা মা’র লাগালেন জেলার কে…..।
আজুয়াদের কথা শুনতে কেউ রাজি না। মিমের করা নাটক দেখে সবকিছুই যেন রিয়েলিস্টিক মনে হচ্ছে।
বিন্তি মাসি তাকে সালাতে ব্যস্ত।
এদিকে, এতদিন পর আজুয়াদের অপকর্মের বিষয়ে অনেক তথ্য প্রমাণ হাতে আসার পর এস.আই সূর্য সেন কমিশনার (ইমান) সাহেব কে পরামর্শ দিয়ে বললেন,
– “স্যার, একেবারে এন-কাউন্টার করে ফেলা যায় না একে? না জানি, কত মা-বোনের সম্ভ্রমহানী করেছে? মিম মেয়ে টা সাহসী বলেই, আজ…!
নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে এমন একটা মানুষ রূপি জানোয়ারের হাত থেকে।” কমিশনার তার কথা শুনে মুচকি হেসে বললেন,
– “আহ!
সূর্য, নিরীহ অবলা প্রাণীদের নাম তুলে গালি দিচ্ছেন কেন? ওরা অবুঝ, ওরা কি করেছে?
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, আজকাল মনে হয় যেন এটা ডাহামিথ্যে কথা। পুলিশ প্রশাসনের সম্মান রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
আমি চাইছি সকল ভিক্টিমদে’র জবানবন্দি নিয়ে ওনাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি পাইয়ে দিতে।”
ইমানের কথায় একমত হলো সবাই৷। ওদিকে, জেলে এই খবর ছড়িয়ে পরার পর সকলেই মিমের সাহসী- কতার প্রশংসা করছে। প্রথম প্রথম, মহিলা কয়েদিরা জবানবন্দি দিতে অস্বীকার করলেও স্বয়ং কমিশনার সাহেব তাদের অভয় দিয়ে বললেন।
– “আপনারা কি চান ওই লোকটা মুক্ত হ’য়ে আবারও ফিরে আসুক আপনাদের মাঝে?
উনি মুক্ত হ’য়ে কিন্তু চুপ করে বসে থাকবে না। সবার আগেই উনি ফিরে এসে এই মেয়ে (মিম) টির ক্ষতি করতে চাইবে।
ও যখন এতো সাহস দেখিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে তখন আপনারা কেন পারছেন না একটু সাহস সঞ্চয় করে ওর সঙ্গ দিতে?
না কি আমি ধরে নেবো আপনাদের ও স্বায় ছিলো? স্ব-ইচ্ছায় আপনারা ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন ওনার সাথে? দেখুন,
আপনারা জবানবন্দি দিলে শুধু উনি ন’য়। পূর্বের পুলিশ কমিশনার রামপাল বড়ুয়া ও জেলে যাবে। অলরেডি আমাদের ‘স্পেশাল ব্রাঞ্চ’ ওনাকে কুমিল্লা থানা থেকে আটক করে জিজ্ঞেসবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে এসেছে। বর্তমানে সেলে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।” কমিশনার সাহেবের কথা শুনে সকলকে চমকে দিয়ে এগিয়ে এলো ফারজানা।
কারণ সে জেলার এবং কমিশনার রামপাল উভয়ের দ্বারা শারীরিক ভাবে নির্যা*তিত হয়েছে। ফারজানা কে সাহস করতে দেখে,
ধীরে ধীরে অনেকই সাহস করে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য এগিয়ে এলো। এরইমধ্যে হঠাৎ মিম কমিশনার সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “স্যার,
একটু জুভেনাইল হোম এ খবর নিবেন? ওখানকার বাচ্চারা কেমন আছে?” মিমের উদ্ধিগ্ন হওয়ার কারণ ইমান বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলো, সে বললো
– “খোঁজ নিয়েছি, ওখান কার বাচ্চারা ভালো আছে।
তবে রিসেন্টলি দু’জনের গর্ভপাত করানো হয়েছে। আপনি একদম চিন্তা করবেন না।
অপরাধী এবং তাদের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।”
শেষ কথা টুকু শুনেই, মিম জ্ঞান হারালো। কমিশনার সাহেব সামলে নিলেন তাকে। এদিকে, এই খবরে তোলপাড় মিডিয়া।
চৌধুরী বাড়ির লোকেদের বাড়িতে টেকা দ্বায় হয়ে গেছে। পরেরদিন, রুবিনা মিমের সাথে দেখা করতে চলে এলো। মিম রুবিকে দেখেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
রুবিনা, মিমকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে লাগলো। সে কখনো মিমকে ছোটো জা ভাবেবি বরং সব সময় নিজের সন্তানের চোখেই দেখেছে তাকে। ও বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর,
তিনি’ই প্রথম নিজের স্বামীর আসল চেহারাটা মিমের সামনে তুলে ধরে ছিলেন এবং সাবধানও করেছিলেন মিম কে….।
মিম তাকে ধরা গলায় বললো,
– “আমাকে পারলে, ক্ষমা করে দিও ভাবি মা।” তিনি মুচকি হেসে বললেন।
– “ক্ষমা?
ক্ষমা করার কোনো প্রশ্ন’ই ওঠে না। তুমি জানো? তোমার জন্য আমার কতবড় ক্ষতি হয়েছে?” মিম মন খারাপ করে ফললো, রুবিনা হঠাৎ তার কপালে চুমু খেয়ে হাসিমুখে বললো,
– “অবশেষে, আমি তালাক নিতে পারবো ওই নোংরা লোকটার কাছ থেকে।” মিম চমকে তাকিয়ে রইলো। রুবিনা বললেন,
– “আমি খুব খুশি। কেউ অন্তত ওই লোকটার নোংরা মুখোশ টা খুলে দিতে পেরেছে।
ওর বউ হ’য়ে বাঁচার থেকে আমি বিধবা হ’য়ে বাঁচতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবো। আমার গর্ব হচ্ছে তোকে দেখে। আফসোস, আমি এমন রত্নগর্ভা হতে পারিনি।
……..” মিম তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “ভাবি মা, মাশফি কেমন আছে?”
– “কেমন আবার? তোর ছেলে তোর’ই মতোন হয়েছে
……. বাবা সোনা কে কেউ তোর কাছ থেকে আদালা করতে পারবে না।
তুই ছাড়া পেলেই ওকে ফিরিয়ে আনবো দেশের মাটি তে আর কোর্টে আমরা জয়ী হবো। বাচ্চার কাস্টাডি তোর ফরে’ই থাকবে।” মিম সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেলল।
রুবিনা সামলে নিলো তাকে। তিনি মিমে’র চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন,
– “মায়েরা কখনো সন্তানের কষ্ট সহ্য করে পারে না। খালাম্মা হয়তো বেঁচে নেই। আমি যতদিন বাঁচবো বুকে আগলে রাখবো তোমাকে।”তাদের কথায় মাঝে
কনস্টেবল লতা চলে এলো। তিনি সরল গলায় বলল
– “আপনাদের দশ মিনিট ওভার হ’য়ে গেছে।” রুবিনা মিম কে বিদায় জানালো,
শেষ মুহূর্তে পাঁচ বছর বয়সী মাশফির ছবি দেখা
-ল তাকে। ছেলেকে দেখে মিম একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, রুবিনা বললো,
– “একদম চিন্তা করিসনা ক্যামেলিয়া এবং নিবেদিতা খুব যত্ন করছে তাদের একমাএ ভাইকে।” মিম হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,
– “ওরা কেমন আছে ভাবি মা?” রুবিনা হাসতে হাসতে বললেন,
– “তোর ছেলেমেয়েরা উভয় সিডনিতে খুব ভালো আছে ওখানে ওদের বিপদে পরার কোনো ভয় নেই।” মিম তারপর নিশ্চিত হয়ে গারদে ফিরে এলো লতার সাথে।
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। দেখতে দেখতে মিমের পরীক্ষা প্রায় শেষে দিকে।
একদিন, হঠাৎ দুপুরে খবর এলো ভালো আচার- আচরণের জন্য মিমের শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে ফেলা হ’য়েছে।
যার দরুন সে অল্প কিছুদিনের মধ্যে’ই গারদের বন্দী দশা থেকে মুক্ত হতে চলেছে।
এমন খবর শুনে সকলে’র মন টা খারাপ হয়ে গেলো।
বিন্তি মাসি মিমকে বিদায় দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত কর- তে লাগলেন নিজেকে।
একদিন ভরসন্ধ্যা বেলায়, কমিশনার সাহেব তাকে
(মিম) ডেকে পাঠালেন। তিনি কথায় কথায় মিমের কাছে জিজ্ঞেস করলেন,
– “হঠাৎ মুক্তির স্বাদ পেতে কেমন লাগছে?” মিম মৃদু হেসে বললো,
– “ভালো, তবে আমি এখনো আপনার ঋণ শোধ করতে পারিনি। যেটা কি না আমায় খুব অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে।”
কমিশনার সাহেব তখন হাসতে হাসতে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন।
– “আগেই বলেছিলাম,
‘কিছু ঋণ নাহয় অপরিশোধিত থেকে যাক। সব ঝণ আবার শোধ করা যায় না, ম্যাডাম। ঠিক আছে?”
মিম, নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কমিশনার সাহেব ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে গেলেন সেখান থেকে।
আজ মিমের জেলে থাকার প্রায় সাড়ে চার বছরপূর্ণ হয়েছে।
তার ভালো আচার-আচরণের জন্যে’ই পাঁচ বছরের প্রাপ্ত সাজা কমিয়ে সাড়ে চার বছর করা হ’য়েছে। আজ বিদায় বেলায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা তার প্রিয় মানুষ গুলো তার জন্যে অশ্রুসিক্ত হ’য়েছে। মিমকে বিদায় দেওয়ার পূর্বে বিন্তি মাসি তার কাপলে চুমু খেয়ে বললেন,
– “মা’রে এখুনি দূর্বল হলে চলবেনা। বাহিরের জগতে তোর জন্য নতুন লড়াই অপেক্ষা করছে। আমি জানি, তুই নিজের মাথা উঁচু করে সকল শত্রুর মোকাবিলা করবি।
নিজের সন্তানকে ধরে রাখবি নিজের কাছে। তবুও বলছি তুই তোর অভাগী মাসি কে ভুলে যাসনে।” মিম বললো,
– “চিন্তা করো না, সময় পেলেই আমি দেখা করতে চলে আসবো তোমাদের সাথে।” মাধবী মিম কে বুকে জড়িয়ে নিলো, জিজ্ঞেস করলো,
– “ভুলে যাবি না কি আবার আমাকে?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “অসম্ভব, পরেরবার আমি আমার ছেলে মাশফিকে সঙ্গে নিয়ে দেখা করতে আসবো তোমাদের সাথে।” অতঃপর,
মিম সোজা হেঁটে পেছনে না তাকিয়ে বেড়িয়ে এলো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। বাহিরে, একটা সাদা রঙের পাজেরো দাঁড়িয়ে।
হঠাৎ, ক্যামেলিয়া নিবেদিতা বেড়িয়ে এলো গাড়ি থেকে। মিম কিছু বুঝে ওঠার আগে’ই ওরা দু’জনে ছুটে এসে তাদের সোনা মা কে জড়িয়ে ধরলো।
অতঃপর,
রুবিনার সাথে মাশফি বেড়িয়ে এলো গাড়ি থেকে। সে মা কে দেখে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো মিম নিজেকে সামলে নিয়ে আদর করতে লাগলো মাশফি কে। নিবেদিতা মুখ কালো করে ফেললো, মিম মুচকি হেসে তাদের ও জড়িয়ে ধরে বললো,
– “স’রি মা ভুল হয়ে গেছে।”ক্যামেলিয়া রুবিনা হেসে ফেললো। মাশফি অভিমানে মুখ ভার করে বললো,
– “ডু ইউ নো ম-মি? হাউ মাচ আই মিস ইউ?” মিম তাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “স’রি, বেবি। সো সো, স’রি। আমার অনেক বড় একটা ভুল হ’য়ে গেছে।”
মাশফি মা কে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, বললো,
– “ইউ দ্যা, বেস্ট ম-মি । আই এম প্রাউড অফ ইউ।”

চলবে,,,

#বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৮

মিম সঙ্গে সঙ্গে আবারও বুকে জড়িয়ে ধরলো ছেলে টাকে এবং তার বোনদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।
– “ভাইকে দেখি ব্রিটিশ তৈরি করেছ?” ক্যামেলিয়া হাসতে হাসতে বললো,
– “কি বলতো সোনা মা, ব্রিটিশের ছেলে তো ব্রিটিশই তৈরি হবে।” সঙ্গে সঙ্গে সকলে মিলে এক সাথে হেসে উঠলো…..
মাশফি রুবিনা কে প্রশ্ন করলো,
– “বিগ মম, ম-মি কে নিয়ে হাউজে কখন যাবে?” রুবি চোখ কপালে তুলে বললো,
– “বড় মা বলে ডাকো আব্বু।” ক্যামেলিয়া নিবেদিতা হাসতে হাসতে বললো,
– “ডোন্ট ওয়ারি, মা। ভাই, আস্তে আস্তে সব বলা শিখে যাবে।”
– “হ্যাঁ, তাই বিগ মম?”নিবেদিতা তখন হাসতে হাসতে বললো,
– “ভুলে যেও না ও এতো দিন বিদেশে থেকে বড় হয়েছে।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “হুমম, তাও ঠিক। একদম, বোনদের মতো ব্রিটিশ তৈরি হয়েছে।”
অতঃপর, তারা তাদের দাদা শশুরের তৈরি বাড়িতে ফিরে এলো। মিম ফিরে আসবে বলে রুবিনা আজ তার পছন্দের সকল খাবার দাবার রান্না করেছে।
সে এক আনন্দঘন পরিবেশ। এর’ই মাঝে মিমের ল’ইয়ার কৃষাণ রায় এসে রুবিনা কে জানালো।
– “ম্যাম,
জেলে থাকা কালিন সময়ে ক্যামেলিয়া ও নিবেদিতা মামণির জন্য ঢাকায় দু’টো ফ্লাট বাড়ি আর কিছু জায়গাজমি কিনেছে।” এই খবর দু’বোনে পেয়ে গিয়ে তাদের সোনা মা কে বললো,
– “মা, একে টেনশনের শেষ নেই। তারমধ্যে, তোমায় এই সকল পাগলামি করতে কে বলেছে?”মিম তাদের কথা হেসে উড়িয়ে দিলো। রুবিনা বললো,
– ” আমার কি কম আছে ছোটো? হুমম? তোকে এই সকল পাগলামি করতে কে বলেছে?” সে আবারও তাদের কথা হেসে উড়িয়ে দিলো।
রুবিনা মিমের চিন্তিত হওয়ার কারণ কিছু টা আঁচ করতে পে’রে বললো,
– “চিন্তা করিস না, ছোটো।
লক্ষী বোন আমার। মাশফির কাস্টাডি তোর ফরেই থাকবে।”
– “কিন্তু, আমি যে দু’দুটো খু*ন করেছি ভাবি মা?”
– “কেন করেছিস? সে টা জলে’র মতোন পরিষ্কার আমাদের কাছে। তুই এখন এগুলো নিয়ে মন খারাপ করিস না। আয়াশের বিরুদ্ধে ও অনেক তথ্য প্রমাণ ইতিমধ্যে এসেছে আমাদের কাছে। ও আজুয়াদ কে ছাড়া কিচ্ছু না, জাস্ট কিচ্ছু না।
কোর্টে তারা কিছুতেই এঁটে উঠবেনা আমাদের সাথে। কারণ, আমাদের কেস অনেক স্ট্রং মাশফির জন্মের আগে ওরা কম বিপদে ফেলার চেষ্টা করেনি তোকে। আর এইসব কিছু হচ্ছে সম্পত্তির জন্য, যে গুলো কি না দাদাজান তোকে ভালোবেসে লিখে দিয়ে গেছে।” মিম তখন তার হাত আঁকড়ে ধরে বললো,
– “কিন্তু ভাবি মা,
এই সব সম্পত্তি শুধু মাএ আমার একার না। এখানে তোমার অধিকার আছে।
ক্যামেলিয়া এবং নিবেদিতার ও সমান অধিকার আছে।”
– “তুমি ভুল করছ, সোনা মা।
এগুলো, বড় দাদুভাই তোমাকে লিখে দিয়ে গেছে। তার মানে এগুলো শুধুই তোমার আর তোমাকে এটা বুঝে নিতে হবে।” রুবিনা মেয়েদের কথা শুনে খুশি হয়ে বললেন,
– “ওরা ঠিক বলছে ছোটো, তুই আর এগুলো নিয়ে মাথা খারাপ করিস না,চল।
আমাদের এছাড়াও আরও অনেক অনেক কাজ পরে আছে।” ওদিকে,
বাবাকে চুপচাপ দেখে মাশীদ গিয়ে তাকে আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলো।
– “তোমার কি মন খারাপ?” কমিশনার সাহেব খবর এর কাগজ থেকে মুখ তুলে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেন,
– “না বাবা? আমার কি হবে?”
– “নাহ, তোমার বোধহয় মন খারাপ?” তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
– “হ্যাঁ, খারাপ হয়েছে একটু। একটা খু*নে মেয়েকে অনেক বেশি ভালো লেগে গেছে। যদি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেই। না মানে, যদি তোমার মা করে আনি তাহলে কেমন হবে?” বাবার কথা গুলো ঠিক ভাবে শুনতে পেলো না মাশীদ, সে জিজ্ঞেস করলো,
– “মানে? কি হয়েছে?”
– “মানে, আমি অনেক ভালোবাসি আমার রাজপুত্র কে।”
– “তাহলে আমাকে একটা ‘আম্মু’ এনে দাও। সবার’ই আম্মু আছে। আমার আম্মু নেই কেন? আমার আম্মু
‘র কি হয়েছে?”
ছেলের মুখ কালে দেখে, মন খারাপ করে ফেললেন তিনি, বললেন,
– “দুনিয়ার সকল মায়েরা জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে না নিজের সন্তানকে।
তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ব্যাতীক্রম আছে বাবা। তোমার কপাল খারাপ যে সেই কিছু সংখ্যকে’র মধ্য থেকে একজন তোমার এবং আমার জীবনে এসেছে। যাগগে সে সব কথা।
বাবা কি তোমাকে কম আদর করে? হুমম? হঠাৎ মায়ের কথা তুললে যে?” সে মন খারাপ করে বললো
– “দাদিমা বলেছে,
তুমি আবার বিয়ে না করলে আমাকে তিনি তাড়িয়ে দেবেন বাসা থেকে।” ছেলের কথা শুনে রাগে আগুন হয়ে গেলেন কমিশনার সাহেব।
চিৎকার চেঁচামেচি করে নিচে ডেকে আনলেন সবাই কে। পূর্বা, ভাইপো কে নিয়ে ঘরে চলে গেলো। তিনি জাহানারা বেগম কে বললেন,
– “একবার,
আমার জীবনের সুখশান্তি নষ্ট করে আপনার শিক্ষা হ’য়নি? আবারও আপনি নোংরা খেলায় মেতে উঠে- ছেন তাও আমার বাচ্চা ছেলেটার সাথে?
দেখুন, আপনাকে আমি সারা জীবন আমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে প্রাপ্য সম্মান টুকু দিয়ে এসেছি। তার মানে এই নয় যে নিজের মায়ের জায়গাটা ছেড়ে দিয়েছি আপনাকে।
আপনি আমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী, এতটুকুই আপনার পরিচয়। এর থেকে বেশি কিছু মনে করি না আমি আপনাকে। আপনি আমার ছেলেকে উল্টো পাল্টা কথা বলে ভয় দেখাচ্ছেন। কি মনে হ’য়?
আমি এরপরও, মাথায় তুলে নাচবো আপনাকে? শুনুন, আমি আমার ছেলেকে নিয়ে নিজের ফ্লাটে ফিরে যাচ্ছি। আজি…!
ভাত ছড়ালে যেমন কাকের অভাব হ’য় না তেমন।আমার ছেলেকে দেখাশোনা করার জন্য আপনার মতো দু’চারটে আয়াও জুটে যাবে।”
ছেলেকে এতো রেগে যেতে দেখে আদিত্য সাহেব এগিয়ে এলেন, তিনি বললেন,
– “মা কে ভুল বুঝোনা বাবা। বয়স হয়েছে, তিনি কি বলতে কি ব’লে ফেলেছে?”
কমিশনার সাহেব তাকে ঝাড়ি মে’রে বলে উঠলেন।
– “হ্যাঁ, তোমার স্ত্রী তো ছোটো বাচ্চা হরহামেশাই ভুল করে থাকে। শোনো বাবা,
আমার তোমার সম্পত্তির ভাগ চাইনা। তুমি দয়া করে সেসব কিছু লিখে দিয়ো এই লোভী মহিলার ছেলে মেয়েকে।” আদিত্য সাহেব বললেন,
– “ভুল করছ, বাবা তুমি।
হয়তো দাদুভাই ভুলে শুনেছে? এই মানুষ টি তোমার জন্য কি করেনি? সারাজীবন নিজের ছেলেমেয়েদের থেকে বেশি তোমাকে ভালোবেসে গেছে।”
– “তাই স্বাভাবিক নয় কি?
না হলে ওনার ভাত জুটতো এ বাড়িতে? তুমিই বলো না, তুমি কি মাথায় তুলে রাখতে এই মহিলাকে? কখনোই না।
তাহলে এতো কথা আসছে কোথা থেকে? আমার জন্য তুমি এই মহিলাকে বিয়ে করে এ বাড়িতে এনেছ তাই? সত্যি বলতে বাবা,
আসলে তুমি আমার জন্য বিয়ে করনি এই মহিলাকে
আমি জাস্ট উপলক্ষ মাএ।
তুমি আসলে নিজের ‘জৈবিক চাহিদা’ পূরণের জন্য বিয়ে করেছিলে এই মহিলাকে আর এটাই হলো চরম সত্যি৷
তুমি আর এই মহিলার পক্ষ নিয়ে সাফাই গাইতে এসো না আমার কাছে। আমার জন্য এটা করেছে সে টা করেছে। এইসব ফালতু এক্সকিউজ আমি শুনতে চাই না তোমার মুখে। কারণ আমি আমার জন্য এতো কিছু করতে বলিনি ওনাকে। যাও বা করেছে, একটু আগ বাড়িয়ে করতে গিয়ে আমার এবং আমার ছেলে
‘র জীবন টাই ধ্বংস করে ফেলেছে। আমি মাশীদকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। আমি আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না তোমাদের সাথে।”
ছেলের কথা শুনে, ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন আদিত্য সাহেব। তার চোখের কোণে জল ছলছল করছে। কমিশনার সাহেব (ইমান) নিজের….
জরুরী সকল জিনিস-পত্র গুছিয়ে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেন। জাহানারা বেগম ছেলেকে বাঁধা দিতে গেলে তিনি তাকে ধাক্কা মে’রে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে। পূর্বা রেগে গিয়ে মা কে বলে উঠলো,
– “হয়েছে এবার তোমার শান্তি?
তুমি কি এই সব কিছু নিয়ে কবরে যাবে? আর বাবা তুমি?
না জেনেশুনে সবসময় কথা বলো কেন? মাশীদ ভুল শোনেনি, মা ওই কথা গুলো’ই বলেছে এবং আমার সামনে বসে বলেছে।” তিনি হতভম্বের ন্যায় স্ত্রীয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন, বললেন,
– “অবশেষে, তুমি আমায় ‘ভুল প্রমাণ করে’ তবেই ক্ষ্যান্ত হলে?”
– “আমি কথা টা ওভাবে বলতে চাইনি।”
– “তুমি যে কি বলতে চেয়েছ তা আমার বোঝা হয়ে গেছে। একটা শুনে রাখো, জাহানারা।
আমার এই সকল সম্পত্তির এক মাত্র উত্তরাধিকারী হলো আমার ছেলে। তোমার আমার নিজস্ব কোনো সন্তান নেই।
কাজেই, তোমার প্রাক্তনে’র ছেলে-মেয়েরা আমার সম্পত্তি থেকে কানাকড়ি ও ভাগ পাবে না। তুমি যে আশায় এতবড় ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছ তা কখনোই পূরণ হবে না।”

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে