বাসনা বিসর্জন পর্ব-৫+৬

0
683

#বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৫

“তাও, ঠিক। তবে তোর প্রতি নতুন বড় সাহেবের আচার-আচরণ আমাদের একদম ঠিক লাগছে না।”
– “তুমি বলতে চাইছ স্যার আমাকে পছন্দ করেন?”
– “নিশ্চয়ই, তুই কারোর অপছন্দ হওয়ার মতো মেয়ে
‘ই না।”
– “এই টা একটু বেশি বলে ফেললে না?”
– “ভালো কথা বলি, সেগুলো তোর পছন্দ হয় না?” মিম এক দৌড়ে রান্না ঘরে চলে গলো, মাধবী বললো,
– “এই চঞ্চল স্বভাবের মেয়েটির সাথে দু’দণ্ড শান্তিতে দাঁড়িয়ে কথা বলা যায় না।
সারাক্ষণ, শুধু ছটফট করতে থাকবে।” বিন্তি মাসি মাধবীর কথা গুলো শুনতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন
– “কি রে? তোর কি হলো আবার?”
– “কিছু না মাসি,
তোমার কন্যা (মিম) হাতির পাঁচপা দেখেছে।” তিনি বললেন,
– “আমার কন্যা কি করলো আবার?”
– “কিছুনা,
আমি শুধু নতুন বড় সাহেব সম্পর্কে সাবধান করলাম
তাকে।”
– ‘হুমম, বুঝলাম।
তা এই এক প্যাচাল কতদিন পারবে? এখন, বাদদেও
মনোযোগ দাও নিজের কাজে।”
– “বুঝলাম, কিন্তু……………..।”
– “কোনো কিন্তু না, এই সব নতুন সাহেবের কানে গেলে বড়সড় একটা ঝামেলা হবে। মাঝখান থেকে নিষ্পাপ মেয়েটা ফেঁসে যাবে।
এতো দিন নিজে’র সন্তানে’র মতোন বুকে আগলে রেখে আমি কিছুতেই কষ্ট পেতে দেখতে পারবনা মেয়ে টাকে।”
মাসির কথা শুনে মুচকি হাসলো মাধবী। মিম কে গিয়ে বললো গোসল করে এসে সকলে’র সাথে বসে দুপুরের খাবার টা খেয়ে নিতে। মিম তার কথা মতোই কাজ করলো….। তবে, দুপুরের খাবার খেয়ে একটু গড়িয়ে নিলো মেঝেতে।
বিকেল উঠে আসরের নামাজ শেষ করে বই খুলে বসলো।ওদিকে, কমিশনার সাহেব দশজন পরীক্ষার্থী ‘র মধ্যে মিমের নাম টা দেখে বেশ অবাক হ’য়েছে। তিনি ওর ব্যাপারে ভালো করে জানতে কনস্টেবল তনয়া কে ডেকে পাঠালো।
এবং তার কাছ থেকেই জানতে পারলো মিম বর্তমান এ অনার্স ‘তৃতীয়’ বর্ষে লেখাপড়া করছে। স্টুডেন্ট হিসেবেও ভালো।
জেলে থেকেও সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজ বিভাগে প্রতিবার হাইয়েস্ট স্কোর করছে। আর মিম ছাড়া…..
বাকি ন’জন ছেলে যারা কিনা ভিন্নভিন্ন বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে।
এই সকল তথ্য পেয়ে কমিশনার সাহেব নিজে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে এলেন। সর্বশেষ তিনি মিমের সাথে দেখা করতে এসে দেখলেন মেয়ে টি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে।
তিনি তাকে বিরক্ত না করে কি ভেবে নিজের কফির মগ টা টেবিলের ওপরে রাখলেন? মিম না বুঝেই সেই মগ থেকে কপি খেয়ে মাধবীকে জিজ্ঞেস করলো,
– “বুবু, কফি কোথায় পেলে? গরাদে বুঝি আজ কাল নতুন ট্রেন্ড চলছে?” সাথে সাথে তনয়া এসে মিমের হাত থেকে কফির মগ টা কেড়ে নিয়ে বললো,
– “এটা কমিশনার সাহেবের কফির মগ। তুই কি করে কফি খেলি স্যারের মগ থেকে?” মিম সঙ্গে সঙ্গে যেন হতভম্ব হয়ে গেলো?
সে অনেক টা ভয় পেয়েই বললো,
– “আমি বুঝতে পারিনি। কিন্তু, স্যারের কফির মগ টা এখানে কি করছে?” তনয়া তার কোনো প্রশ্নের উওর না দিয়ে শাস্তিস্বরূপ মিমকে নিয়ে গিয়ে অন্ধকার রুম এ আটকে রাখলো সেখানে কিছুক্ষণ আটকে থাকার পর মিমের নিশ্বাস যেন ধীরে ধীরে ভারী হয়ে আসছে
একটু একটু করে দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো তার। হঠাৎ ভয়ে আতংকে চিৎকার করতে লাগলো সে।
ওর কাকুতিমিনতি শুনে বিন্তি মাসি গিয়ে তনয়াকে অন্ধকার ঘরের দরজা টা খুলে দিতে বললো।
তবে সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে এলো সেখান থেকে। যেতে যেতে বললো,
– “এই দরজা এখন শুধুমাএ কমিশনার সাহেব এলেই খুলবে। ততক্ষণ অব্ধি এখানে পচে ম*রুক। জেলার সাহেব ও আজ আসেননি, যে তিনি ওকে উদ্ধার করবে।” মিটিং শেষ করে, কমিশনার সাহেব আজ একটু আগেই বাড়িতে ফিরে গেলেন।
মাশীদ অসময়ে বাবাকে কাছে পেয়ে ভীষণ খুশি হয়ে
-ছে। তিনিও ছেলেকে পেয়ে ভীষণ খুশি। তবে তার অযথাই কেন যেন মিমের কথা ভেবে দুশ্চিন্তা হচ্ছে? বেশ কিছুক্ষণ পর, শোয়াইব ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে কমিশনার সাহেবের বাড়িতে হাজির হলো। তিনি রিপোর্ট পড়ে দেখলেন, তিনটি আলাদা আলাদা বইয়ের পাতায় বি*ষ লাগানো আছে।
যে বিষ লাগানো তা খুবই মারাত্মক। খু*নি আসলে মিমকে স্লো-পয়*জনিং করে মা*রতে চাইছে, ব্যাপার টা খুবই মারাত্মক। অপরাধী অনেক ভেবে চিন্তে মিম কে মে’রে ফেলার জন্য এই অভিনব প্লানিং করেছে।
এইসব কিছু ভাবতে ভাবতে কমিশনার সাহেব আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পরলেন। চিন্তায়, তার ভালো করে ঘুম হয়নি রাতে। পরদিন,
তিনি সকাল সকাল থানার জন্য বেড়িয়ে গেলেন।
উনি যেতে না যেতেই কনস্টেবল
রুকাইয়া সব কাহিনি খুলে বললেন কমিশনার সাহেব এর কাছে। তিনি খুব দ্রুত মিমকে বদ্ধ ঘর থেকে বের করে আনতে বললেন। ওকে বের করে আনার সময় দেখা গেলো সে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পরে আছে। সঙ্গে সঙ্গে ডক্টর ডেকে পাঠানো হলো। তিনি এসে মিমের চেক-আপ করে বললেন,
– “আবদ্ধতা জনিত ভয় অর্থাৎ “ক্লসট্রোফোবিয়া” থেকে পেসেন্টের এই অবস্থা হয়েছে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই।
হয়তো বা অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা থেকে ওনার আবদ্ধতা জনিত ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আমি এখনো শিওর নই। তবে….
‘কগনিটিভ বিহেভায়রল থেরাপি দরকার হয় ক্লসট্রো ফোবিয়া সরিয়ে তুলতে।”।
ডক্টরের কথায় প্রচন্ড খেপে গেলে কমিশনার সাহেব তিনি তনয়া কে ডেকে ধমক দিয়ে বললেন,
– “আমার অনুপস্থিতিতে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে কে বলেছে আপনাকে?”
– “আসলে স্যার?”
– “কি স্যার? সর্বেসর্বা বলে মনে করেন নিজেকে?” ওনার ঝাড়ি খেয়ে তনয়া চুপ। আজুয়াদ সাহেব এসে আরেক দফা ঝাড়লেন তাকে…………..
ততক্ষণে কমিশনার একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। তিনি গিয়ে তনয়া কে বললেন,
– “আপনাকে আগামী এক মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হবে।” এ কথা শুনেই তার চোখের জলে নাকের জলে অবস্থা। তবুও কমিশনার সাহেবের করুণা হ’য় নি তার কাকুতিমিনতি দেখে।
জেলার সাহেব (আজুয়াদ) ও তার সঙ্গে একমত হলেন। সাসপেন্ড করে দেওয়া হলো তনয়াকে। মিম এর তখনো জ্ঞান ফেরেনি। কমিশনার জেলার সাহেব কে বললেন,
– “প্রয়োজনে হসপিটালাইজ’ড করা হবে ওনাকে।” মিনিট দশেক পর,
মিমের জ্ঞান ফিরে এলো। কমিশনার কিছুটা দূরেই বসে ছিলেন তার কাছে। পাশে জেলার দাঁড়িয়ে তিনি কিছু বলা’র আগেই, কমিশনার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
– “এখন কেমন লাগছে? মলিন মুখে সে তখন জবাব দিলো।
– “বেশ ভালো।”
হঠাৎ মিম উঠে বসতে গিয়ে দেখলো হাতে ক্যানোলা পরানো আছে। কমিশনার সাহেব তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– “এতো ব্যস্ত হ’য়ে কোথায় যাচ্ছেন? আপনাকে যে বিশ্রাম নিতে হবে।”
– “একটা অনুরোধ করে ছিলাম।”
– “ভুলিনি, আগে আপনি সুস্থ হন। কাজের কথা পরে ও বলা যাবে।” দু’জনের সখ্যতা দেখে, ভীষণ বিরক্ত হলেন জেলার। তিনি বললেন,
– “স্যার, মিটিংয়ের সময় হয়ে গেছে।” তিনি বললেন,
– “ক্যান্সেল করে দিয়েছি, জনাব আজুয়াদ। আপনি এখন আসুন। কষ্ট করে, আমার অপেক্ষায় থাকতে হবে না আপনাকে।”
– “স’রি স্যার, সে (মিম) আমার পরিবারের একজন সদস্য আর আমি তাকে এই অবস্থায় ফেলে যেতে পারব না।” মিম মুচকি হেসে বললো,
– “যে সম্পর্ক টা এখন আর নেই। তার পরিচয় টা না দিলে হচ্ছিল না?”
– “তবুও, কোনো একটা সময়ে তো ছিল তাই না?” কমিশনার সাহেব একটু অবাক হয়ে বললেন,
– “কি ব্যাপার কি? আমাকে একটু খোলসা করে বলা যায় না?” মিম সোজাসাপ্টা উত্তর দিয়ে বললো,
– “উনি সম্পর্কে আমার ভাসুর হন। প্রাক্তনের সৎ ভাই, দ্যাট’স ইট। এর থেকে বেশি আর কিচ্ছু না।”
তখন আজুয়াদ দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন,
– “তুমি আমাদের ‘পর’ ভাবতে পারো, মিম। কিন্তু, আমরা কখনো’ই তোমাকে পর ভাবি না।”
মিম নিজের দৃঢ়তা বজায় রেখে বললো।
– “এতো ভণিতা না করে, কি চাই তা সরাসরি বলুন।
ভণিতা করা আমি মোটেও পছন্দ কারিনা।”
– “তুমি কি এর বাহিরে গিয়ে কিছু ভাবতে পারও না?
………..”
– “স’রি টু, সে। কিন্তু, আপনি আমার তেমন কেউ হন না।”
– “একটা বাহিরের লোকের (ইমান) সামনে বসে তুমি আমায় ইনসাল্ট করছ? তোমার কি একটু ও বাঁধছে না?”
– “যে পুরুষ, বাড়িতে বউ বাচ্চা রেখে সৎ ভাইয়ের প্রাক্তনের দিকে নজর দিয়ে বসে থাকে তাকে সম্মান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আমি মনে করি না।” মিম এ’র সরল কথা গুলো শুনে কমিশনার মৃদু হাসলেন। জেলার (আজুয়াদ) নিজের অপমান সহ্য করতে না পেরে আর এক মিনিট ও দাঁড়ালেন না। মিম নিজেকে সামলে নিয়ে কমিশনার সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “আপনাকে বিব্রত করার জন্য আমি দুঃখিত, প্লিজ আমায় অন্তত ভুল বুঝবেন না।” তিনি মুচকি হেসে বললেন,
– “আপনি অত্যন্ত স্নিগ্ধ এবং সাবলীল আর এটাই আপনার বাবা-মায়ের শিক্ষা।” মিম বললো,
– “বাবা মানুষ টা থেকেও নেই, ধরে নিন এটা আমার মায়ের শিক্ষা।”
– “হুমম, বুঝলাম৷
আপনি সব সময় সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করেন.
….।”
– “ভণিতা করা আমার একদম পছন্দ না। বিয়ের পর
তিনি (আজুয়াদ) আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন আর এখনো করে চলেছেন তার প্রচেষ্টা।
বাড়িতে ওনার সুন্দরী স্ত্রী আছে।
জানেন কি? আমার’ই বয়সী ওনার মেয়ে দু’ ইটা। মেয়েদের চোখে বাবারা হ’য় সুপার হিরো। কিন্তু, ইনি হলেন…..
যাগগে,বাদদেই। চরিত্রহীন লোক একটা।” কমিশনার নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বললেন,
– “আপনি শান্ত হন। দয়া করে, উত্তেজিত হবেন না। এই মুহুর্তে আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন। আমি তাই ওই বিষয় টি নিয়ে কথা বলতে চাইছিলামনা।” মিম তাকে চমকে দিয়ে বলে উঠলো,
– “ল্যাব টেস্টে বইয়ের পাতায় বি*ষয়ের ট্রেস পাওয়া গেছে তাই না?”ইমান বেশ চমকে তার দিকে তাকিয়ে রইলো, সে মুচকি হেসে বললো,
– “ডোন্ট ওয়ারি, স্যার। এইসব, আমার কাছে নতুন না। তারা এমন বৃথা আস্ফালন এর আগেও করেছে।
কিন্তু, জানেন কি?
যারা সবসময় আল্লাহ তায়া’লা রহমতের মধ্যে থাকে তাদের ক্ষতি করা চাইলেও সম্ভব না।
আমি এর আগেও, এমন সিচুয়েশনের মুখে পতিত হয়েছি।
যাগগে, সে সব অবিস্মরণীয় স্মৃতির পাতায় আমি আর কখনো বিচরণ করতে চাইনা।
সত্যি বলতে স্যার আপনাকে খামোখা বিরুক্ত করলা -ম। নিজের ব্যক্তিগত সমস্যায়……আমি আপনাকে জড়ানোর কোনো ইচ্ছে রাখি না।”
– “কিন্তু, আপনি চাইলে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি।”
– “এতটুকু যে করেছেন, তার ঋণ কি করে শোধ করবো আমি এখনো তার উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।” কমিশনার সাহেব তখন মুচকি হেসে বললেন,
– “কিছু ঋণ না হয় অপরিশোধিত থেকে যাক? সব ঋণ আবার শোধ করা যায় না।”

চলবে,,,

#বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৬

অতঃপর, কমিশনার সাহেব হঠাৎ বেশ চিন্তিত হয়ে পরলেন। তিনি অত্যন্ত নরম গলায়, মিমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– “দুঃখিত….!
আমি একটু কেয়ারফুল থাকলে আপনার সাথে এত বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে যেতো না।” মিম তাকে শান্ত ভাবে বললো,
– “ডোন্ট ওয়ারি। আল্লাহ তায়া’লা উওম পরিকল্পনা কারী। আমরা কেউ তার পরিকল্পনার উর্ধ্বে না।”
– “সো সুইট অফ ইউ। কিন্তু, আমার এবং জেলার সাহেবের অনুপস্থিতিতে এখানে যা কিছু ঘটে গেছে তা কখনোই কাম্য না।
আই কান্ট এক্সেপ্ট ইট আর আপনার কাছের আত্নীয় হিসেবে আজুয়াদ সাহেব ও নিশ্চয়ই এই বিষয় গুলো
‘র সাথে আপোষ করতে চাইবেন না।”
মিম মুচকি হেসে বললো,
– “উনি (আজুয়াদ) কি চাইলো না চাইলো তা নিয়ে আমার কিছু আশে যায় না।
আর ওনার ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে-
-ছে আজ পাঁছ বছর। আমি ওনাদের নিয়ে বিন্দু মাএ মাথা ঘামাচ্ছি না।
– “বাল্যবিবাহ হয়েছিল আপনার?”
– “হুমম, শত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হলো না। বাড়ি- তে পুলিশ এসেছিল তা ঠিক। কিন্তু,
কোরমা, পোলাও, গরুর গোস্তো, খাসি খেয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে এনজয় করে ফিরে গিয়ে ছিলেন তারা।
আমি আমার বাবার পা পর্যন্ত ধ’রে ছিলাম, জানেন? কিন্তু,ওই পাষাণ লোকটার হৃদয় কিছুতেই নরম হলো না। কোরআন,হাদীসে সারাজীবন পড়ে এসেছি কন্যা সন্তান হলো বাবা-মায়ের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ রহমত স্বরূপ।
কিন্তু, আমি আমার বাবার কাছে জন্ম নিয়েই হ’য়ে গেলাম বোঝা। তিনি এর রেষ ধরে, পুএ সন্তান লাভ এর আশায় দ্বিতীয় বিয়ে করলেন।
হলেন দু’ই পুএ সন্তানের পিতা আমি এবং আমার মা কোনো রকমে দিন পারছিলাম সেটাও আমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীয়ে’র সহ্য হলো না। তিনি আমার মায়ের নামে কুৎসা রটালেন। কোনো কিছু না ভেবে’ই শুধু মাএ ওনার মুখের কথায় মা কে ডিভোর্স দিলেন বাবা
…..।
তারপর, আমার ও বিয়ে হয়ে গেলো৷ সেটাও, ওনার ওই দ্বিতীয় স্ত্রীয়ের ইচ্ছা। যদিও, আমি এখন সে সব থেকে বেড়িয়ে এসেছি।
কিন্তু, নিজের মায়ের অপমান এখনো ভুলতে পারিনি
বা হয়তো কখনো পারবোনা। আমি মনে করি আল্লাহ তায়া’লা ন্যায় বিচারক আর যেই আমাকে ঠকানোর চেষ্টা করুক না কেন তিনি কখনো আমাকে ঠকাবেন না। সে যাই হোক,
অনেক বাজে কথা বলে ফেললাম। আপনার সময় নষ্ট করার মতোন কোনো ইচ্ছে’ই আমার ছিলো না।” ও কথা শুনে কমিশনার সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বললেন,
– “একদম চিন্তা করবেন না, রুহের হায় বলে একটা কথা আছেনা?
আল্লাহ ছাড়দেন কিন্তু কাওকে ছেড়ে দেন না। হয়তো আজ তারা হাসছে। কিন্তু, কাল যে কাঁদবে না এমন গ্যারান্টিও তারা দিতে পারছেনা। সো, রিল্যাক্স। এই ধরনের মানুষের কথা চিন্তা করে আর কখনো কষ্ট পাবেন না। আমি অনুমান করতে পারছি আপনি স্ত্রী হিসেবে দারুণ ছিলেন। তবে আপনার স্বামীর কপাল খারাপ।
তিনি বুঝতে পারেননি, হীরে এবং কাঁচের পার্থক্য টা। আমি বলে দিচ্ছি
“উনি একদিন আফসোস করবেন।”
তখন অনুশোচনা করে বেড়ানো ছাড়া ওনার বিশেষ কিছু করার থাকবে না।”
মিম কমিশনার সাহেবের কথা শুনে অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো, মাঝেমধ্যেই,এই মানুষ টা কে সে মেলাতে পারেনা।
অদ্ভুত! সব কাজ-কর্ম লোকটার। মাঝেমধ্যে আবার ভাবে ও মাটিতে পা পরেনা। তারপর,
বিন্তি মাসি এসে ওর মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে জিজ্ঞেস করলেন।
– “কি রে মা? এখন ভালো লাগছে তোর শরীর টা?”
মিম ঘোর কেটে বেড়িয়ে এলো, সে মাসির বুকে মাথা রেখে বললো,
– “আর বলো না মাসি, একটু একটু করে ঝিমঝিম করছে মাথাটা।” পাশ থেকে মাধবী বললো।
– “হুমম, তা তো করবেই। নিজের খুব যত্ন করো তাই না?” সে তখন হাসতে হাসতে বললো,
– “বুবু,
তুমি কি আমাকে বকা দেওয়ার একটাও সুযোগ মিস করবে না।” মাধবী ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “অসম্ভব!
এখানে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা, বকুনি খাওয়ার জন্য তুমি একাই আছো সোনা।”
– “ছোটো বলে যা ইচ্ছে তাই করবে?”
– “খুব যেন বড় হয়ে গেছো তাই না?”
– “বুবু, এক বাচ্চার মা কে তো আর ছোটো বলা চলে না।”
– “আসলেই, তোকে এখনো দশ বার বিয়ে দেওয়া যাবে। কি বলো বিন্তি মাসি? আমার হিসেব ঠিক আছে না?”
– “হিসেব ঠিক আছে, কিন্তু মা জননী বিয়ে করলেও আর আমাদের নিশ্চয়ই দাওয়াত দিবে না?” মিম মুখ কালো করে বললো,
– “এটা কোনো কথা?”মাধবী হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো,
– ” তুই জেল থেকে ছাড়া পেলে আমাদের ভুলে যাবি তাই না?” মিম মাধবীর হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বললো,
– “অসম্ভব, কখনোই না। আমার মা সবসময় একটা কথা বলে তোমার জানো?
মা বলেন,”উপকারীর উপকার কখনো ভোলা উচিত না।” বিন্তি মাসি আমাকে গত পাঁচ বছর ধরে নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছেন।
আমি মনে করি তিনি আমার দ্বিতীয় মা। আমার এক টা বড় বোনের আক্ষেপ ছিল। তুমি সেটা ঘুচিয়ে দিয়ে
‘ছ বুবু তোমাকে তোমাদের আমি কখনোই ভুলবো না
………। আমার বাড়ির সদর দরজা আর কারো জন্যে না খেলা থাকুক, তোমাদের সবাই জন্য খেলা। তোমরা এখানে আমার সুখ দুঃখের সঙ্গী হয়ে থেকেছ
আমাকে সঙ্গ দিয়েছ, আমাকে ভালোবেসেছ, জানি না,
আমি তোমাদের এতো ভালোবাসা পাওয়ার কখনো যোগ্য ছিলাম কি না? তবে আজ একটা কথা ভালো করে জেনে রাখো,”আমি কখনো উপকারীর উপকার ভুলি না।”
বিন্তি মাসি মিমকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো। মাধবী মিমকে হাসাতে বললো,
– “বাড়ি ফিরে গিয়ে কিন্তু আমাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবি না।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “পাগল হয়েছ তুমি? কখনো’ই না।” বেশ কিছুক্ষণ পর,
রাকা মিমের জন্য খাবার নিয়ে এলো। মিম তাকে একটু চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি ঠিক আছো খালা?”
– “আমাকে দেখে মনে হয়, আমি অসুস্থ আছি?” মিম বললো,
– “নাহ, তবে তুমি কেন আমাকে বকছ না?” তিনি মৃদু হেসে বললেন,
– “হ্যাঁ, তোকে কথা শোনানো ছাড়া আমার যেন সারা দিন কোনো কাজ নেই তাই না?”
– “তুমি আসলে আমাকে নিয়ে দুঃশ্চিতা করছ। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে চাইছ না।” তিনি হঠাৎ মিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– “তোর ওই দিন বৃষ্টিতে ভোজা উচিত হ’য়নি মা। নতুন বড় সাহেব ভালো মানুষ বলে অন্যকেউ ভালো মানুষ হবে আমি সেই গ্যারান্টি তোকে দিতে পারছি
না।” মিম যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাকরুদ্ধ ‘হয়ে গেলো। সে বলে উঠলো,
– “আমাকে কি বোঝাতে চাইল খালা?” তখন মাঝ রাত,
জেলার সাহেবের কিছুতেই দু’চোখের পাতা এক কর
-তে পারছেনা। তার স্ত্রী রুবিনা স্বামীর হাবভাব দেখে তাকে খোঁচা মে’রে বকে উঠলো,
– “নিজের মেয়ের বয়সী মেয়েটার (মিম) তাচ্ছিল্যে ভরা প্রত্যাখ্যান তোমার কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না। তাই না?
কি অবস্থা তোমার? তোমাকে দেখে কষ্ট লাগে জানো
? একটা বাচ্চা মেয়ে আর তাকে কি-না তুমি নিজের
বশে আনতে পারছনা?
সে তোমার বাচ্চার মা হবে, এটা তোমার দুঃস্বপ্ন জানো? আমার মনে হ’য় তোমার এই দিবাস্বপ্ন কখ- নোই পূরণ হবে না।” সাথে সাথে রুবিনার গালে এক টা চর পরলো, সে হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
– “আমি খুশি, আমি যেটা করতে পারিনি সেটা করে দেখিয়েছে ওই বাচ্চা মেয়ে টা।
আর একটা কথা বলে রাখি।
তোমার এই দাপট বেশিদিন টিকবে না। মিমকে আমি যতদূর চিনেছি, জেনেছি এবং বুঝেছি ও তোমাদের সবার এমন অবস্থা করে ছাড়বে যা তোমরা কল্পনা ও করতে পারছনা।” আজুয়াদ রুবিনার কথা শুনে মৃদু হেসে বললো,
– “তুমি বিষয় টি যত টা সহজ ভাবছ সব কিছু এতো সহজ না। মিমের কিছু করার থাকলে আগেই করতো
এভাবে বসে বসে, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে জেলের ভাত খেতো না।” রুবিনা তখন ধূর্ত হেসে ফিসফিস করে বললেন,
– “হুহ্,
ওই বাচ্চা মেয়ে টা যে কত টা বুদ্ধিমতী। তোমরা শত চেষ্টা করেও তার টিকি টি ছুঁতে পারবেনা তোমার ধ্বং*স আসন্ন আজুয়াদ চৌধুরী।
তুমি নিজের সামলে নেওয়ার সুযোগ টুকুনি পাবে না।
আর বাচ্চা টাও তার মায়ের (মিম) কোলে নিরাপদে থাকবে। কিন্তু, তোমরা তার ধারে কাছে পৌঁছাতে পারবে না……।
তোমার ধ্বং*স,সুনিশ্চিত। তুমি আর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেনা। এক বার তোমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারলে তোমার বাপ, ভাই, মা এবং সৎ মা আর কিচ্ছু করতে পারবেনা।
কিচ্ছু না।” আজুয়াদ, রুবিনা কে হঠাৎ চুপচাপ হ’য়ে দেখে বললো,
– “কি ব্যাপার? থেমে গেলে যে? আর বুঝি, আমায় ভাষণ দিতে ইচ্ছে করছে না?”
– “তোমার মতোন একটা লাজহীন লোকের পেছনে আমি আর আমার সময় বরবাদ করতে চাই না।” সে মিটিমিটি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
– “আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছ, বুঝি?”
– “ডিভোর্স দিতে পারলে কবেও ছেড়ে চলে যেতাম। এখানে অপমান অসম্মান সহ্য করে পরে থাকতাম না
………. তবে আমি মিমের কথা ভাবছি, জানো? তুমি মেয়েটার মন জিতে নিলেও কখনো নিজের স্বভাব চরিত্র বদল করতে পারবেনা।
বহুগামিতা তোমার রক্তে মিশে আছে। তোমাদের মত পুরুষ মানুষ ঘরের বউ আর পতিতালয়ের পতিতার পার্থক্য বোঝেনা।” আজুয়াদ তখন নিজের হাত শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে বললো,
– “আমি নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে বদলে ফেলবো, রুবি।
শুধু মাএ একবার ওর (মিম) এই বাড়িতে আবার ও বউ হ’য়ে আসার অপেক্ষা। তুমি তোমার সতীন কে বরণ করে নেওয়ার জন্য তৈরি হ’য়ে থাকো রুবি।
সত্যি বলতে,আমার অন্তরের সাথে মিশে আছে মেয়ে টা।” তখন সকাল সাতটা,
মিম কোরআন তেলাওয়াত করে ঠিক বিন্তি মাসি কে বললো,
– “আমার শরীর টা সকাল থেকে একটুও ভালো লাগছে না।” বিন্তি বললেন,
– “ডাক্তার সাহেব কে একবার ডেকে পাঠাই?” মিম মুচকি হেসে বললো,
– “আলহামদুলিল্লাহ্, আমি একদম ঠিক আছি মাসি। তোমরা যতটা ভাবছ ততো টাও অসুস্থ না।”

চলবে,,

পর্ব- ৫

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে