বাসনা বিসর্জন পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0
1039

#বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
অন্তিম পর্ব- ১৫

মিম নিজেকে সামলে নিলো। কমিশনার সাহেব এসে বসলেন তার পাশে। মিম ধীরে ধীরে তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে লাগলো।
তিনি মিটিমিটি হেসে বললেন,
– “তোমার কি মেঝেতে পরে কোমড় ভাঙার শখ জেগেছে?” মিম তার দিকে তাকিয়ে পরলো সে বলল
– “কি হুমম? নিজে ব্যাথা পাবে সাথে বাচ্চা দু’টো র ও একটা বিপদ ঘটে যাবে।” ও আমতা করে বললো
– “আমি দুঃখিত।”
– “কেন দুঃখিত?
এই ঘরসংসার এখন তোমার, তোমার সংসার তুমি তোমার মতো করে সাজাবে।” কথাটা শুনে মিম স্থির হ’য়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।
সে হঠাৎ বউয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– “তোমাকে আজ অনেক বেশি আকর্ষনীয় দেখতে লাগছে।”
মিম শুকনো ঢোক গিলে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে বউয়ের জন্য কেনা গিফট টা এগিয়ে দিলো তার কাছে…মিম সেটা গুলে দেখলো একটা এক জোড়া মণিমুক্তা খচিত বালা।
তিনি মুচকি হেসে বউকে জিজ্ঞেস করলেন,
– “তোমার পছন্দ হয়েছে?” মিম তার দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
– “পরিয়ে দিন।” তিনি বালা জোড়া নিজে’র হাতে পরিয়ে দিলেন স্ত্রী’য়ের হাতে। মিম আচমকা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
তিনি বউয়ের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
– “কি ব্যাপার? হুমম? ভয় করছে?”
– “কোই না তো?”
– “বেশি আবেগি হ’য়ে পরেছ?”
– “আমি কি এমন কিছু বলেছি আপনাকে?”
তিনি বউয়ের কথা শুনে হাসতে লাগলেন। ছেলেদের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললেন,
– “যাও গিয়ে জামা-কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। শরীর টা ভালো লাগবে।” মিম তার কথা শুনে মুচকি হাসলো।
ফ্রেশ হয়ে এসে স্বামীর পাশে বসে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপনার শরীর ঠিক আছে?” তিনি আলতো করে বউয়ের হাত চেপে ধরে বললো,
– “হুমম, তোমার কি খিদে লেগেছে?”
– “নাহ..!
তবে কি আপনার কোনো কারণে মন খারাপ হ’য়ে আছে?” উনি ও বাড়ির কথা মাথা ঝেড়ে ফেলে বলল
– “কোই না তো? মন কেন খারাপ হবে?”
– “না আসলে আমাদের বিয়েতে আপনার বাড়ি থেকে কেউ উপস্থিত ছিলনা।
ওনারা কি মেনে নিতে পারেনি আমাকে? যদি আমার জন্য ওনারা আপনার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তাহলে আমার খুব খারাপ লাগবে কষ্ট হবে। কারণ, আমি চাইনা আমার জন্য আপনাদের সম্পর্ক টা নষ্ট হয়ে যাক। পরিবারের গুরুত্ব অনেক আমার কাছে।”
তিনি হাসতে হাসতে বউকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– “ওদের কথা বাদ দাও, আমি এমনিতেও যোগযোগ রাখি না তাদের সাথে।
বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর,তিনি আমাকে ভুলে গেছেন উনি আমায় মনে রাখলে এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হতো না আমাকে…….! উনি ওনার দ্বিতীয় স্ত্রী দ্বারা খুবই প্রভাবিত। তার তিন সন্তানকেও নিজের বলে ভাবে অথচ আমি নিজ তার রক্ত হ’য়েও কখনো ছাড় পাইনি। ওনাদের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমায় বিয়ে করা’র জন্য ওনারা তেজ্যপুএ করেছেন আমাকে।
অবশ্য, আমার এই নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। জানো? দাদাভাই তার সমস্ত সম্পত্তি আমায় লিখে দিয়ে যাওয়ার পরেও বাবা তার দ্বিতীয় স্ত্রী’র বুদ্ধিতে আমায় ইমোশনাল ব্লাক*মেল করে সব নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে।
আমি সবই বুঝতাম, কিন্তু কখনো কিছু বলিনি তাকে
আমার প্রথম বিয়ে টা তাদের পছন্দে হয়ে ছিল। তবে সেই বিয়ে টা দীর্ঘস্থায়ী হ’য়নি।
আর এখন আবার তাড়া আমাকে আমার শালীর সাথে বিয়ে দেওয়ার পায়তারা করছে। উদ্দেশ্য একটা’ই আমার এতোদিনের কষ্টে অর্জিত ধনসম্পদ
এর দিকে তাদের চোখ পরেছে। নাদিয়ার সাথে বিয়ের পর,
আমার সৎ মা কথায় কথায় আমার টাকা-পয়সা বাড়ি-গাড়ি সব নাদিয়ার নামে লিখে দিতে বলতো কেন বলতেন। তা আজ স্বচ্ছ কাঁচের মতো স্পষ্ট আমার কাছে।
ভাগ্যিস, তার কথায় প্রভাবিত হ’য়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসিনি। বসলে এখন সব হারিয়ে পথের ফকির হয়ে বসে থাকতে হতো আমাকে।”
– “তবুও ইসলামে আত্নীয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত না।”
– “সম্পর্কে ছিন্ন করার মতো কাজ আগে ওনারাই করেছে আর এখন…..!
তুমি শুধু উপলক্ষ মাএ এখন বাবার সম্পত্তি হাতানো
‘র জন্য ওই মহিলা এই ফন্দি এঁটেছে।”
– “আপনি কিছু করবেন না?”
– “নাহ, নিজের সন্তানের থেকে একজন পতিতালয়ে বে***বৃত্তি করে বেড়ানো মহিলা বেশি বিশ্বাস যোগ্য মনে হলে আমি আর কি ভাবে সাহায্য করতে পারি তাকে?
গত এক বছর ধরে ওনাদের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ ছিলনা। ভেবেছিলাম,
আমাদের বিয়ে উপলক্ষে সব টা ঠিক করে নেবে তাদের সাথে। কিন্তু, তখন’ই জাহানারা বেগম তার আসল রূপ টা দেখিয়ে দিলেন। উনি আসলে ভালো মানুষ সেজে থাকেন সকলের সাথে।” মিম তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
– “প্রয়োজনে আমি কথা বলবো বাবার সাথে।” উনি হঠাৎ করে’ই বউয়ের চোখে চোখ রেখে বললেন,
– “তবে সুনিশ্চিত, তুমি আমার ম’রা মুখ দেখবে।” মিম যেন সঙ্গে সঙ্গে আৎকে উঠেলো, বললো,
– “আপনার মাথা ঠিক আছে?”
– “আছে, তবে তুমি আমায় ওনাদের সাথে সব কিছু মিটমাট করে নিতে বললে আমার মাথা টা কিন্তু আবারও খারাপ হয়ে যাবে।”
ওনার কথা শুনে দুশ্চিন্তায় পরে গেলো মিম। হঠাৎ তিনি বেড়িয়ে গেলেন ঘর থেকে। এতে মিম কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর,
তিনি ঘরে হাজির হলেন থালায় সুন্দর করে খাবার সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। মিম তার কাণ্ড-কারখানা দেখে হেসে ফেললো, তিনি বললেন,
– “আমি জানি তোমার মাঝ রাতে এটা-সেটা খেতে খুব ভালোলাগে।” তার কথা শুনে মিম লজ্জা পেলো। কমিশনার সাহেব মুচকি হেসে বললেন,
– “তোমার জন্য বিরিয়ানি রান্না করিয়ে রেখেছিলাম খোদেজা খালার কাছ থেকে।
যদিও তার হাতের রান্নায় এতো স্বাদ নেই।” মিম মৃদু হেসে বললো,
– “সমস্যা নেই কাল না হ’য় আমি বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়াবো আপনাকে।” বউয়ে’র কথা শুনে হাসলেন তিনি এগিয়ে এসে বললেন,
– “উঠে বসো, আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে।” মিম বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো সে মিটিমিটি হেসে বললো,
– “স্ত্রী কে খাইয়ে দেওয়া সুন্নত।” মিম ও তখন হাত ধুয়ে এসে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে লাগলো তাকে। ও কথায় কথায় কমিশনার সাহেবের কাছে জিজ্ঞেস করলো,
– “আমরা কি পূর্ব পরিচিত?” তিনি বউকে মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিতে দিতে বললেন,
– “হুমম, তোমার জন্য’ই ময়মনসিংহ থেকে ট্রান্সফার নিয়ে এসেছি ঢাকাতে।” ও সঙ্গে সঙ্গে বিষম খেলো। কমিশনার সাহেব তাকে পানি খাইয়ে শান্ত করে বললেন,
– “গত দেড় দুই বছর ধরে’ই তোমার ব্যাপারে শুনে এসেছি রুবি আপা আর খোদেজা খালার মুখে। খালু জান ও কম জিকির করেননি।
তাই খুব কৌতূহলী হয়ে ট্রান্সফার নিয়ে এসেছিলাম ঢাকাতে। প্রথম দেখা হওয়ার পর, তোমার আচার- আচরণ মুগ্ধ করেছিল আমাকে।
তোমার কোরআন তেলাওয়াত শুনতে আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল। তোমাকে ভালো লেগেছে। তুমি খুব কম বয়সে’ই আঘাত পেয়ে বাস্তবতার মুখোমুখি হ’য়েছ।
খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ম্যাচিউরিটি চলে এসেছে তোমার মাঝে।”
মিম স্থির হ’য়ে তাকিয়ে রইলো। সে হঠাৎ বরে’র বুকে মাথা রেখে বললো,
– “আমি জানি, আজ আপনি হয়তো অনেক আশা নিয়ে এসেছেন আমার কাছে।
আমি মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে আমার এ্যাড-জাস্ট করতে একটু সময় লাগছে।” তিনি বউয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
– “বৈবাহিক সম্পর্কে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা ছাড়াও আরও অনেক বিষয় আছে।
শুধু শারীরিক সম্পর্কের জন্য আমি তোমাকে নিজের স্ত্রী রূপে গ্রহণ করিনি আমি বুঝতে পেরেছিলাম, তুমি আমাকে আমাদের দুই সন্তানকে সারাজীবন নিজের কাছে আগলে রাখবে। আমাদের ভালোবাসবে।” মিম তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “এখন আপনার শুয়ে পরা উচিত…………..! কাল সকাল সকাল আবার অফিসে’র কাজে বেড়িয়ে পরতে হবে।”
– “চাপ নিয়ো না।”
– “কেন?”
– “ছুটি নিয়েছি অফিস থেকে। বিয়েতে সেভাবে কাও কে নিমন্ত্রণ করতে পারিনি।
ওদিকে, আমাদের রিসেপশনে আসার জন্য বন্ধুবান্ধব অফিসকলিগ সকলে মুখিয়ে আছে।” স্বামীর কথা শুনে হেসে উঠল মিম। তার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো,
– “চোখ বন্ধ করুণ,
একটু ঘুমানোর চেষ্টা করুণ। আমি আছি আপনার পাশে, আপনার কাছে।”
– “সারাজীবন থাকবে তো?”
– “মৃত্যু ব্যাতীত আর কেউ আমাকে আলাদা করতে পারবে না আপনার কাছ থেকে।”
স্ত্রী’র বলা শেষ কথাটি তার বুকে গিয়ে বিঁধলো। এত দিন পর, সে অনুভব করলো তার একজন ব্যক্তিগত মানুষ আছে। যার কাছে, সে অনায়াসে নিজের সকল মনের কথা গুলো খুলে বলতে পারবে নিজের ‘বাসনা বিসর্জন’ দিতে পারবে যার সুখের কথা ভেবে।”

…………………..সমাপ্ত………………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে