বাসনা বিসর্জন পর্ব-১৩+১৪

0
765

#বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৩

ওরা দু’জনে কমিশনার সাহেবের কথা শুনে হাসতে লাগলো তিনি ঘরে এসে চেয়ার টেনে বসলেন মিমের পাশে। নিবেদিতা ক্যামেলিয়া চলে গেলো। তিনি সারা রাত বসে ছিলেন মিমের কাছে।
তখন ভোররাত, মিম ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখলো কমিশনার সাহেব তার পাশে বসে ঘুমচ্ছে। ও উঠে তার গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিলো।
তারপর, ফ্রেশ ‘হয়ে এসে নামাজ পড়ে চলে গেলো সকালে’র নাস্তা তৈরি করতে। কিছুক্ষণ পর,নিবেদি -তা গিয়ে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো। তিনি উঠে জিজ্ঞেস করলেন,
– “তোমাদের আম্মু কোথায় গেছে?” ও মিটি মিটি হেসে বললো,
– “নিচে এসে দেখুন, অবশ্য।
তার আগে সোনা আম্মু আপনাকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলেছে।” তিনি ঘরে এসে ফ্রেশ হলেন, জামাকাপড় ছেড়ে ইউনিফর্ম পরতে গিয়ে বুঝলেন মিম সেটা ধুয়ে দিয়েছে।
উনি বুঝতে পারলেন না মেয়ে টা কখন এতো কিছু করেছে? তিনি ঝটপট তৈরি হ’য়ে নিচে চলে এলেন মিম নাস্তা দিতে লাগলো সবাইকে। তখন কমিশনার সাহেব তাকে জোর করে টেনে এনে চেয়ারে বসিয়ে দিলেন, জিজ্ঞেস করলেন,
– “এখন আপনার শরীর টা কেমন লাগছে?” মিম তার প্লেটে নাস্তা তুলে দিতে দিতে বললো,
– “মাচ বেটার।”
তিনি ফিসফিস করে বললেন,
– “এতো কষ্ট করে আমার ইউনিফর্ম টা কেউ ধুতে বলেনি আপনাকে।”
মিম তার কথা কানে তুললল না সে মুখে খাইয়ে দিতে লাগলো মাশফি মাশীদকে। বেলা দশটায়,
কমিশনার সাহেব মাশীদকে নিয়ে বাসায় ফিরে গেলে -ন মাশীদ বাবাকে বললো,
– “তুমি কি জানো? মমি আমাদের জন্য টিফিনবাক্সে খাবার দিয়ে দিয়েছে ড্রাইভার চাচ্চুর কাছে।”
– “রেয়ালি?”
– “হুমম, অনেক মজার মজার খাবার। আমার জন্য আলাদা করে চকলেট ডোনাট বানিয়ে দিয়েছে।”
– “সত্যি?”
– “হুমম, জানো আরও কত কি আছে?
চকলেট সন্দেশ,লাড্ডু,কাস্টার্ড আরও আরও অনেক কিছু আছে।”
– “তাই?”
– “জ্বি, তুমি কাজে যাবে না আজকে?” তিনি ছেলের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন।
– “না বাবা।”
– “তাহলে আমাকে মেলা দেখাতে নিয়ে যাবে তোমার সাথে?”
– “কিন্তু…..!”
– “কিন্তু কিন্তু করছ কেন? জানো? মাশফি ও আজ মেলায় যাবে ম-মির সাথে।”
– “তাই?”
– “কি তাই? তুমি তো কোথাও নিয়ে যেতে চাও না আমাকে।” তিনি হাসতে হাসতে কান ধরে বললেন
– “স’রি ভুল হয়ে গেছে বাবা।”
– “যাও, কথাই বলবো না। আমি রাগ করেছি তোমার সাথে।”
– “আচ্ছা বাবা মেলায় নিয়ে যাবো কেমন?” মাশীদ তখনো গাল ফুলিয়ে রেখেছে। তিনি ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে লাগলে ন হঠাৎ মাশীদ মন খারাপ করে বললো,
– “তুমি ম-মির মতো একটা মাম্মা এনে দিতে পারো না আমাকে?” তিনি মুচকি হেসে ছেলেকে বললেন,
– “যদি……!
ম-মি কে-ই এনে দেই তাহলে কেমন হবে?”ও বললো,
– “ম-মি আমাদের কাছে আসবে কেন? হুমম? মমির নিজের সব কিছু আছে। শুধু আমারই মাফশির মতো একটা সুইট ম-মি নেই।
জানো? ম-মি কত আদর করে আমাকে? সকালে আমাকে ঘুম থেকে তুলে দাঁত ব্রাশ করিয়েছে তারপর আমার জামা-কাপড় ও বদলে দিয়েছে।”
– “ডু ইউ লাইক ম-মি?”
– “নো, আই লাভ ম-মি।” তিনি হাসতে হাসতে ছেলে কে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
– “আচ্ছা এই ম-মি টাই এনে দেবো তোমাকে।” তখন
মাশীদ বাবাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো।
– “ডু ইউ লাইক ম-মি?” তিনি ছেলে’র কথা শুনে মিটিমিটি হেসে বললেন,
– “নো, আই লাভ ম-মি।”মাশীদ তখন হাসতে হাসতে বাবাজে বললো,
– “তোমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দেবো ম-মির সাথে।”
– “তোমার ম-মি যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হন?”
– “তখন নাটক করে ভয় দেখাবে ম-মিকে, ভয় পেয়ে ম-মি রাজি হলেই হলো।
তুমি বিয়ে করে নেবে তাকে।”কমিশনার সাহেব ছেলে ‘র কথা শুনে বললেন,
– “কিভাবে ভয় দেখাব তোমার ম-মিকে?” মাশীদ বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,
– “তোমার মাথায় কি একটু ও বুদ্ধি নেই?
সব আমাকেই শিখিয়ে দিতে হবে? শোনো তবে,ছবির মতো তুমি আমাকে আর মাশফিকে লুকিয়ে রাখবে।”
– “মানে কি?”
– “কিড*ন্যাপ করবে।”
– “তারপর………….?”
– “ফোন করে ভয় দেখাবে ম-মি (মিম) কে।”
– “আর?”
– “ধুরর, একটুও বুদ্ধী নেই তোমার মাথায়। সব দেখি আমায় শিখিয়ে দিতে হচ্ছে।” ছেলের মাস্টার প্ল্যান শুনে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি খেলেন কমিশনার সাহেব। ছেলের কাছে জিজ্ঞেস করলেন,
– “তোমার কি বাবাকে জেলের ভাত খাওয়ানোর শখ হ’য়েছে?”
– “কেন?”
– “একইরকম করলে তোমার ম-মি জীবনেও বিয়ে করবে না আমাকে।”
– “বিকেলে যাবো কিন্তু।” তিনি হাসতে হাসতে ছেলে কে বললেন,
– “একবার কথা যখন দিয়ে ফেলেছি তখন কি না যেয়ে আর কোনো উপায় আছে?”মাশীদ বাবার নাক টেনে বললো,
– “আমার ভালো ছেলে।” কমিশনার সাহেব হাসতে লাগলেন ছেলের কান্ডকারখানা দেখে। বিকেলে তিনি স্ব-পুত্রক মেলায় উপস্থিত হলেন।
মেইন গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখলেন কিছুটা দূরে
‘ই মিম বাচ্চাদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাশীদ ছুটে গিয়ে মাশফি কে জড়িয়ে ধরলো।
মিম সামনে তাকিয়ে দেখলো ভদ্রলোক হাসি-হাসি মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে মিম তাকে দেখে কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। ক্যামেলিয়া নিবেদিতা কে খোঁচা বললো,
– “বুঝলি বোনু, তাদের দু’জনকে একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করার সুযোগ করে দিতে হবে।”
– “সে যা বলেছিস, এই বিচ্ছু পার্টি নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব কেটে পরতে হবে।”
– “চলনা আমরা ওদিক টায় গিয়ে ঘুরে আসি। এদিক আঙ্কেল দেখে রাখবে।”
– “দু’ই বোনের মধ্যে কি এত গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর হচ্ছে শুনি?”
– “বলেছিলাম,আম্মু আমরা একটু ঘুরে আসি ওদিক থেকে? তুমি আঙ্কেলর সাথে বসো। আঙ্কেল, আপনি প্লিজ একটু দেখে রাখবেন মা কে।” তিনি হাসি মুখে বললেন,
– “অবশ্যই মামণি।” তারপর,
কমিশনার সাহেব দু’জন কনস্টেবল পাঠিয়ে দিলেন বাচ্চাদের সাথে।
মিমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– “একদম নিশ্চিন্তে থাকুন, ওনারা বাচ্চাদের দেখে রাখবে।”
মিম তার কথা শুনে মুচকি হাসলো কমিশনার সাহেব তাকে চমকে দিয়ে বললেন,
– “আকাশী কালারের রং টায় আপনাকে ভীষণ মানি
-য়েছে।”
– “ধন্যবাদ।”
– “সত্যি’ই ভীষণ সুন্দর লাগছে, আপনাকে দেখতে।
– “বলছিলাম, আমরা একটু এগিয়ে গিয়ে বসি?”
– “শিওর….!
– “তা বিয়ের ভূত নেমেছে আপনার মাথা থেকে?” – “না ম্যাডাম, আপনার ভাবি মা এলে আমি সরাসরি প্রস্তাব দেবো তার কাছে।”
– “পাগল হয়েছে আপনি?”
– “সত্যি বলতে আমার সুস্থ বলে মনে হয়না নিজেকে
….।” মিম তার কথা শুনে হাসতে লাগলো। কমিশনার সাহেব তখন একজন ফুচকাওয়ালাকে ডেকে বললো
– “মামা দু’প্লেট ফুচকা দেন এদিকে।
একটায় ঝাল হবে আরেক টা ঝাল ছাড়া দিতে হবে।”
মিম মন খারাপ করে বললো,
– “বাচ্চাদের ছেড়ে নিজেরা নিজেরা খেয়ে নেবো? আমার কেমন যেন লাগছে।”
– “ডোন্ট ওয়ারি। আমার জাস্ট, ফুচকাই খাচ্ছি। কি আর এমন হয়েছে তাতে?”
– “তবুও…!”
– “বাচ্চারা ফিরে এলে কিনে দেবো, কেমন? এবার খান নয়তো খাবার বদদোয়া দেবে।”
– “খাবার ও বদদোয়া দেয়?” মিমের কৌতুহল দেখে তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
– “হুমম দেয় তো, ছোটো বেলায় অনেক শুনেছি মায়ের মুখে।”
– “আপনি আন্টিকে অনেক মিস করেন, তাই না?”
– “হ্যাঁ, তা একটু করি।
আমার ছেলে টাও ঠিক আমার মতোই পোড়া কপাল নিয়ে জন্মেছে।”
– “দয়া করে এভাবে বলবেন না।”
– “তাহলে আর কিভাবে বলবো বলুন? আমি না বললে কি সত্যি টা কি বদলে যাবে?”
– “তবুও,
যে জিনিস টা আপনাকে কষ্ট দেয় সেই জিনিস মনে না করাই উত্তম।”
– “মনে না করতে চাইলেও সে সব জিনিস আপনা থেকেই মনে চলে আসে। কি আর করি বলুন? প্রতিটি মানুষের জীবনে তার কিছু একান্ত ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ থাকে। যেটা না কারো কাছে মুখে ফুটে স্বীকার করা যায় আর না চিৎকার করে উগড়ে দেওয়া যায়। কিছু জিনিস আর কিছু ঘটনা নাড়িয়ে দিয়ে যায় আমাদের অন্তর টাকে।
কি বলুন তো? নিজের ‘বাসনা বিসর্জন’ দিতে দিতে আমার অনুভূতি গুলো ভোতা হয়ে গেছে…….. এখন যাকে (মিম) আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছি। সে হ’য়তো বা নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্য আমার সাথে নিজ থেকে জড়াতে ভয় পাচ্ছে। একটা কথা বলি, মিম। আপনি অতীত কি করেছেন আর কি করেননি সত্যি আমার কিছু যায়-আসে না তাতে।
অতীত জীবন নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমি আপনাকে ভালোবাসি, কারণ সেটা আমার মন থেকে অন্তর থেকে আসে।
এখনো আপনার জন্য আমার মনের দরজা খোলা এখনও সময় আছে৷ এর পর, কেঁদেও কোনো লাভ হবে না। আমি খুব শীঘ্রই বিয়ে করছি। তারপর, এসে আর কখনো বিরক্ত করবো না আপনাকে। আপনার মায়া কাটিয়ে আমি উঠতে পারছিনা হ’য়তো কাটানো সম্ভব না আমার পক্ষে। কিন্তু, চেষ্টা টা একপাক্ষিক হ’য়ে যাচ্ছে আমি কোনো পজিটিভ সাইন পাচ্ছি না আপনার পক্ষ থেকে। বলুন না, আমাকে কি ভালো- বাসা যায় না?
আপনার কোথায় অসুবিধে হচ্ছে?” মিম তার কথা শুনে হাসিমুখে বললো,
– “আপনার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা।” তিনি একটু রাগ হয়ে চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইলেন মিমের দিকে।
রাতে ও ছাঁদের রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ মাশফি এসে মা কে জড়িয়ে ধরে বললো।
– “তুমি এমন বুয়ার মতোন শাড়ি পরেছন কেন? একটু সাজুগুজু করতে পারো না?
সাজুগুজু করলে কত সুন্দর লাগে তোমাকে দেখতে।
তুমি আমার সুইট মাম্মা সব সময় সাজুগুজু করে থাকবে। লাল রঙের শাড়ি পরবে। লাল রঙের শাড়ি পরলে অনেক সুন্দর লাগে তোমাকে দেখতে।”

চলবে,,,

#বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৪

মিম ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাসতে লাগলো, সে বলল,
– “আমাকে কি খারাপ দেখাচ্ছে?”মাশফি মাকে কিছু একটা বলতে এসেছিল। সে মাথা চুলকতে চুলকতে মা কে বললো,
– “হুমম, তোমাকে পচা দেখতে লাগছে।” মিম ছেলে কে ঘুম পারানোর জন্য ঘরে নিয়ে এলো।
আদর করতে করতে ঘুম পারিয়ে দিলো ছেলে টাকে। হঠাৎ সে মাশফিকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো বলল
– “আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো বাবা,
তোমার মা এখনো পারেনি নিজের লাইফে এগিয়ে যেতে। সে এখনো আছে সেই শুরুতে’ই আটকে আছে। ক্ষমা করে দাও বাবা। কাওকে ভালো লাগলে ও মুখ ফুটে কিছু বলা হ’য়ে উঠে না সেই মানুষ টাকে আর নিজের খুশির জন্য আমি তোমাকে কষ্ট দিতে পারবো না। তোমার মা এতো টা স্বার্থপর নয়, সেটা আমি কি করে বোঝাই তোমাকে?” মিম যখন ঘুমন্ত মাশফির সাথে কথা বলছিল তখন কেউ তার কথা গুলো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলো ফোনের অপর পাশ থেকে। সে তার সকল কথা শুনে মুচকি হেসে বলে উঠলো,
– “দেখি এবার আমার হাওয়া থেকে কে আঁটকায় আপনাকে?
মুভঅন করতে পারেননি তো কি হয়েছে? কতোই বা বয়স আপনার? যে অতীত সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে?”
অতঃপর, কল টা কেটে গেলো। কিছুক্ষণ পর, মিম বাচ্চাদের হৈচৈ শুনতে পেয়ে বুঝতে পারলো রুবিনা ফিরে এসেছে। ও দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো রুবিনাকে।
রুবি একটু চিন্তিত হয়ে পরলেন মেয়েটি’র মন খারাপ হলে তিনি ঠিক বুঝতে পারেন কোনোনা কোনো ভাবে
…..। তিনি সকল জিনিসপএ মেয়েদে’র হাতে তুলে দিয়ে বললেন,
– “তোমরা এগুলো যত্ন করে রাখো,আমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। আমি কথা বলে আসছি তোমাদের সোনা মায়ে’র সাথে।” নিবেদিতা ভীষণ চিন্তিত হ’য়ে পরলো। ক্যামেলিয়া বললো,
– “মায়ের কি পছন্দ হ’য়নি ইমান আঙ্কেলকে?” নিবি বললো,
– “অসম্ভব!
আঙ্কেল এতো ভালো মানুষ। মায়ের তাকে পছন্দ না হ’য়ে কোথায় যাবে?”
– “তাহলে কি এমন কথা বলবে মা?”
– “কি জানি?
তবে আমার খুব ভয় করছে মা কে দেখে। দেখ, নিবি বয়স টা নিশ্চয়’ই কোনো ফ্যাক্ট না। আঙ্কেল যথেষ্ট স্মার্ট এবং হ্যান্ডসাম।
আর তার মনের মিল ও আছে সোনা মায়ের সাথে।”
– “তাহলে মা (রুবিনা)
কি এতো গোপন কথা বলছেন? না মানে, মা কি অন্য কাওকে সোনা মায়ের জন্য পছন্দ করেছে?”
– “কি জানি? আমার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে।” ঘরে ফিরে এসে মিম রুবিনাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “বড় আপা তুমি কিছু বলতে চাও আমাকে?” তিনি হাসিমুখে বললেন,
– “তোকে আমি আমার সেই দূরসম্পর্কের খালাতো ভাইয়ের কথা বলেছিলাম না?”
– “হুমম।”
– “ও কাল তোকে দেখতে আসতে চাইছে। দেখ সে আমার ভাই বলে বলছিনা। তবে মানুষ হিসেবে ভীষণ ভালো। সারা জীবন আগলে রাখবে তোকে আমাদের মাশফিকে….।”
– “ওনার কোনো সন্তান-সন্ততি নেই?”
– “আছে, একমাত্র ছেলে কিন্তু সেসব টা জেনেশুনেই তোকে বিয়ে করতে চাইছে।
তোর অতীত জীবন নিয়ে আমার ভাইয়ের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সে শুধু তোকে আর মাশফিকে চাই
-ছে।”
– “পরে আবার সমস্যা হবে না তো?”
– “নাহ,ভীষণ গোছানো এবং সংসারী মানুষ সে। ভাই প্রায় আমার সমবয়সী। কিন্তু,
ওর এক্স ওয়াইফের কিছু সমস্যা থাকায় বাচ্চা হতে এতোটা সময় লেগেছে। তবুও সে কখনো বউকে কটু কথা শোনায়’নি কিন্তু মেয়েটার কপালে এতো টা সুখ সয়’নি। নিজের কপাল মেয়ে টা নিজে’ই পুড়িয়েছে।”
– “কিভাবে?”
– “সম্পর্কে তৃতীয় কেউ ঢুকে পরলে বেশিসময় লাগে না সেই সম্পর্কে পচন ধরতে।
আর সেটা যদি হ’য় পরকীয়ার মধ্যে জঘন্য কাজ কি আর বলি তোকে? তবে তোরা দু’জনেই একই পথের পথিক….!
বোধহয় আল্লাহ তায়া’লা স্বয়ং চাইছেন তোদের চার হাত এক করে দিতে।” মিম রুবিনার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে কি ভেবে বললো,
– “আচ্ছা,
তবে তুমি কাল আসতে বলে দাও ওনাকে।” রুবিনা হাসিমুখে বললেন,
– “আচ্ছা,
জানিস? আমি ঠিক এই কারণে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছি স্কটল্যান্ড থেকে।”
– “হুমম, বুঝতে পরেছিলাম। না মানে, আন্দাজ করে ছিলাম।
একটু অবাক হয়েছি অসময়ে তোমাকে এখানে দেখে
……….।”
– “আমার কথা শোন?”
– “কি?”
– “ছেলে টা ভীষণ ভালো বাড়িতে শুধু সৎ মা এবং তার তিন ছেলেমেয়ে আছে। শুনেছি, মহিলা ভীষণ ভালো কালেভদ্রে ঝামেলা করে বসে।
তবে তোর কোনো চিন্তা নেই আমার ভাইয়ের নিজের বাড়িঘর আছে। তোর একার সংসার, একার রাজত্ব কোনো ঝামেলা নেই।
সৎ শাশুড়ি, দেবর ননদ কেউ জ্বালাতন করতে আস
-বেনা তোকে।” মিম তার কথা শুনে হেসেই ফেললো। সে বললো,
– “তোমার ভাই আমাকে বিবাহ করবেন, মনঃস্থির
করে ফেলেছে?”
– “আমার ভাইয়ের তোকে ভীষণ পছন্দ। কাল শুধু সৌজন্যতা করতে আসছে।”
– “ও তাই?
বলছিলাম ওনার সাথে করে নিয়ে আসতে বলো বাচ্চা টা কে।”
– “কেন?”
– “মা নেই তো?
শুনে কেমন যেন মন টা খচখচ করছে। বাচ্চার বয়স কেমন হবে? হয়তো আমার মাশফির মতো? ওনাকে
নিয়ে আসতে বলো বাচ্চা টা কে।”
– “আর কাল রান্না……..………..।”
– “সমস্ত রান্না আমি’ই করবো। তুমি শুধু ওনাদের পছন্দসই জিনিস বাজার করে নিয়ে এসো বাজার থেকে।”
মিমের কথা শুনে স্বস্তি পেলো রুবিনা, ওদিকে মিমের কমিশনার সাহেবের বলা কথা গুলো মনে করে খুব মন খারাপ হচ্ছে।
রাত গড়িয়ে সকাল হ’য়ে এলো। রুবিনা লিস্ট করে ড্রাইভার কে বাজার পাঠিয়ে দিলো বাজার করতে। লাইলি সকাল সকাল এসে ঘরদোর ঘুছিয়ে ফেললো মিমকে সাজানোর দায়িত্ব নিবেদিতা ও ক্যামেলিয়ার ওপরে পরেছে…।
বাজার থেকে ড্রাইভার ফিরে আসার পর রুবি লাইলি দু’জনে মিলে সব গুছিয়ে ফেললো মিম রান্না চাপিয়ে দিলো বেলা দেড়টার দিকে।
ওর সমস্ত রান্না শেষ হতে হতে সন্ধ্যা সাত টা বেজে গেলো। ক্যামেলিয়া নিবেদিতা মিমকে সাজাতে ঘরে নিয়ে এলো তখন আটটা বাজে সাতটা পাঁচটা শাড়ির মধ্যে,
মাশফি তার মায়ের জন্য রূপালী পাইরের গাড় লাল রঙের শাড়ি টা বেছে নিলো কড়া গলায় সে বোনদের বললো,
– “আমার আম্মুকে এই রঙ টায় সব থেকে বেশি সুন্দর লাগবে।” ভাইয়ের কথা শুনে হেসে ফেললো দু’জনে……….
মিম তাদের হাবভাব দেখে জিজ্ঞেস করলো,
– “মা তোমরা কি আমাকে আজ নতুন করে বউ সাজাবে?”
নিবেদিতা হাসতে হাসতে বললো,
– “ধরে নাও তাই, মামা পারলে আজ’ই বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যেতো তোমাকে।” মিম চমকে জিজ্ঞেস করলো,
– “তোমরা কি চেনো তাকে?” ক্যামেলিয়া হাসতে হাসতে বললো
– “হুমম, জানো মা? আগে মামাকে চিনতাম না কিন্তু আজ চেনার পর থেকে’ই আমাদের দু’বোনের ভিরমি খাওয়ার উপক্রম হয়েছে।”
– “মানে?
– ” সারপ্রাইজ, সে এলেই দেখতে পাবে।” এবার মিম এর দুশ্চিন্তা কয়েকশো গুণ বেড়ে গেলো তার একটু অদ্ভুত ও লাগছে।
আধঘন্টার মধ্যে দু’বোনে মিলে তাদের মা কে রেডি করে ফেললো। বেশকিছু ক্ষণ পর, রুবিনা এসে মিম কে হাসি মুখে বললো,
– “চল, সে এসে গেছে।” মিম ধীর পায়ে সিঁড়ি ভেঙে নিচে চলে এলো। সে দৃষ্টি নত রেখে বসে আছে। ভদ্র- লোক তাকে দেখে মৃদু হাসলো। সে এক নজর মিম কে পর্যবেক্ষণ করে রুবিনা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “আপা তোমার মেয়েকে আমার ভীষণ পছন্দ হ’য়ে -ছে। আমার পক্ষ থেকে বিয়েতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু……. ওনার মতামত টা আমি শুনতে চাই ওনার মুখ থেকে।” সেই চিরচেনা কন্ঠস্বর শুনে যেন হার্টবিট বেড়ে গেলো মিম ভেবে ছিল ভদ্র ভাবে ভদ্রলোকে না করে দেবে।
কিন্তু এ কি হ’য়ে গেলো?
তার সামনে স্ব-শরীরে কমিশনার সাহেব বসে আছে। তার চোখেমুখে তৃপ্তির রেষ। সে কি যেন তাকে বলতে চাইছে। এরিমধ্যে মাশফি এসে কমিশনার সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো, সে বললো,
– “তুমি না কি আমার পাপা হবে?” তিনি হাসি মুখে মাশফি কে আদর করতে করতে বললেন,
– “হ্যাঁ, আব্বু হবো তো। তোমার একটা বড় ভাইয়া ও হবে।” মাশীদ তখনো মুগ্ধ হয়ে মিমের দিকে তাকিয়ে সে মিম কে জিজ্ঞেস করলো,
– “আমি এখন থেকে আম্মু বলে ডাকি তোমাকে?” মিম সঙ্গে সঙ্গে তাকে বুকে জড়িয়ে নিলো কমিশনার সাহেব তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– “আপনার কি এই বিয়ে নিয়ে কোনো আপত্তি আছে
….?” মিম বললো,
– “যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভাবি মা নেবে। আপনার যা কথা বলার বলে নিন ভাবি মায়ের সাথে।”
মিমের পালিয়ে যাওয়া দেখে মিটিমিটি হাসলেন তিনি বললেন,
– “আপা এখন সব আপনার ওপরে নির্ভর করছে।”
রুবিনা বললেন,
– “আমি রাজি, ভাই। ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না তোমাকে।
কারণ আমি জানি, বেশ ভালো করেই জানি যে তুমি আমার ভালোবাসার কাঙাল মেয়েটার খুব’ই যত্ন করবে।”
– “আমিও সমান ভালোবাসার কাঙাল আপা। নতুন করে আর কিছু বলার নেই আপনাকে।
আপনি নিশ্চিন্তে আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিতে পারেন। আমি অযত্নে রাখবো না আপনার কন্যাকে।”
– “কিন্তু, আমাদের বিয়েটা?”
– “কাজি অফিসে গিয়ে হবে।
আমি আর শুভকাজে কোনো দেরি করতে চাই না। পরশুদিন কাজি অফিসে’ই তোমাদের শুভবিবাহ সম্পন্ন হবে।”
কমিশনার সাহেব এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তিনি রাতের খাবার খেতে খেতে নিবেদিতা কে জিজ্ঞেস করলেন,
– “মামণি, তোমাদের মা জননী কি আজ স্পেশাল পর্দা নিয়েছে?”
– “না আঙ্কেল।
আসলে সোনা মা বোধহয় আপনার সামনে আসতে
লজ্জা পাচ্ছে।”
তিনি এবার মিটিমিটি হাসলেন, খাবার শেষ করে মিমের ঘরে এসে দেখলেন,
সে দু’জনকে কোলে নিয়ে বসে আছে। লাইলি খাবার প্লেট নিয়ে তার পাশেই দাঁড়িয়ে। মিম গল্প শোনাতে শোনাতে মাশফি মাশীদ কে খাইয়ে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে,
তাদের সেই বহুল কাঙ্খিত দিনটি চলে এলো। মা কে টকটক লাল শাড়িতে দেখে মাশফি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ও কমিশনার সাহেব কে খোঁচা মে’রে বললো।
– “দেখ বাবা, আমার আম্মুকে কত সুন্দর দেখতে লাগছে?” তিনি বললেন,
– “হুমম,
একদম পরীর মতো। পরীর মতো সুন্দর দেখতে লাগ
-ছে তোমাদের আম্মুকে।” কিছুক্ষণের মধ্যে,
কাজি সাহেব দু’জনের বিয়েটা পড়িয়ে দিলেন। স্বাক্ষী হিসেবে কমিশনার সাহেবের চারজন বন্ধু এবং মিম এর পক্ষ থেকে রুবিনা, করবী আর চাঁদনী রয়েছে।” তাদের বিয়ে পড়ানো শেষে মিষ্টি মুখ করে নতুন বউ নিয়ে কমিশনার সাহেব বাড়িতে ফিরে এলেন। মিমের বরণ শেষ করে খোদেজা তার স্বামীর ঘরে রেখে এলো তাকে।
এদিকে খান বাড়িতে হুলুস্থুল কাণ্ড ছেলে এক বাচ্চার মা কে বিয়ে করেছে শুনে জাহানারা বেগমের মাথায় আগুন উঠে গেছে। তার ওপরে মেয়ে আবার জেলা খাটা আসামী
আদিত্য সাহেব স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু সে জেদ ধরে বসে আছে। ওহাব বললেন,
– “মা,
ভাই এক বাচ্চার মা কে বিয়ে করেছে, সে খু*নি কি এমন হ’য়েছে তাতে?”
– “তোমরা যা বোঝো না তা নিয়ে কোনো কথা বলো না।”
– “তোমার কি মনে হ’য়? ভাই কখনো বিয়ে করতো নদী আপুকে?
ওর নাদিয়াকে বিয়ে করে যে এক্সপেরিয়েন্স হয়েছে ও কি করে তারপর বিয়ে করতো নদী আপুকে?”
– “পূর্বা তুমি যা বোঝো না তা নিয়ে কথা বলো না, প্লিজ।”
– “দেখ বাবা, আমি যা বুঝি তাই নিয়েই কথা হচ্ছে। একটা কথা বলো। শুনেছি,
তুমি মা কে তার তিন বাচ্চা সহ বিয়ে করেছিলে তুমি কি এমন দেখতে পেয়েছিলে মায়ের মাঝে? মা বিয়ের আগে পতি*তালয়ে বে***বৃত্তি করতেন।
তবে কি তোমার সাথে মায়ের পরিচয় সেখান থেকে হয়েছে?” মেয়ের মুখে এই সকল কথা শুনে স্তব্ধ হ’য়ে গেলেন জাহানারা। পূর্বা একটু থেমে আবারও বলতে শুরু করলো,
– “দেখ বাবা বে******বৃত্তি কোনো অপরাধ না হলে ডিভোর্সি হওয়া ও কোনো অপরাধ নয় আর না নিজের অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ায় কোনো পাপ আছে।
মায়েরা না কি সন্তানের সুখের জন্য সবকিছু করতে পারে?
সেখানে দু’জন অপরাধী কে শাস্তি দিয়ে আমার মনে হয় না আমার ভাবি কোনো ভুল করেছে
আর তাছাড়া ভাবি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান এছাড়াও তার নিজস্ব একটা পরিচয় আছে।
জানি না,
তোমরা এতো ঝামেলা কেন করছ? তার সন্তানের যে পিতৃ পরিচয় আছে মা। তোমার সন্তানদের কি আছে?”
মেয়ের কথায় একটু দমে জাননি জাহানারা তিনি স্বামী কে বললেন,
– “তোমার হয় আমাকে আর নয়তো তোমার ওই অবাধ্য ছেলেকে বেছে নিতে হবে।” আদিত্য সাহেব কোনোকিছু চিন্তা না করে স্ত্রীয়ের পক্ষ নিলেন তিনি হুংকার দিয়ে বললেন,
– “আজ থেকে আমি তেজ্যপুএ করলাম ইমানকে।” বাবার কথা শুনে মন খারাপ করে ফেললো পূর্বা। সে ঘরে চলে যেতে যেতে বললো,
– “নিজের এই সিদ্ধান্তের জন্য আমি যেন আর কখনো আফসোস না করতে দেখি তোমাকে।
তোমরা চেয়ে ছিলে ভাইয়া যেন বিয়ে করে আবারও সংসারী হ’য়। সে কি বাচ্চা ছেলে না কি যে তোমাদের সকল ভুলভাল সিদ্ধান্ত মেনে নেবে।” পূর্বার এক কথায় স্তব্ধ চারপাশ।
ও হনহন করে এগিয়ে গেলো নিজের ঘরের দিকে।” ওদিকে,
এই খবর কমিশনার সাহেবের কানে পৌঁছে গেছে। তিনি এইসব নিয়ে মোটেও বিচলিত হলেন না বরং তিনি বাসর ঘরে পৌঁছে গেলেন নিজের স্ত্রীর কাছে।” মিম দু’ই ছেলেকে বুকে জড়িয়ে খুশিতে চোখের জল ফেলছিল। তিনি স্ত্রীকে চমকে দিয়ে বললেন,
– “একদম, জল মানাচ্ছে না আমার দু’ই সন্তানের জননীর চোখে।”

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে