বাসনা বিসর্জন পর্ব-১১+১২

0
663

#বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১১

পরেরদিন,
সকাল সকাল মিম বাজারে চলে গেলো। বাজার থেকে সে বাসায় ফিরে এলো বেলা বারোটার মধ্যে। কাজের মেয়ে লাইলি কে সঙ্গে নিয়ে কাজে লেগে পরলো।
দু’জনে মিলে বাড়ির সকল কাজ গুছিয়ে ফেললো দুপুর দুটো’র মধ্যে। অতঃপর, মিম তাঁর রান্না গ্যাসে চাপিয়ে দিলো। তার সকল শেষ করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে।
বাকি ছিলো ফালুদা,সেটাও খুব অল্প সময়ের মধ্যে’ই রান্না হ’য়ে গেছে। তারপর মিম লাইলির সহয়তায় ঘর দোর গুছিয়ে ফেললো ফ্রেশ হয়ে এসে এশার নামাজ পড়ে উঠে হঠাৎ…! মাশীদের গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে বুঝতে পারলো নিমন্ত্রিত অতিথিরা এসে গেছে। ও হাসিমুখে খুব দ্রুত’ই নিচে চলে এলো।
ততক্ষণে বাকিরা, কমিশনার সাহেব এবং মাশীদকে ওয়েলকাম জানিয়ে তাদের হাতে ওয়েলকাম ড্রিংক
‘স এর গ্লাস দিয়ে বসে আছে। সকলের চোখে-মুখে
খুশির ছাপ স্পষ্ট।
তখন কমিশনার সাহেব মিমকে দেখে মুচকি হাসলেন
তিনি বললেন,
– “পারলাম না, আপনার নিমন্ত্রণ পায়ে ঠেলে দিতে।” মিম তার কথা শুনে হাসলো।
মাশীদ ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে। মিম মাশীদ কে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে লাগলো। তখন কমিশনার সাহেব গিফটের শপিং ব্যাগ গুলো………. নিবেদিতার হাতে তুলে দিয়ে মিমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “এশার নামজ টা পড়তে চেয়েছিলাম। কাজা হ’য়ে যাচ্ছে।”
মিম তাকে সঙ্গে সঙ্গে গেস্ট রুমে নিয়ে। ক্লজেট থেকে তোয়ালে বের করে তার হাতে দিয়ে বললো,
– “জান গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। কোনো প্রয়োজন পরলে অবশ্যই ডেকে পাঠাবেন আমাকে।”
তিনি মুচকি হাসলেন, বললেন,
– “হুমম, অবশ্যই। বাই দ্যা ওয়ে, আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।” মিম লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বললো,
– “ধন্যবাদ।”
কমিশনার সাহেব তখন মিটিমিটি হাসলেন মিমকে পালিয়ে যেতে দেখে। মিম নিচে এসে বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো……
কমিশনার সাহেব নামাজ পড়ে আসার পর সে নাস্তা খেতে দিলো সবাইকে। মিম মাঝেবসে মাশফি মাশীদ কে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছিলো।
সে খুব যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছিলো দু’জনকে৷ তখন নিবেদিতা এসে মিমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মিম গ্রাস তুলে খাইয়ে দিতে লাগলো ওকে। কমিশনার সাহেব মুগ্ধ হ’য়ে তাকিয়ে ছিলেন। তখন
দুষ্টু ক্যামেলিয়া মিটিমিটি হেসে তার কাছে জিজ্ঞেস করলো,
– “আঙ্কেল আপনার কিছু লাগবে?” তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
– “না না মামণি, খাবার গুলো অত্যন্ত সুস্বাদু ছিল।”
– “তাহলে বলুন, আমাদের মায়ের হাতে জাদু আছে?
…..” তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
– “হুমম, তা তো আছে। মানতে’ই হচ্ছে।” মিম মুচকি হেসে বললো,
– “আপনারা সকলে একটু বিশ্রাম নিন, ডিনার একটু পরে দেই? ততক্ষণে আপনাদের শরীর একটু বিশ্রাম পাবে…..।”
– “আপনি কিছু খেলেন না?” ক্যামেলিয়া বললো,
– “আঙ্কেল, আম্মু আসলে রোজা ছিলেন আজকে। সন্ধ্যায় এক গ্লাস শরবত খেয়ে’ই না কি পেট ভরে গেছে তার।
কত খাবার নিয়ে সাধাসাধি করলাম। কিন্তু, কোনো খাবার’ই মুখে তোলেনি সে।”
– “আপনি আজ কিসের রোজা রেখেছিলেন?” তখন নিবেদিতা বললো,
– “মা,
প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখে।” তিনি মুচকি হেসে বললেন,
– “রোজা রাখা ভালো কাজ। কিন্তু, আপনি ঠিক মত খাওয়াদাওয়া না করলে আপনার শরীর খারাপ হবে।
….” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “চিন্তা করবেন না,আমি এভাবেই অভস্ত্য হয়ে গেছি মনে হয়না তেমন কোনো অসুবিধে হবে। আপনি বরং এখানে বসে গল্প করুণ। চাইলে ঘরে গিয়ে বিশ্রাম ও নিতে পারেন৷ কোনো অসুবিধে নেই তাতে।” সঙ্গে সঙ্গে নিবেদিত এগিয়ে এসে বললো,
– “আম্মু তুমি ছাঁদে গিয়ে আঙ্কেলের সাথে বসে গল্প করো না। ঘরে বসে একা একা কি করবে?
আর তাছাড়া, আমাদের সাথে থেকে আঙ্কেল গল্প করে কোনো আনন্দ পাবেননা। তুমি সঙ্গ দিলে দু’জন ‘র বোরিং সময়টা গল্প করে কেটে যাবে।” ক্যামেলিয়া তখন একটু চিন্তা ভাবনা করে বললো,
– “মা বোন ভুল কিছু বলেনি আর তুমি একা ঘরে বসে থেকে কি-ই বা করবে?
এর থেকে ভালো হয়,তুমি যদি ছাঁদে গিয়ে আঙ্কেলের
সাথে গল্প করো সময় কাটাও। তাতে দু’জনের’ই খুব ভালোলাগবে।”
মেয়েদের কথা শুনে, মিম নিজেকে কিছু টা ধাতস্থ করে নিলো কমিশনার সাহেব বুঝতে পারলেন ওরা দু’জনে ইচ্ছে করেই তাদের মা কে ওর সাথে ছাঁদে পাঠাতে চাইছে।”
“কিন্তু কেন? ওরা আসলে কি চাইছে?” তখন ওনার পাশে দাঁড়িয়ে ক্যামেলিয়া ধীর গলায় তাকে জিজ্ঞেস করে বসলো।
– “আঙ্কেল আপনি কি পছন্দ করেন আমাদের আম্মু কে?” উনি মিটিমিটি হেসে ফিসফিস করে বললেন,
– “যদি……..!
বলি হ্যাঁ, তাহলে? তোমাদের কি কোনো ধরনে’র আপত্তি আছে?” নিবি তখন হাসতে হাসতে বললো।
– “আমাদের কোনো আপত্তি নেই তাতে।
মায়ের জন্য অনেক আগে থেকেই পাএ দেখা হচ্ছে। ভাইয়ে’র কাস্টাডি পেয়ে গেছে। এবার হ’য়তো মা বিয়ের জন্য রাজি হবে?
দেখুন, আঙ্কেল। বেয়াদবি, করলে মার্জনা করবেন। কিন্তু এই সুযোগ টাই আপনার লুফে নিতে হবে।”মিম তখন বাচ্চাদের জন্য গরম গরম দুধ বানিয়ে নিয়ে এসে কৌতুহল বশত মেয়েদের কাছে জিজ্ঞেস করল।
– “তোমরা কি এতো গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছ আঙ্কেলের সাথে?” ওরা হাসিমুখে বললো,
– “তেমন কিছু না, আম্মু।
আঙ্কেল না ওনাদের বাসায় বেড়াতে যেতে বলেছে আমাদের সবাইকে।”মিম মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল
– “ভাবি মা কি ফোন করেছিল?”নিবি হাসতে হাসতে বললো,
– ” হুমম আম্মু, আমার বলতে ভুলে গেছি তোমাকে। নানাভাই তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। তুমি ব্যস্ত ছিলে আর তাই আমরা বিরক্ত করিনি তোমাকে
……।”
– “আচ্ছা সমস্যা নেই, আমি খালুজানের কথা বলে নেবো। আঙ্কেল কে বিশ্রাম নিতে দাও,সবে মাএ খেয়ে উঠেছেন পরে না হ’য় তিনি তোমাদের সাথে বসে গল্প করবে?”
সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেলিয়া মিম কে ঠেলতে ঠেলতে ছাঁদে নিয়ে এলো। নিবেদিতা কমিশনার সাহেবকে নিয়ে এলো নিজের সাথে। অতঃপর, তারা দু’জনকে ছাঁদে রেখে চলে এলো। মিম কমিশনার সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “কি আর বলি বলুন? আজকালকার বাচ্চা গুলো বড্ড বেশি পেকে গেছে।” তিনি তখন হাসতে হাসতে বললেন,
– “কোনো ব্যাপার না, তবে আমার আপনার সাথে ছাঁদে সময় কাটাতে বেশ ভালো লাগছে” মিম তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “কফি খাবেন?”
– “নাহ, নাস্তা করেই পেটটা যেন টইটম্বুর হ’য়ে গেছে।
আপনি কেন কিছু খেলেন না? না খেলে শরীর ভালো থাকবে?”
– “থাকবে হ’য়তো, তা আপনার কাজকর্ম কেমন চলছে?”
– “আলহামদুলিল্লাহ্,বেশ ভালোই। শুনলাম,আপনার বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে পাএ দেখা হচ্ছে?”
– “হুমম, তা কোনো ভালো পাএের সন্ধান আছে না কি আপনার খোঁজে?” তিনি হাসতে হাসতে একটু ভেবে বললেন,
– “হ্যাঁ, আছে তো পছন্দ হ’য় আমাকে?” মিম কথা টা শুনেই বিষম খেলো।
কমিশনার সাহেব সঙ্গে সঙ্গে উঠে পানির গ্লাস থেকে পানি খাইয়ে দিলেন তাকে। তার চোখে মুখে মিমকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তার ছাপ……..কিন্তু, মিম তাকে দেখে বেশ লজ্জা পাচ্ছে।”
তারা বেশ কিছুক্ষণ একান্তে সময় কাটালো। সুখ দুঃখে’র গল্প করলো একে অপরে’র সাথে কথায় কথায় মিম তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “খিদে লেগেছে আপনার?” তিনি বললেন,
– “হুমম….!” ও হাসিমুখে বললো,
– “চলুন, বাচ্চাদের ও বোধ হ’য় এতক্ষণে খিদে লেগে গেছে।” তারপর ওরা দু’জনে গল্প করতে করতে নিচে এলো। মিম খাবার খেতে দিলো সবাইকে। কমিশনার সাহেব,
খুব তৃপ্তি করে গরুর গোস্তো খেতে লাগলেন। তিনি বললেন।
– “সব খাবার গুলোই খুব স্বাদের হয়েছে।”তিনি কিছু টা খাদ্য রসিক স্বভাবের মানুষ। সেটা বুঝতে মিম হাসিমুখে বললো,
– “স্যার, আর একটু দেই আপনাকে?”
– “না না থাক, পেট ফুলে ঢোল হ’য়ে যাবে আমার
তারপর আপনাকে’ই সেবাশুশ্রূষা এবং ভালোবাসা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে হবে আমাকে।”

চলবে,,,

#বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১২

মিম তার কোনো কথাই গায়ে মাখলো না। সে তবুও গরুর গোস্তো,
খাসির মাংস তুলে দিলো তার প্লেটে। খাওয়াদাওয়া শেষ করে উঠে কমিশনার সাহেব মিম কে বললেন।
– “আপনি তো এখনো কিছু’ই খেলেন না?” মিম তার হাতে ফালুদার বাটি দিয়ে বললো,
– “আপনি আগে খেয়ে বলুন তো মশাই এটা কেমন হয়েছে?”
তিনি ফালুদা খেতে খেতে বললেন,
– “অসম্ভব, মজার।” মিম হাসতে হাসতে বললো।
– “আপনি এখানে বসুন, আমি এখুনি ঘুরে আসছি বাড়ির পেছন থেকে।” ওর কথা শুনে,
কমিশনার সাহেব একটু চমকে গেলেন। মিম মাছ দিয়ে এক প্লেট ভাত মাখিয়ে নিয়ে চলে এলো বাসার পিছনের দিকে। সেখানে এসে ও কিছু স্ট্রে-ক্যাট কে খেতে দিলো….
হঠাৎ সে খেয়াল দেখলো, কিছু টা দূরে’ই অন্ধকারের একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। ও অন্ধকারে’র মধ্যে সেই ছায়ামূর্তি টা কে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।
কিন্তু, সে পেছন ফিরতে না ফিরতেই আচমকা ধাক্কা খেলো কারো বুকের সাথে।
ও যেন কিছুক্ষণের মধ্যে’ই জমে গেলো। কমিশনার সাহেব তখন হাসতে হাসতে বললেন,
– “আপনাকে ভয় দেখানোর কোনো ইচ্ছে’ই আমার ছিলনা, ম্যাডাম।
কোনো লাইট নেই ও পাশে?” মিম এবার স্বস্তি’র নিঃশ্বাস ফেললো, সে বললো,
– “আছে, বোধ হ’য় লাইলি জ্বালাতে ভুলে গেছে? কিন্তু আপনি খামোখা কষ্ট করে এখানে আসতে গেলেন কেন?”
তিনি হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন,
– “আপনার বুঝি, বিড়াল খুব ভালো লাগে?”মিম মৃদু হেসে বললো,
– “ওই আরকি।” অতঃপর, তারা ঘরে ফিরে এসে দেখলো, মাশফি এবং মাশীদ দু’জনেই টিভি দেখতে দেখতে সোফার উপরে ঘুমিয়ে গেছে।
কমিশনার সাহেব গিয়ে ছেলেকে কোলে তুলে নিলেন
তিনি বললেন,
– “আজ আসি তবে?
রাত তো কম হলো না। অনেক দেরি হয়ে গেছে।”মিম গিয়ে মাশীদকে তার কোল থেকে কেড়ে নিলো। সে হাসিমুখে বললো,
– “কোথায় যাবেন এখন? ঘড়িতে দেখেছেন ক’টা বাজে?
আপনার যেতে হলে, জান। মাশীদ আজ রাত টা থাকবে আমার কাছে।”কমিশনার সাহেব তার কথায় মুচকি হাসলেন,
নিবেদিতা ক্যামেলিয়া ও থেকে যাওয়ার জন্য রিকো- য়েস্ট করতে লাগলো তার কাছে। তিনি তাদের কথা ফেলতে পারলেননা। সোজা ঘরে গিয়ে শুয়ে পরলেন বিছানাতে………..মিম বাচ্চাদের বিছানায় শুয়ে এসে ক্লজেট খুলে কমিশনার সাহেবের জন্য জামাকাপড় বের করতে লাগলো।
তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– ” উঠুন, গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। ইউনিফর্ম থেকে ঘাম চিটচিটে গন্ধ আসছে।” কমিশনার সাহেব তার কথা শুনে মুচকি হাসলেন। তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
– “কি করবো বলুন? একটা মিষ্টি বউ নেই যে আমার যত্ন নিবে আমার নোংরা জামা-কাপড় গুলো ধুয়ে দেবে।
একটু ছেলেটার দিকেও নজর দিবে।” মিম তার কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,
– “আপনার জামাকাপড় মোটেও নোংরা নয়, জনাব। এই ঘামের গন্ধ আপনি যে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা কত টা পরিশ্রম করেন তার জানান দিচ্ছে।” কমিশনার সাহেব এবার কোনো ভণিতা ছাড়াই মিমকে বললেন।
– “আমি বিয়ে করতে চাই আপনাকে।” ও নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বললো,
– “আমি এখনো নতুন জীবনে’র জন্য প্রস্তুত নই।”
– “আমি জানি, বুঝতে পারি।
প্রথম প্রথম আপনার একটু অ্যাড-জাস্ট করতে কষ্ট হবে।”
– “কিন্তু, আমি এখুনি প্রস্তুত নই।”
– “কেন? বয়সে আপনার থেকে অনেক টাই বড় বলে আমাকে এক্সেপ্ট করে নিতে আপনার কষ্ট হচ্ছে?”
মিম মুচকি হেসে বললো,
– “মোটেও তা না, জনাব। বোঝাপড়া অনেক ম্যাটার করে রিলেশনশিপে আর তাছাড়া,
আমি এখনো অতীত জীবনের ঘটনা গুলো থেকে বেড়িয়ে আসতে পারিনি। বিয়ের কথা মনে পরলে অজানা এক আতংক কাজ করে আমার মাঝে।” মিমের কথা শুনে,
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। মিম হাসিমুখে বলল,
– “ফ্রেশ হ’য়ে এসে শুয়ে পরুন। কিছু লাগলে ডেকে পাঠাবেন আমাকে।”
কমিশনার মুচকি হাসলেন, মিম বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে। তিনি ফ্রেশ হ’য়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন….
মিমের মুখ টা মনে করে তার অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে। তিনি হঠাৎ অস্থির হ’য়ে পরলেন, মিম কে এক নজর দেখার জন্য ছুটে এলেন নিচে। মিম হলে বসে একা একা ডিনার করছিল,
সে হঠাৎ করে’ই খুব লজ্জা পেলো কমিশনার সাহেব কে দেখে। তিনি চেয়ার টেনে মিমের পাশে বসলেন।
তার প্লেটের খাবার বেড়ে দিতে বললেন,
– “এখন কি একা একা বসে খাবার খেতে আপনার খুব ভালো লাগছে?”
– “আসলে।”
– “কি আসলে? কখনো আয়নার নিজেকে দেখেছেন অনীহা করার ফলে আপনার শরীর টা দিন কে দিন খারাপ হ’য়ে যাচ্ছে।”
– “তাতে আপনার কি?”
– “আমার কি? সেটা আমি অলরেডি বুঝিয়ে বলেছি আপনাকে।”
– “তবুও, আমি দু’টো খু*ন করেছি। আপনি কেন পছন্দ করছেন আমাকে?”
– “জানি না।
আমি এতো কৈফিয়ত দিতে পারছিনা। মনের ওপরে কি কারো জোর থেকে?” মিম চুপচাপ খাবার খেয়ে
উঠে গেলো,
পেছন ফিরে কমিশনার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলো।
– “আপনার কি কিছু লাগবে?”
– “হুমম, যদি কিছু সময় বসে গল্প করতে পারতাম?
…………”
– “আমার এখন একটু বিশ্রামের প্রয়োজন,স্যার। গল্প করার মতোন অনেক সময় পরে আছে।”
তার মুখ টা হঠাৎ বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো মিম সিঁড়ি পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে বসে পরলো মেঝেতে। কমিশনার সাহেব তাকে তখন কোলে তুলে ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
চিন্তিত মুখে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “শরীর টা কি খুব বেশি খারাপ লাগছে?”মিম বলল
– ” না জাস্ট মাথা ঘুরে গেলো একটু।”
– “এটা মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না আমার কাছে।” মিম মলিন মুখে কমিশনার সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলো,
তিনি তখন ফোন করে ডেকে পাঠালেন ওনার এক ডক্টর বন্ধুকে। তিনি মিমে’র চেকআপ করে বললেন।
– “বন্ধু (ইমান)
চিন্তার কোনো কারণ নেই। অতিরিক্ত গরমের রোজা রেখেছিলেন তাই ওনার শরীর টা একটু দূর্বল হ’য়ে গেছে।”
– “এখন করনীয়?”
– “করনীয় কিছু’ই না, ওনার যত্ন নিতে হবে। বিশেষ করে খাবার-দাবারের দিকে নজর দিতে হবে।” নিবি
মিমকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “আম্মু, আমরা দু’জনে’ই রোজা রাখতে না করে ছিলাম।”
– “তুমি একটুও কেন কথা শোনো না আম্মু?” তখন কমিশনার সাহেব বললেন,
– “বুঝলে ক্যামেলিয়া মামণি তোমাদের আম্মু নিজে- কে মহা মানবী ভাবে।”
– “সেটাই আঙ্কেল, না হলে নিজের এমন পাটকাঠির মতো শরীর নিয়ে আবার রোজা কে রাখে?”
মিম মেয়েদের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো, কমিশনার সাহেব বললেন,
– “লাভ নেই, ম্যাডাম। ওদের চোখ রাঙিয়ে কি হবে?মামণি তোমরা গিয়ে শুয়ে পরো। আমি আছি, আমি দেখে রাখছি তোমাদের আম্মুকে।”
ক্যামেলিয়া তখন এক মগ কফি কমিশনার সাহেবের দিকে এগিয়ে দিল, বললো,
– “আঙ্কেল আপনি গিয়ে ঘুমান। আমার দেখে রাখছি আম্মুকে। আর তাছাড়া, আম্মুর বিভিন্ন জিনিসপত্রের প্রয়োজন পরতে পারে।
আপনি তো জানেননা এ বাড়িতে কোথায় কি আছে? আমরা মা কে দেখে রাখতে পারবো কোনো অসুবিধে হলে নিশ্চয়ই জানাবো আপনাকে।”
– “তাই?”
– “জ্বি, আঙ্কেল আমার মনে হ’য় সেটাই ভালো হবে।”
কমিশনার সাহেব মিমে’র কাছে জিজ্ঞেস করলেন,
– “তা, ম্যাডাম এখন আপনার শরীর কেমন লাগছে?
….”
– “জ্বি ভালো, এতো টেনশন করার কোনো প্রয়োজন নেই। ইট’স ওকে।”
– “সবকিছু এতো সহজ নয় ম্যাডাম।”
– “রাত তো কম হলো না, সারারাত কি এভাবেই বসে থাকার ইচ্ছে আছে নাকি আমার কাছে?”
তিনি মুচকি হেসে গেস্ট রুমে চলে এলেন। নিবেদিতা তার পেটের ওপরে মাথা রেখে শুয়ে জিজ্ঞেস করলো
– “আম্মু, তোমার কি বেশি কষ্ট হচ্ছে?”
– “না মামণি।
তোমরা জেগে থেকো না। শরীর খারাপ করবে।” কিন্তু, কে শোনে কার কথা?
ক্যামেলিয়া মাথার কাছে বসে সোনা মায়ের মাথা টিপে দিচ্ছে। পাশে বসে নিবেদিতা, মিম মানা স্বত্বেও সে ধীরে ধীরে তার হাত-পা টিপে দিচ্ছে।
ওদিকে, কমিশনার সাহেবের চোখে ঘুম নেই। তিনি আর থাকতে না পেরে মিমে’র ঘরে ফিরে এসে দেখলেন, ওরা দু’ বোন মিলে তাদের মায়ে’র খুব সেবা-যত্ন করছে। মিম তখনো ঘুমায়নি, সে তখনো মেয়েদে’র তাড়াতাড়ি শুয়ে পরার জন্য তাগাদা দিচ্ছে
……। কিন্তু,
নিবেদিতা ক্যামেলিয়া দু’জনেই মা (মিম) কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো।
– “প্লিজ, সোনা মা তুমি একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করো। ঘুমলে তোমার শরীর টা অনেক ভালো লাগবে।” মিম মেয়েদের মাথায় হাত বুলোতে লাগলো।
মেয়েদের কথা মতো, সে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছে নিবেদিতা কমিশনার সাহেব কে দেখে এগিয়ে গেলো।তার কাছে জিজ্ঞেস করলো।
– “আঙ্কেল আপনার কিছু লাগবে?”তিনি মুচকি হেসে বললেন,
– “না মামণি, তোমাদের আম্মু এখন কেমন আছে?”
– “আগের থেকে অনেক ভালো এখন একটু ঘুমোনো চেষ্টা করছে।” তখন হঠাৎ ক্যামেলিয়ার ফোন বেজে উঠলো, সে কল টা রিসিভ করে রুবিনার সাথে কথা বলতে বলতে বললো,
– “চিন্তা করো না মা।
আম্মু (মিম) একদম ঠিক আছে। ডক্টর এসেছিলেন, তিনি বেড রেস্ট দিয়েছেন সোনা মা কে।”
অতঃপর, সে ফোন টা চার্জে রেখে পেছন ফিরে তাকালো কমিশনার সাহেব মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন।
– “তোমাদের আম্মু কেমন আছেন? নানা ভাই ভালো আছে?” ক্যামেলিয়া হেসে ফেললো, বললো,
– “আঙ্কেল,
অবশেষে ধর পরে গেলাম আপনার কাছে।” তিনি মৃদু হেসে বললেন।
– “আমি আগে থেকেই জানতাম,
ছাঁদে যখন গল্প করিলাম তখন’ই শুনেছি তোমাদের সোনা মায়ের মুখে। অবশ্য,
তোমরা যদি তোমাদের সোনা মায়ের সন্তান হতে তবু ও আমার কোনো সমস্যা ছিলনা তাতে।”

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে