বাসনা বিসর্জন পর্ব-০১

0
1317

পর্ব- বাসনা_বিসর্জন
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১

গরাদে’র চার দেওয়ালের মাঝে মেয়ে টি ছোট্ট একটা বাচ্চার পুতুল বুকে আঁকড়ে ধরে অঝোরে কেঁদে’ই চলেছে। হঠাৎ করেই,
সে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পুতুল টি লুকিয়ে ফেললো। তখন গম্ভীর গলায় কেউ এক জন মহিলা কনস্টেবলকে উদ্দেশ্য বলে উঠলো,
– “দেখুন তো উনি কি লুকচ্ছো?” ভদ্রলোকের কথা শুনে সেই মহিলা কনস্টেবল খুব দ্রুত গরাদের তালা খুলে ভেতরে চলে এলো। সে লম্বা লাঠি দেখিয়ে মেয়ে টি কে ভয় দেখাতে দেখাতে বললো,
– “দেখি, তোর হাতে কি আছে?” মেয়ে টি তার কথা অগ্রাহ্য করে জুবুথুবু হয়ে এক পাশে বসে রইলো। তখন সেই মহিলা কনস্টেবল মা’রার জন্য এগিয়ে গেল মেয়েটির কাছে।
উনি আঘাত হানার আগেই জেলার এসে তাকে থামি
-য়ে দিলো। সে মহিলা কনস্টেবলকে ঝাড়ি মে’রে বলে উঠলো…..
– “ওনার গায়ে হাততোলার সাহস আপনি পেলেন কি ভাবে?” সে বকুনি খেয়ে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো। ডি.এম.পি কমিশনার ইয়াজমির ইমান খান বললেন।
– “জেলার সাহেব,আমি জানতে চাই এই মেয়েটি কি লুকিয়ে রেখেছে?” ওনার কথা শুনে একটু অবাক হলেন জেলার সাহেব। তিনি এগিয়ে এসে স্বাভাবিক ভাবেই মেয়েটি কে জিজ্ঞেস করলেন,
– “দেখি, তুমি কি লুকিয়ে রেখেছ নিজের কাছে?” মেয়েটি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দেওয়ালের এক কোণে বসে রইলো তখন কমিশনার সাহেব রেগে গিয়ে বলে উঠলেন,
– “শুনুন,
আমার মেজাজ টা কিন্তু খারাপ হয়ে যাচ্ছে।” মেয়েটি তার গর্জে ওঠা কণ্ঠ শুনে ভয়ে কেঁপে উঠলো। হঠাৎ কমিশনার গরাদে ঢুকে এক ঝটকায় টেনে তুললো তাকে।সাথে সাথে তার হাত থেকে ছিটকে সেই পুতুল টি মেঝেতে পরে গেলো। কমিশনার সেই পুতুল টি তুলে নিয়ে গরাদ থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে কনস্টেব -ল তনয়া কে বললো,
– “ওনাকে চেক করুণ ভালোভাবে।” কমিশনার এবং জেলার যেতে না যেতে’ই তনয়া তার বুকের ওপর থেকে আঁচল টা ফেলে দিলো তাকে ভালো ভাবে চেক করতে শুরু করলো।
চেকিং শেষে হঠাৎ মেয়েটিকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “একটা চুমু খাবো তোমাকে?” কথাটা শোনা মাএ’ই মেয়েটির চোখে যেন আগুন জ্বলে উঠলো। সে তাকে ধাক্কা মে’রে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
– “দু’টো খু*ন করেছি, মনে হ’য় না। তৃতীয় খু*ন টা করতে আমার একটু ও হাত কাঁপবে।” মেয়েটির কথা
‘য় যেন ভড়কে গেলো তয়না।
সে গরাদে তালা লাগাতে বলে উঠলো,
– “খুব বার বেড়েছিস না? আমি দেখে নেবো তোকে”
মেয়েটি তখন হেসে উঠলো, সে বললো,
– “দেখি, তোর কত ক্ষমতা? শরীরে খুব জ্বালা তাই না? মরিচ ডলে দেবো কাল। আসিস, ক্যান্টিনে।” ওর কথা শুনে হেসে উঠলো গরাদের বাকি কয়েদিরা। মেয়েটি আবারও বসে পরলো মেঝেতে।
নিজের সন্তানের কথা ভেবে সে আবারও চোখের জল ফেলতে লাগল। সামনের গরাদ থেকে একজন বয়ষ্ক মহিলা তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “কেঁদো না মা, তোমার সন্তানের মঙ্গল হবে।” মেয়ে টি তার কথা শুনে মেকি হাসলো। মনে করতে লাগল তার সন্তানের সাথে কাটানো বিশেষ মুহুর্ত গুলোকে।
রাত তখন নয়টা,
কমিশনার সাহেব বাড়িতে ফিরে এসে দেখলেন, তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে সন্তান লিভিং রুমে বসে টিভি দেখছে। সে বাবাকে দেখা মাঐ, ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো, তার হাতে সেই পুতুল টা দেখে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো।
– “তুমি এই ছোট্ট হাতি টা আমার জন্য কিনে এনেছ টয় শপ থেকে?” ছেলের কথা শুনে হেসে উঠলেন তিনি, তবে পরক্ষণে’ই সেই মেয়েটি’র মলিন মুখ টা ভেসে উঠলো তার চোখে।
তিনি ছেলের হাত থেকে হাতি টা কেড়ে নিলেন। তখন আবারও ছেলে’র প্রশ্নে’র মুখে পরতে হলো তাকে……. তিনি ছেলেকে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলেননা। মাশীদ, বাবার হাত থেকে হাতি টা কেড়ে নিয়ে এক দৌড়ে চলে গেলো দাদু ভাইয়ে’র কাছে। কমিশনার সাহেব জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এলেন। কথায় কথায়, জাহানহারা বেগম সাহস করে ছেলেকে বললেন,
– “তোমার বড় মামার কাছে ভালো পাএীর সন্ধান আছে।”
সঙ্গে সঙ্গে কমিশনার সাহেব খাবার প্লেটে হাত ধুয়ে উঠে যেতে লাগলেন। জাহানারা বেগম বললেন,
– “তোমার বউয়ের প্রয়োজন না থাক, দাদু ভাইয়ের একজন মায়ের প্রয়োজন আছে।”
– “শোনো মা,
আমি ছেলের বাবা এবং আমিই তার মা। তোমার অসুবিধে হলে বলো।
আমি আমার ছেলেকে নিয়ে কোয়ার্টারে চলে যাবো এখান থেকে।” ছেলের এক কথায় শান্ত হয়ে গেলেন জাহানারা।
অসহায় চোখে তিনি তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে। কমিশনার, ছেলে মাশীদকে গল্প শোনাতে শোনাতে খাইয়ে দিতে লাগলেন। মাশীদ খাবার শেষ করে, গল্প শুনে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “রাজকুমারী কেন খু*ন করেছে?” তিনি ছেলে’র কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
– “জানা নেই, আব্বুসোনা।” মাশীদ বাবাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি কি জানো? আমার এই হাতি টয় টা কত পছন্দ হয়েছে……..” তিনি বললেন,
– “আমানতের খেয়ানত করতে নেই, বাবা। এটা যার জিনিস তাকে সহিসালামতে ফিরিয়ে দিতে হবে।”
– “ক’দিন পরে দেই? প্লিজ!”
– “না তা হ’য় না বাবা। আমি সেইম একটা হাতি টয় কিনে দেবো তোমাকে।”তখন মাশীদ মন খারাপ করে বললো,
– “নাহ! নতুন টয় চাই না আমার। আমার তো এটাই লাগবে।”
– “তাহলে তোমার সেই আন্টিকে গিয়ে কি বলব?”
– “কি বলবে আবার? আন্টিটা টয় দিয়ে কি করবে?”
ছেলের চেহারা সুরত দেখে হেসে ফেললেন তিনি বললেন,
– “আচ্ছা এটা তাহলে তুমি রেখে দাও নিজের কাছে।
কিন্তু, তুমি এটা নষ্ট করতে পারবোনা।” সে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “ওকে ফাইন, ঠিক আছে।” তারপর, কমিশনার ছেলেকে ঘুম পারিয়ে দিলেন। নিজে বিছানার কোণে বসে রইলেন এক পাশে।
রাত তখন গভীর, তিনি তখনো স্টাডি রুমে বসে বই পড়ছে।অতঃপর এক গ্লাস পানি খেয়ে গিয়ে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পরলেন। ধীরে ধীরে ঘুম এসে ভর করতে লাগলো তার চোখেমুখে…।
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে মেয়েটি জায়নামাজে ঘুমি
-য়ে পরলো। ভোর রাতে তার ঘুম ভেঙে গেলো কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দে।
সে উঠে এদিক-সেদিক তাকালো। দেখলো, তনয়া প্রচণ্ড রাগ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি তাকে দেখে গা জ্বালানী হাসি দিলো। বলল,
– “চিন্তা করবেন না,
আপনার হেদায়েতের জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে দোয়া করেছি আল্লাহ তায়ালার কাছে।”
ওর কথা শুনে হেসে উঠলো সবাই। সকাল আটটায় সকল কয়েদিদের রান্নাঘরে নিয়ে যাওয়া হলো রান্নার কাজে। মেয়েটিকে কোনো কাজ করতে দেওয়া হলো না……
মেয়েটি তখনো বসে বসে তার সন্তানের শেষ স্মৃতি চিহ্ন অর্থাৎ হাতি টয় টার কথা ভাবছে। খোদেজা তখন তাকে বাগান পরিষ্কার করার জন্য তার সাথে যেতে বললো।
মেয়েটি ও তার সাথে কাজ করার জন্য বাগানে চলে এলো তার সাথে……….। সে মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজ’ করছিল হঠাৎ সে খেয়াল করে দেখলো কাছে
‘র একটা ময়লার স্তুপের ওপরে তার সন্তানে’র সেই খেলনা টা পরে আছে।
ও দ্রুত গিয়ে সেটা কুড়িয়ে নিল। হঠাৎ খেয়াল হতেই দেখলো কিছুটা দূরে কমিশনার সাহেব দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে খোদেজা
‘র পেছন পেছন যেতে শুরু করলো।
মেয়েটি কে ভয় পেতে দেখে ফারজানা তার কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো।
– “মিম তোমার কি হয়েছে?” ও দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো,
– “কিছু না।”
– “তবে তুমি ভয় পাচ্ছিলে কাকে দেখে?”
– “বাদদেও ফারজানা সে সব, চলো। অনেক কাজ পরে আছে।”
– “তাও, ঠিক। একটা কথা বলবো?”
– “কি?”
– “তোমার ছেলেকে বুঝি খুব মনে পরছে?” সে মেকি হেসে বললো,
– “হুমম, এতোদিনে বোধহয় সে অনেকটা বড় হ’য়ে গেছে?”
– “কতটা।”
– “পাঁচ বছরের।”
– “ওহ,চলো নয়তো আবার সকলের প্রিয় বিন্তি মাসি এসে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেবে।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “তা যা বলেছ বয়স্ক মহিলার এলেম আছে।” তখন বিন্তি এসে মিমকে আদেশ করে বললো,
– “আজ, তুই দুপুরের খাবার বেড়ে খাওয়াবি সবাই কে।” মিম বললো,
– “আবার আমি কেন?”
– “যা বলছি, তাই কর। আর নয়তো, অন্ধকার ঘরে আটকে রাখার ব্যবস্থা করবো তোকে।
নতুন বড় সাহেব এসেছে জানিস, নিশ্চয়ই? মেলা মাথা গরম তার বলার সাথে সাথেই কিন্তু ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
– “ইসস, আমি যে ভয় পেয়ে গেলাম।” বিন্তি মাসি পান চিবোতে চিবোতে বললেন,
– “বয়স অনেক কম তোর ছু*রি। তোর একটু ভয় পাওয়া উচিত তাকে।”
– “কেন?”
– “আগের সাহেবের কথা ভুলে গেলি? তোর কপাল ভালো তার বিছানায় যেতে হ’য়নি তোকে।”
– “আমি তোমাদের মতো ‘ভুবনমোহিনী’ সুন্দরী নই মাসি।”
– “আরে ধুরর পাগলি, কার মনের খবর কে রাখে?” মিম তার কথা হেসে উড়িয়ে দিলো। সে রান্না গিয়ে দেখলো মাধবী সকল রান্নার তদারকি করছে।
সে মিমকে দেখে’ই হেসে খানখান। মিম চমকে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি ব্যাপার বুবু? কি হয়েছে?” সে হাসতে হাসতে মুখ ফসকে বলে ফেললো,
– “বিন্তি মাসির ধারণা আমাদের নতুন বড় সাহেবের (ইমান) তোকে বেশ মনে ধরেছে।” মিম যেন একটু আৎকে উঠলো, সে বললো,
– “পাগল হয়েছ তোমরা?
তোমাদের মাথা, ঠিক আছে? ওনাকে (ইমান) দেখে তো মনে হ’য় না উনি এমন।”
– “দেখ তুই মান বা না মান, সকল পুরুষ মানুষের না একটু ছুঁকছুঁকানি স্বাভাব থাকে। ওরা থাকে শুধু সঠিক সুযোগের অপেক্ষায়।
তুই নতুন বড় সাহেবকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখিস নিজের জানপ্রাণ দিয়ে দিবে।
আসল কথা হলো শারীরিক সুখই সব এরা বাড়িতেও খাবে আবার বাহিরে এসেও কোর্মা পোলাও খুঁজবে।
তবে তোর খুব কপাল ভালো জানিস?”
– “কি?”
– “কোনো পেটমোটা, ভুড়িওয়ালা, বয়স্ক, বটে লোকে
‘র সাথে শুতে হচ্ছে না তোকে। নতুন বড় সাহেব খুব স্মার্ট এবং সুদর্শন মনে হচ্ছে তার শ্যামলা মেয়েদের ওপরে দূর্বলতা আছে।” মাধবীর কোনো কথাই গ্রাহ্য করলো না মিম। তবুও সে বললো,
– “তোমাদের কি একটু লজ্জা করলোনা আমাকে নিয়ে এই ধরনের চিন্তা ভাবনা করতে? উনি ডাকলেই যেন আমি গিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিতে আসতাম। তোমরা এতো সস্তা বলে মনে করো আমাকে? হবেন উনি পুলিশ কমিশনার।
তবে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আত্নরক্ষার কৌশল আমারও জানা আছে।”

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে