বাল্য_বিবাহ পর্ব:-(০১)

0
6564
বাল্য_বিবাহ পর্ব:-(০১) আমার যখন বিয়ে হয় তখন আমার বয়স ৮(আট) আর স্নেহার বয়স আমার থেকে দুই বছর বেশি অর্থ্যাৎ ১০(দশ)। আমার থেকে দুই বছরের বড় হওয়া সত্যেও স্নেহার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে আব্বা এক মাত্র ব্যবসা ঠিক রাখার জন্য। আমাদের বিয়ের উদ্দেশ্য ছিলো বিজনেসে চুক্তি। মানে আব্বা আর স্নেহার আব্বু দুজন মিলে এক সাথে ব্যবসা করে। যাতে করে ওনাদের বন্ধুত্তের আর ব্যবসায় কোনো রকম ফাটল না ধরে সেই কারনে স্নেহার সাথে আমার বিয়েটা হয়। ছোট থেকে স্নেহা আমাকে সহ্য করতে পারতো না কারন আমি একটু বেশি দুষ্টমি করতাম। বিয়ের দুই বছরের মাথায় আব্বু এক দূর গটনায় মারা যায়। কিছুদিন স্নেহার আব্বু আমাদের সংসারের দেখা শুনা করেছে। হঠাত করে একদিন আমাদের বাড়ীতে এসে আম্মুকে বল,,,, আঙ্কেল:- ভাবী কি ভাবে কথাটা বলবো বুঝতে পারছি না। আসলে জশিম আর আমি মিলে তো ব্যবসাটা শুরু করে ছিলাম। এখন জশিম নেই আর ব্যবসাটা করার জন্য ব্যাংক থেকে টাকা লোন উঠানো হয়ছে। এখন আসল আর মুনাফা মিলিয়ে অনেক টাকা হয়ে গেছে। তাই আমি ভাবছি ব্যবসাটা বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা পরিশুধ করে দিবো আপনি কি বলেন? আম্মু:- ভাইজান ওনি তো আমাকে বলছে কোনো ব্যাংক লোন নেইনি আর সব টাকা ওনার ছিলো। আপনাকে সাথে রাখছে আপনি ব্যবসাটা ভালো বুঝতেন তাই। আঙ্কেল:- আপনাকে মিথ্যা বলছে। আর আমার কাছে চুক্তি পত্রের কাগজ আছে। আমি ব্যবসাটা বিক্রি করে দিয়ে ব্যাংক লোন পরিশুধ করবো। আর আজ থেকে আপনাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সৌরভের সাথে স্নেহার বিয়েটা যদিও হয়ছে সেইটা এখন আর স্নেহার মা রাজি নয়। আর ওরা এখনো ছোট বড় হলে ওদের নিজেদের পছন্দের একটা ব্যাপার আছে। তাই এখন থেকে আপনাদের সাথে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক রইলো না। আম্মা:- সৌরভ তো স্নেহাকে বউ মনে করে আর যেহেতু বিয়েটা হয়ছে এই বিয়েটার সম্পর্ক সারা জীবন থাকবে। আমি জানি আপনি কেনো এই কথা বলছেন তবে আমি আমার ছেলের বউ ঠিক সময় বাড়ীতে নিয়ে আসবো। সৌরভের পাপ্ত বয়স আর স্নেহার পাপ্ত বয়স হলে কাবিনের চুক্তি মতে স্নেহাকে নিয়ে আসবো। আঙ্কেল:- স্বপ্ন দেখা ভালো তবে জেগে জেগে নয় ঘুমিয়ে দেখেন। আমার মেয়ে আপনার ছেলেকে সময় মত ডির্ভোস দিয়ে দিবে। কাবিনে উলেক্ষ আছে ২২ বছর বয়সে স্নেহা চাইলে সৌরভকে ডির্ভোস দিতে পারবে। আম্মা:- ২২ বছর বয়সের আগে স্নেহাকে আমাদের বাড়ীতে বউ করে নিয়ে আসবো। আর আপনি যে এতটা পরিবর্তন হবেন আমার জানা ছিলো না। আঙ্কেল:- দেখা যাবে। আমার মেয়ের সাথে আপনার ছেলের জীবনেও দেখা হবে না। আর দেখে হলেও কোনো দিন জানতে পারবেন না এইটা স্নেহা ছিলো। আর স্নেহা মনে হয় না আপনার ছেলে সৌরভকে বর হিসাবে মেনে নিবে। আম্মা:- সেইটা সময় বলে দিবে। (ঐ দিনন যে আঙ্কেল গেছে আর আসেনি। আমাদের বাড়ীটা ভাড়া দিয়ে আমাদের খরচ চলে এখন। আমি দেখতে দেখতে এখন তো ভার্সিটিতে পড়ি অনার্স ১ম বর্ষে।) আমি:- আম্মু আমি ভার্সিটিতে যাই। আম্মা:- হ্যা যা আর শুন আজকে তারা তারি বাড়ীতে আসবি কেমন। আর শুন তোর কিন্তু বিয়ে হয়ে আছে। তোর বউয়ের ছবিটা তোর মানি ব্যাগে আছে তো? আমি:- এই কথাটা রোজ যাওয়ার সময় বলে দাও। হ্যা আছা তোমার বউমার ছবি। আর তারা তারি আসবো কেনো? আম্মা:- তোর খালাত বোন রিপার বিয়ে আমরা ওদের বাড়ীতে যাবো। আর তোর খালামনি বার বার কল করছে। আমি:- চট্রগ্রাম যাবো? আম্মা:- হ্যা চট্রগ্রাম। আমি:- আম্মা স্নেহা আমাকে ভূলে গেছে। তাহলে আমি কেনো ওকে মনে রাখবো? আর তাছাড়া স্নেহা ছোট বেলা থেকে আমাকে পছন্দ করেনা। আম্মা:- এই বাড়ীতে স্নেহা বউ হয়ে আসবে। আর কোনো মেয়েকে আমি বউ হিসাবে মেনে নিবো না। এখন কথা কম বলে ভার্সিটিতে যা আর তারা তারি আসিস কেমন। আমি:- ঠিক আছে! ভার্সিটিতে যাবার জন্য বাড়ী থেকে বের হয়ে রাস্তায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতেছি। তখনি একটা গাড়ী এসে আমার সামনে দাঁড়িয়েছে। (গাড়ীটা থামিয়ে আমাকে জিগেস করছে,,,) আচ্ছা ভাইয়া এখানে জশিম সাহেবের বাড়ী কোনটা? (মেয়েলী কন্ঠ শুনে ভালো করে তাকিয়েছি) আমি:- কেনো ওনার বাড়ী দিয়ে আপনি কি করবেন? মেয়ে:- দরকার আছে প্লিজ একটু বলেন না ওনার বাড়ী কোনটা? আমি:- আগে আপনার পরিচয় দেন তারপর ওনার বাড়ীর ঠিকানা বলবো। আপনার নাম কি আর কেনো ওনার বাড়ী খুঁজ করতেছেন? মেয়ে:- আমার নাম স্নেহা, কিছু কাগজে সাইন করাবো তাই। (আমি নাম শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। স্নেহা আমাদের বাড়ী নিজে খুঁজে বেড়াচ্ছে। নিশ্চয় কিছু একটা গন্ডগুল আছে।) কি হলো চুপ করে আছেন কেনো? আর ওনাদের সাথে আমার কিছু হিসাব আছে। আমি:- কিসের হিসাব আর জশিম সাহেব তো বেচে নেই। (তখনি পাশের সিটে বসা ছেলেটা বলে,,,) ছেলে:- স্নেহা তুমি অন্য কাওকে জিগেস করো। আমার মনে হচ্ছে ওনি বাড়ীটা চিনে না। স্নেহা:- রাজ তুমি ঠিকই বলছো। তখনি আমি স্নেহাকে বলি,,, আমি:- মিস স্নেহা আমি আপনাদের ঐ বাড়ীতে নিয়ে যেতে পারি তবে আমার একটা শর্ত আছে। যদি রাজি থাকেন তাহলে নিয়ে যাবো। স্নেনা:- বলেন কি শর্ত আমি রাজি। আমি:- আসলে আমি অনেক গরিব আমার একটা চাকরি খুব দরকার। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক বড় লোক। আমাকে একটা চাকরি দিবেন যদি ওয়াদা দেন তাহলে আমি ঠিকানা দেখিয়ে দিবো। স্নেহা:- ঠিক আছে এই নাও আমার বিজিটিং কার্ড তুমি কাল আমাদের অফিসে এসো তোমার যোগ্যতা অনুযায়ী তুমি চাকরি পেয়ে যাবে। আমি:- ঠিক আছে, আসেন আমার সাথে। স্নেহাকে আমি আমাদের বাড়ীতে না নিয়ে চালাকি করে অন্য বাড়ী দেখিয়ে দিয়েছি। (কিছু দিন আগে ওনারা বাড়ীটা কিনছে আর ওনার ছেলের নাম সৌরভ ওনার নাম জশিম) কারন সিমরান কেনো আমাদের বাড়ী খূঁজতেছে তা আমাকে জানতে হবে। ওদের বাড়ীটা দেখিয়ে দিয়ে আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ঘন্টা খানেক পর সিমরান আর রাজ দুজনে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে আসতেছে। রাজ:- সামন্য কয়টা টাকার জন্য ওরা কত সম্পত্তি হাত ছাড়া করেছে তোমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিয়েছে। স্নেহা:- ওর আব্বা বোকা ছিলো আর সৌরভ তো আরো বোকা। তবে বেচারা সৌরভ আমাকে বউ হিসাবে পাবার জন্য কত আগ্রহো ছিলো। রাজ:- তাহলে এখন আমাদের বিয়ের আর কোনো বাধা রইলো না। সৌরভ তোমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিলো। স্নেহা:- হ্যা সৌরভ অনেক বোকা রয়ে গেলো। আচ্ছা সৌরভের আম্মাকে দেখিনি কেনো আর সৌরভের তো আব্বা মারা গেছিলো। তাহলে ঐ লোকটা কে? রাজ:- মনে হয় সৌরভকে নিয়ে ওর মা আবার বিয়ে করেছে। আরে দূর আমাদের কি এখন আমার আর তোমার বিয়ের কোনো বাধা রইলো না। (স্নেহা আর রাজ দুজনে হাসা হাসি করে কথা গুলা বলতে বলতে গাড়ীতে উঠে গেলো।) স্নেহা:- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আর আগামী কাল অফিসে আসবেন কিন্তু। আমি:- ঠিক আছে! (আজকে আর ভার্সিটিতে যাইনি সোজা বাড়ীতে এসে আম্মাকে সবটা খুলে বলছি। আম্মু শুনে বলে,,,) আম্মা:- ঠিক আছে তুই ওদের অফিসে কাজ করবি যে কোনো কাজ হোক করবি। স্নেহার কাছে পৌছাবার চেষ্টা করবি কেমন। আমি:- ঠিক আছে! আজকের দিনটা অনেক আনন্দের সাথে কাটিয়ে পরের দিন সকালে সেজে গুজে ঠিকানা মত অফিসে চলে আসলাম। গেস্ট রুমে বসে আছি কিছুক্ষণ পর আমাকে একজন এসে বলে,,, আপনাকে ম্যাডাম ডাকছে আসুন আমার সাথে। আমি:- হ্যা চলেন। ওনার সাথে রুমে গিয়ে দেখি স্নেহার মা। আমাকে দেখে ওনি বলে,,, আন্টি:- তোমার নাম কি? আমি:- সৌরভ। ( সৌরভ নামটা শুনে কিছুটা থমকে উঠছে) আন্টি:- তোমার বাবা কি করে? (তখনি আমি একটু চিন্তা করে বলছি,,) আমি:- গ্রামে সবজ্বি বিক্রি করে। আর মা বাড়ী থাকে ছোট ভাই পড়া লেখা করে। আন্টি:- তোমাদের গ্রামের বাড়ী কোথায়? আমি:- রুসুল পুর মেম। আন্টি:- ও ভালো পড়া লেখা কত টুকু করছো? আমি:- ক্লাস সেভেন পর্যন্ত। আন্টি:- তা দিয়ে তোমাকে কি চাকরি দিবো। আমি:- যে কোনো একটা কাজ যেমন গাড়ীর ড্রাইভার হলেও হবে। আন্টি:- গাড়ী চালাতে পারো? আমি:- হ্যা পারি আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। আন্টি:- তাহলে তুমি আমার মেয়ের স্নেহার গাড়ী চালাবে। স্নেহা যখন কোথাও যাবে তুমি ওকে নিয়ে যাবে। মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পাবে। থাকবে আমাদের বাড়ীতে আর খাবে আমাদের বাড়ীতে। রাজি থাকলে কাল সকালে সব কিছু নিয়ে এই ঠিকানা চলে আসবে। আমি বাড়ীতে সবাইকে বলে দিবো। আমি:- ম্যাডাম আমি রাজি আছি তাহলে আসি বলে বেড়িয়ে এসেছি। (বাড়ীতে এসে রাতটা পার করেছি সকালে আম্মাকে বলে স্নেহাদের বাড়ীতে এসেছি) আন্টি:- আসো সৌরভ তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আন্টি আমাকে আঙ্কেল সহ সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আমাকে দারুয়ানের পাশে রুমটাতে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। স্নেহা এখন থেকে সৌরভ তোমার সাথে যাবে মানে তোমার ড্রাইভার। স্নেহা:- আম্মু ড্রাইভার কি দরকার ছিলো। আন্টি:- দরকার আছে! সৌরভ যাও তুমি স্নেহার সাথে যাও আর এই চাবিটা তোমার কাছে থাকবে। আর হ্যা আমরা আজকে সবাই চট্রগ্রাম যাবো ঐ খানে একটা বিয়ের অনুস্টান আছে তুমিও আমাদের সাথে যাবে। আমি:- ঠিক আছে! সারাটা দিন স্নেহাকে ফলো করতে করতে কাটিয়ে দিয়েছি। রাতে সবাই রেডি হয়েছে স্নেহার মা বাবা পেছনে বসেছে আর স্নেহা আমার সাথে সামনে বসেছে। গাড়ীটা চালাচ্ছি আপন মনে প্রায় ৭ ঘন্টা পর চট্রগ্রাম এসেছি। স্নেহা:- সৌরভ তুমি ব্যাগ গুলি নিয়ে আমাদের সাথে আসো। আমি:- হ্যা আসতেছি। ওরা খালি হাতে আর আমি দুইটা লাকেজ নিয়ে পেছনে যেতেছি। স্নেহাদের সবাই অনেক সুন্দর করে সমাদর করে ভীতরে নিয়ে গেছে। স্নেহার রুমের পাশে আমার রুমটা বাহা ভালোই হয়ছে। আন্টি:- সৌরভ এইটা হচ্ছে আমার বাপের বাড়ী আর বিয়েটা হচ্ছে আমার ভাইয়ের ছেলের। এখানে তুমি নিজের মত করে থাকবে কেমন। আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে! আমি রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে এক ঘুম দিলাম। ঘুম ভাঙ্গছে বিকালে ফ্রেস হয়ে খেতে বের হয়েছি। নতুন যায়গা কাওকে চিনিওনা দেখি কাওকে পায় কিনা বলে রুম থেকে বের হয়েছি আর সাথে সাথে একজন এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে নিছে পড়ে গেছে। আমি তাকিয়ে দেখি স্নেহা আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকের উপর শুয়ে আছে। এক জাটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জুড়ে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছে। আমি গালে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছি। To be continue,,,,,,,, !!! গল্প:- #বাল্য_বিবাহ পর্ব:-(০১) লেখা_ মোহাম্মাদ_সৌরভ

( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???

https://www.facebook.com/shohrab.ampp

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে