বালিকা বধূ পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
1268

#বালিকা_বধূ
[পর্ব -৮ ও শেষ পর্ব]
লেখক- শহীদ উল্লাহ সবুজ

রাকিব কে নিয়ে সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো। রকিবের কোনো খোঁজ নেই। ঘড়িতে রাত ২টা বাজে হঠাৎ একটা গাড়ির শব্দ শুনে নাঈমা আর সালমা বেগম দরজার কাছে চলে গেলো। তখনই দরজার কলিং বেলে চাপ পড়লো। দরজা খুলে দেখে রাকিব দরকার কাছে দাড়িয়ে আছে। সালমা বেগম রাকিবকে ভিতরে ডুকিয়ে বলল — বাবা তুই এতো রাত অব্দি কোথায় ছিলি? আর তোকে আমরা কতো কল দিচ্ছিলাম কল রিসিভ করিস নাই কেন?

রাকিব কোনো কথার জবাব না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। নাঈমা বলল — কি হইছে কথা বলছেন না কেন? আপনি কোথায় চলে গিয়েছেন? আপনি কি জানেন না আপনার জন্য কেউ অপেক্ষা করে আছে? নাকি জেনেও ইচ্ছে করেই এমন করছেন?

রাকিব কোনো কথাই বলছেনা। সালমা বেগম আবার বলল — রাকিব বাবা কথা বলছিস না কেন? কি হইছে তোর? আমার ভালো লাগছেনা বাবা৷

রাকিব কারো কথার উত্তর না দিয়ে সে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। রাকিবের পিছনে নাঈমা ও চলে গেলো। নাঈমা রুমে গিয়ে দেখে রাকিব খাটের উপরে শুয়ে আছে। নাঈমা রাকিবের কাছে গিয়ে বলল — আপনার কি শরীর খারাপ? কিছু কি হয়েছে আপনার?

— আমাকে ডিসটার্ব করবেনা। যাও তুমি আমি একটা থাকতে চাই।

— আপনাকে আমি কিছু প্রশ্ন করেছি। আমার প্রশ্নের উত্তর দিন৷ কোথায় ছিলেন আপনি এতো রাত অব্দি?

— আমি কোথায় ছিলাম না ছিলাম সেই কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে নাকি?

— আপনি এতো রাত অব্দি বাহিরে ছিলেন কেন?

— এটা আমার বাড়ি আমার যখন ইচ্ছে আমি আসবো যখন ইচ্ছে হবস আমি যাবো। আনার কোনো ব্যাপারে কথা বলতে আসবে বা নেক্সট টাইম থেকে।

এই কথা বলে রাকিব আবার খাটের উপরে শুয়ে গেলো। আর নাঈমা দাঁড়িয়ে কান্না করতে থাকে। রাকিবের এমন ব্যাবহারে নাঈমা খুব কষ্ট পেয়েছে। নাঈমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। নাঈমা কিছুতেই ঘুমাতে পারছেনা। রাকিবের বলা কথা গুলা নাঈমার কানে বার বার বেজেই যাচ্ছে। দেখতে দেখতে সকাল হয়ে আসলো। নাঈমা কাওকে কিছু না বলে নিজের জামাকাপড় গুছিয়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। আর সে সোজা তার বাপের বাড়িতে চলে যায়। রাকিবের কথায় অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। তাই কাওকে কিছু না বলে সকাল সকাল বাপের বাড়িতে চলে গেলো। নাঈমা তার বাড়িতে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দেওয়ার অনেক্ষন পরে তার মা এসে দরজা খুলে নাঈমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

— কিরে মা এতো সকাল সকাল তুই এখানে? আর তুই একা কেন? তোর স্বামী কে তো দেখতে পারছিনা।

— আমি একা এসেছি। আমার সাথে কেউ আসে নাই। আর আমি কাওকে না জানিয়েই চলে আসছি ওখানে।

— কেন কি হয়েছে হঠাৎ করে? যে তুই কাওকে না জানিয়েই চলে আসলি?

— আমি আসাতে মনে হয় তোমার সমস্যা হচ্ছে! তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।

— আরে দাড়া। আমি কি সেটা বলছি নাকি।

তারপর নাঈমার মা নাঈমার বাবাকে ডাক দিয়ে নিয়ে আসে। বাঈমা বাবা নাঈমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

— কিরে তুই এতো সকাল সকাল এখানে? আর জামাই কই?

— আমি একাই আসছি। আর আমি যে এখানে আসছি ওটা কেউ জানেনা।

— কি হইছে ওখানে কি কোনো সমস্যা হইছে?

— না।

— তাহলে কাওকে না বলে চলে আসলি তোকে নিয়ে চিন্তা করবে না তারা?

অন্যদিকে রাকিবের ঘুম ভেঙে যায়। সে ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে নাঈমা তার পাশে নেই। তারপর রাকিব নাঈমাকে খুজতে বের হয়ে যায়। রান্না ঘর ও খুজে দেখে। তারপর রাকিবের চোখ পড়ে দরজার দিকে দরজা খোলা। দরজা খোলা দেখে রাকিব একটু ভয় পেয়ে গেলো। মেয়েটা এতো সকাল সকাল কই চলে গেলো?

তারপর রাকিব নাঈমাকে ফোন দিতে থাকে। কিন্তু নাঈমা রাকিবের ফোন রিসিভ করছেনা। রাকিব বুঝতে পারছে নাঈমা কাল রাতের ব্যবহারে অনেক কষ্ট পাইছে।রাকিব এবার নাঈমার আম্মুর নাম্বারে কল দিয়ে জানতে পারে নাঈমা তাদের বাসায় চলে গেছে। রাকিব ও কিছুক্ষণ পরে বের হয়ে যায় নাঈমাকে নিয়ে আসতে। কিছুক্ষণের মধ্যে রাকিব ওখানে পৌছে যায়৷ রাকিব নাঈমার বাসায় গিয়ে প্রবেশ করে। রাকিব দেখে নাঈমার মা বাবা এগিয়ে আসলো। তারপর তারা দিন জনে বসে কথা বলতে থাকে। নাঈমার বাবা বলল — বাবা কি হইছে তোমাদের মধ্যে যে নাঈমা এই ভাবে কাওকে না বলে চলে আসছে।

— আসলে কাল একটু ঝামেলা হইছে৷ সেই জন্য নাঈমা রাগ করছে।
নাঈমার মা নাঈমাকে ডাক দিয়ে নিয়ে আসলো। নাঈমা রাকিবের পাশে এসে বসে। আর সালমা বেগমের সব কথা সবাইকে বলতে শুরু করে। সবাই তো নাঈমার কথা শুনে অবাক। সব থেকে বেশি অবাক আর হচ্ছে রাকিব৷ তার মা এসব করতে পারে সে বিশ্বাস করছেনা।

রাকিব বলল — নাঈমা তোমার হয়তো ভুল হচ্ছে কোথাও। আমার মা এমন করতে পারেনা। আমার মা আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি এসব বিশ্বাস করিনা।

জানি আপনি এটা বিশ্বাস করবেন না। আপনাকে বিশ্বাস করানোর জন্য এই বাড়িতে কিছু দিন থাকতে হবে।

— আমি রাজি আছি। কিন্তু এসব যদি মিথ্যা হয় তাহলে কি হবে?

— আপনি আমাকে যে শাস্তি দিবেন আমি তাই মাথা পেতে নেবো।

তারপর দুই দিন কেটে গেলো। অন্য দিকে সালমা বেগম একা একা বাসায়। তার কোনো কিছুই ভালো লাগছে না৷ সালমা বেগম মনে মনে ভাবছে আমি কি আমার ছেলেটাকে হারিয়ে ফেললাম? আমার ছেলেকি আর আমার কাছে ফিরে আসবেনা? না আমি গিয়ে ওদের নিয়ে আসবো। আমি আমার ছেলেকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। এই সব ভেবে সালমা বেগম বের হয়ে নাঈমার বাসার দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে নাঈমার বাসায় পৌছে যায় সালমা বেগম। সালমা বেগম দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই নাঈমার মা এসে দরজা খুলে দেখে সালমা বেগম। নাঈমার আম্মু তাড়াতাড়ি করে সালমা বেগমকে বাসার ভিতরে নিয়ে আসে। একটু পরে নাঈমা আর রাকিব ও এখানে আসে। সালমা বেগম নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।

সালমা বেগম নাঈমার কাছে গিয়ে বলল — বউমা আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করছি। তার জন্য আমি সত্যি অনুতপ্ত। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও।

— আপনি আমার কাছে ক্ষমা ছেয়ে আমাকে অপরাধী বানাবেন না। আপনি আপনার ভুল বুঝতে পারছেন সেটাই অনেক।

রাকিব নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কোনো কিছুই বুঝতে পারছেনা। তখন সালমা বেগম রাকিবের দিকে এগিয়ে এসে বলে — বাবা তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি তোকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে কোনো মেয়ের সাথে মিশতে দেইনি। এবং তোর ভালোবাসার মানুষ লামিয়াকেও আমি তাড়িয়ে দিয়ে ছিলাম। আমি চাইনি তুই কারো মায়ায় পড়ে আমাকে ভুলে যাস। আমি সেই জন্য নাঈমার সাথেও অনেক অন্যায় করছি। যেটা আমার মা হয়ে করা উচিৎ হয়নি। আমি সত্যি অনুতপ্ত এটা নিয়ে তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস বাবা।

এই কথা বলে সালমা বেগম কান্না করে দেয়। তখন রকিব তার মায়ের চোখে পানি মুছে দিয়ে বলল — মা তুমি আমার মা। আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি। আর আমার জীবনে যেই আসতো না কেন সব সময় তুমি আমার মাথার উপরে থাকতে। আর তোমার উপরে আমার কোনো রাগ অভিমান নেই মা।

তারপর সালমা বেগম রাকিব কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তারপর নাঈমাকে নিজের দিকে ডেকে এনে ছেলে আর ছেলের বউকে জড়িয়ে ধরে দুই জনের কপালে চুপু খায় সালমা বেগম। তারপর থেকে তাদের জীবন খুব ভালো ভাবে চলতে থাকে।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে