#বালিকা_বধূ
[পর্ব – ৭]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
নাঈমা সালমা বেগমের রুম থেকে বের হয়ে যাবার পরে সালমা বেগম রেগে আগুন হয়ে যায়। সালমা বেগম এবার নতুন করে পরিকল্পনা করতে থাকে কি ভাবে রাকিবের কাছে নাঈমাকে খারাপ সাজানো যায়। এই দিকে নাঈমা আর রাকিব রুমে বসে আছে কেউ কোনো কথা বলছেনা। তখন নাঈমা তার শ্বাশুড়িকে দেখিয়ে কিস করলেও এখন সে অনেক লজ্জা পেয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে দুপুরের খাবার খেতে যায় সবাই। রাকিব গিয়ে তার মাকে নিয়ে আসে খাবার টেবিলে। নাঈমা সালমা বেগমকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলল — শুনেন আপনি বিকালে বাজারে গিয়ে আমার জন্য কিছু ফুল নিয়ে আসবেন। আর ভালো কিছু খাবার।
নাঈমার কথা শুনে রাকিব অবাক হয়ে গেলো। হঠাৎ করে নাঈমা এই প্রথম তার কাছে কিছু আবদার করলো। রাকিব আরো বেশি অবাক হয়ে গেলো নাঈমার কথা শুনে।
নাঈমা রাকিবকে বলল — আপনাকে আমি আজ নিজের হাতে খাইয়ে দেবো। ঠিক আছে?
রাকিব অনেক লজ্জা পেয়ে গেলো। আর এই দিকে তো সালমা বেগম কোনো কথাও বলতে পারছেনা। তার পুরো শরীরে তো রাগে আগুন ধরে যাচ্ছে। সালমা বেগমের এমন অবস্থা দেখে নাঈমা মনে মনে হাসতে থাকে। তারপর কোনো রকম ভাবে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই নিজেদের রুমে চলে গেলো। একটু পরে রাকিব বাহিরে চলে গেলো নাঈমার বলা জিনিস গুলো কিনতে। সালমা বেগম এই সময়ের অপেক্ষা করে ছিল। কখন রাকিব বাহিরে যাবে। রাকিব বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরে সালমা বেগম নাঈমাকে ডেকে তার রুমে নিয়ে গেলো।
— জ্বী মা বলুন। কিছু লাগবে নাকি আপনার?
— তোমাকে আমি কি বলেছিলাম মনে নেই?
— কি বলছিলেন মা?
— তোমাকে না বলছি রকিবের থেকে দূরে থাকতে।রাকিবের সাথে কম মিসতে। তুমি তো আমার কোনো কথাই রাখছনা।
— আপনার সব কথা আমাকে মেনে নিতে হবে কেন? আর উনি আমার স্বামী ওনার সাথে আমার যা খুশি তাই করবো। আপনি কেন আমাকে এসব বলেন? যদি ছেলেকে নিজের আঁচলের মধ্যে রাখতে চান তো তাকে বিয়ে কেন করালেন?
— তোমার সাহস তো কমনা তুমি আমার মুখে মুখে তরক করছ? আজকে রাকিব বাসায় আসুক তারপর দেখো তোমার কি অবস্থা হয়।
— আপনাকে আমি সম্মান করি। তার মানে এই নয়যে আপনি আমাদের সব কিছুতেই কথা বলবেন। আপনি কেনো আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলবেন? আপনার জন্য আপনার ছেলে অনেক কষ্ট পেয়েছে। আপনার ছেলে আপনাকে ভালোবাসে আর বিশ্বাস করে বলে আপনি তার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করছেন। আপনি কেমন মা যে নিজের সন্তানকে হাসিখুশি দেখতে পারেন না। আপনি তো মা না মা নামের কলংক। এই যে আপনাদের মতো কিছু মায়ে দের জন্য একটা পরিবার নষ্ট হয়ে যায়। আপনার মতো মা থাকার ছেয়ে না থাকায় ভালো।
নাঈমা এসব বলছে এমন সময় রাকিব এসে পড়ে। রাকিব নাঈমার মুখে এসব কথা শুনে সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে নাঈমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
এই সময়ের অপেক্ষা করেছিলো সালমা বেগম। আর ঠিক সময় রাকিব ও এসে পড়ছে।
সালমা বেগম রাকিব কে দেখে কান্না করার অভিনয় করতে থাকে। আর গিয়ে রাকিবকে জড়িয়ে ধরে। আর বলতে থাকে — আমি আর এই বাড়িতে থাকবোনা এখানে আমার কোনো মান সম্মান নেই। আমাকে সব সময় অপমান করে তোর বউ। তুই বাড়িতে না থাকলেই আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। তুই আজ দেখলি। এই কথা বলে আমার হু হু করে কান্না করতে থাকে।
তখন রাকিব তার মাকে বলল — তুমি কোথাও যাবেনা। এটা তোমার বাড়ি। আর ওর এতো বড় সাহস কি করে হয় যে তোমর সাথে খারাপ আচরণ করে।
এই কথা বলে রাকিব নাঈমার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — নাঈমা আমি তোমাকে মনে করছি তুমি খুব ভালো মেয়ে। কিন্তু আমার ধারণাটা তুমি আজ ভুল প্রমাণ করলে। আমার মায়ের সাথে এই ভাবে কথা বলা তোমার উচিৎ হয়নি। উনি আমার জন্মদাত্রীমা। আমি আমার মায়ের অপমান কিছুতেই মেনে নিতে পারবোনা। আমি আমার এই মায়ের জন্য পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছি। আর তুমি আমার সেই মায়ের সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করেছ। মায়ের কাছে তুমি এক্ষনি ক্ষমা চাও।
নাঈমা কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ বুঝতে পেরে গেছে সে এখন কিছু বললেও সেটা রাকিব বিশ্বাস করবেনা। কারণ রাকিবের মায়ের প্রতি তার অন্ধবিশ্বাস অনেক বেশি। তাই নাঈমা বাদ্য হবে সালমা বেগমের কাছে গিয়ে ক্ষমা ছেয়ে নেয়। সালমা বেগম নাঈমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। নাঈমা কিছু না বলে মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে যায়।
রাকিব তার মাকে বলতে থাকে — আম্মু তুমি মনে কষ্ট নিয়না। ও তো তোমার মেয়ের মতোই। আর ও এখনো অনেক ছোট। তাই কার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হবে বুঝতে পারেনি। তুমি ওঁকে ক্ষমা করে দিয়।
— হুম বাবা আমি বউমাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখি। আর তুই তো জানিস আমি তোকে কতটা ভালোবাসি। কিন্তু বাবা বউ মা তোর সামনে আমার সাথে ভালো আচরণ করলেও তুই যখন বাসায় থাকিস না আমার সাথে বাজে ব্যবহার করে। আমি তোকে কিছু বলিনা কারণ আমি চাইনা তোদের মধ্যে আমার জন্য কোনো ঝামেলা হোক। আমি আর কয়দিন বা বেচে থাকব? আমি তো চাই তোদের নিয়ে সুখে শান্তিতে কয়েকটি দিন বেচে থাকতে।
— আম্মু তুমি এসব কি বলছ? আজকের পর থেকে আর কখনো নাঈমা তোমার সাথে খারাপ আচরণ করবেনা। তুমি এখন রেস্ট করো একটু আমি আসছি।
এই কথা বলে রাকিব রুম থেকে বের হয়ে যায়৷ রাকিব রুম থেকে বের হওয়ার পরে সালমা বেগম তার চোখের পানি মুছে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মনে মনে বলল – মেয়েটা এখনো আমাকে চিনতে পারেনি আমি কেমন মানুষ।
এই দিকে রাকিব রাগ করে বাহিরে চলে গেলো। দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেলো। কিন্তু রাকিব বাসায় ফিরছে না। রাকিব কে নিয়ে চিন্তা করতে থাকে নাঈমা। নাঈমা বার বার রাকিব কে কল দিতে থাকে ফোন বেজেই চলেছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছেনা। নাঈমা অনেক ভয় পেয়ে গেলো। রাকিবের আবার কিছু হয়ে যায়নি তো? নাঈমার মনে আজেবাজে চিন্তা এসে ভোর করতে থাকে। নাঈমা এবার সালমা বেগমের রুমে চলে যায়। নাঈমা সালমা বেগমকে বলল — মা উনি তো এখনো বাসায় ফিরে আসেননি। ফোন দিচ্ছি ফোন ও রিসিভ করছেনা।
সালমা বেগম নাঈমার কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেল। ছেলেটার আবার কোনো বিপদ হয়নি তো। সালমামা বেগম খারাপ হলেও সে তার ছেলেকে অনেক ভালোবাসে। সালমা বেগম এবার নিজের ফোন দিয়ে ফোন দিতে থাকে। তাও কেউ ফোন রিসিভ করছেনা। সালমা বেগম নাঈমাকে বলল — তোমার জন্য আমার ছেলের আজ এই অবস্থা জানিনা আমার ছেলেটা কোথায় আছে এখন কেমন আছে। আমার ছেলের যদি কিছু হয়ে যায় নাহলে আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করব না।
সালমা বেগম এসব বলছে আর রাকিব কে কল দিচ্ছে। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করছেনা। নাঈমা আর সালমা বেগম খুব চিন্তায় পড়ে গেলো। এতো রাতে রাকিব কোথায় চলে গেলো?
চলবে,,,,