#বালিকা_বধূ
[পর্ব – ৬]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
লামিকে ফোন দিয়ে বললাম আম্মু আমাদের সম্পর্ক টা মেনে নিবে। আম্মু বলছে তোমাকে আমাদের বাসায় আসতে। পরের দিন বিকালে লামিয়া আমার বাসার সামনে চলে আসে। এসে আমাকে কল দিল। আমি দরজা খুলে লামিয়াকে ভিতরে নিয়ে আসি।
— রাকিব আমার খুব ভয় করছে তোমার আম্মুর সামনে যেতে।
— আরে ভয় কিসের হুম? আমার আম্মু অনেক ভালো মনের মানুষ। আর আমাকে অনেক ভালোবাসে। তোমাকে দেখলে আম্মু অনেক খুশি হয়ে যাবে।
তারপর আমি লামিয়াকে নিয়ে আম্মুর কাছে চলে গেলাম।আম্মু লামিয়াকে দেখে খুশি হলো। লামিয়া আম্মুর কাছে গিয়ে আম্মুকে সালাম করলো। লামিয়ার বেপারে আম্মু অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করলো। অনেক্ষন কথা বলার পরে আমি আম্মুকে বললাম — আম্মু তোমরা কথা বলো আমি গিয়ে নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসি।
এই কথা বলে আমি নাস্তা রেডি করতে চলে গেলাম।আম্মু আমাকে যেতে দিচ্ছিল না তাও আমি গেলাম। কারণ আমি চাইছিলাম তারা একটু আলাদা ভাবে কথা বলুক। সব কিছু ঠিকঠাক করতে আমার প্রায় ২০ মিনিট এর মতো সময় লেগে গেল। এর মাঝে আমার একটা বন্ধু আমাকে কল ও দিলো। ওর সাথেও কথা বললাম। তারপর আমাদের তিন জনের জন্য নাস্তা নিয়ে এসে দেখি লামিয়া নেই। আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম — আম্মু লামিয়া কোথায় গেল?
— লামিয়া তো ওর বাসায় চলে গেছে।
— কি! কেন চলে গেছে?
— জানি না ও আমাকে বলল ওর বাসা থেকে নাকি কল আসছে তাই জরুরি ভাবে চলে গেলো। আমি বলছিলাম তোর সাথে দেখা করে যেতো। কিন্তু ও আমার কথা না শুনেই চলে গেলো।
— আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি কি হইছে।
তারপর আমি নিজের রুমে গিয়ে আমার ফোন বের করে লামিয়াকে কল দিলাম। কিন্তু ওর ফোন অফ। বার বার কল দিতে থাকি তাও ফোন অফ দেখায়। বুঝতে পারলাম না ওর কি এমন হলো যে ফোন অফ করে রাখল। নিজের মন কে অনেক ভাবে সান্ত্বনা দিতে থাকি হয়তো ফোনের চার্জ শেষ তাই অফ হয়ে গয়েছে। তাও বার বার কল দিয়েই যাচ্ছি। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে এসে আবার কল দিলাম এখনো ফোন অফ। খুব চিন্তা লাগছে। কি হইছে ওর? এই ভাবে কেটে গেলো অনেক দিন। এখনো লামিয়ার ফোন অফ আমি যেনো পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছি। এই ভাবে ১৫ দিন পার হয়ে যায়। একদিন আমি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ করে লামিয়াকে দেখি একটা ছেলের সাথে। আমি তাড়াতাড়ি করে লামিয়ার কাছে চলে গেলাম। আর লামিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম — লামিয়া তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে? তোমার ফোন অফ তোমার সাথে কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।
লামিয়া নিজেকে আমার থেকে সরিয়ে নিয়ে বলল — দেখুন আমি এখন বিবাহিত। আমাকে স্পর্শ করার অধিকার আপনার নেই। আমি এখন একজনের স্ত্রী।
লামিয়ার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। আমি লামিয়াকে বললাম — এসব তুমি কি বলছো লামিয়া? আমি বিশ্বাস করিনা। তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারোনা। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
আমি লামিয়ার দুই গালে হাত দিয়ে বললাম — লামিয়া বলো এসব মিথ্যা প্লিজ।
লামিয়া আমার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল — কোনো কিছুই মিথ্যা না। আমি সত্যিই বিবাহিতা। আর আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিয়। ভালো থেকো রাকিব। আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। আমি আসি।
এই কথা বলে লামিয়া চলে গেলো তারপর থেকে লামিয়ার সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ হলোনা। আমি আজো জানতে পারিনি কেন লামিয়া আমার সাথে এমন করলো?
রাকিব নাঈমার কাছে কথা গুলো বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে পানি বের হতে শুরু করলো। রাকিবের এমন অবস্থা দেখে নাঈমার রাকিবের জন্য মায়া লেগে গেল। নাঈমা নিশ্চুপ হয়ে রাকিবের সব কথা শুনল। নাঈমা রাকিবকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে সে বুঝতে পারছেনা। নাঈমা কিছুটা বুঝতে পারে যে হয়তো তার শ্বাশুড়ি এটার সাথে জড়িত আছে। কারণ নাঈমা এই কদিনে ঠিকি বুঝতে পেরেছে মহিলাটা কেমন। তারপর তারা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তারা ফ্রেশ হয়ে নাঈমার বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নেয়। তারপর দুজনেই সালমা বেগমের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে সালমা বেগম খাটের উপরে শুয়ে আছে। সালমা বেগমকে খাটের উপরে শুয়ে থাকতে দেখে রাকিব তাড়াতাড়ি তার মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো — আম্মু কি হয়েছে তোমার? এই সময় শুয়ে আছো?
সালমা বেগম কাতর কণ্ঠে বলল — বাবা আমার শরীর টা ভালো না। পা স্লিপ করে ওয়াশরুমের ভিতরে পড়ে মাজায় খুব ব্যথা পেয়েছি। হাটতেও পারছিনা।
— কি ভাবে এমন হলো তোমার? দাড়াও আমি ডাক্তারকে কল দিচ্ছি।
— না বাবা আমি ওষুধ খেয়ে নিয়েছি। তুই চিন্তা করিস না তুই যা বউমাকে নিয়ে ঘুরে আয়।
— না তোমাকে এই অবস্থায় একা রেখে আমি যেতে পারবোনা। এখন তোমার পাশে আমাদের থাকার প্রয়োজন আছে।
— আমার কিছু হবেনা বাবা তুই যা সমস্যা নাই।
— না, আগে তুমি সুস্থ হও তারপর আমি যাবো এর আগে না।
নাঈমা সালমা বেগমের নাটকটা বুঝতে পেরেছে। তাও সে চুপচাপ হয়ে আছে কিছুই বলছেনা। রাকিব কে বোকা পেয়ে যা বোঝাচ্ছে তাই সে বুঝে নিচ্ছে। এই দিকে সালমা বেগমের এসব নাটক দেখে নাঈমার রাগে শরীর জ্বলতে থাকে। তারপরেও নাঈমা নিজেকে কন্ট্রোল করে সালমা বেগমের কাছে এসে বলল — মা আমরা এখন কোথাও যাবোনা আপনি সুস্থ হয়ে নিন তারপর অন্য দিন না হয় যাবো। আপনাকেও একা এই ভাবে রেখে যাওয়া আমাদের ঠিক হবে না।
নাঈমা তারপর নিজের রুমে গিয়ে সব চেঞ্জ করে বসে থাকে। রাকিব ও একটু পরে নিজের রুমে চলে আসে। রাকিব নাঈমার কাছে এসে বলল — মন খারাপ করবে না প্লিজ। মায়ের এই অবস্থায় তাকে একা রেখে যাওয়া আমাদের ঠিক হবেনা।
— মন খারাপ করিনি। আচ্ছা আপনি থাকেন আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি।
রাকিব কে রুমের ভিতরে রেখে নাঈমা সালমা বেগমের রুমের দিকে চলে যায়। দরজার সামনে যেতেই দেখে সালমা বেগম খুব খুশি হয়ে আছে। আর সে যে অসুস্থ সেটা মোটেও বুঝা যাচ্ছেনা। নাঈমা যেটা অনুমান করছে তাহলে সেটাই ঠিক হলো। নাঈমা মনে মনে ভাবতে থাকে অনেক হয়েছে নাটক আর না। এই বাত এই বজ্জাত মহিলাকে সায়েস্তা করতে হবে৷ নাঈমা এসব মনে মনে ভাবতে থাকে। তারপর নাঈমা একটু পিছনে এসে জোরে জোরে পায়ের শব্দ করে সালমা বেগমের রুমের দিকে আসতে থাকে। যেনো সালমা বেগম বুঝতে পারে কেউ আসছে। সালমা বেগম আবার অসুস্থতার নাটক করে শুয়ে থাকে। নাঈমা সালমা বেগমের এসব নাটক আর সহ্য করতে পারছেনা। তারপর পরেও সে নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখে।
সালমা বেগম কে বলল — মা আপনার কি কিছু লাগবে আমাকে বলুন আমি এনে দিচ্ছি।
— না এখন কিছু কাগবে না। তবে আমার হাত পাও খুব ব্যথা করছে যদি একটু টিপে দিতে।
এই কথা শুনে নাঈমা মনে মনে বলল — গলা ব্যাথা করছেনা? গলা ব্যাথা করলে তো গলাও টিপে দিতে পারতাম।
কি আর করার নাঈমা সালমা বেগমের হাত পাও টিপতে থাকে। এমন সময় রাকিব এসে দেখে নাঈমা তার মায়ের সেবাযত্ন করছে। সালমা বেগম বলল — থাক মা আর লাগবে না। এখন একটু ভালো লাগছে আমার।
তারপর নাঈমা খাট থেকে নামতে গয়ে ইচ্ছস করে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করে রাকিবকে জড়িয়ে ধরে একটা কিস করে দেয়। এই অবস্থা দেখে রাকিব তো লজ্জা পেয়ে রুম থেকেই বের হয়ে চলে যায়। নাঈমা বের হওয়ার সময় তার শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অবস্থা খারাপ। রাগে ফুসফুস করে ফুলতে থাকে। নাঈমা একটা মুচকি হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে আসে।
চলবে,,,