নীলা রফিককে বলছে
শুনো কালকে বাসায় আমার স্কুল জীবনের বান্ধবীরা আসবে। তুমি খুব ভদ্র হয়ে থাকবে। তোমার একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আছে না। সেটা বের করে ইস্ত্রি করো। তাদের সামনে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে থাকবে।
রফিক উত্তর দেয়;
থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরলেতো পায়ে ঠাণ্ডা লাগবে। যেই ঠাণ্ডা পরছে। তাদের সামনেতো আমার দাতে দাতে কপাটি লেগে শব্দ হতে থাকবে। কট কট কট। পরেতো তারা বলবে অসুখ্যা জামাই।
শুনো মস্করা করবা না। আমি কোন টিন এজার না যে তোমার মস্করাতে হেসে গড়িয়ে পরবো। মনে রাখবা স্ত্রীরা জামাইয়ের মস্করা একদম পছন্দ করে না।
আচ্ছা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরবো। নীচে স্কিন কালারের মুজা আর পায়ে সাদা কেডস।
তুমি কি বলিওডের জিনাত আমান। যে স্কিন কালারের মুজা পরবা। আবার বাসায় কেডস পরে থাকবা কেন?
আচ্ছা এক কাজ করি। পায়ের লোম সব উঠিয়ে ফেলি। তোমার বান্ধবীরা দেখলো। খুশী হবে আমার পরিষ্কার পা দেখে। তুমি বললে ও সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন থাকে। নিয়মিত ওয়েক্সিং করে।
নাউজুবিল্লাহ। আমি বলি কি আমার সারিন্দা বাজায় কি। আমার বান্ধবীরা কি তোমার পা দেখতে আসবে। লুইচ্চামি চিন্তা বাদ দাও। শুনো আমাকে খুব সম্মান করে ডাকবে। লিখে রাখো কি কি করবে। তুমিতো গজনীর আমির খান কিছুই মনে রাখতে পারো না।
১। আমাকে খুব সম্মান করে কথা বলবে
২। আহ্লাদ করবে আমার সঙ্গে। ধরো বললে এই তোমাকে কি পানি এনে দিবো। অনেকক্ষণ পানি খাচ্ছো না।
৩। আমাকে সাহায্য করবে। এই ধরো রান্নাঘর থেকে জিনিসপত্র এনে দেয়া। টেবিলে খাবার বাড়া। এটা সেটা তুলে দেওয়া।
৪। চোখের এবং মনের লুইচ্চামি নিয়ন্ত্রনে রাখবে। তারা যেন বুঝতে পারে নারী জাতির উপর তোমার কোন আগ্রহ নাই।
রফিক প্রশ্ন করে। এটা আবার ভুল ম্যাসেজ দিবে নাতো। যে মেয়েদের ব্যাপারে আমার আগ্রহ কম। অন্য কিছুতে আমার আগ্রহ বেশী।
যা বলছি তা করবা। এর বেশীও না কমও না।
রফিক সকাল বেলাতেই থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে বসে আছে।
এই সাত সকালে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে বসে আছো কেন। ওরা কি আসছে?
আরে অভ্যস্ত হচ্ছি। এই প্যান্ট পরলে আমার অজায়গায়, বেজায়গায় চুলকায়। ওদের সামনে যেন চুলকানি কন্ট্রোল করতে পারি তার জন্য।
আমার এক বান্ধবী কিন্তু বিদেশ থেকে এসেছে বহু বচ্ছর পর। মাঝে সাঝে ইংরেজীতে কথা বলবে।
নীলার বান্ধবীরা এসেছে। ড্রয়িং রুমে তাদের হাসির শব্দ শুনা যাচ্ছে। রফিকের নিজের কাছে খুব নার্ভাস লাগছে। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরার পর থেকে চুলকানি শুরু হইছে। মনে হচ্ছে এইখানে পিপড়ার বাসা ছিলো। কামড় দিয়ে জায়গামতো ফুলিয়ে দিয়েছে। নীলা রফিককে ডাক দিচ্ছে। রফিকের গলা শুকিয়ে আসছে। প্রথম স্কুলে যাওয়ার অনুভূতির কথা মনে হচ্ছে।
রফিক সঙ্গে কাগজ নিয়ে নিয়েছে। নীলা যা যা বলেছে কাগজে লেখা আছে। নীলাকে খুব সম্মান করে কথা বলতে হবে। রফিক ড্রয়িং রুমে ঢুকে নীলাকে জিজ্ঞেস করলো
আপু আমাকে কি ডেকেছেন?
নীলার বান্ধবীরা একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে। এই তোকে কি ভাইয়া আপু বলে।
নীলার চোখে আগুন। আরে না ফাইজলামি করছে। ওতো রম্যলেখক। সবকিছু নিয়ে ফাইজলামি করে। নীলা রফিকের দিকে তাকিয়ে কি জানি ইশারা করছে।
রফিক নিজেই জিভ কামড়ায়। আপু বলাটা ঠিক হয় নাই। নীলার সাথে আহ্লাদ করে এই ব্যাপারটাকে কাভার আপ দিতে হবে।
রফিক কাভার দেয়; এই তুমি কিন্তু পানি খাচ্ছো না অনেকক্ষণ ধরে। তোমার কিন্তু মুত আসবে না। কিডনী পরিষ্কার থাকবে না। শীতকালে পানি ঠাণ্ডা হলেও কিন্তু খেতে হবে।
নীলা চোখে আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে। রফিকের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপি মারে।
এই যাও না পানি নিয়ে আসো আমার জন্য। নীলা আহ্লাদ করে।
নীলার বান্ধবীরা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে।
রফিক এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে নীলাকে দেয়ার জন্য। সে সময় মনে হলো জায়গামতো একটা পিপড়া জনমের কামড় বসিয়েছে।
রফিক বাবাগো বলে পানি নিয়ে পরেছে নীলার যেই বান্ধবী বিদেশ থেকে এসেছে তার উপর। তার কামিজ উপরের অংশ পানিতে ভিজে একাকার।
রফিক সরি সরি বলে টিস্যু দিয়ে তার ভেজা জায়গা মুছতে শুরু করেছে।
রফিক নীলার দিকে তাকাচ্ছে না। জানে তাকালে তাকে ভস্ম হয়ে যেতে হবে।