বাঁধিব তোমায় বিরহ ডোরে পর্ব-০৫

0
511

#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৫

প্রসব সময়ে আপনি রাস্তায় পড়ে থাকলেন কিভাবে? আমি যদি ঠিক সময়ে আপনাকে হসপিটালে না আনতাম। আপনার কি হতো একবারো ভেবেছেন? আচ্ছা আপনার হাসবেন্ড নাই।

“ ইশমামের করা শেষ প্রশ্নটা ইনিয়ার নরম মনে আ’ঘা’ত করে বসে। চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। ইনিয়া পানিটা আড়াল করার জন্য দ্রুত হাত দিয়ে মুছে ফেলে। এরপরে ইশমামকে বলে নিয়তির কাছে অসহায় হয়ে আমি রাস্তায় পড়ে ছিলাম। আপনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ছোট করলে ভূল হবে, তাই ধন্যবাদ দিতে চাইনা। আপনি যে আমার নতুন জীবনদাতা। এখন বলুন না আমার বাচ্চাটা কই? আপনার কোলে কি এইটা আমার বাচ্চা । ”

“ ইশমাম ইনিয়াকে জানার জন্য আবারো ইনিয়ার প্রশ্ন এড়িয়ে যেয়ে প্লাটা প্রশ্ন করলো, আচ্ছা বলুন না আপনার হাসবেন্ড কোথায়? আপনাকে যখন পেয়েছিলাম প্রচুর ব্লেডিং অবস্থায়। আচ্ছা তিনি কি ভালো লোক নয়? আপনাকে মেরেধরে রাস্তায় ফেলে রাখছিলো নাকি? ”

“ এই কথা শুনে ইনিয়া ঘাবড়ে যায়। প্রশ্নটা আর এড়িয়ে যেতে পারছেনা। ”

“ ইনিয়াকে ঘাবড়ে যাওয়া দেখে ইশমাম জিজ্ঞেস করে আচ্ছা আমি কি কোনো ভূল প্রশ্ন করেছি? পানি খাবেন? ”

“ ইনিয়া পিটপিট করে চোখ তুলে তাকায় ইশমামের দিকে। মনেমনে বলে সে তো আমার নতুন জীবনদাতা তার ঋণ ভূলবার নয়। তার এই সামান্য প্রশ্নের উত্তর দিতে ইতঃস্তত করছি। না জানি লোকটা কোনো ভূল ভেবে বসে। ”

“ কি হলো ইনিয়া আপনি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রয়েছেন কেনো? ”

“ আমি আমার হাসবেন্ড থেকে দূরে চলে এসেছি। কারণ আমার হাসবেন্ড আমার চোখের সামনে আমার আপন বোনকে বিয়ে করে ঘরে তুলেছে। ইসলামে ধর্মে আপন বোনকে সতীন বানিয়ে রাখা অবৈধ । যতদূর জানি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কগুলো হারাম হয়ে যায়। আমার দুধের বাচ্চাকে বুঝ হওয়ার পর কিভাবে বলতাম এসব ঘটেছে। চাইনি দুধের বাচ্চা তার ছত্রছায়ায় মানুষ হোক। একজন মেয়ে যদি ইচ্ছে করে তাহলে তার সন্তানকে বাবা ছাড়াও পৃথিবীর সৎ শিক্ষার আলো দেখাতে পারে। জগৎ কে প্রমাণ করার জন্যই দূরে চলে এসেছি। আর রাস্তায় গুন্ডাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়ে পড়ে গেছিলাম। আঘাত পাওয়াতে হয়তো ব্লেডিং হয়েছে। ”

“ ইশমাম এরকম কিছু শুনবে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। মনেমনে বলে এনার স্বামী বড্ড নিঠুর ভালোবাসা থাকতে ভালোবাসার মূল্য দিতে জানলো না। এরপরে ইনিয়াকে বলে এখন কোথায় যাবেন ঠিক করেছেন? আপনার বাবার বাড়িতে গেলে যেই সমস্যার জন্য দূরে চলে এসেছেন, সেই সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে বারংবার। ”

“ বাবার বাড়ি যাই কি করে? ছোট্ট থেকে সৎ মায়ের সকল প্রকার যন্ত্রণা সহ্য করেছি। বাবা অফিস গেলেই যন্ত্রণা দ্বিগুন হতো ইনিয়ার জীবনে। মুখ বুঝে সবটা সহ্য করেছিলাম। বাবাকে কিছু বলতে পারতাম না। কারণ কিছু বললে পরেরদিন ওই মহিলা দ্বিগুণ অত্যাচার করতো! এখন তো বাবা প্যারালাইজড হয়ে আছে। আমি ওখানে যাওয়া মানেই বোঝা। আর জুনায়েদের মুখোমুখি হওয়া। যেই জুনায়েদ একদিন আমাকে সবকিছু থেকে উদ্ধার করে বের করছিলো। নতুন করে বাঁচার জন্য পথ দেখিয়েছিলো। সেই জুনায়েদ যে আমার সঙ্গে এরকম কিছু করবে ভাবতেও অবাক লাগছে। ”

“ তাহলে আপনি এখন যাবেন কোথায়? এই শহরে কি আপনার কোনো রিলেটিভ আছে? ”

“ আপনি যেহেতু আমার এত উপকার করলেন আরেকটি উপকার করবেন? ”
“ কি উপকার? ”
“ আমাকে এই শহরে থাকার জন্য একটা জায়গা খুঁজে দিতে পারবেন? যেখানে আমার বাচ্চাসহ নতুন ভাবে বাঁচতে শিখবো? ”
“ আপনার কাছে কি টাকা রয়েছে? ”
“ আমারতো টাকা নেই? ”
“ টাকা ছাড়া এগুলা আদৌও সম্ভব বলেন? ”

ইনিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এরপরে ইশমামকে বলে আমার বাচ্চা কোলে দিন। জন্ম দেওয়ার পর এখনো তাকে ছুঁইয়ে দেখি নাই। ইশমাম কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো কি বলবে ইনিয়াকে? কারণ ইনিয়া তো ভেবেই বসে আছে ইশমামের কোলে ইনিয়ার বাচ্চা। এই মূহুর্তে চরম সত্যিটা বলবে কি করে ইনিয়াকে? তাই ভেবেচিন্তে কিছু না বলেই ইনিয়ার কোলে ইশমামের বাচ্চা দেয়। ইনিয়া বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে আদর করে বলে আমার মেয়ে হয়েছে। আমার মেয়ে নয়তো আমার মা হয়েছে। ইশমামের বুকে পাথর সড়তে থাকে ইনিয়ার এভাবে আদর দেখে। ইশমাম মূহুর্তের মধ্যেই স্বার্থপর হয়ে যায়। নিজের মেয়েকে সুন্দরভাবে মানুষ করার জন্য ইনিয়াকে প্রস্তাব দিয়ে বসে।
“ আপনি আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে যাবেন? ”
“ ইনিয়া ইশমামের এই কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফেলে। এই মূহুর্তে তার যাওয়ার ও জায়গা নেই। লোকটাকে দেখে তো খারাপ মনে হচ্ছে না। আচ্ছা তিনি এরকম অফার করে বসলেন তার বাড়ির লোক কিছু বলবেনা । তার স্ত্রী কিছু বলবেনা। তাই ইনিয়া ভেবেচিন্তে বলে আপনার বাড়ির লোক আপনার বউ এই বিষয়টি কিভাবে নিবে? ”

“ ইশমাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে আমার স্ত্রী গতকাল আমাকে ছেড়ে পরলোকগমন করেছে। ”

“ ইনিয়ার ভাঙ্গা হৃদয় এই কথাটি কিছুতেই মানতে পারলো না। দুচোখ দিয়ে টপাটপ পানি ঝড়ছে। ”

____

আচ্ছা জুনায়েদ তুমি আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করো নাই? বিয়ের আগে তো কতো কেয়ার দেখাতে। তোমার শরীরে ঢলে পড়লে কিছু বলতে না। বিয়ের প্রথম দিন একটুখানি আফাকে দেখিয়ে বুকে নিয়ে আদর করলে। এরপরে প্রথমরাত আফাকে খুঁজতেই কাটিয়ে দিলে। এখন আবার তাকে খুঁজতে বের হচ্ছো। এসবের মাঝে আমায় একটু খানিও ভালোবাসছো না। আমার কি ইচ্ছে করেনা নতুন নতুন জামাইয়ের বুকে মাথা রেখে দুখানা ভালোবাসার কথা শুনতে?

নিমুর এমন কথায় জুনায়েদ মুচকি হাসি দেয়। এরপরে নিমুকে বলে আমি ভাবতেই পারিনি ইনিয়া এতো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবে। আসলে ইনিয়ার পেটে আমার অংশ। আমার অংশকে পাওয়ার জন্য এতো খারাপ লাগছে নিমু।

জুনায়েদের এমন কথায় নিমুর ঠোঁটে হাসির ভাজ ফেলে। নিমু মনেমনে বলে জুনায়েদ সত্যিই ইনিয়াকে ভূলে গেছে। তাহলে আমার তো আর চিন্তা নাই।

এমন সময় নিমুর বাসার কলিংবেল বেজে উঠে। জুনায়েদ নিমুকে বলে দেখো ত কে আসছে? তোমার আফা আসলে সোজা ভিতরে আসতে বলবে। কোনো প্রশ্ন করবে না।

জুনায়েদের এমন কথায় নিমুর বুক কেঁপে উঠে। মনেমনে বলে তাহলে কি সতীন সত্যি সত্যি চলে আসলো? জুনায়েদ এমন কথা ত আর আন্দাজে বলছে না। মন চাচ্ছে এক্ষুনি তার চুলের মুটি ধরে গালে থা’প্প’ড় দেই।

“ কি হলো নিমু? কলিংবেল বাজতেই আছে তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে। কি ভাবছো এভাবে যেতে পারবা, নাকি আমি যাব? ”
“ নিমু ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে এসে বললো যাচ্ছি । ”

নিমুর হৃদপিণ্ডের গতি ধরাস ধরাস করে বাড়ছে যতই কলিংবেলের কাছে যাচ্ছে । ভয়ে ভয়ে দরজাটা খুলে দেয়। খুলেই নিমু সারপ্রাইজ হয়ে যায়। জড়িয়ে ধরে বলে আম্মু তুমি এভাবে না বলে আমার বাড়িতে?
“ বাহ! আমার মেয়ে নতুন নতুন সংসার পেতেছে আমি দেখতে আসবো না? ”
” জুনায়েদ নিমুকে ডাক দিয়ে বলে কে এসেছে নিমু? ”
“ আম্মু এসেছে জুনায়েদ। ”

জুনায়েদ খানিকটা অবাক হয়। এরপরে নিজে উঠে সদর দরজার কাছে যায়। নিমুর আম্মুকে বলে,
“ কি ব্যাপার শাশুমা? সূর্য আজ কোন দিক দিয়ে উঠছে? ”
“ এসব কি বলছো জামাই? সূর্য তো প্রতিদিন পূর্বদিকেই উঠে। ”
” না মানে, আগেতো এই বাড়িতে আসতেন না। আসলেও অপমান করতে আসতেন ইনিয়াকে। আজ হুট করে এই বাড়িতে আপনার পা দেখে অবাক হচ্ছি। ”
“ আগের কথা ভূলে যাও জামাই। এখন থেকে তুমি নিমুর হাসবেন্ড। মানে আমার ছেলে। ”
“ জুনায়েদ মুচকি হেসে বলে, এসব করে আমার মন কখনোই পাবেন না। আপনি ভালো করে জানেন। অপমান জুনায়েদ ভূলে না। জুনায়েদ নিমুকে এমনি এমনি বিয়ে করেনি? আপনার প্রতিটা অপমানের বদলা নিতেই জুনায়েদ নিমুকে বিয়ে করছে। ”
“ কি ব্যাপার জামাই? তুমি আগের সব কথা মনে রেখেছো? ওইগুলা ভূলে যাও জামাই। ”
“ তা বললে কি করে হয় শাশুমা। নিমু তোমার আম্মুর চা জল খাবারের ব্যবস্থা করো আমি ইনিয়াকে খুঁজতে যাচ্ছি। ”
“ ও কি ব্যাপার জামাই? আমি আসলাম তোমাদের সঙ্গে কথা বলতে আর তুমি যাচ্ছো একজন আপদকে খুঁজতে । খুঁজেও কি লাভ হবে? আমার তো মনে হয় গতকাল রাতেই ইনিয়াকে শিয়াল কুকুর ভোজন করছে। ”
” জুনায়েদ নিমুকে বলে তোমার আম্মুকে সংযত ভাবে কথা বলতে বলো নিমু। নাহলে আমার আসল রুপ দেখালে দুজনের কারো জন্য ভালো হবেনা। “

#চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে