#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৪
প্রিয়ার লাশ দাফন করে এইমাত্র বাসায় ফিরলো ইশমাম।রুমে প্রবেশ করা মাত্রই চোখজোড়া আবার ভিজে উঠে। ওয়াল থেকে প্রিয়ার অ্যালবাম হাতে নিয়ে বলে,,
“ এতো পাষাণী হইলা কিভাবে? আমায় ফাঁকি দিয়ে আগেই চলে গেলে। তাহলে কথা কেনো দিয়েছিলে সারাজীবন একসঙ্গে পথ চলবে। ”
অ্যালবামের উপর দুফোঁটা চোখের পানি পড়ে। ইশমাম প্রিয়ার ছবিকে প্রশ্ন করে আমি বাবা হতে চেয়েছিলাম তারজন্য তুমি আমার ভালোবাসাকে পর করে দিলে? একবার যদি জানতাম আমার একটুখানি আনন্দে তুমি নিজের জীবনকে উৎস্বর্গ করবে তাহলে নিজের পা’প মুখ দিয়ে খুশির কথা বলতাম না । আমি পাপী প্রিয়া। আমি তোমার মৃত্যুর কারণ। ইশমামের চোখের পানি টপাটপ পড়ছে প্রিয়ার অ্যালবামে। ইশমামের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে । এমন সময় ইশমামের ফোনে আননোন নম্বর থেকে কল আসে। ইশমাম ফোনটি রিসিভ করেনা। অনবরত প্রিয়ার ছবি বুকে নিয়ে বিছানায় বসে কাঁদতে থাকে। কিন্তু আননোন নম্বর থেকে বারবার কল আসে। ইশমাম দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে কলটি পিক-আপ করে। দুঃখী দুঃখী গলায় ইশমাম হ্যালো বলে
“ হ্যালো স্যার আমি হসপিটাল থেকে গাইনী ডক্টর বলতেছি। ”
“ ইশমাম বুকভারী করা শব্দ করে বলে কি বলবেন আপনি? ”
“ স্যার এই সময়ে আপনাকে কল করে ডিস্টার্ব করা উচিত নয়। কিন্তু আমি যে অনেক বড় ভূল করে বসছি। একজন ডক্টর হয়ে এরকম না জেনে আপনাকে তথ্য দেওয়া উচিত হয়নি। আমি ভেজাল করে ফেলেছি? ”
“ ইশমাম রুট গলায় বলে, মশকরা করছেন এই সময়ে! দেখুন আমার মন ভালো নেই। আপনারা তো আমার বউ, বাচ্চা কাউকে বাঁচাতে পারেন নাই। এখন কি এই সময়ে আপনার কল করা ঠিক হয়েছে? ”
“ স্যার আপনার বাচ্চা বেঁচে রয়েছে। ”
“ মানে? ( অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে )!”
“ স্যার আমি অন্য রুমে আরেকটি কেইস হ্যান্ডেল করতেছিলাম। আর আপনার বউয়ের বাচ্চা ডেলিভারি করছে অন্য ডক্টর! কিছুক্ষণ পরে আমার কলিগ চলে যায়। কারন তার ডে শিফট শেষ হয়েছিলো। কিন্তু আজকে সকাল বেলা সে বললো এই বাচ্চা এখানে কেনো? এনার গার্ডিয়ান কই। আমি বললাম গার্ডিয়ান তো কেউ নাই। এনাকে যে এনেছিলো তার বউ মারা গেছে। সে তো লাশ নিয়ে দাফন করতে গেছে। সে বললো অদ্ভুত বাচ্চা নেয়নি ক্যান? আমি বললাম তাদের বাচ্চা তো মৃত ছিলো সেই বাচ্চাকে নিয়ে গেছে দাফন করতে। তখন সে বললো পাখির বাচ্চা মৃত ছিলো, প্রিয়ার বাচ্চা জীবিত ছিলো। এইতো কিছুক্ষণ আগেই জানতে পারলাম এই বাচ্চা আপনার ছিলো। আমাকে ক্ষমা করবেন স্যার। ”
“ সত্যি বলছেন আমার বাবু বেঁচে আছে? ”
“ হ্যা আপনি যাকে কোলে নিয়ে রাহা বলে ডেকেছেন সে আপনার বাচ্চা। দ্রুত নিয়ে যান। হসপিটালে দেখার মতো কেউ নাই? বাচ্চা অনবরত কেদেই চলেছে মা ছাড়া। ”
“ ঠিক আছে বলে ফোন কেটে দেয় ইশমাম! ”
ইশমামের মাথায় বাজ পড়লো গাইনী ডক্টরের কথা শুনে। প্রিয়ার ছবি হাতে নিয়ে বলে তোমার শেষ কথাটা তবে সত্যি হলো । তুমি চলে গেলে আর আমাকে উপহার দিয়ে গেলে আমাদের বাবুকে। কিন্তু আমি খুশি হতেই পারছিনা প্রিয়া? তোমাকে ছাড়া বাবুকে আমি মানুষ করবো কিভাবে? সন্তান মানুষ করতে মা লাগে। হুট করেই ইশমামের মনে পড়ে মহিলার কথা যাকে ড্রাইভার নাম দিয়েছিলো পাখি। ইশমাম ড্রাইভারকে কল করে।
“ হ্যালো স্যার। বলুন। ”
“ গতকাল তোমার ম্যামকে আনার পর আমি ওই মহিলার সমস্ত দায়িত্ব তোমায় দিয়ে এসেছিলাম? ব্লাড ম্যানেজ হয়েছে! ওই মহিলার অবস্থা এখন কিরকম? ”
“ জ্বি! স্যার। ম্যানেজ হয়েছে,দেওয়াও শেষ হয়েছে। এখনো সেন্স ফেরেনি। আমি এখানেই বসে আছি। ডক্টর বলছে সেন্স ফিরতে ৪ ঘন্টা লাগবে। সেন্স ফিরলে আপনাকে জানাবো মহিলা রাস্তায় পড়ে থাকলো কিভাবে? ”
“ আচ্ছা ওনি কি সুস্থ হবে? ডক্টর কি বলছে?
“ সব সেন্স ফেরার উপর ডিফেন্ড করছে স্যার। ”
“ আচ্ছা তুমি বসে থাকো আমি আসতেছি। ”
____
সারারাত তো আফাকে খুঁজলে কোথাও পেলে না। এতো টেনশন করছো ক্যানো আপদ নিজে থেকে বিদায় হয়েছে। আমাদের খুশি থাকার কথা তো জুনায়েদ।
“ জুনায়েদ নিমুর গালে ঠা’স করে থা’প্প’ড় দেয়। আপদ বলছো কাকে? এইটা তোমার বোনের সংসার ছিলো, এখনো আছে। আর তোমার বোনের পেটে আমার বাচ্চা আছে। ডেলিভারির ডেট ঘনিয়ে এসেছে। আমার তো চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। টেনশনের মধ্যে আছি। আচ্ছা নিমু তোমার মুখে এমন কথা শোভা পায় কি করে? কিছুদিন আগ পযর্ন্ত তো তাকে চোখে হারাতে। কেয়ার দেখাতে, তবে কাল রাত থেকে আমি তাকে খুঁজে চলেছি। তুমি আমার সঙ্গে বের হলেনা ভূল করেও। ”
“ তুমি আমাকে বিয়ে করছো জুনায়েদ। এই কথাটি কি তোমার মনে আছে? গতকাল আমাকে বিয়ে করে সারারাত প্রাক্তনকে খুজে বাড়ি ফিরলে। বাসররাত ছিলো আমার, তুমিতো জানো বাসররাত নিয়ে একটা মেয়ের কত প্লান থাকে। আমার সব প্লান মাটি হয়েছে যারজন্য তাকে খুঁজা আমার জন্য ন্যাকামি ছাড়া কিছু না ”
” ষিহ নিমু। এক বাপের দুই মেয়ে। শুধুমাত্র মা আলাদা হলে কতটা বৈশিষ্ট্যর পরিবর্তন আসে তোমাকে না দেখলে জানতামই না। আমি তোমাকে বিয়ে করছি ঠিক আছে। কিন্তু কখনো এই সংসারে রাখার জন্য বিয়ে করেনি? ”
“ তাহলে আমি কোথায় থাকবো? তুমি যেখানে থাকবে আমি সেখানেই থাকবো। ”
“ এই কথা যেহেতু বললে তাহলে কাল সারারাত আমার সঙ্গে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু তুমি ছিলেনা। ”
“ এইযে জুনায়েদ কোনো মেয়ে চায়না সংসারে সতীন রাখতে। যেই আপদ নিজে থেকে গেছে তাকে খোঁজা অর্থহীন। পুরনো সব ভূলে আমরা নতুন করে সংসার বাধি জুনায়েদ। ”
“ সংসার বাঁধার জন্যই তো বিয়ে করেছি তোমাকে। কিন্তু ইনিয়ার পেটে আমার বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চাকে কখনো অস্বীকার করতে পারবে? সে কিন্তু আমার অংশ। তাই চিন্তাতো হয়। তোমাদের বাড়িতেও যায়নি! এই শহরে অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তার তাকে খোঁজা স্বাভাবিক নয় কি? ”
“ হঠাৎ জুনায়েদের মুখে এমন স্বাভাবিক কথা শুনে নিমু কিছুটা হালকা হয়। মাথা নামিয়ে জুনায়েদ কে বলে আমার আম্মাতো কখনো ইনিয়া আফাকে ফেলে দেয়নি। তাহলে তোমার মনে হয় আমি তোমার অংশকে ফেলে দিব? তোমার জন্য সব করতে পারি জুনায়েদ। ”
“ জুনায়েদ গলা খাকারি দিয়ে নিমুকে বলে এক কাপ কপি হবে নিমু? ”
“ জ্বি! তুমি একটুখানি অপেক্ষা করো আমি এক্ষুনি আনছি। ”
নিমু কফি বানাতে কিচেন রুমে যায়। ওখানে যেয়ে তার আম্মাকে ফোন দেয়। লিমা রহমান ফোন তুলে বলে হ্যা নিমু বল।
“ মা শুনছো জুনায়েদ বাড়ি ফেরে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। জুনায়েদ ইনিয়ার জন্য একটুও আপসেট নয়। ”
“ শুন! ছেলে মানুষের বিশ্বাস করতে নেই। ইনিয়া ফেরার আগেই সংসার টা দ্রুত আঁচলে বেঁধে ফেল। দেখিয়ে দে তুই আমার মেয়ে। ঠিক কুড়ি বছর আগে আমি যা করেছি তুইয়ো তাই কর। ”
“ মা ইনিয়ার বাচ্চাকে যাতে জুনায়েদ অস্বীকার করে? এই ব্যবস্থা কি করে করবো? ”
“ তুই দ্রুত বাচ্চা নিয়ে ফেল। দেখবি জুনায়েদ একাই ইনিয়ার বাচ্চাকে ভূলে যাবে। আর শোন জুনায়েদকে চোখে চোখে রাখবি। আমাদের জীবন থেকে ইনিয়া নামক কাটা দূর কর। যতদূর জানি ইনিয়া আত্মসম্মানি মেয়ে এতো সহজে ফিরবে না। আর দোআ কর ওই মেয়ে যেনো মরে যায়। এখানেও আসেনি কোথাও তো আর যাওয়ার জায়গা নেই। ”
“ তাই যেনো হয় মা। আচ্ছা মা ফোনটা রাখি। জুনায়েদ কে কফি দিতে হবে। ”
“ ঠিক আছে। ”
জুনায়েদের কাশী শুরু হয়। জুনায়েদ বেসিনে দৌড়ে যায়। বেসিনের পানি ছেড়ে কফ ফেলে দেয়৷ কফ দিয়ে রক্ত বের হয়। জুনায়েদ রক্ত আড়াল করে টিস্যু দিয়ে দ্রুত মুখ মুছে ফেলে। পিছন ঘুড়ে ভূত দেখার মতো চমকে যায়।
“ তু তু তুমি নিমু! কখন আসলে? ”
“ বাহ। আমার জামাই কফি চেয়েছে। কফি এনে দেখি তুমি সোফায় নাই? বেসিন থেকে কাশীর শব্দ যাচ্ছিলো তাই এখানে কফি নিয়ে আসলাম। দেখছো কাল রাতে এভাবে বের হয়ে ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলছো। ”
জুনায়েদ মনেমনে বলে নিমু তাহলে কিছু দেখতে পায়নি। মুচকি হেসে কফির মগ হাতে নিয়ে বলে কফি শেষ করে আমি আবার ইনিয়াকে খুজতে বের হবো। কিছু খাবার থাকলে দাও। এই কথা শুনে নিমু মুখটা গম্ভীর করে ফেলে।
____
ইশমাম বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। ইনিয়ার সেন্স ফিরে। ইনিয়া পিটপিট করে চোখ খুলে। দেখতে পায় তার হাতে স্যালাইন লাগানো। পাশে একজন পুরুষ বাচ্চা নিয়ে বসে আছে। ইনিয়া অবাক হয়ে যায়, ইনিয়ার কিছু মনে পড়ছে না। কালরাতে গুন্ডাদের আক্রমণের পর তার সঙ্গে ঠিক কি হলো মনে করতে পারছে না। শুধু এতটুকু মনে পড়লো তার প্রসব যন্ত্রণা হচ্ছিলো, আর প্রচুর ব্লেডিং হচ্ছিলো;গুন্ডাদের আঘাতে। ইনিয়ার বাচ্চার কথা মনে পড়ে। ইনিয়া চিৎকার করে বলে অ্যা,অ্যা, আমার বাচ্চা কই? আমি এখানে কেনো? আমাকে এখানে কে আনছে?
ইনিয়ার কথার ভাজ পেয়ে ইশমাম বাচ্চা নিয়ে বেড থেকে ঘুড়ে দাঁড়ায়। ইনিয়া হন্তদন্ত করে উঠার চেষ্টা করছিলো কিন্তু পারছেনা। ইনিয়া অ্যা বলে চিৎকার করে। ইশমাম ইনিয়াকে বলে আপনার প্রচুর ব্লেডিং হয়েছে। তিন ব্যাগ রক্ত লাগছে । সিজার করানো হয়েছে, হাতে স্যালাইন লাগানো আছে। এভাবে তাড়াহুড়ো করে নিজেকে ব্যাথা দিবেন না।
ইনিয়া ইশমামকে বলে আপনার কোলে কি ওইটা আমার বাবু? প্লিজ বলেন না। আমার বাবু কোথায়।
“ আপনার নাম কি ম্যাডাম? ”
“ আমি আপনাকে প্রশ্ন করছি। উত্তর চাই প্লিজ। আমার বাবু কোথায় বলেন না। আর আপনি আমার বেডের কাছে এভাবে বসে ছিলেন কেনো? ”
“ বলছি সব আগে বলুন আপনার নাম কি? ”
“ ইনিয়া ”
#চলবে,,,