বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ২৯
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
সিয়াম ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো। মণি দৌঁড়ে এসে সিয়ামের পাশে বসল। আব্বু তোমার কি হয়েছে?
আম্মু তোমায় বকেছে?
– আমি জানি তো।আম্মু তোমায় বকেছে। আম্মুর সাথে আড়ি। ওর সাথে আর কখনো কথা বলব না। শুধু শুধু তোমায় বকছে। আম্মু পঁচা….
এরকম হাজারো প্রশ্ন মণির, আর প্রশ্নগুলোর উত্তরও নিজে নিজে’ই দিচ্ছে। সিয়াম সোফায় শুয়া থেকে উঠে বসল। মণির চোখের জল মুছে দিয়ে ছোট্ট হাতগুলো চেঁপে ধরল। বিজয় সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলল-
” সিয়াম! এখন কেমন লাগছে তোমার?”
সিয়াম বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” এখন ভালো আছি।”
তারপর মণির দিকে তাকিয়ে বলল-
“মামণি! আজকে যে আমার যেতে হবে।”
— মণি সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে বলল,
কোথাও যাবে না তুমি আব্বু…
আমি তোমায় কোথাও যেতে দিব না।
তুমি এখানেই থাকবে এখন থেকে।
সিয়াম মৃদু হেসে বলল-
তা হয় না মামণি!
আমায় বাসায় যেতে হবে।
না হলে যে তোমার দাদা-দাদু টেনশন করবে!
_ ওরা টেনশন করবে না।
তুমি ফোন করে বলে দাও তুমি আজকে যেতে পারবে না। সিয়াম মণির গালে আলতু করে টান দিয়ে বলল-
” আমি আরেকদিন আসব, তুমি একদম কান্না করবে না।”
সিয়াম মণিকে সরিয়ে উঠে চলে যাচ্ছিল তখনি মায়াকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আড়চোখে তাকিয়ে বলে-
“আর তাছাড়া আমি চাই না আমার কারনে কারো কোনো ক্ষতি হোক!”
সিয়াম এই বলে চলে যাচ্ছিল, ওমনি মণি গিয়ে সিয়ামের আঙ্গুল ধরে টান দেয়। বাবা! তুমি যেও না।(কাঁদো কাঁদো গলায়)
__ আমার এখন যেতে হবে।লক্ষ্মী মামণি রাগ করো না।
__ কথাটা শুনে মণি দৌঁড়ে চলে গেল রুমে।
সিয়াম চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে বিজয় এসে সামনে দাঁড়ায়। বিজয়ের এক কথা-
“এই শরীর খারাপ নিয়ে রাতের বেলা তোমায় ছাড়তে পারব না। আজ রাত’টা তোমায় এখানে’ই থাকতে হবে।”
_ সিয়ামকে বিজয়ের কথা রাখতে গিয়ে থেকে যেতে হয় ঐ বাড়িতে। সে রাতে সিয়ামের প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হলে মণি টেনে নিয়ে আসে ওর মাকে ড্রয়িংরুমে। বিজয় আর সিয়ামের মাঝে বসিয়ে দেয় মায়াকে।মায়া বসা থেকে উঠতে যাবে তখনি মণির কথা__
“উঠবানা বলে দিলাম। আব্বুর মাথা’টা খুব যন্ত্রণা করছে, তুমি আব্বুর মাথাটা টিপে দিবে।”
__ ‘মায়া-সিয়াম দু’জনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।’
__ বিজয়ের কথায় ওদের সম্ভীত ফিরে।
– মায়া!
রাত তো কম হয়নি।
তুই বরং সিয়ামকে নিয়ে রুমে চলে যা, আর মামণি…
তুমি আজকে আমার সাথে ঘুমাবে চলো….
_ তুমি দাঁড়াও মামা!
আমার কিছু কাজ আছে।
কথাটা বলে’ই মণি বিজয়ের হাতের মুঠো থেকে ওর হাতটা সরিয়ে নেই। তারপর কিছু না বলে’ই সিয়াম-মায়াকে টানতে টানতে সিড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে যায়।
রুমে নিয়ে গিয়ে দু’জনের হাত ছেড়ে দেয় মণি। তারপর হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলে__
” এই যে পঁচা আম্মু!
আব্বু এই রুমে’ই ঘুমোবে। আব্বুকে বিছানা করে দাও।
মায়া তখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। মণি রাগান্বিত স্বরে বলল__
” কি হলো???
এভাবে দাঁড়িয়ে আছ যে?!!!???
কি বলছি শুনতে পাচ্ছো না?”
_ এইতো করছি বলে মায়া বিছানা ঝাড়ু দিয়ে শুরু করল।
বিছানা পরিষ্কার করা হলে মণি ওর সিয়ামকে টেনে জোর করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর মায়ার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে এনে মায়াকে সিয়ামের পাশে বসায়। অতঃপর সিয়ামের মাথা ভালো ভাবে টিপে দেওয়ার কথা বলে মণি রুম থেকে চলে যায়। মণি চলে গেছে বেশকিছু ক্ষণ হয়ে গেছে, মায়া এখনো চুপ করে সিয়ামের মাথার পাশে বসে আছে আর সিয়াম?!!!
চোখ দু’টো বোজে আছে।
_______
এভাবেই কেটে যায় আরো কিছুক্ষণ।মায়া ঠিক সেভাবেই বসে আছে যেভাবে মণি বসিয়ে রেখে গেছে। আর সিয়াম?!!!
সিয়ামও ঠিক সেভাবেই শুয়ে আছে যেভাবে মণি দিয়ে গেছে।
এভাবে থাকতে থাকতে কে যে কখন ঘুমিয়ে গেছে কেউ টের পাইনি। টের পায় তখন যখন শীত শীত অনুভব করে। প্রচন্ড শীতে কেঁপে উঠে সিয়াম। বিছানা ছেড়ে উঠে বসে সে। তাকিয়ে দেখে মায়া সোফায় শুয়ে শীতে কাঁপছে আর ঘুমের ঘোরে’ই পরনের শাড়ি দিয়ে শীত নিবারণের বৃথা চেষ্টা করছে। সিয়াম কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে ছিল তারপর হঠাৎ করে বসা থেকে উঠে মায়ার দিকে এগিয়ে যায়। কোলে তুলে নেয় মায়াকে। এগিয়ে আসে খাটের দিকে।
শুইয়ে দেয় খাটে….
গায়ে কম্বলটা জড়িয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দেয় সিয়াম। অতঃপর সোফায় চলে যাওয়ার জন্য পিছু ঘুরতেই হাতে একটা টান অনুভব করে সিয়াম। পিছু ফিরে তাকাই সিয়াম। মায়া তখনও ঘুমে মগ্ন কিন্তু ওর একটা হাত সিয়ামের একটা হাতকে টেনে ধরে আছে।সিয়াম জানে,
হয়তো ঘুমের ঘোরে’ই মায়া এমন করছে তাই মায়ার হাতটা ছাড়িয়ে সিয়াম নিজে গিয়ে সোফায় শুয়ে পরে। জ্বর শরীরে ঘুম আসবে না জেনেও চোখ বন্ধ করে সিয়াম। চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসছে ঠিক তখনি কপালে কেমন যেন একটা উষ্মতা অনুভব করে সিয়াম। চোখ মেলে তাকাই সিয়াম। কেন জানি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সিয়ামের। “এও কি সম্ভব?
মায়া আমার কপালে চুমু দিচ্ছে…”
__ সিয়াম আবারও চোখ দু’টো বন্ধ করে ফেলে যাতে মায়া দেখতে না পারে ও বুঝে গেছে ব্যপারটা। সিয়াম চোখ বুঝার একটু পর’ই অনুভব করে ওর সারা শরীর যেন শীতল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ঠান্ডা জাতীয় কিছু সিয়ামকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে। সিয়াম চোখ না খুলে’ই অনুভব করতে পারে এ মায়া। মায়ার হাত। শীতে হাতগুলো অনেক ঠান্ডা হয়ে আছে। সিয়াম কি করবে বুঝতে পারছে না আবার মায়া রাতভর শীতে কষ্ট করবে এটাও সহ্য করতে পারছে না। কিন্তু কি করতে পারে ও…?!!!
__ আর কিছু ভাবতে পারছে না সিয়াম। ঘুমের ভান করে’ই আচমকা টান দেয় মায়াকে। ফেলে দেয় ওর বুকের মাঝে। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
__ কি করছেন? ছাড়েন….ধীর কন্ঠে মায়ার প্রশ্ন।
__ একটু থাকো না এভাবে।প্রচন্ড শীত করতেছে যে। কাঁপা কাঁপা স্বরে সিয়ামের জবাব।
__ আমি আপনার গায়ে কম্বল’টা দিয়ে দিচ্ছি, বলে উঠতে যাচ্ছিল মায়া….
_ তুমি থাকতে কম্বল কেন??? ক্ষাণিক দুষ্টুমির স্বরে সিয়াম।
_ আমার ঘুম পাচ্ছে খুব, মায়ার জবাব।
_ ঘুম পাচ্ছে ঘুমাতে মানা করছে কে? ঘুমিয়ে পড় না। আমি বালিশ তো আছি’ই…???। মৃদু হেসে সিয়ামের কথা….
_ চুপ করে আছে মায়া।
__ কি হলো? চুপ করে আছ যে? শুয়ে পর….(সিয়াম)
_ আমি..আসলে..(মায়া)
__ ভয় নেই।
নেশা করে আসিনি। কিচ্ছু’টি হবে না আজকে।(সিয়াম)
__ লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে মায়া..
_ ???(সিয়াম)
___ ??(মায়া)
_ কি হলো? শুয়ে পরো।(সিয়াম)
_ মায়া কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পরে সোফায় সিয়ামের বুকে মাথা রেখে।
তারপর চোখ দুই’টা বন্ধ করে ফেলে মায়া। নিঃশ্বাস দ্রুত উঠা-নামা শুরু করছে মায়ার কিন্তু সে তা কমানোর প্রচেষ্টায় ব্যস্ত।
_ এদিকে সিয়াম মায়ার মাথার চুল সরানোর অজুহাতে বার বার মায়ার ঘাড় স্পর্শ করছে।
__ কি করছেন কি???(মায়া)
__ তোমার মাথার এলোমেলো চুলগুলো গুছাচ্ছি। যাতে ঘুমের ঘোরে মুখের ভেতর না ঢুকে যায়।(সিয়াম)
– মায়া নিশ্চুপ…
__ কিছুক্ষণ পর আবারো সিয়াম মায়ার ঘাড়ে আঙুল দিয়ে সুরসুরি দিচ্ছে। মায়া এবারো জিজ্ঞেস করে,
করছেন কি???
সিয়ামের জবাব-
বাকি চুলগুলো সরাচ্ছি।
মায়া এবারো নিশ্চুপ।
নিশ্চুপ হয়ে বোবার মত শুয়ে আছে।
_ প্রায় ১০/১৫মিনিট পর মায়া ওর ঘাড়ের কাছে উষ্ন নিঃশ্বাসের টের পায়। কি করছেন কি এসব বলতে’ই সিয়াম শ করে মুখে আঙুল দিয়ে বলে উঠে_
“চুপ! একদম চুপ।কোনো কথা হবে না।”
__ মায়া চুপ হয়ে যায়।
সিয়াম মায়ার ঘাড়ের কাছে ওর মুখটা নিয়ে যায়। অতঃপর ঠোঁট দিয়ে ভালোবাসার পরশ বুলাতে থাকে মায়ার ঘাড়ে।
__ মায়া যেন এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। তবুও বহুকষ্টে নিজেকে সামলিয়ে লাজুক কন্ঠে বলল-
“কি করছেন???”
মুচকি হেসে সিয়ামের জবাব-
“মৃত মানুষকে জীবিত করছি…..”
চলবে…..