বসের সাথে প্রেম
পর্ব:- ২৮
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
সিয়াম দরজার কাছে গিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।দরজা খুলার একদম সাহস পাচ্ছে না। নিজের প্রতি নিজের’ই লজ্জা,ঘৃণা হচ্ছে। আর মনে মনে ভাবছে__
“কি করে করলাম আমি এত অনাচার? একটা নিষ্পাপ ফুলের মত চরিত্রের অধিকারি মেয়ের উপর কিভাবে এত বড় মিথ্যে কলঙ্কের কালি লেপে দিলাম??? কেমন করে করলাম এত বড় অপরাধ, যে অপরাধের কোনো ক্ষমা হয় না….”
সিয়াম দরজা না খুলে ভেবে’ই চলছে এমন হাজারো কথা। এদিকে দরজার ওপাশ থেকে কলিং বেইল চেপে’ই চলছে মায়া। বিরক্ত হয়ে মায়া মণিকে কোল থেকে নামিয়ে চলে যাচ্ছিল। মণি হাত’টা ধরে টান দিয়ে মা’কে আটকায়। তারপর ঐ ছোট্ট ছোট্ট দরজায় থাপাতে থাকে আর বলতে থাকে_
” মামা! ও মামা….
দরজা’টা খুলো না….
আম্মু তো রেগে যাচ্ছে……
মামা! ও মামা….”
মণির কথা শুনে বিজয় সোফা থেকে উঠে আসে। সিয়ামকে সোফায় বসতে বলে, খুলছি মামণি বলে দরজা’টা খুলে। মায়া ভ্রু কুচকে বলে-
” আজকে না খুললেও তো হতো”…..
আম্মু তুমি এতো রেগে যাও কেন বলো তো…(মণি)
– চুপ!
একদম চুপ!
কথা বলবি না একদম।(মায়া)
— ???(মণি)
— মায়া! তুই ওকে ধমকাচ্ছিস কেন? :/ :/
(বিজয়)
— ???(মণি)
— ধমকাবো না তো কি করব? আদর করব???
আহা! কি ভাগ্নিটাই না…!!!(মায়া)
— হয়ছে! হয়ছে!
এবার রুমে আয়….!!!(বিজয়)
— মণি দৌঁড়ে রুমে চলে যায়। মায়া রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে ভাইয়া এই মেয়ে’কে তুই হয় হোস্টেলে দিয়ে দে না হয় আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব…(মায়া)
_ কেন? ও আবার কি করলো???(বিজয়)
__ আমার মাথা পুরো নষ্ট করে দিয়েছে। আমি বুঝি না এত এনার্জি ও পাই কোথা থেকে। কথাগুলো বলে মাথায় দু’হাত রেখে দু’চোখ বন্ধ করে দিল মায়া। তারপর চোখ খুলতে খুলতে বলে__
আর কি বলব??? শুধু বাঁচাল নয় পুরো বাপের মত ফাজিলও…..(…..)…..???
চোখ খুলে মায়া স্তব্ধ হয়ে যায়। স্বয়ং সিয়াম বসে যে….
একি স্বপ্ন নাকি সত্যি???
সিয়ামকে দেখে মায়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে মণি???
মণি সিয়ামকে জাপটে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে। সিয়াম মামণি মামণি বলে মণির নাকে,মুখে,
গালে,কপালে চুমুর পর চুমু দিচ্ছে। চুমু দেওয়া শেষ হলে মণিকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নেই সিয়াম। তারপর চোখের পানি ছেড়ে দেয়। এ এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
বিজয় আর মায়া দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য স্বচক্ষে অবলোকন করছে। বেশকিছু ক্ষণ পর সিয়াম মায়াকে সোফায় বসিয়ে নিজের চোখের জলটুকু হাত দিয়ে মুছে নেই। তারপর মৃদু হাসি দিয়ে ওখানে রাখা খেলনাগুলো হাতে নিয়ে মণির দিকে এগিয়ে দেয়। মণি খেলনা পেয়ে সেকি খুশি বলে বুঝানো যাবে না। একটার পর একটা খেলনা বের করছে আর বলছে এগুলো আমার???
সিয়াম মাথা নেড়ে বলে- হ্যাঁ, এগুলো তোমার….
মণি তো খুশিতে আত্মহারা।সবগুলো খেলনা এক জায়গায় জড়ো করে খেলনাগুলোর উপর শুয়ে সেগুলোকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে_
” এগুলো সব আমার। সবাইকে দেখাব। আমার আব্বু আমায় খেলনা দিয়েছে…”
কথাগুলো বলছে খেলনাগুলোর উপর চুমো দিচ্ছে….
সিয়ামের চোখ জলে ছলছল করে উঠল এ দৃশ্য দেখে। শুধু সিয়াম নয় বিজয়-মায়া ওদের চোখও জলে চিকচিক করতেছে।
সবাই তখন অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে থেকে ছোট্ট মেয়েটার কান্ড-কারখানা দেখছিল। মণি খেলনা পেয়ে সেগুলো নিয়ে এত’টাই ব্যস্ত হয়ে পরেছে যে সবাই যে ওর দিকে তাকিয়ে আছে এতক্ষণ ধরে সেটাতে ওর একটুও খেয়াল নেই। হঠাৎ করে কি মনে করে যেন মণি খেলনার উপর থেকে উঠে পরে। তারপর সিয়ামের দিকে তাকিয়ে সিয়ামকে জাপটে ধরে। সিয়ামের গলা ধরে কান্না শুরু করে মণি।
আশ্চর্য!!!
এইতো ভালো ছিল, হঠাৎ কান্না শুরু করছে কেন তাহলে? বিজয় কি হয়েছে মণি মা বলে ওর দিকে এগিয়ে যায়। মণি তখনও সিয়ামের গলা ধরে জাপটে আছে। বিজয় মণির কাছে গিয়ে মণিকে কোলে নেওয়ার জন্য টান দিলে মণি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সিয়ামকে। সিয়াম বিজয়কে ইশারা করে বসতে বলে মণির দিকে তাকালো। তারপর একটা হাসি দিয়ে বলো-
” আম্মু কি হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন?”
– মণি তখনও কেঁদে’ই চলছে। সিয়াম এবার মণির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, এই আম্মু!
কি হয়েছে তোমার???
মণি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে শুরু করে__
” আব্বু আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না। আমায় ছেড়ে যেও না প্লিজ…”
__ সিয়াম মুচকি হাসি দিয়ে মণির চোখের জল মুছতে মুছতে বলে-
ঠিক আছে। এই আমার আম্মুকে কথা দিলাম আর কখনো ওকে ছেড়ে কোথাও যাব না। সিয়াম কথা’টা বলার সাথে সাথে মণি সিয়ামের কোল থেকে নেমে যায়। তারপর রাগী মুড নিয়ে বলে-
” কালকে তাহলে আমায় রেখে পালিয়ে গিয়েছিলে কেন?!!!”..???
__ সিয়াম জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে,
স্যরি, মামণি! আমার ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না এমন…
_ মণি গম্ভীর স্বরে বলে,
এভাবে বললে হবে না…
তোমায় এখন কান ধরতে হবে। সবার সামনে কান ধরে বলবা আর এমনটি হবে না কখনো। আর যদি হয় তাহলে তোমাকে না খেয়ে থাকতে হবে। সিয়াম কান ধরে বলে-
” এই আমি কান ধরলাম…
আর কখনো আমার পুচকি বুড়িটাকে রেখে কোথাও যাব না, যদি যায় তাহলে আমি না খেয়ে থাকব। আর সেটাই আমার শাস্তি। এবার হলো..???”
_ মণি বড়দের মত গম্ভীর স্বরে বলে-
হয়ছে, হয়ছে!
এবার কান ছাড়ো।
এত বড় হয়েছ তবুও কান ধরতে হয়, লজ্জা করে না তোমার…?????
_???(সিয়াম)
_ ☺☺☺(বিজয়)
— ???(কাজের লোক)
__ মামণি?!!!
তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
মাগরিবের আযান দিল বলে….
নামাজ পড়ে কিচেনে যাবে তাড়াতাড়ি। আব্বুর জন্য ভালো করে রান্না করতে হবে।??(মণি)
_ বাব্বাহ!
বাপ পেয়ে আমায় ভুলে গেছে…!!!??(বিজয়)
__ আর এই যে বিজয়!
নামাজ পড়তে হবে না আজকে??আব্বুকে নিয়ে নামাজে যাও…??(মণি)
__ ওমাগো!
ভয় পাইছি। যাচ্ছি, যাচ্ছি….??
সিয়াম!
উঠো, আযান দিচ্ছে নামাজ’টা পড়ে আসি….
হ্যাঁ, চলেন বলে বসা থেকে উঠল সিয়াম।
রুম থেকে বের হবে তখন মণির ডাক__
এসব পরে কেউ নামাজ পড়ে? তুমি নামাজ পড়নি কখনো??????
__ সিয়াম মণির দিকে তাকিয়ে নিজের পরনের জিন্সপ্যান্টের দিকে তাকালো।
__ কি হলো আব্বু!
তোমাকে’ই বলছি। নামাজ কি পড় না কখনো???(মণি)
_ সিয়াম এর সাথে কোনো কথা বলো না। কথা বললেই কথা বাড়বে। তুমি বরং আমার সাথে আসো। আমার পাঞ্জাবী আর পাজামা পরে নামাজ’টা পরে নাও….(বিজয়)
_ কি হলো?
দু’জন ফিসফিস করে কি বলছ??? এটা কিন্তু ভালো না…. ???(মণি)
_ আরে মা!
তোর আব্বু তো পাঞ্জাবী-পাজামা আনেনি, তাই জিজ্ঞেস করছিলাম আমার গুলো পরবে কি না….(বিজয়)
_ আচ্ছা, যাও যাও।
এখন সেটাই পরে আসো।পরে বেশী করে কিনে ঘরে রেখে দিও….?(মণি)
বিজয় সিয়ামকে ওর পাঞ্জাবী পাজামা পরিয়ে দু’জন মিলে নামাজ’টা আদায় করে আসে।
সিয়াম-বিজয় নামাজ থেকে ফিরে এসে দেখে মণি টিভির সামনে বসে টিভি দেখছে।
বিজয় দুর থেকে’ই বলতে বলতে মণির কাছে আসে__
কি করেগো আমার ছোট মা’টা…..???
_ বিজয়ের কন্ঠ শুনে মণি সেদিকে তাকাই, সিয়ামকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মণি দৌঁড়ে যায় সিয়ামের কাছে। তারপর একলাফে সিয়ামের কোলে উঠে পরে। এদিকে সিয়ামও মণিকে জড়িয়ে ধরে।হঠাৎ করে’ই সিয়ামের মাথা’টা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠে। চোখ’টা কিঞ্চিৎ বন্ধ করে ফেলে সিয়াম। ঠিক তখনি বাসা থেকে কল আসে। সিয়াম মণিকে কোল থেকে নামিয়ে সোফায় বিজয়ের কোলে দেয়, তারপর পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করে কল। ফোনের ওপাশ থেকে সিয়ামের বাবার কল_
” বাবা! রাত তো হয়ে গেছে।কখন আসবি???”
সিয়াম একঘন্টা পর বলে কলটা কেটে দেয়। এই মুহূর্তে ওদেরকে সিয়াম কিচ্ছু জানাতে চাই না।যায় হোক ফোন’টা পকেটে রেখে সিয়াম বিজয়ের পাশে গিয়ে বসে।”
আস্তে করে বিজয়ের একটা হাত ধরে। তারপর বিনীত স্বরে বলে-
” আমি কি মায়ার সাথে একটু কথা বলতে পারি ভাইয়া?”
_ বিজয় সিয়ামের দিকে বলে-
” কেন নয়???
অবশ্যই তুমি কথা বলতে পারো, কারন ও তোমার স্ত্রী।তাই ওর সাথে বলার পুরোপুরি অধিকার তোমার আছে, আর এর জন্য তোমার কোনো অনুমতি নিতে হবে না।”
_ তবুও…(…)…(সিয়াম)
__ তবুও কী?!!!
কোনো ভয় রেখো না মনে।
এতদিন যা হয়েছে সব জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট, এর চেয়ে বেশী কিছু মনে করবা না। মন থেকে সব দ্বিধা-সংকোচ ঝেড়ে ফেলে দাও। আর ও কিচেনে’ই আছে, যাও কথা বলে নাও….”(বিজয়)
__ __ ___
সিয়াম:- ????
বিজয়:- কি হলো? এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন???
বুকে সাহস সঞ্চয় করো, আর এগিয়ে যাও….
ও হয়তো প্রথমে একটু ওবার রিয়েক্ট করতে পারে,রাগ দেখাতে পারে, কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে। ও আজো তোমায় মনে-প্রাণে ভালোবাসে….
তাই বলছি ভয় না পেয়ে এগিয়ে যাও….
সিয়াম বিজয়ের কথা শুনে বুকে সাহস পেল একটু।
আর তাই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল সে।
উপরে উঠে সোজা ডানদিকের কিচেনে চলে গেল সিয়াম। কিচেনের পাশে যেতে’ই দেখে মায়া চা-নাস্তা নিয়ে এদিকেই আসছে। সিয়াম দরজার পাশে লুকিয়ে পরে। আর মায়া সেটা খেয়াল’ই করেনি।মায়া নিচে চলে যায় চা-নাস্তা নিয়ে। সিয়াম আড়াল থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে মণি।
দু’হাত দিয়ে মুখ চেপে হাসছে। সিয়াম মণিকে জিজ্ঞেস করে-
” কি হলো? হাসছ কেন?”
মণি হাসি থামিয়ে মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলে-
“আব্বু তুমি আম্মুকে ভয় পাও??????”
_ কে বলল তোমায় আমি তোমার আম্মুকে ভয় পাই? একদম ভয় পাইনা…কথা’টা সিয়াম গম্ভীর হয়ে বলল।
মণি আবারো বলল-
” আমি তো দেখেছি নিজ চোখে, তুমি আম্মুর ভয়ে দরজার পাশে লুকিয়ে পরেছ…??(মণি)
__ ???(সিয়াম)
__ হয়ছে, হয়ছে….
এবার চলো চা নাস্তা খাবে….কথা’টা বলে’ই হাত ধরে একরকম মণি সিয়ামকে নিচে নিয়ে যায়।
নিচে তখন মায়া-বিজয় বসে কি নিয়ে যেন কথা বলছিল।সিয়ামকে দেখে মায়া বসা থেকে উঠে উপরে চলে যায় কাজের অজুহাত দিয়ে। সিয়ামকে সোফায় বসিয়ে চা’য়ের কাপটা হাতে ধরিয়ে দেয় বিজয়। সিয়াম চা নাস্তা হাতে নিতে নিতে’ই বলে-
” ভাইয়া! আমি মায়ার সাথে….(….)….”
বিজয়:- বলবা, বলবা আগে তো খেয়ে নাও কিছু।
কথা বলতে বলতে’ই সিয়ামের ফোনে আবারো বাসা থেকে কল আসে। সিয়াম ফোন’টা হাতে নিতে’ই বিজয় বলে-
বাসা থেকে কল দিয়েছে তো? ফোন’টা আমার হাতে দাও…
সিয়াম ফোনটা বিজয়ের হাতে দেয়। বিজয় কলটা রিসিভ করে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে সবটা খুলে বলে সিয়ামের বাবাকে। তারপর সিয়াম আজকে এখানে’ই থাকবে এটা বলে কল’টা রেখে দেয় বিজয়। কলটা রেখে ফোন’টা সিয়ামের হাতে দিয়ে মায়াকে ডাক দেয় বিজয়। দু’তিন বার ডাকার পর মায়া নিচে নেমে আসে। সিয়াম কিংবা বিজয় কারো দিকে না তাকিয়ে’ই বলে-
“হ্যাঁ, বল…”
বিজয় হাসতে হাসতে বলে –
কিরে? ঘাড়ে কি তোর কোনো সমস্যা হয়েছে???
– মায়া বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বলে নাতো….বিজয় হেসে বলে-
আমার তো মনে হয় হয়েছে।না হলে ডানে বা’মে তাকাতে পারিস না কেন???
__ কিছু বলবি? আমার তাড়া আছে। মণির জন্য খাবার বানাতে হবে….(মায়া)
_ কিছু নয়, অনেক কথায় বলব। আগে এখানে বস। মায়া বিজয়ের পাশে সোফায় গিয়ে মাথা নিচু করে বসল। বিজয় মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল_
“এবার সামনের দিকে তাকা…”
মায়া কোথাও না তাকিয়ে বলল, বল! আমি শুনতেছি….”
বিজয় বুঝতে পারল একে এভাবে সোজা করা যাবে না। তাই সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলল-
” সিয়াম তুমি মায়ার সাথে কথা বলো, আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।”
__ আর মায়া! সিয়ামের সাথে কথা বল।
_ বিজয় কথাটা বলে উঠতে যাবে তার আগে’ই মায়া একলাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে পরল। তারপর
“ভাইয়া! আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না তুই জানিস না?”
__ সিয়াম অপরিচিত?(বিজয়)
__ হ্যাঁ, অপরিচিত।(মায়া)
_ মণি মা! তুমি একটু রান্না করে যে দাদু আছে না? ওনার কাছে যাও। গল্প শুনো গিয়ে…(বিজয়)
_ আচ্ছা, মামা। মণি দৌঁড়ে চলে গেল।চলে যাবার পর—
— তুই কি সত্যি’ই সিয়ামকে চিনিস না?(বিজয়)
__ না,না,না। আর কতবার বলব। এই নামের আমি কাউকে চিনি না। এই আমার কেউ নেই.. (মায়া)
_ কেউ নেই….
হুম….মানলাম নেই কেউ। আচ্ছা, একটু ভালো করে মনে করে দেখতো এই নামে পূর্বে কেউ তোর জীবনে ছিল কি না কিংবা কাউকে চিনতি কি না??? মণির কসম মিথ্যে বলবি না….. (বিজয়)
__ কসমের কথা শুনে মায়া যেন থমকে গেল। কি বলবে বুঝতে পারছে না।
__ কি হলো? বল…(বিজয়)
~ হ্যাঁ, ছিল। এই নামে একজন ছিল আমার পরিচিত।পরিচিত বললে ভুল হবে, সে ছিল আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।যাকে ছাড়া আমি আমার জীবন কল্পনা করতে পারতাম। একমুহূর্ত বেঁচে থাকার কথা ভাবতে পারতাম না।একনজর চোখের আড়াল হলে মনে হতো এই যেন দম বন্ধ হয়ে যাবে আমার। কিন্তু একদিন সে নিজ মুখে আমার জন্য ওকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে ওর জীবন থেকে অনেক অনেক দুরে তাড়িয়ে দিয়েছে। আজ শুধু সে আমার জন্য নিষিদ্ধ না, সে আমার জন্য মৃতও।
আমার জীবনে ওর জন্য আর এতটুকু জায়গা অবশিষ্ট নেই। এখন ও শুধু’ই আমার অতীত। আর আমার কাছে অতীত নয়, বর্তমান’ই সব। আমি বর্তমানকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই। (মায়া)
__ বিজয় সিয়ামের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চোখ জলে ছলছল করছে। বিজয় মায়াকে আবার প্রশ্ন করে-
” অতীত কিন্তু একদম মূল্যহীন নয়। অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে নিয়েই কিন্তু মানুষের জীবন।এদের একটাকে ছাড়া জীবন কল্পনা করা যায় না। তাই প্লিজ, বর্তমানের পাশে অতীতকেও একটু জায়গা দে।(বিজয়)
_ যে অতীত মানুষের জীবনকে শুধু’ই কষ্ট দেয়, কষ্ট ছাড়া কিছু’ই দিতে পারে না আমার মনে হয় সে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা’ই ভালো। আমিও পায়ে মারিয়ে বেরিয়ে এসেছি….(মায়া)
__ ও যখন ওর কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত এবং অনুতপ্ত আমার মনে হয় তোর আর একটা বার সিয়ামকে সুযোগ দেওয়া উচিৎ।(বিজয়)
_ ভাইয়া!
ওকে বলে দাও….
ওর কাছে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আমার স্বপ্নেও নেই। ও যদি মনে করে থাকে, মেয়ের কান্না শুনে আমি ওর কাছে ফিরে যাব তাহলে সেটা ভুল।(মায়া)
__ কিন্তু… (….)…(বিজয়)
_ আর একটাও কথা নয়।তুমি স্রেফ ওকে জানিয়ে দাও, ওর কাছে ফিরে যাওয়ার কথা ও যাতে কল্পনাও না করে….(মায়া)
_ মায়া তুই …… (….)….(বিজয়)
__ ভাইয়া! আর একটা কথাও বলবি না।ওকে চলে যেতে বল। না হলে আমি একটা কিছু করে ফেলব।(মায়া)
মায়ার কথা শুনে সিয়ামের যেন পুরো দুনিয়া ঘুরছে।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে।
না, না! আমার জন্য ওর আর কোনো ক্ষতি আমি চাই না। কথাটা মনে মনে বলতে বলতে বসা থেকে উঠে পরে সিয়াম। উপরে গিয়ে শার্ট-প্যান্ট পরে এসে বিজয়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিল। দরজার কাছে গিয়ে ছিটকিনি খুলতে গিয়েও নিচে তাকিয়ে পরে সিয়াম। একটু পর’ই মাথা ঘুরে দরজার সামনে’ই পরে যায়। বিজয় দৌঁড়ে সিয়ামের কাছে যায়। মায়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিজয় সিয়ামকে ধরে সোফায় নিয়ে শুইয়ে দেই। কাজের মেয়ে পানি এনে দিলে সে পানি সিয়ামের চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়। মায়া তখনও দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখছে।
সিয়ামের জ্ঞান ফেরার কোনো লক্ষণ’ই নেই।মণি দৌঁড়ে এসে বাবাকে জাপটে ধরল। তারপর__
” আব্বু!!!
ও আব্বু?!!! কথা বলো তুমি…”
কিন্তু সিয়াম সাড়া দিচ্ছে না।
মণি পাগলের মত একবার বাবার মুখের দিকে, আরেকবার মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। তারপর মামার দিকে তাকিয়ে বলছে-
” মামা!
ও মামা!!!
আব্বু কথা বলছে না কেন? আব্বু কি মরে গেছে???
__ ও মা!
তুমিও কথা বলছ না কেন?
তুমি কি আব্বুকে মেরে ফেলছ???
_ সবাই চুপ….
মণির একের পর এক প্রশ্ন করছে আর কেঁদে’ই চলছে।
বিজয় দৌঁড়ে গিয়ে রুম থেকে একটা বড় ব্যাগ নিয়ে এলো। তারপর সেখান থেকে ইনজেকশনের সুঁচ বের করে সিয়ামকে একটা ইনজেকশন দিয়ে দিল। তারপর মণিকে কোলে নিয়ে চোখের জল মুছে বলল__
কিচ্ছু হয়নি আম্মু!!!
তোমার আব্বু এখনি কথা বলবে….
আসলে তোমার আব্বু মনে হয় আজকে খাইনি কিছু, যার কারনে শরীরটা দুর্বল হয়ে পরেছিল, আর অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
বেশকিছু ক্ষণ পর সিয়ামের জ্ঞান ফিরে….
চোখ মেলে তাকালো….
চলবে…..