Monday, October 6, 2025







বসের সাথে প্রেম পর্ব-২৬

বসের সাথে প্রেম
পর্ব-২৬

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

রাস্তার পাশে হাঁটুগেড়ে বসে কান্না করতেছে মায়া। এই মুহূর্তে ওর দিকে তাকিয়ে আছে হাজারো কৌতূহলী চোখ, আর ওকে ঘীরে আছে হাজারো জনতা। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী পথিকরাও রাস্তার পাশে এত মানুষের ভীর দেখে ওরা ছুটে এসে ভীর জমাচ্ছে, অনেকে আবার গাড়ি থেকে নেমে এসে দেখে যাচ্ছে মায়াকে। বিজয়ের চাচাও এ রাস্তা দিয়েই ফিরছিলেন। রাস্তার পাশে কি হয়েছে দেখার জন্য গাড়ি থেকে নেমে যান তিনি। ভীড় ঠেলে সেখানে পৌঁছে মায়াকে এভাবে বসে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ায় বিজয়ের চাচা। মায়াকে কিছু জিজ্ঞেস করেও কাজ হয়নি। স্কুলের ম্যাডামের থেকে জানতে পারেন মণিকে নিতে আসছিলেন মায়া। কিন্তু ওকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর থেকেই এভাবে রাস্তার পাশে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। বিজয়ের চাচা ফোন দেই বিজয়কে। বিজয় রিসিভ করে ফোন।
__ হ্যাঁ, কাকা! বলো….
– বিজয়! তুই যত শিগ্রয় সম্ভব মডেল স্কুলের সামনে চলে আয়।(চাচা)
_ কাকা! কি হয়েছে? মায়া ঠিক আছে তো? কাকা মণি মায়ের কিছু হয়নি তো?!!! একনিঃশ্বাসে বিজয় প্রশ্নগুলো ওর চাচাকে করে। ওর চাচা শুধু বলে-
মায়া রাস্তার পাশে হাঁটুগেড়ে বোবার মত স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কথাটা শুনা মাত্র’ই ফোনটা কেটে দেয় বিজয়। চেম্বার থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে মডেলের স্কুলের উদ্দেশ্যে।কিছুক্ষণের মধ্যে’ই উপস্থিত হয় স্কুল গেইট। শত শত জনতার ভীর ঠেলে ভেতরে ঢুকে। মায়াকে এভাবে বসে থাকতে দেখে চমকে গেলেও থমকে যায়নি বিজয়। বোনের পাশে গিয়ে বসে বোনের মাথায় হাত রাখে বিজয়। ফিরে তাকালো মায়া। ভাইকে দেখে জড়িয়ে কান্না করা শুরু করে মায়া। বিজয় জিজ্ঞেস করে-
কি হয়েছে? কাঁদো কাঁদো গলায় মায়ার জবাব-
ভাইয়া! আমার সব শেষ হয়ে গেছে, আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি ভাইয়া। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব???

– কি হয়েছে? সেটা তো বল আগে!!!(বিজয়)
_ মণি নেই ভাইয়া…(মায়া)
– নেই মানে??? কি বলছিস তুই এসব? ও কোথায় গেছে?(বিজয়)
__ জানি না ভাইয়া! ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।(মায়া)

– একমিনিট তুই বস….
ম্যাম! কি বলছে ও এসব?
মণি মা স্কুলে আসে নি আজকে???(বিজয়)

– এসেছিল জনাব।
কিছুক্ষণ আগে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। ওকে ভিতরে দাঁড়াতে বলে মায়া ম্যামকে ফোন দিলাম ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ফোন দিয়ে ওকে আর খুঁজে পায়নি।অনেক জায়গায় খুঁজলাম,কোথাও খুঁজে পাইনি ওকে।(ম্যাম)

মায়া উঠ তুই…
কাকা তুমি ওকে বাসায় নিয়ে যাও, আমি আসছি….(বিজয়)

– না! আমি কোথাও যাব না। আমার মেয়েকে ছাড়া আমি কোথাও যাব না। আমি এখানে’ই বসে থাকব।ওকে নিয়ে আয়, তারপর আমি যাব।(মায়া)
___ ঠিক আছে, কিন্তু এখানে নয়। আমার গাড়িতে উঠ। আমরা দু’জন মিলে খুঁজব ওকে।
~ বিজয়ের কথা শুনে মায়া উঠে দাঁড়ায়। মায়াকে ধরে নিয়ে বিজয় গাড়িতে উঠে বসে। তারপর চাচাকে বলে-
” কাকা! আপনি চলে যান বাসায়। আমরা মণিকে নিয়ে আসছি।”
কথাটা বলে বিজয় চলে যায়। খুঁজতে থাকে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে।
এদিকে বিজয়ের চাচাও হাত গুটিয়ে বসে নেই। বিজয়-মায়া চলে যেতেই ওনার লোক-লস্কর পাঠিয়ে দেই দিকে দিকে। যে করেই ছবির এই মেয়েকে খুঁজে আনতে হবে।বিজয়ের চাচাও খুঁজতে থাকে। সবাই মিলে পুরো শহর তন্নতন্ন করে ফেলে মণিকে খুঁজতে খুঁজতে। কিন্তু কিছুতেই মণিকে খুঁজে পাওয়া গেল না। সেদিন সারা রাতভর খুঁজেও মণিকে পাওয়া গেল না।

পরদিন সকালে বিজয় ও ওর চাচা মায়াকে নিয়ে থানায় যায়। থানায় গিয়ে ডায়েরী লিখিয়ে তবে’ই বাসায় ফিরে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত হয়, মণির আর খুঁজ পাওয়া যায় নি। যদিও এর’ই মধ্যে পত্রিকাসহ সরকারি ও বেসরকারি সবগুলো চ্যানেলে হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে মায়া যেন শোকে শেষ। দুদিনের নাওয়া খাওয়ার অভাবে ওর মুখ’টা শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে। এদিকে বিজয়?!!!
কলিজার টুকরা ভাগ্নিকে হারিয়ে ফেলেছে। ওর অবস্থা তো আরো বেহাল। ওর দিকে তাকানো’ই যায় না। মণিকে হারিয়ে সে যেন নিঃস হয়ে গেছে, কিন্তু ভেঙে পরেনি পুরোপুরি। পরদিন সকালে নিজ হাতে নাস্তা নিয়ে মায়ার রুমে গিয়ে হাজির সে। মায়া একনজর বিজয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। বিজয় গিয়ে পাশে বসল। মায়াকে কিছু মুখে দিতে বলল। মায়া খায়নি। ওর একটাই কথা খাব না। কিচ্ছু খাব না ওকে ছাড়া।

বসা থেকে উঠে গিয়ে বিজয় বলে__
” কি দরকার ছিল মেয়ে’টাকে এভাবে বকার? ও তো বেশী কিছু চায় নি, বাবা চেয়েছে। অন্যান্য জন্মদিনের মত এবারও একটা গিফ্ট চেয়েছে। তবে অন্যান্য জন্মদিনের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম এবারের আবদার’টা। ব্যতিক্রম হলেও তো পূরণ করা যেত না? ফিরে যেতে পারতি না তুই ওর কাছে? তোর জন্য না হয়, মেয়েটার জন্য পারতি না যেতে? এতে কি এমন ক্ষতি হতো???

__ ভাইয়া!
আমি কোথাও যাব?
কার কাছে যাব???
ও যে আমায় বাসা ভর্তি মানুষের সামনে অপমান করেছে, ভিষণ অপমান। ও আমায় দুশ্চরিত্রা বলে আখ্যায়িত করেছে। তবুও থাকতাম। ওর সব লাঞ্চনা, গঞ্জনা, অপবাদ সব সহ্য করে’ই থাকতাম। কিন্তু ও যখন বলল_
হয় ওর সামনে থেকে বেরিয়ে আসব, না হয় ওর মরা মুখ দেখব। তখন যে আর থাকতে পারিনি ভাইয়া। তখন যে আমি থাকতে পারিনি। সেদিন তুই না বাঁচালে হয়ত আমি মরেই যেতাম। তারপরের ঘটনা তো তুই জানোস! এরপরও বলবি আমায় ঐ বাসায় যেতে…??? (মায়া)
__ স্যরি….
প্লিজ, কান্না বন্ধ কর….(বিজয়)

__ ভাইয়া! কেন আমার সাথে এমনটি হলো? সব হারিয়ে আমি তো ওর দেওয়া স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম, আল্লাহ কেন ওকেও কেড়ে নিল। কেন আমি সব হারিয়ে এভাবে নিঃস্ব নিলাম। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচব? এটুকু বলে হাউ মাউ করে কেঁদে দিল মায়া। বিজয় ওর বোন’কে জড়িয়ে ধরে বলল, কাঁদিস না বোন। ও হারায় নি। ও নিশ্চয় কোথাও লুকিয়ে আছে। তুই দেখিস মামণি ঠিক ফিরে আসবে। বিজয় মায়াকে শান্ত করতে পারে নি। তার আগেই জ্ঞান হারায় মায়া…..

মায়ার জ্ঞান হারিয়েছে শুনে কেউ আবার ভয় পাবেন না। ওর পাশে ওর ডাক্তার ভাইয়া বিজয় আছে। ওর জ্ঞান ফিরে আসবে খুব শিগ্রয়। ওর জ্ঞান ফিরতে থাকুক এই সুযোগে চলুন ঘুরে আসা যাক সিয়ামের পরিবার থেকে। দেখে আসা যাক সে এখন কোথায়, কিভাবে, কি অবস্থায় আছে।
সকাল ১০টা_
সিয়াম আর সিয়ামের মা বসে টিভি দেখছে। টিভির পর্দায় বার বার এক’ই খবর ভেসে আসছে_
অমুক ডাক্তারের একমাত্র ভাগ্নি অমুক নিখোঁজ। সে
…..(..)…. স্কুলের একজন মেধাবী ছাত্রী। তার পরণে ছিল…. (…)…রংয়ের জামা, তার গায়ের রং ফর্সা…..

সিয়াম সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে ড্রয়িংরুমে বাবা-মায়ের সাথে বসে। একটু পর সাইমা ও আবিরও নিচে নেমে আসে।

– আবির! এখন আমি কি করব বাবা?!!!(সিয়ামের বাবা)
_ বাবা! আমি বুঝতে পারছি না।আমায় মাথা একদম কাজ করছে না।(আবির)
____ আব্বু! আমার মনে হয় একবার মেয়েটার মামার নাম্বারে কল দিয়ে সবটা বলা দরকার। ঐ পরিবারে নিশ্চিত শোকের ছায়া নেমে পরেছে।(সাইমা)
_ সেটাই মনে হয় করা উচিৎ তোমার…(মা)
__ না বাবা!
তুমি কাউকে কল দিবা না। মেয়েটা এই বাড়িতেই থাকবে, সাইমার ছেলের সাথে ও স্কুলে যাবে।(সিয়াম)

– সিয়াম কি বলছিস তুই এসব? ওর পরিবারের কথাটা একটু ভাব…ওর পরিবারের মানুষজন কি অবস্থায় আছে, একটু বুঝার চেষ্টা কর।(মা)
_ ওর পরিবার গোল্লায় যাক, আমার সেটা দেখার বিষয় না। আমার শুধু একটা কথায়। আর সেটা হলো মণি এ বাসায় থাকবে। সাইমের সাথে ও খেলবে, স্কুলে যাবে।(সিয়াম)
_ বাবা!
একটু বিবেক খাটিয়ে বুঝার চেষ্টা কর ব্যপারটা। ওর জন্য কতগুলো মানুষ কষ্টে আছে। কতগুলো মানুষের জীবন বিপন্ন। (বাবা)
_ আমার কাছে এই ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়েটার জীবনের থেকে কারো জীবন বড় না। তোমরা দেখনি, বাসায় দিয়ে আসব শুনে ও কিভাবে রিয়েক্ট করল কালকে? কিভাবে ফল কাটার চাকু দিয়ে হাত কাটল???
বাবা! আমরা ওকে জোর করে দিয়ে আসতে পারব, কিন্তু ও যদি সেখানে গিয়ে কিছু একটা করে বসে কিংবা সত্যি সত্যি যদি ও ছাদ থেকে লাফ দেই??!!!
পরদিন সকালে তো পত্রিকায় শিরোনাম বের হবে-
ছাদ থেকে লাফ দিয়ে অমুকের ভাগ্নি অমুকের মৃত্যু। তখন পারবে, পারবে নিজেকে ক্ষমা করতে???(সিয়াম)
_ কিন্তু ভাইয়া….(আবির)
__ কোনো কিন্তু নয় আবির। ও এখানে’ই থাকবে। আর তাছাড়া ও তো বলে’ই আমি নাকি ওর বাবা!
তো সমস্যা কি???
ও না হয় মিথ্যে হলেও আমার পরিচয়েই এখানে থাকবে। প্লিজ, বাবা না করো না। নষ্ট করে দিও না ওর ভালো থাকাকে….(সিয়াম)

– বাপরে বাপ!
কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা। এ নিশ্চয় ডাকাতের বংশের মেয়ে। এর বাবা নিশ্চয় ডাকাত।(সাইমা)

– খবরদার পঁচা ফুপ্পি__
বাজে কথা বলবে না। আমি ডাকাত বংশের মেয়ে, ভদ্র পরিবারের মেয়ে। আর আমার বাবা ডাকাত নয়, আমার বাবা ইয়া বড় অফিসে কাজ করে। কথাটা বলতে বলতে নিচে নামে মণি…..

সবাই চুপ।
কারো মুখে কোনো কথা নেই। কথা বললেই এখন বিপদ।

– কি হলো?
চুপ হয়ে গেলে কেন???
বলো, বলো আমি কোন বংশের মেয়ে???(মণি)
_ ইয়ে, মানে, আসলে….(সাইমা)
– এমন করছ কেন? বলো আমি কোন বংশের মেয়ে??? চোখ রাঙিয়ে মণি সাইমাকে জিজ্ঞেস করে।

– আরে,আরে!
আমার ছোট্ট মামণিটা এসে গেছে যে। বসো….বসো….(আবির)

– তুমি থাক ভালো আংকেল। আমি পঁচা ফুপ্পির সাথে কথা বলছি।(মণি)

ওকে, চুপ….. ???(আবির)
__ মণি মা! তুমি এখানে আস।(সিয়াম)

– না, তোমার সাথে আমার কথা নাই….
তোমার সামনে পঁচা ফুপ্পি আমায় ডাকাত বলছে তুমি কিছু বলনি কেন???(মণি)
_ ???(সাইমা)
_ ????(সিয়াম)
– ?????(বাবা)
– এই যে বুড়ো দাদু!
মুখেরে এমন করছ কেন?
মশা ঢুকবে তো?!!!(মণি)
_ ???(মা)
– এইযে বুড়ি দাদি মা।তুমি হাসছ কেন? ???(মণি)

– স্যরি, আমার ভুল হয়ে গেছে। আর এমন হবে না। প্লিজ, মাফ করে দাও মণি মা… ??(সাইমা)

– ওকে,ওকে…আর যাতে এমন না হয়। এখন আমারে একটু কোলে নাও। সাইমার দিকে যেতে যেতে মণি বলে….

সাইমা মণিকে কোলে তুলে নেই। অদ্ভুত!
ওকে যতবার কোলে নিচ্ছি ততবার কেমন যেন পরিচিত গন্ধ পাই ওর শরীর থেকে। খুউব পরিচিত….
সাইমা মণিকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বসে আছে।
আবির সামনে এনে মিষ্টির প্লেট রাখে। এই নাও মিষ্টি মামণি…
তোমার জন্য মিষ্টি এনেছি…

মণি একনজর মিষ্টির দিকে তাকালো। তারপর সাইমার কোল থেকে নেমে গেল। হুট করে মিষ্টি’টা হাতে নিয়ে সিয়ামের বাবার মুখে ভিতর ঢুকিয়ে দেয়।
সবাই তো হা করে তাকিয়ে আছে পুচকি মেয়েটার দিকে।
__ এসব কি মণি?!!!(সিয়াম)
__ মিষ্টি! দাদুকে মিষ্টি দিলাম। দাদু তো আবার কালো মিষ্টি দেখলে লোভ সামলাতে পারে না।(মণি)
__ সিয়ামের বাবা মিষ্টি’টা মুহূর্তেই সাবার করে ফেলল। যদিও তার মিষ্টি খাওয়া বারণ। কিন্তু এতদিন পর কালো মিষ্টি পেয়েছে, তাই খাওয়ার লোভটা সামলাতে পারে নি….

– মণি!
দাদার কালো মিষ্টি পছন্দ এটা তুমি জানো???(সাইমা)
_ হুম, জানি বলেই তো দিলাম।(মণি)

দুপুর বেলা__
সবাই খেতে বসল।
সবাই আরাম করে খাচ্ছে কিন্তু মণি?!!!
মণি বেশ চুপচাপ বসে আছে।
– কি হলো বুবুর?!!!
খাচ্ছো না কেন?
খাও… (সিয়ামের মা)
_ আমি এসব খাই না দাদিমা… ??(মণি)
,
সিয়ামের মায়ের ভেতর’টা ছ্যাঁত করে উঠে মণির কথা শুনে। মনে পড়ে যায় মায়ার কথা। আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগে এভাবে রান্না করা হয়েছিল চিংড়ির তরকারি। আর সেদিন মায়াও ঠিক এক’ই ভাবে তরকারি দেখে মন খারাপ করে বসে ছিল। সিয়ামের মা যখন জিজ্ঞেস করল__
কি ব্যাপার?
খাচ্ছিস না কেন???
আজকের মতই ঠিক একই ভাবে একই ভঙিতে মায়াও বলেছিল-
আমি এসব খাই না মা….
,
অথচ আজ..!!!
আজ ও নেই। এই সংসার থেকে অনেক অনেক দুরে চলে গেছে। মায়া চলে যাবার একসপ্তাহ পর সাইমার থেকে সবাই জানতে পারে মায়া প্রেগন্যান্ট ছিল। ওর পেটে ছিল সিয়ামের বাচ্চা। আর যার সাথে কথা বলার জন্য মায়াকে এত বড় অপবাদ সহ্য করতে হয়েছিল, সে ছিল মায়ার ভাই। মায়ের পেটের না হলেও আপনার থেকেও বেশী আপন। মায়া কারো সাথে কিছু না বললেও সাইমার সাথে সব শেয়ার করত। সেদিনও শেয়ার করেছিল যেদিন ওর ভাইয়ার সাথে প্রথম দেখা হয়। সাইমা বলেছিল বিজয়কে এ বাড়িতে নিয়ে আসতে, মায়া বলেছিল সিয়াম সুস্থ হয়ে উঠলেই নিয়ে আসবে। পরিচয় করিয়ে দিবে একে অপরকে। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি। তার আগেই মায়াকে একবুক হাহাকার বুকে চেঁপে এ বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হয়।

ভাবতেই জলে ছলছল করে উঠে চোখগুলো। সিয়ামের মা মণির প্লেটে কিছু না দিয়েই বসা থেকে উঠে চলে যায়। মণি কিছুক্ষণ প্লেটের দিকে তাকিয়ে থেকে বসা থেকে উঠে পরে।
তারপর সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।
সাইমা বলে উঠে__
বাবা-মা সবাই দেখো….
ও কিভাবে যেন হাঁটছে।
এ হাঁটা আমার খুব পরিচিত লাগে। খুউব বেশী পরিচিত।
তোমরা কেউ বলে দিতে পারবা কেন আমার এমন লাগে?!!!
সবাই মণির হাঁটার দিকে তাকিয়ে আছে। অবিকল মায়ার মতই হাঁটা। কিন্তু এটাও কি সম্ভব? অস্ফুট স্বরে সিয়ামের বাবা বলে উঠে….
– ও তো মায়ার মত চিংড়ির তরকারীও পছন্দ করে না। অবিকল মায়ার ভঙিতে কথাও বলে।(মা)
__ আশ্চর্য তো!(বাবা)
– এটুকুতেই আশ্চর্য বাবা?
ও যে আপনি কালো মিষ্টি খান সেটাও জানে…(আবির)
_ সিয়ামের ভিতরটা হাহাকার করে উঠে। না খেয়ে’ই উঠে পরে টেবিল থেকে। জল ছলছল চোখে হাতমুখ ধূয়ে উপরে চলে যায় সিয়াম। সবাই চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সাইমার বাবা মুখ খুলে__
” আমার মনে হয় মেয়েটাকে ওর বাড়িতে দিয়ে আসা দরকার। না হলে ওকে দেখে মনের ভেতরের নিভন্ত আগুন জ্বলে উঠবে দাউ দাউ করে। আর সেই আগুনে জ্বলে-পুড়ে মরবে আমার ছেলেটা…”
বাবার সাথে তাল মিলিয়ে মেয়েও বলে-
” বাবা! সেটাই করা ভালো হবে। সেটাই করো।কি বলো আবির?”
আবিরও ওদের কথায় সায় দিয়ে বলল__
” হ্যাঁ, সেটাই বোধ হয় ভালো হবে। ওর পরিবার ফিরে পাবে পাবে ওকে, আর আমরা ফিরে পাব মানসিক শান্তি…. “
সিয়ামের মা বলে উঠে__
” কাল, কালকে যখন সিয়াম অফিসে চলে যাবে তখনি তুমি ওকে দিয়ে এসো বুঝিয়ে।”

পরদিন সকাল__
মণিকে খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে অফিসে চলে যায় সিয়াম। সিয়াম অফিসের যাওয়ার একটু পরে’ই ঘুমন্ত মেয়েটাকে গাড়িতে উঠিয়ে সিয়ামের বাবা রওয়ানা দেই মণির মামা বাড়ির উদ্দেশ্যে। রওয়ানা দেওয়ার প্রাক্কালে সবাই শেষবারের মত দেখে দেয় মণি নামক ছোট্ট,মিষ্টি, মায়াবী মেয়েটাকে। সবার চোখ’ই জলে ছলছল করছে। সাইমা তো কেঁদে’ই দিয়েছিল…

গাড়ি গিয়ে থামে মডেল স্কুলের সামনে। এখান থেকেই টিভি থেকে নেওয়া নাম্বারে কল দিল সিয়ামের বাবা। ওপাশ থেকে-
” আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন???(বিজয়)
– আমি সাগর। শিল্পপতি সাগর চৌধূরী। আপনি কি ডাক্তার বিজয় বলছেন?(বাবা)
_ হ্যাঁ, আমি ডাক্তার বিজয়। বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?(বিজয়)
__ আসলে মণি মেয়েটাকে নিয়ে আসছিলাম আমি।(বাবা)
__ কি?!!! মণি????
মণিকে পেয়েছেন????(বিজয়)
– হ্যাঁ, আপনি স্কুল গেইট আসেন এখনি।(বাবা)
_ জি, আমি এখনি আসছি।(বিজয়)

বিজয় চেম্বার থেকে সোজা স্কুল গেইট চলে আসে। সিয়ামের বাবা পুরো ঘটনা খুলে বলে বিজয়কে। মণিকে দিয়ে যাওয়ার আগে স্যরিও বলে যায়। বলে যায়, আসলে আমাদের উচিৎ হয়নি ওকে এভাবে রাখা, কিন্তু আমরা সাহসও পাচ্ছিলাম না ওকে নিয়ে যেতে পাছে যদি ও নিজের ক্ষতি করে বসে সে জন্য….

যায় হোক!
ক্ষমা চেয়ে সিয়ামের বাবা চলে যায়। চলে যাওয়ার আগে ডাক্তার বিজয় ওনার বাসার এড্রেসটা দিয়ে দেই শিল্পপতি সাগরকে।
শিল্পপতি সাগরও হেসে হেসে এড্রেস কার্ডটা হাতে নেই আর বলে__
” খুব শিগ্রয় আমার পাগল ছেলে আসতে পারে মণিকে দেখতে….”
বিজয় শিল্পপতির দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা সরুপ হাসি দিয়ে বিদায় বলে মণিকে নিয়ে রওয়ানা দেই বাসার উদ্দেশ্যে…..

সেদিন সন্ধ্যায় এত্তগুলো খেলনা হাতে বাসায় আসে সিয়াম….

চলবে……

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ