বসের সাথে প্রেম পর্ব-২২

0
5256

বসের সাথে প্রেম
পর্ব-২২

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

মায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে এসব বলছিল আর কান্না করছিল। হঠাৎ’ই শরীরে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে মায়া, ফিরে তাকাই পিছনে…

_তুই?!!! কখন এলি???
অনেকটা স্বাভাবিক’ভাবে কথা’টা বলার চেষ্টা করে মায়া।

_ খুব পর হয়ে গেছি, তাই না? আমাকেও বলা যায় না কি হয়েছে তোদের! (সাইমা)

মায়া ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসি এনে ক্ষাণিক’টা হাসার চেষ্টা করে। কি যে বলিস না, তুই? আমাদের আবার কি হবে?!!!
আর কিছু হলে তোকে জানাব না, এটা ভাবলি কি করে?!!!
,
— তাহলে বলতেছিস না কেন? কেন তুই এভাবে ভেতরে ভেতরে কষ্ট পাচ্ছিস?
আর কত? আর কত মায়া?!!! আর কত এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবি?…(সাইমা)

__ সাইমা…..
___ জি, বল….কি বলতে চাচ্ছিস?!!!(সাইমা)
– খুব মিস করছি….(মায়া)
__ কাকে?!!!(সাইমা)
– কাকে আবার জানিস না?(মায়া)

ওহ, এই কারন?!!!
এই কারনে মহারাণী মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে????(সাইমা)
__ ???(মায়া)

হয়ছে, হয়ছে! আর মন খারাপ করতে হবে না। আমি কালকেই ভাইয়াকে ঢেকে আনতেছি….!!!
আর তাছাড়া আপাতত কয়েকটা রাত কষ্ট কর, পরে আর মিস করতে হবে না…???
_ হুর….(মায়া)
__ কি হলো আবার?(সাইমা)

যা তো এখান থেকে….
ঘুম পাচ্ছে খুউব…(মায়া)

– হা, হা ঘুমা…??
গুড নাইট….???
আর দরজাটা লাগিয়ে দে…
– – – – – – – – – – – – –
সাইমা চলে গেলে মায়া রুমের দরজা’টা আটকে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেই। ক্ষাণিকবাদেই নিদ্রাদেবী এসে ভর করে চোখের কোণায়। মায়া হারিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে….

সেদিন রাত্রে সিয়ামের ভালো ঘুম হয়নি। খুব, খুউব মিস করছিল ওকে, কিন্তু দেখতে পারে নি। পরদিন ভোরে কাজের নাম করে বাসা থেকে বের হয় সিয়াম।
গন্তব্য – সাইমার শ্বশুর বাড়ি।
উদ্দেশ্য- মায়াপরিটাকে দেখা…..

সকাল ৭টায় সাইমাদের বাসার কলিং বেল বেজে উঠে। অনেকক্ষণ ধরে কলিং বেল বাজছে, কিন্তু কেউ খুলার নাম নাই….
এদিকে সাইমার শাশুড়ি আওয়াজটা ঠিক শুনে ফেলে রুম থেকে….
_ রাইমা দেখো তো কে এসেছে? (শাশুড়ি)
– দেখতাছি, খালাম্মা….(কাজের মেয়ে)

খালাম্মা, খালাম্মা সিয়াম ভাইয়া এসেছে….

– ও সিয়াম এসেছ বাবা? কথা’টা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয় সাইমার শাশুড়ি….
কুশলাদী বিনিময়ের একপর্যায়ে_
” কইগো সাইমা….
দেখে যাও কে এসেছে….”
সাইমা ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বলে__
কে? কে এসেছে, মা?!!!
,
সিয়াম।
সিয়াম এসেছে….
,
সিয়াম নামটা শুনে সাইমা যেন চমকে উঠল। চোখ মেলে তাকাই মায়া। এ যে সত্যি সত্যি’ই সিয়াম….
তুই? তুই এত সকালে? ভাইয়া বাসায় সবাই ঠিক আছে তো?! (সাইমা)

সিয়াম বুঝতে পারছে এত সকালে ও এখানে আসাতে পাগলী বোন’টা ভাবছে বাসায় কিছু হয়েছে, সবাই ঠিক আছে কি না….
আর এটাও জানে সিয়াম এখন যদি একটা কিছু উত্তর না দেওয়া হয় তাহলে অনবরত প্রশ্ন করে’ই যাবে…
তাই সিয়াম দৃঢ় গলায় বলল,
ওরে পাগলী! কারো কিছু হয়নি। তোর কথা খুব মনে পড়ছিল তো তাই দেখতে এলাম….

_ __ ___ __

কি হলো আবার? চুপ কেন?আমার কথা বিশ্বাস হয়নি?বিশ্বাস কর বোন কারো কিচ্ছু হয়নি।(সিয়াম)

– মানছি…
বিশ্বাসও করছি….(সাইমা)
__ তাহলে এভাবে মুখ গোমড়া করে রেখেছিস কেন?(সিয়াম)

– বিশ্বাস তো করলাম ওরা ঠিক আছে। কিন্তু একটা জিনিস বিশ্বাস করতে পারছি না…(সাইমা)
– কি?(সিয়াম)

ভাইয়া তুই ঠিক আছিস তো?!!!???

– মানে?(সিয়াম)
__ আমি কথা সোজাসাপ্টা বলতে’ই পছন্দ করি। তাই কথা ঘুরাতে চাই না। বলছি-
তোর ঘুম হয়েছিল তো রাত্রে?!!!☺☺☺(সাইমা)

– সাই….মা..মা…মা….মা…???(সিয়াম)
__ ???? আমি বুঝে গেছি ভাইয়া অসুস্থ… মানসিক অসুস্থ….??(সাইমা)
– ???(সিয়াম)

– বৌ’মা কি শুরু করছ এসব? ছেলে’টাকে রুমে নিয়ে যাও…রেস্ট নিতে বলো…রুমের ভিতর থেকে সাইমার শাশুড়ি কথা’টা বলল। সাইমা যাচ্ছি মা বলে সিয়াম’কে নিয়ে গেস্টরুমে যায়…..

__ সম্মানীত কুটুম! আপনি রুমে গিয়ে বসেন, আমি গিয়ে আপনার মানসিক রোগ সারানোর ঔষধ নিয়ে আসছি….কথাটা বলে সাইমা বাইরে থেকে’ই মায়ার রুমের দিকে চলে যায়। এদিকে সিয়াম এগিয়ে যায় রুমে। খাটে বসতে গিয়েও বসে নি। থমকে গিয়ে ফিরে আসে পিছনে, সোফায় বসে পরে…..

– বেশকিছু ক্ষণ পর গম্ভীর হয়ে একেলা ফিরে আসে সাইমা। সিয়াম জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?!!!
সাইমা মন খারাপ করে জবাব দেয়-
” মায়া রুমে নেই “….
__ রুমে নেই মানে? কি বলছিস এসব? ভালো ভাবে দেখেছিস? আর ছাদে দেখেছিস?(সিয়াম)

__ ছাদ, বাথরুম-টাথরুম, অন্যান্য রুম কোনো’টাই বাদ যায়নি…. (সাইমা)
_ এক মিনিট সাইমা….
তোদের বাসায় কোনো গেস্ট এসেছে কালকে বা রাত্রে এবং আসলে ওনি কি এখনো আছেন এই বাসায়?(সিয়াম)

– ভাইয়া কি বলছিস এসব? আমাদের বাসায় কোনো গেস্ট আসেনি।…(সাইমা)
_ তাহলে, ইনি কে সাইমা?সিয়াম বিছানায় শুয়ে থাকা চাদর জড়িয়ে মানুষটাকে আঙুল দিয়ে দেখায়….
সাইমা দেখে তো হতবাক….
এখানে আবার কে শুয়েছে?

– কে? চিনতে পারছিস?(সিয়াম)
__ না’তো….দাঁড়া বাবার থেকে জিজ্ঞেস করে আসি…সাইমা চলে যাচ্ছিল তখনি সিয়াম বলল তুই দাঁড়া আমি বরং আংকেলেরর সাথে কুশলাদী বিনিময় করে আসি। কথা’টা বলে সিয়াম চলে যায়…

– একটু পর’ই সাইমার শ্বশুরকে নিয়ে সিয়াম গেস্ট রুমে ঢুকে। সাইমার শ্বশুর বিছানার পাশে গিয়ে ডাক দেই- কেউ আছ?!!!
__ ঠিক তখন’ই হুমড়ি খেয়ে বিছানায় উঠে বসে মায়া….

– তু…তু….তুই…..(সাইমা)
__ মায়া ঘুম চোখে সাইমার শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে বলে,
আংকেল কোনো সমস্যা….
সাইমার শ্বশুর মিষ্টি হেসে বলে, না, না! তুমি ঘুমাও….
আসলে বুঝতে পারছিলাম বাসায় মেহমান নেই কিন্তু গেস্টরুমে কে শুইলো….
সাইমার শ্বশুর চলে গেল, যাওয়ার আগে বলে গেল, মায়াকে যাতে আর ডিস্টার্ব না করা হয়….

সাইমাকে ওর ভাই টানতে টানতে ছাদে নিয়ে যায়…

কি হয়েছে ভাইয়া?
তুই কি বাবার কথায় রাগ করেছিস? ওনি আসলে মায়াকে খুব আদর করে তো তাই এটা বলছে….
এই জন্য রাগ করিস না প্লিজ ভাইয়া…..

– আমি সেজন্য রাগ করিনি সাইমা…..(সিয়াম)
__ তাহলে?(সাইমা)

তোরা ওকে গেস্টরুমে থাকতে দিয়েছিস? গেস্টরুমে?!!!…(সিয়াম)

– ভাইয়া….
আমি বুঝতে পারছি তুই কি বুঝাতে চাচ্ছিস…
ভাইয়া, মায়াকে এ বাড়ির কেউ গেস্ট মনে করে না। আসার পর পর’ই বাবা সবাইকে বলে দিয়েছে, মায়া এ বাড়ির মেয়ে। আবিরের ছোট বোন…
আর ওর জন্য বিশাল একটা রুমও আছে। তুই দেখবি? দেখবি তুই ওর রুম? আয়, আমার সাথে আয়….
সাইমা ওর ভাইয়ার হাত ধরে একরকম টেনে ওকে নিয়ে হাজির হয় মায়ার রুমে….
এই দ্যাখ, এই যে সুন্দর-সুশৃঙ্খল রুমটা দেখতে পাচ্ছিস না এটাই হলো মায়ার রুম… এ বাড়ির ছোট মেয়ের রুম…… আর এই যে সুন্দর খাট’টা দেখছিস, এখানে’ই মায়া ঘুমায়…..

সিয়াম ঘুরতে ঘুরতে পুরো রুমটা অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগল। সত্যি’ই অনেক অনেক সুন্দর করে সাজানো-গোছানো রুমটি….
সিয়াম গিয়ে খাটে বসল….
অতঃপর সাইমার দিকে বলল, মায়া গেস্ট রুমে গেল কিভাবে তাহলে?!!!

– সাইমা হেসে বলল,
ও তো তোর’ই মত। নষ্ট মাথার অধিকারী…হয়ত রাত্রে ঘুম আসছিল না তাই ওখানে চলে গেছে। ওর আবার ঘুম না আসলে রুম চেঞ্জ করতে হয়…..

– কি?!!!(সিয়াম)
__ জি….??(সাইমা)

এর’ই ভিতর নাস্তা পানি এসে যায় রুমে…
সাইমা ভাইয়ার দিকে নাস্তা পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, তুই ব্রেকফাস্ট কর, আমি গিয়ে আনতেছি ওকে……

– সিয়াম ব্রেকফাস্ট করবে না করবে না করে ফেলল। কারন, সাথেই মায়ার শ্বশুর দাঁড়িয়ে….
ব্রেকফাস্ট করে অনেকক্ষণ কথা-বার্তা বলল সাইমার শ্বশুরের সাথে কিন্তু মায়া কিংবা সাইমা কারো আসার নাম নেই…..

সাইমার শ্বশুর বিশেষ কাজে একটু বাইরে চলে যায়, যাওয়ার আগে বলে যায় দুপুরে খেয়ে তবে’ই যেতে….
ঘড়িতে তখন ৯টা বাজে, এখনো ওরা আসছে না। সিয়াম সোফা থেকে খাটে গিয়ে বসে, ঠিক তখনি সাইমা আসে রুমে….
গম্ভীর হয়ে বলে__
ভাইয়া ও ঘুমুচ্ছে… তুই বরং চলে যা…..

ও আসেনি?!!!(সিয়াম)
__ না,…. ও আসলে ঘুমে বিভোর…..(সাইমা)

– সিয়াম বসা থেকে উঠে পরে। আচ্ছা, আমি আসি তাহলে কথাটা বলেই সাইমার আর কোনো কথা না শুনে সবার থেকে বিদায় নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায় সিয়াম…..

সময় থেমে থাকে না। কালের নিয়মে’ই সময় অতিবাহিত হয়….
দেখতে দেখতে’ই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হয় মানে সিয়াম-মায়ার বিয়ের দিন…..

আজ সিয়াম-মায়ার বিয়ে হয়েছে। তিনঘন্টা আগে ও বাড়ি থেকে মায়াকে নিয়ে এ বাড়িতে আসল সবাই…
পুরো বাড়ি লাল-নীল বাতি দিয়ে সাজানো। ছাদ, বাহির-ভিতর সবটা জানানো….
বিশিষ্ট শিল্পপতির একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা….
সাইমা মায়াকে খাইয়ে দিয়ে রুমে বসিয়ে চলে আসে…
মায়া এখন একটা বৃহৎ ফুল গালিচার ভেতর বসে আছে। এত্ত নিঁখুত ভাবে রুম’টা সাজানো যে মায়া চোখ সরাতে পারছে না। মায়া শুনেছে, রুমটা সিয়াম ও ওর বন্ধুরা নিজ হাতে সাজিয়েছে…সত্যি’ই ওদের পছন্দের তারিফ করতে হয়।হঠাৎ’ই মায়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়। সিয়ামের বলা ঐদিনের কথাগুলো মনে হতে’ই মুহূর্তেই মায়ার মুখটা কালো অন্ধকারের ন্যায় হয়ে যায়। মায়া বিছানায় বসা থেকে উঠে পরে….
ধীর পায়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় মায়া….
,
হঠাৎ’ই পিছন থেকে কেউ বলে উঠে-
ঘুমাওনি এখনো?!!!
মায়া চমকে পিছনে তাকা’ই।
__ এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন? ঘুমিয়ে পড়।
_ ঘুম?!!!(মায়া)
– হ্যাঁ, নয়তো শরীর খারাপ করবে। তুমি বিছানায় শুয়ে পড়, আর আমি ফ্লোরে শুইছি…..
সিয়াম মায়াকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে খাট থেকে একটা বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়ে…..
__ মায়া নির্বাক……
কিছু’ই বলতে পারছে না। শুধু স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বেশকিছুক্ষণ পর সিয়ামের ধমক শুনে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ে মায়া…..
দু’জনেই চুপচাপ……..

রাত প্রায় মধ্যরাত……

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে