বসের সাথে প্রেম পর্ব-১৫

0
6812

বসের সাথে প্রেম
পর্ব-১৫

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

মায়া ভেতর থেকে রুমের দরজায় হেলায় দিয়ে কান্না করছে আর সিয়াম দরজার ওপাশেই দাঁড়িয়ে মায়াকে ডাকছে। কতবার করে বলতেছে দরজা’টা খুলতে মায়া কিছুতেই দরজা খুলছে না। মায়া দরজা খুলে ১ঘন্টা পর যখন দরজার ওপাশ থেকে আর কোনো আওয়াজ না আসে। দরজা খুলে সে আর সিয়ামকে দেখতে পায়নি। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মায়া ওর রুমে চলে যায় আবার…
রাতে মায়া এবং সিয়াম কেউ কারো সাথে একটা কথাও বলেনি। সিয়াম অবশ্য অনেক বার কথা বলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু মায়া কথা বলার কোনো সুযোগ’ই দেইনি। সে রাতে মায়া একটুও ঘুমাতে পারে নি। সারা রাত কেঁদে কেঁদে রাতটা পার করে দেয় মায়া। ও জানে, ও সিয়ামকে কখনো’ই পাবে না, পাওয়ার আশাও করবে না। ও চাই না সিয়াম ওর হোক। ও চাই সিয়াম ওর বাবা-মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করোক, ওনাদের ইচ্ছের মূল্য দিক, বিশ্বাসের মূল্য দিক। আর তাই সিয়ামকে এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিল। যতকিছুই হোক সিয়ামকে এড়িয়ে যেতে’ই হবে, ওকে রাজি করাতেই হবে…

পরদিন সকাল বেলা সিয়াম অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে, তখন’ই সিয়ামের বাবা সিয়ামের রুমে প্রবেশ করে কাশি দিয়ে।
সিয়াম- বাবা! দাঁড়িয়ে কেন আসো…
*বাবা- (হালকা কাশি)
★সিয়াম- বাবা কিছু বলবে?
*বাবা- তুই কি অফিসে যাচ্ছিস নাকি???!!!
★সিয়াম- জি, বাবা। অফিসে যাচ্ছি….
*বাবা- আজকে অফিসে যাওয়ার দরকার নেই। কি করতে হবে, না করতে হবে তোর ম্যানেজার আংকেলকে বুঝিয়ে দে, ওনি আজকের দিন’টা সব দেখাশুনা করবে…
★সিয়াম- কিন্তু বাবা….
*বাবা- কোনো কিন্তু নাই। তুই ওনাকে ফোন দিয়ে ডেকে সবটা বুঝিয়ে দে, আজ তোর অফিসে যাওয়ার দরকার নাই।
★সিয়াম- আচ্ছা, বাবা…
*বাবা- হুম, আর শুন…
আজ আশরাফ চৌধূরী ও তার স্ত্রী আসছে। তুই বাসাতেই থাকিস…
আর ওদের একমাত্র মেয়ে আরশিও আসছে। আমি চাই ঐ মেয়েকে এই বাড়ির বউ করে আনতে। আশা করি, এ ব্যপারে তোর কোনো আপত্তি থাকবে না…
★সিয়াম- বাবা! আমার একটা কথা আছে…
*বাবা- তোর যা বলার পরে বলিস, এখন আমি আসি। ওরা আসলে যাতে তোকে খুঁজতে না হয়…

চলে গেল সিয়ামের বাবা।
সিয়ামের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল।একে তো মায়াকে কাছে পাচ্ছে না, তারউপর আবার বাসায় মেহমান। ওরা আসলে মেয়েটির কি অবস্থা হবে,ভাবতেই সিয়াম ঘেমে একাকার। না, না। এ হতে পারে না। আমাকে যে করেই হোক আজকে মায়ার সাথে কথা বলতেই হবে। আমি শুধু ওকে চাই, আর কাউকে না। বিয়ে করলে আমি ওকেই করব। আর যদি তার জন্য বাবার এই বিশাল সম্পত্তি থেকে আমায় বঞ্চিত করা হয়, তবুও করব। ওকে ছাড়া আমি কাউকেই বিয়ে করতে পারব না।
কিন্তু মায়া’কে পাবো কোথায়? ও যে মেহমান আসার কথা শুনে সকাল থেকেই মায়ের পাশে ঘুরঘুর করছে। এটা করছে, সেটা করছে। কখনো বা বুয়ার সাথে রান্নায় হেল্প করছে। কি করব আমি?!!!
কি করা যায় ভাবতে ভাবতে মাথা ব্যথা শুরু হয়ছে…
মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে পরলাম বিছানায়। ক্ষাণিক বাদে’ই রোকসানা ডাক দিল। সাহেব, উঠেন…
শুয়া থেকে উঠে বসে ধমক দিয়ে__
তোকে না কতবার বলছি, আমায় সাহেব ডাকবি না!
আমায় ভাইয়া ডাকবি, ভাইয়া….
তুই আমার ছোট বোন সাইমার মত’ই আরেকটা বোন….
স্যরি, ভাইয়া আর এমন হবেনা।
★হুম, তাই যেন হয়….
~আচ্ছা, ভাইয়া আপনি আসেন, আমি গেলাম…
*এই শোন?!!!
~জি, ভাইয়া….
* মায়া কইরে?!!!
~ মায়া আপু ঘুমুচ্ছে….
*(মনে মনে বলছে সিয়াম, এই অবেলায় ঘুমুচ্ছে?!!!)
ওহ, আচ্ছা। যা তুই…..
~ভাইয়া, একটা কথা বলব?!!!
*বল….
~’ মায়া আপমণিটা না খুব ভালো একটা মেয়ে…
খুব ভালো…
ওর মত মেয়ে’ই হয় না…
প্লিজ, ভাইয়া ওকে আর কাঁদাবেন না….
*রোকসানা…
তুই,
আমার,,
মায়ার….
~সব জানি ভাইয়া…
আপনাদের প্রেমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা জানি ভাইয়া….
মায়া’পু এ বাসায় আসার আগে যখন ঐ বাসায় থাকত, তখন ও আমার থেকে আপনার খবর নিত…
ওর কখনো ছাদে, কখনো বা জানালায় লুকিয়ে আপনাকে দেখা পুরোটা’ই আমি খেয়াল করতাম। তখন থেকেই বুঝতে পারি, ও আপনাকে কতটা ভালোবাসে। আর তাছাড়া মায়া আপুমনি এ বাড়িতে আসার পর আপনাদের চোখাচোখি দেখেও সম্পূর্ণ বুঝে গেছি। জানেন, কাল থেকে কেঁদে কেঁদে চোখের কি অবস্থা করেছে? আজও কেঁদে কেঁদে’ই ঘুমিয়ে পরেছে…. সকালে ব্রেকফাস্টও করেনি….
এত করে বললাম তবুও কিছুই খাওয়াতে পারিনি…..

রোকসানার কথা শুনে সিয়ামের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। রোকসানা’কে কোনো রকম নিচে যা বললাম। তার আগেই নিচ থেকে ডাক পরল। রোকসানা দৌঁড়ে নিচে চলে গেল।
-নাহ, আজ আর চুপ করে থাকব না। আজ বাবা’কে সবটা খুলে বলব…
বাবাকে না বলতে পারি লিজাকে বলব সবটা…
আশা করি, ও আমার কষ্ট’টা বুঝবে। হাজার হোক শৈশবের খেলার সাথি বলে কথা…
চোখের জল মুছে নিচে গেলাম। আংকেল-আন্টিকে সালাম দিয়ে, সোফায় গিয়ে বসলাম।
একি?!!!
লিজা কোথায়?!!!
ও আসে নি তাহলে?!!!
এখন আমি কিভাবে সমস্যার সমাধান করব?
এদিকে বাবা-মা’ও ওনাদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতেছে। আলোচনার এক পর্যায়ে বাবা আংকেলকে বললেন_
” তো এই কথায় রইল…
লিজা ভ্রমন থেকে আসলে ওকে নিয়ে এ বাড়িতে আসবেন। ওরা দু’জন দু’জনকে আগে ভালো ভাবে বুঝুক, চিনোক….”
আংকেল হেসে হেসে সে কথার সম্মতি দিয়ে বললেন,
তাই হবে…
আমি ওদের থেকে বিদায় নিয়ে উপরে চলে গেলাম। তারপর ঘুমিয়ে পরলাম। ওনারা কখন গেছে কিচ্ছু জানি না….
ঘুম ভাঙে কলের আওয়াজে….এই সন্ধ্যায় আবার কে কল দিল?!!! ফোন হাতে নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নারী কন্ঠ ভেসে উঠল। সুরেলা কন্ঠে এক নারী বলে উঠল__
” হ্যালো! সিয়াম বলছেন?!!!
* হ্যাঁ, আমি সিয়াম। আপনি কে?!!!
~আমি লিজা…
* ঐ তুই কোন লিজা? আমার ছোট্ট কালের খেলার সাথী নয়তো…?!!!
~হয়ত ছিলাম একসময়ের সাথী…
*মেডাম, আপনার কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন?!!!
~সে কিছু না…
দেখা করতে পারবি কালকে…?!!!
* হঠাৎ দেখা?!!! কেন? কোনো সমস্যা?!!!
~সব তোকে পরে বলব। প্লিজ, আগে বল দেখা করতে পারবি কি না….
*হুম, পারব।পারতে যে আমায় হবে’ই। আমার যে তোর সাথে অনেক কথা বলার আছে….
বল কোথায়, কখন দেখা করতে হবে?!!!
~’ আমি একটু পর জানাচ্ছি তোকে।এখন রাখছি….
*এই শুন….
এইরে!!! রেখে দিল….

পরদিন দুপুর দেড়টা_
মায়া ওর চেম্বারে চুপটি করে বসে ল্যাপটপ টিপাটিপি করছে। ঠিক তখন’ই আমি গিয়ে হাজির সেখানে….
‘ স্যার, কি কাজ করতে হবে?’
~তোমার সাথে কি আমার শুধু’ই কাজের সম্পর্ক?!!! কোনো কিছুর দরকার হলেই তোমার কাছে আসব? এর ছাড়া আসতে পারিনা?!!! কথা বলতে পারি না তোমার সাথে…???”
★স্যার, আসতে বলুন।সবাই শুনছে তো…
~শুনোক।?
– – – – – – –
~কোথায় যাচ্ছ?!!!(হাতটা ধরে ফেলে)
★ স্যার, আমার কাজ আছে।
~আমি ছাড়া তোমার আর কোনো কাজ থাকতে পারে না….
★স্যার, সবাই দেখছে….
~দেখুক, দেখার জন্য’ই বলছি এসব….
আচ্ছা, কেন তুমি আমায় এমন ইগ্নোর করতেছ?
কি করেছি আমি?
কেন তুমি আমায় অবহেলা করছ? আমার থেকে দুরে দুরে থাকছ? কোন অপরাধের সাজা তুমি আমায় এভাবে দিচ্ছ?!!!
-‘ মায়া নিশ্চুপ…..
~আচ্ছা, যাও তোমার কিচ্ছু বলতে হবে না।

মায়াকে ছেড়ে দিয়ে সিয়াম কথা’টা বলল।
তারপর ওখান থেকে চলে গেল। মায়া জল চলছল চোখে সিয়ামের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পর’ই সিয়াম বার্তা পাঠালো মায়াকে_
” মায়া! আজকে আমায় একটু বাইরে যেতে হবে দরকারি কাজে। তোমাকেও আমার সাথে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”

-‘ মায়া নিঃশব্দে রেডি হয়ে বসে রইল ওর চেম্বারে…
একটু পর’ই সিয়াম মায়ার চেম্বারে এসে বলল,
চলো….
সিয়াম আগে আগে যাচ্ছে,
মায়া সিয়ামের পিছুপিছু যাচ্ছে….
~কি হলো? হাঁটছ না কেন?
★মায়া ঘুমে দুলুদুলু….
~মায়া! তোমার কি খুব ঘুম পাচ্ছে?
★হুম….
~দাঁড়াও,তাইলে হাঁটতে হবে না। কথাটা বলেই সিয়াম মায়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে…
মায়া ঘুম ঘুম চোখে’ই বলল,
কি করছেন?
এদিকে আসছেন কেন?!!
সিয়াম মায়াকে কোলে নিতে নিতে বলল,
ঘুম পাচ্ছে তো তোমার। তাই কোলে নিলাম….
– মায়া ঘুম ঘুম চোখে’ই বলল, ছাড়েন! প্লিজ, নামিয়ে দিন আমায়….
সিয়াম গাড়ির কাছে চলে গেল। মায়াকে আস্তে করে নামিয়ে গাড়ির দরজাটা খুলে ওকে ভেতরে বসিয়ে, সিয়ামও উঠে পরল। গাড়ি গিয়ে একটা পার্কের সামনে থামল। সিয়াম আর মায়াকে ডাকে নি। মায়াকে ঐভাবেই রেখে সাইমাকে ফোন করল। কাছেই সাইমার বাসা ছিল, তাই আসতে দেরী হয়নি। সাইমা ১০মিনিটের ভিতর চলে আসে। সাইমাকে মায়ার পাশে বসিয়ে সিয়াম ক্ষাণিকটা দুরেই লিজার সাথে কথা বলতে যায়। লিজা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে….
~হ্যাঁলো ম্যাম…..
★Hi! সিয়াম…
কেমন আছিস?!!!
~ আল্লাহ রাখছে….
তুই?!!!
★সেটা কেমন কথা?
আল্লাহ রাখছে মানে?!!!
~সে কিছু না…
তুই না কি বলবি….?!!!
★সিয়াম!
তোর শরীর খারাপ?
তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
চোখের নিচে কালো দাগ?!!!
সেটা কবে থেকে হলো?!!!
~ সে কিছু না।
আচ্ছা, তুই জানি কি বলবি?
★ হঠাৎ করে নাটকীয় ভঙিতে লিজা সিয়ামের হাতটা চেপে ধরল।
– তারপর কান্না করে দিল।
সিয়াম তো অবাক….
একি?!!!
এসব কি করছে লিজা…
আর ও কি বলতে চাচ্ছে?!!!
সিয়াম জোর করে হাতটা ছাড়িয়ে বলল,
-এই বোকা মেয়ে?!!!
তোর কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন? লিজা আবারো সিয়ামের হাত চেপে ধরে কান্না শুরু করে দিল। সিয়াম হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর__
লিজা নিজে নিজেই হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের জল মুছল। তারপর বলল,
আমার একটা কথা রাখবি?
★হুম,বল কি কথা?
~আগে বল রাখবি….
★তুই আগে আমায় ছুঁয়ে প্রমিজ কর কথাটা রাখবি…
~আগে, বল না….
★না, তুই আগে প্রমিজ কর আমায় ছুঁয়ে…..
~ওকে, প্রমিজ করলাম তুই যা বলবি সাধ্যের মধ্যে হলে তা করব। এবার হলো তো?
★ হুম…
~এবার বলে ফেল….
★………
~কি হলো বল…..
★………
~এই মেয়ে! হলোটা কি? বল…..
————————————

★সিয়াম! আমি একজনকে ভালোবাসি….. খুউব ভালোবাসি। প্লিজ, তুই আমাদের বিয়েটা ভেঙে দে। কারন, ওকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। কাউকে না….
~ এই কথা’টা তুই…….
★পুরো কথা বলতে পারল না সিয়াম। তার আগেই লিজা আচমকা সিয়ামের পায়ে গিয়ে ধরল। সিয়াম চমকে গেল….
এসব কি করছিস?
উঠ, উঠ…..
ছাড় পা……
– না আমি ছাড়ব না পা। আগে বল, তুই আমার কথা’টা রাখবি…. আমার আতিককে আমার থেকে কেড়ে নিবি না?(আতিক নাম শুনে এবং পিছনে আতিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিয়াম চমকে উঠল।মনে পড়ে গেল, ঐ সেই লিজা! যার ছবি আতিক ওকে দেখিয়েছে।এই সেই মেয়ে!যার সাথে বন্ধু আতিক রাতের পর রাত কথা বলত।]
~তুই আগে পা ছাড়, তারপর বলছি…..
★লিজা পা ছেড়ে দিল। ওকে মাটি থেকে উঠালো সিয়াম। এখনো বেচারির গাল গড়িয়ে অশ্রু পরছে। পকেট থেকে রুমাল বের করে দিয়ে সিয়াম বলল__

যা কাঁদছিস, এটুকু’ই এনাফ। আর কাঁদিস না…
এই নে রুমাল। চোখ’টা মুছে নে। সব লবন যদি এখন’ই শেষ করে ফেলিছ, তাহলে বিয়ের পর ঘাটতি হতে পারে। তাই এখন থেকে’ই সাশ্রয়ী কর….
আর বিয়ে করার কথা বলছিস না?
বিয়ে আমি করব,
তবে তোকে নয়, আমার মায়া পরিকে….
★তোর মায়া পরি মানে?!!!
~সে পরে বলা যাবে। আগে তো তোর আতিক’কে শান্ত কর….
আমার পায়ে ধরেছিস ওর জন্য, এটা দেখে ও চলে গেছে….
★তুই আতিককে চিনিস?
~লিজা! তোকে আমি সাত বছর ধরে চিনি….
★মানে?!!! তুই তো কেবলি আমায় দেখলি। সেই শৈশব কালের পর তুই তো আজ’ই প্রথম আমায় দেখলি…?!!তাহলে ৭বছর ধরে মানে…
~মানে বুঝতে পারছিস না?!!!
সিয়াম পকেট থেকে ওর ফোনটা বের করে ওর আর আতিকের অনেকগুলো ছবি দেখালো। লাস্ট একটা ছবি দেখালো যেটাতে আতিকের সাথে লিজা দাঁড়িয়ে আছে।
লিজা চোখ বড় বড় করে বলল,
তুই আতিককে…
★সিয়াম মাথা নেড়ে বলল, জি, আমি আতিককে চিনি। আর ও আমার একমাত্র বন্ধ।বেস্ট ফ্রেন্ড। আতিক তোর ছবি আমায় দেখায়। প্রতিদিন আমি তোকে দেখি। ওর ফোনে দেখি। ও যখন চুমু খায়, তখন দেখি, ও যখন তোর ছবিতে হাত বোলায় তখনও দেখতাম। ও যখন তোর দেওয়া কষ্টের পর তোর ছবি বুকে নিয়ে ঘুমাতো, তখনও তোকে দেখতাম।বকা দিতাম। কিন্তু কে জানত ঐ বজ্জাত মেয়েটাই তুই….?
★ঐ কি বললি তুই…(?)…
আমি বজ্জাত?!!!
~না, তুমি লক্ষ্মী মেয়ে!
এবার যাও তোমার আতিকের রাগ ভাঙাও ভালোবাসা দিয়ে….??
~ওহ, আমি আসিরে….
★আচ্ছা, যা। বিয়ের দিন কথা হবে।
~ঐ কি বলছিস???
★ঐ কান ছাড়, আমি ব্যথা পাচ্ছি…
~তাহলে বিয়ের দিন দেখা হবে বললি কেন?
★আরে বাবা মজা করলাম….
~ওকে, আমি আসি। ঐ হাদারামটাকে ধরি গিয়ে আগে….
★ওকে, অল দ্যা বেস্ট….

লিজার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেল বুঝতে পারিনি। তাড়াতাড়ি গাড়ি যেখানে আছে সেখানে গেলাম।
কিন্তু একি?!!!
গাড়ি কোথায়?!!!
আর মায়া?!!!
সাইমা’ই বা গেল কই?!!!
মাথার মধ্যে যেন আকাশ ভেঙে পরল। তাড়াতাড়ি সাইমাকে কল দিলাম…
– হ্যালো…..
★রাখ তোর হ্যালো….
তোরা গাড়ি নিয়ে কই গেছিস?
~ স্যরি, ভাইয়া! তোকে না জানিয়েই চলে এলাম….
আসলে মায়া জেগে থাকলে কখনো আমার শ্বশুরবাড়িতে আসতে চাইত না, তাই ঘুমের মধ্যেই ওকে নিয়ে এলাম….
রাগ করিস না, প্লিজ…..
★সিয়াম একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল….
~ভাইয়া, তোর এই দীর্ঘশ্বাসের কারন কিন্তু আমি জানি…..
★কি জা….নো…স…???
তোতলাতে তোতলাতে সিয়াম প্রশ্ন করল….
~মায়া……..
★কি?!!!!
~মায়া……….
★স্যরি…কি বলছিস?
বুঝিনি। আবার বল….
~মায়া……
★ওহ, হ্যালো,
হ্যালো,
হ্যালো…..
সাইমা নেট প্রবলেমে কিছু’ই বুঝা যাচ্ছে না, আমি রাখি এখন… (কান থেকে ফোনটা দুরে নিয়ে)???
~ফাইজলামি হচ্ছে?
মায়া ছাড়া অন্য কথার বেলায় নেট ফুল, আর মায়া বললে নেট প্রবলেম, তাই নাহ?!!!???
★হ্যালো,
হ্যালো, হ্যালো….(মুখে ঠাপাতে ঠাপাতে সিয়াম বলছে)☺☺
~ঐ ব্যাটা কল রাখ…..
এত নেট প্রবলেম নিয়ে কথা বলতে হবে না…..??
★আচ্ছা…
এই শুন না। আমি কি আসব তোর শ্বশুরবাড়িতে?!!!☺
~হ্যালো, কি বলছিস ভাইয়া…
★বলছি, আমি কি আসব তোর জামাইয়ের বাড়িতে…??
~হ্যালো, ভাইয়া।
কোথায় আসবি বলছিস???
★আরে বাববা শুনতে পাচ্ছিস না?!!! আমি তোর শ্বশুরবাড়িতে আসার কথা বলছি….??
~কোথায়? হ্যালো, কোথায়।
ভাইয়া, নেট’টা খুব জ্বালাচ্ছেরে… আবার বল…??
★আরে বইন, আমি তোর শ্বশুরবাড়ি আসতে চাচ্ছি।??
~কি, বলছিস?
হ্যালো…
কিচ্ছু শুনা যাচ্ছে না। জোরে বল…
নেট কেমন যেন করছে….???
★ সাইমা….
তুই কিন্তু খুব ফাজলামু করছিস….?
সত্যি কি নেট প্রবলেম নাকি এটা শোধ…?
~Omg! শোধ হবে কেন ভাইয়া….?
নেট তো সত্যি’ই স্লু…
আচ্ছা,তুই বাসায় চলে যা।
ওখানে গিয়ে কল দিস।☺
নেট ফুল পাবি তখন….

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে